১৯৬০ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হলেও এত বছর পর উপন্যাসটির আবেদন কমেনি এতটুকু।আলাউদ্দিন আল আজাদ তার প্রথম উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিকদের কাতারে খুব সহজেই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন ।
‘যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালমন্দ মিলায়ি সকলি-তারই পূজায় বলি হবার ইচ্ছেটা শুধু শেষের কবিতার লাবন্যর নয় এটা আকাঙ্খিত জনের কাছে নরনারী মাত্রেরই দাবী’- ((তেঃ নঃ তৈঃ)) । আর এই সত্যেই নির্মিত হয়েছে তেইশ নম্বর তৈলচিত্রের জাহেদ আর ছবির প্রেম আখ্যান ।
উপন্যাসের নায়ক জাহেদ একজন চিত্রশিল্পী ।একজন শিল্পীমত্রই তার গভীর দর্শন ও জীবনবোধের সাহায্যে আবিষ্কার করতে চায় মানবীয় আবেগের স্বরূপটিকে ।শিল্পী জাহেদও তার ব্যতিক্রম নয় ।জাহেদ তার নিজের মধ্যে নানা কারণে সৃষ্ট টান-পোড়ন আর ছবির প্রতি দুনির্বার ভালবাসাকে যে জীবনদর্শনের সহায়তায় বিচার করেছে সেটিই মূলভিত্তি হিসেবে ধরে রেখেছে সমগ্র উপন্যাসকে । জাহেদের ভাবনাগুলো তাই তাবৎ শিল্পীসত্তার সার্বজনীন প্রতিচ্ছবি হিসেবে উঠে এসছে এ উপন্যাসে। জাহেদের নিগূঢ়ভাবে জীবন পর্যবেক্ষন করতে চেয়েছে সবসময় ।
‘জীবন বারবার নিজেকে আমার কাছে অনাবৃত করেছে, এটাই আশ্চর্য……।সেখানে আসল রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিনেতা অভিনেত্রী ,কোন প্রসাধন নেই আবরণ নেই ।বাইরে যাদের চেনা যায় না,সেখানে তারাই নিজ বেশে প্রতিষ্ঠিত’।(তেঃ নঃ তৈঃ)
কাহিনীসংক্ষেপ- রঙ কিনতে গিয়ে জামিলের সাথে পরিচয় হয় মূখ্য চরিত্র জাহেদের । জামিল জাহেদকে নিয়ে আসে তার বাসার স্টুডিওতে । জামিলের ছোট বোন ছবির সাথেও পরিচয় হয় জাহেদের, সেই পরিচয় ধাবিত হয় পরিণয়ের দিকে ।ছবির পোট্রেট করতে গিয়ে ছবির চোখে জাহেদ দেখে তার জীবন অন্বেষনের পথ।ছবির সাথে বিয়ের পর হটাৎ করেই জাহেদের কাছে উন্মোচিত হয় এক অনাকঙ্খিত সত্য ।এই সত্যটি তাদের সম্পর্ককে বিপর্যয়ের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিলেও জাহেদ সে বিপর্যয় রুখে দিয়ে প্রেমকে আরো মহিমান্বিত করেছে তার শক্তিশালী শিল্পীসত্তার সহায়তায়।
কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে কেউ ভাববেন না পুতু-পুতু কোন প্রেম কাহিনী এটা।কয়েকদিন আগেই ‘চাঁদের অমাবস্যা’ পড়ে শেষ করেছি, সেই রেশ কাটতে না কাটতেই হাতে পেলাম আরেকটি কালোত্তীর্ণ ক্লাসিক এই ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ - আহা !সময় করে পড়ে ফেলুন, আশাহত হবেন না আশা করি ।আলাউদ্দিন আল আজাদ আমার প্রিয় গল্পকারদের মধ্যে ।একজন তার গল্প নিয়ে একদিন আলাদা করে বলার ইচ্ছা আছে ।তার আরো একটি পরিচয় হল তিনি একজন গর্বিত ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা।
নায়ক ইলিয়াস কালঞ্চনের প্রথম সিনেমা ‘বসুন্ধরা’ নির্মিত হয়েছিল এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই ।১৯৭৭ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় নির্মিত এ সিনেমা সাতটি জাতীয় পুরষ্কার লাভ করে ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৬