প্রায় ১৩ বছর পর ক্ষিতিশের সাথে দেখা।
দুপুরবেলা ঢাকা থেকে এসে নেমেছি মিঠাপুকুর বাসস্ট্যান্ডে, আমি আর সাইফুল ।শেষবার যখন এসেছিলাম দেড় বছর আগে, দক্ষিন পাড়ার রাস্তাটা পাকা করার কাজ চলছিল তখন ।আসিফ ভাইয়ের নানা সেবছরই এমপি নির্বাচিত হয়।
নতুন কুচকুচে কালো পীচের রাস্তাটা আসিফ ভাইদের নানাবাড়ির সামনে দিয়ে তিনমাথার শিমুল গাছ ঘেঁষে চলে গেছে বাজারের দিকে ।নতুন রাস্তার সাথে সাদৃশ্য রেখেই যেন টি,এন্ড,টি অফিসের মোড়টায় জড় হয়েছে কয়েকটা ঝাঁ-চকচকে অটোবাইক।সাইফুলকে নিয়ে একটা অটোবাইকে উঠে বসলাম।
-বিদাশী ক্যাংকা আছেন, ম্যালাদিন পর আসনেন ইদিক লয় ?
ড্রাইভারের সিট থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া মানুষটাকে মুহূর্তেই চিনতে পারি, ঝাঁকড়া কালো চুলের মাঝখানে ফুটিয়ে তোলা স্পষ্ট সিঁথি আর বিদেশী ডাকটাই চিনিয়ে দেয় ক্ষিতিশকে।
আব্বা মারা যাওয়ার পর আম্মা দুই বোন নিয়ে চলে যায় নানাবাড়িতে।আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মিঠাপুকুর বড় চাচার বাসায়।চাচার বড় ছেলে অস্ট্রলিয়ায় থাকত ছোট ছেলে আসিফ ভাই আমার থেকে দুই বছরের বড়। মিঠাপুকুর হাইস্কুলে আমাকে ভর্তি করানো হল ক্লাস সেভেনে ,আসিফ ভাই ক্লাস নাইনে তখন।চাচার বাসা থেকে অল্প দূরত্বেই ছিল আসিফ ভাইয়ের নানাবাড়ি।
বিকেল চারটায় স্কুল থেকে একসাথে ফিরতাম আমরা, খাওয়াদাওয়া করে আবার কোচিং এ যেত আসিফ ভাই। চাচা বাসায় না থাকলে আমি আসিফ ভাইয়ের ফুটবলটা নিয়ে বের হয় যেতাম।
দক্ষিন পাড়ার পূব দিকটায় যে ক্ষুদ্র একটা সাঁওতাল পল্লী ছিল সেখান থেকে আসত ওরা, রমেশ,ক্ষিতিশ আর বেঙু ।বয়সের ঠিকঠিকানা ওরা নিজেরাই জানত না। গায়ে মাথায় ক্ষিতিশ আর রমেশ বড় ছিল আমার চেয়ে, আর লিকলিকে চেহারার বেঙু ছিল আমার কাঁধ সমান।এগারটার সময় ওদের ব্রাক স্কুল ছুটি হয়ে গেলেই হিংসা করার মত স্বাধীনতায় মুক্ত হয়ে যেত ওরা।টিএন্ডটির উঁচু টেলিফোনের টাওয়ারটাতে পিলপিল করে উঠে একবারে উপরে ঝোলানো ঢোলের মত দেখতে জিনিসগুলো ছুঁয়ে নেমে আসত আবার, ধানের জমির কাদা ঘেটে তুলে আনত টাকি মাছ,নারিকেল, সুপুরির গাছে উঠে যেত অসম্ভব দ্রুততায়।মাঝে মাঝে বাপ চাচাদের সাথে মিলে বল্লম,তীর-ধনুক নিয়ে বেরিয়ে যেত সকালবেলা, দুপুর নাগাদ গুটিকয় বনবেড়াল, বাগডাস আর ধাড়ি বড় ইঁদুর শিকার করে নিয়ে ফিরত।বেড়ালগুলোর পা দড়ি দিয়ে বাঁশের সাথে লম্বালম্বি করে বেঁধে ঝুলিয়ে নিত আর বাগডাসগুলো গিট্টু পাকিয়ে গোল করে নিয়ে তারপর বাঁশের সাথে বাঁধত। লম্বা বাঁশটার দুই মাথা দুইজন কাঁধে তুলে নিত ।ইঁদুরগুলোর লেজ একসাথে বেঁধে হাতে ঝুলিয়ে নিত ছোটরা।অল্পকয়টা মাত্র ছোট বেড়াল আর বাগডাস ঐরকম আয়োজন করে কাঁধে ঝুলিয়ে নেওয়াটা খুব হাস্যকর লাগত দেখতে। কি জানি, তখন হয়তোবা তাদের পূর্বপুরুষদের অতীত মনে পড়ে যেত।রমেশের দাদার বাবা মাংরা তার যুবক বয়সে নাকি একবার চিতাবাঘ মেরেছিল তীর দিয়ে।ক্ষিতিশের বেশ ভাল হাতের টিপ ছিল, একবার গুলতি ছুঁড়ে নারিকেল গাছ বেয়ে ওঠা সবুজ রঙ এর একটা গিরিগিটি নিখুঁতভাবে দ্বিখন্ডিত করে মাটিতে ফেলেছিল আমার সামনেই।
মাথার চুলে সিঁথি হত না আমার, সামনের চুলগুলো সোজা নেমে এসে কপাল ঢেকে রাখত আর উপরের দিকের চুলগুলো খাড়া হয়ে থাকত সবসময়। ছোট ছোট চোখের কারণে চেহারায় কিছুটা চাইনিজদের আদল ছিল আমার। আসিফ ভাই ডাকত চাকমা, ওরা বলত বিদাশী।
অনেকদিন পর বিদাশী ডাকটা কেমন যেন প্রশান্তিতে ভাসিয়ে নিতে চায়।
-কেমন আছিস তুই ক্ষিতিশ, অটো এইখ্যান কিনছিস নাকি?-আমি প্রশ্ন করি।
-মোর নিজের লয়, ভাড়া ন্যাওয়া।- ধবধবে সাদা দাঁতগুলো বের করে হেসে উত্তর দেয় ক্ষিতিশ ।
অটো ছেড়ে দেয় ক্ষিতিশ। ওকে জিজ্ঞাসা করি বেঙুর কথা,রমেশের কথা ।
-রমেশ বিয়্যা কইরছে ম্যালাদিন হয় , বেঙুর ঠ্যাং আটকি গেছিল পাওয়ার টিলারের কাঁটাত জমি চাষপ্যার যায়্যা।ডাক্তারে পাওখ্যান কাটি ফ্যালাইছে।লাঠি নিয়্যা হাটে এলা।
খুব ভাল ফুটবল খেলত বেঙু।চিকন চিকন পা নিয়ে তির তির করে বল নিয়ে ছুটে যেত গোলপোস্টের দিকে।সেই বেঙুর একটা পা কেটে ফেলছে, বিশ্বাস হতে চায় না।
-বেঙুর পাও কাটছে! ভাল ফুটবল খেলত বেঙুটা নারে !
আমার মুখে আর কথা যোগায় না।
চুপ করে থকে ক্ষিতিশ, তারও অতীত মনে পড়ে বোধ হয়।
চাচাদের বাসার পেছনে একটা পরিত্যক্ত অনাবাদী জমি ছিল, সেখানেই ফুটবল খেলা হত। চাচাদের রান্নাঘরের টিনের চালে লেগে বলটা ফেটে গেল একদিন। কোচিং থেকে ফিরে আসিফ ভাই চুলের মুটি ধরে ধাক্কা দিয়ে বলেছিল-“ফুটবল নিয়ে বের হইছিস কার হুকুমে, তোর বাপের বল পাইছিস এটা?”
এরপর থেকে আর ফুটবল খেলা হত না।বিকেল সময়টা আফসারের আমবাগানের গাছে উঠে পা ঝুলিয়ে বসে কাটিয়ে দিতাম।না হলে সামনের কাঁচা রাস্তায় মাটির পাতিল অথবা কলসির ভাঙ্গা অংশ দিয়ে চাড়া খেলতাম। কোন কোনদিন সাহস করে উঠে যেতাম টেলিফোন টাওয়ারের অর্ধেক পর্যন্ত ।নিচ থেকে ক্ষিতিশ হাসতে হাসতে আশ্বাস দিত।-উঠ বিদাশী, আরেকনা উঠেক। মুই আছং তোর পিছত, কিচ্ছু হবান্যায়।আসিফ ভাই কোচিং থেকে ফিরে মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে নিয়ে গোলকিপার করত প্লেয়ার কম থাকলে। আসিফ ভাই ক্ষিতিশদের খেলায় নিত না কখনো।
সেদিন চাচা বাসায় ছিল না। স্কুল থেকে ফিরে আর কোচিং গেল না আসিফ ভাই, ফুটবল নিয়ে পেছনের মাঠে চলে আসল।শুভ ভাই ছাড়া আর কেউ ছিল না সেদিন মাঠে।আমাকে আর ক্ষিতিশদের খেলতে ডাকল। ক্ষিতিশদের তিনজনকে একদিকে দিয়ে আর আমাকে আর শুভ ভাইকে নিয়ে আসিফ ভাই দলভাগ করলেন। আমি গোলকীপার। আসিফ ভাই আর শুভ ভাই মিলে বেঙুকে আটকাতে পারছিল না ।এঁকেবেঁকে বল এনে বেঙু ঢুকিয়ে দিচ্ছিল আমাদের গোলাপোস্টে ।বেশ কয়েকটা গোল খেয়ে আসিফ ভাই প্রচন্ড রেগে ছিল আমাকে গালাগালি দিচ্ছিল একটু পরপর। হটাৎ খুব জোরে একটা বল এসে পেটে লাগে আমার, আমি পেট চেপে ধরে শুয়ে পরি।বেঙুই কিক করেছিল এ বলটাও।আসিফ ভাই তেড়ে মারতে যায় বেঙুকে, মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে ক্ষিতিশ। মাটি থেকে উঠে দেখি শুভ ভাই আর আসিফ ভাই মিলে কিল চাপড়ে শুইয়ে ফেলেছে ক্ষিতিশকে। আসিফ ভাইকে আটকানোর সাহস ছিল না, আস্তে করে শুধু বললাম-আমার লাগে নি তো ভাইয়া ।আসিফ ভাই প্রচন্ড চড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে।
-কিরে শালা চাকমা, খুব দরদ হইছে বুনুয়্যাদের জন্য না?
বলটা নিয়ে গটগট করে হেটে বাসায় চলে যায় আসিফ ভাই।আমি কিচ্ছু বলি না।চড় খেয়ে আমার ডান চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল দরদর করে ।ক্ষিতিশ ঠোঁট থেকে রক্ত মুছে উঠে এসে দাঁড়ায়।
-বিদাশী তুই বাড়িত যা, ঐ শালাক মুই দেখি নেম!
বাসায় চলে আসি।আমি আসিফ ভাইয়ের খাটে ঘুমাতাম। সেদিন রাতে শুতে গেছি, আসিফ ভাই বলল-বুনুয়্যার জাত,খবরদার! আমার বিছানায় উঠবি না।বালিশ নামিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরি।
-আসিফের বাড়িত যাওছেন? কোন্টে থাকে ওইন? –ক্ষিতিশের প্রশ্ন বর্তমানে ফিরিয়ে আনে।
-অস্ট্রেলিয়াত থাকে,দেশত আসছে। আইজক্যা আইসপে ,এদিক থাকপে কয়েকদিন ।
-অ।
ক্ষিতিশ আর প্রশ্ন করতে উৎসাহ পায় না মনে হয়।
সন্ধ্যাবেলা আসিফ ভাই আসে। বাসার পেছনের ফাঁকা জায়গাটাতে বারবিকিউ করা হয়।
রাতে সাঁওতালপাড়া থেকে ঢোলের শব্দ ভেসে আসে।আসিফ ভাই জিজ্ঞাসা করে –‘ ঢোল বাজায় কেন শালারা’?
-সাওতালদের সোহরাই উৎসব তো কয়দিন পর সেজন্য মনে হয়।–সাইফুল উত্তর দেয়।
মনে পড়ে ক্ষিতিশের সাথে একবার গিয়েছিলাম সোহরাই দেখতে।ক্ষিতিশের বড় ভাই আরো কয়েকজন মিলে একটা কলাগাছ নিয়ে বড় পুকুরটাতে ডুবিয়ে দিচ্ছিল।পুকুরের পানিতে এক ঝুড়ি ভরা তেল পিঠা ধুয়ে আনল কয়েকজন মহিলা, তারপর বিলিয়ে দিল সবাইকে।আমিও পেয়েছিলাম এক টুকরা পিঠা।
অনেক রাতে ব্যাগ খুলে পাসপোর্টের বোতল বের করে আসিফ ভাই, নিজেই গ্লাসে ঢেলে আমদের হাতে ধরিয়ে দেয়। মদ জিনিসটা আমি ঠিক সহ্য করতে পারি না, বেশ খানিকটা কোক ঢেলে নিই গ্লাসে।
রমেশের বাবা হাড়িয়া আর চোয়ানী বেচত, সোহারাইয়ের দিন রমেশ চুরি করে সেভেন আপের এক লিটার বোতলে ভরে হাড়িয়া এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল ।এক চুমুক মুখে নিয়েই থু করে ফেলেছিলাম বিস্বাদ তরলটা । রমেশ আর ক্ষিতিশ ঢক ঢক করে বাকিটুকু শেষ করেছিল ।মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লেবুর কচি পাতা ছিড়ে ছিড়ে চিবোতে হয়েছিল সেদিন।
আসিফ ভাই আর সাইফুল মিলে বোতল অর্ধেক খালি করে ফেলে। আসিফ ভাই একটা চাইনিজ সিনেমা চালিয়ে দেয় ল্যপটপে।সিনেমা শেষ হলে আসিফ ভাই হটাৎ জিজ্ঞাসা করে- সোহরাই কবে রে সাইফুল?
-পরশু থেকে শুরু মনে হয়।–সাইফুল জবাব দেয়।
-চল তাহলে, একটু দেশী জিনিস টেস্ট করে আসি। -জড়ানো কন্ঠে বলে আসিফ ভাই।
-ও পাড়ায় আর মাল বিক্রি করে না ভাই।পুলিশ ঝামেলা করে আজকাল।সোহরাইয়ের সময় নিজেদের খাওয়ার জন্য কিছু বানায়।
-সেখান থেকেই ম্যানেজ হবে চল তো।- বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে আসিফ ভাই।
সাইফুল ওঠে বিছানা থেকে।আসিফ ভাই জোর করলে যেতেই হবে, তবু আমি শরীর খারাপের কথা বলে শুয়ে থাকি।এক পাওয়ালা বেঙুর সাথে দেখা হওয়ার ভয়ে আমি যেতে চাই না। আসিফ ভাই জোর করে না, টলমল পায়ে সাইফুলকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
অনেক্ষনপর ওপাড়া থেকে হটাৎ জোর চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে ।তাড়াতাড়ি চাদরটা গায়ে জড়িয়ে রেবেকাদের শুকিয়ে যাওয়া পুকুরটা দিয়ে শর্টকাটে উঠে আসি রমেশের বাড়ির সামনটায়। ভেতরে ঢুকে দেখি আসিফ ভাইয়ের কলার ধরে আছে ঝাকাচ্ছে একজন আর সাইফুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।আমাকে দেখে ক্ষিতিশ বেরিয়ে আসে ভিড় থেকে।
-বিদাশী এই শালাক নিয়্যা যা অ্যাটে থাকি ।রমেশ উয়্যাক ছাড়ি দে।
রমেশের দিকে তাকাই, তীব্র ঘৃণাভরা দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি না আমাকে চিনতে পারে কিনা।
ধাক্কা দিয়ে আসিফ ভাইয়ের কলার ছেড়ে দেয় রমেশ।টলতে টলতে কয়েকপা পিছিয়ে ঝুকে পড়ে আবার সোজা হয় আসিফ ভাই।দাঁত খিচিয়ে রমেশের দিকে আঙুল তুলে বলে-শালা শূয়োর ,শালা বুনুয়্যার বাচ্চা খুন করে ফেলব তোকে।
ক্ষিতিশ এগিয়ে সাপটে চড় বসিয়ে দেয় আসিফ ভাইয়ের গালে । আসিফ ভাই উলটে পড়ে যায় উঠোনে ।আমি ধরে দাঁড় কারাই আসিফভাইকে। তারপর সাইফুলসহ ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেই।
বাসায় ফিরে সাইফুল বলল সব।সোহরাইয়ের গান বাজনার প্রস্তুতি চলছিল, সবাই তাই জড় হয়েছিল ক্ষিতিশদের বাড়ি ,রমেশের বাপ আর রমেশও ছিল সেখানে। রমেশের বউ আর বুড়ি নানী ছিল বাসায় ।হাড়িয়া খুজতে রমেশের বাড়ি যায় সাইফুল আর আসিফ ভাই।রমেশের বউ হাড়িয়া বেচতে রাজি হয় না ওদের কাছে। মাতাল আসিফ ভাই হটাৎ খপ করে রমেশের বউ এর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিতে চেয়েছিল ।রমেশের বউ চেঁচামেচি করলে ক্ষিতিশের বাড়ি থেকে সবাই দৌড়ে চলে আসে।
পরদিন সকালে উঠেই নানাবাড়িতে যায় আসিফ ভাই। দুপুরের দিকে একটা পুলিশের জীপ ঢোকে ওই পাড়ায় ।আসিফ ভাইয়ের মামা সাগর চাচাকে দেখি পুলিশের সাথে।কিছুক্ষন পর সাত-আট জনকে কোমরে দড়ি বেধে গাড়িতে তোলে পুলিশ।
সন্ধ্যার দিকে ওই পাড়া থেকে কয়েকজন মহিলা আসে আফসার কবিরাজের বাড়িতে, ব্যাথার জন্য মালিশ তেল নিতে।বিকেল বেলা ওদেরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ, ফোলা ফোলা চোখমুখ নিয়ে থানা থেকে ফিরে এসেছে সবাই।
সন্ধ্যা হতেই পাসপোর্টের অর্ধেক বোতলটা নিয়ে বসে আসিফ ভাই।আমিও কিছুটা ঢেলে নেই গ্লাসে ।সিগারেটের ধোঁয়া হেমন্তের হালকা কুয়াশায় মিশিয়ে দিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে আসিফ ভাই।আসিফ ভাইয়ের অনুশোচনা হয় কি?-আমি বুঝতে পারি না।
আরেকটু রাতে টুড্ডুং টুড্ডুং শব্দে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসে ।আসিফ ভাই মনে হয় চমকে ওঠে একটু, আজকে রাতেও ঢাক বাজবে ভাবতে পারেনি বোধ হয়।
আমি ঠিক জানতাম ঢাক বাজবেই ।কাল সোহরাই। প্রস্তুতি নিতে হবে তো।কুয়াশার সাথে মিশে অন্ধকার গাঢ় হয়।
কষ্টিপাথরের মত সুগঠিত কালো হাতে ঢাকে ক্রমাগত বাড়ি দিচ্ছে ক্ষিতিশ ,ফোলাফোলা চোখমুখ নিয়ে হাড়িয়ার নেশায় চুর হয়ে সবাই হাসছে, খুব হাসছে। একটামাত্র পায়ে চাপড় দিতে দিতে বেঙুও দেখ কীরকম হাসছে।
গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে আমি সব স্পষ্ট দেখি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫০