শান্ত এক শহর দিনাজপুর। যেন ঘুমিয়ে পড়া কোন এক শহরের চিত্র আপনার চোখের সামনে। নেই বাড়তি কোলাহল, নেই জ্যাম জট, আছে শুধু প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য স্বাভাবিক ভাবে ছুটে চলা মানুষের পায়ের ধ্বনি। এই শহরের-ই চারিদিকে ছড়িয়ে আছে নানা নিদর্শণ। যা কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। তেমনি এক নিদর্শনের নাম রামসাগর। এটা দিনাজপুর শহর হতে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে তেজপুর গ্রামে অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে তুলনামুলক অপ্রসস্ত একটি রাস্তা বয়ে চলে গেছে রাম সাগরের দিকে। রাস্তার দু ধারের সারি সারি গাছ আপনার মনকে করে তুলবে প্রানবন্ত । ক্ষনিকের জন্য আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক অজানা ভুবনে। দু ধারের গাছের উপরের দিক গুলো একসাথে মিলে গেছে যা প্রাকৃতিক ভাবেই একটা ছাদ তৈরী করে রেখেছে এইজন্য আপনার কাছে মনে হতে পারে কোন সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে চলছেন আপনি।
ধারণা করা হয় রাজা রাম নাথ ১৭৫০ সালের কাছাকাছি কোন এক সময়ে এই রামসাগর খনন করেন। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শ্রমিক এতে অংশ নেয়। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৭৮০ মিটার প্রসস্ত এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৯২ মিটার লম্বা। রামসাগরের চারিদিকে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় সাদৃশ বাধ বা পুকুরের পাড়। রয়েছে চারিদিক প্রদক্ষিণ করার রাস্তা। নানা ধরেনের পুরানো এবং নতুন গাছের সমাহারে সাজানো চারিদিক। রয়েছে পরবর্তীতে কৃত্রিম ভাবে বানানো নানা ধরনের পশু পাখির প্রকৃতি । এছাড়া কিছু হরিণও আপনার চোখে পরবে যা কতৃপক্ষ পরে সংযোজন করেছেন। পাখির কলতানে আর ঠান্ডা বাতাসের ঝলকানিতে মনের মধ্যে শান্তির পরশ পাবেন এ কথা বলা যায় নিসন্দেহে।
এই সাগর নিয়ে লোকও মুখে প্রচলিত আছে নানা ধরনের গল্প। কেউ কেউ বলেন পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে রাজা রাম নাথ এই পুকুর খনন করার পরিকল্পনা করেন । কেউ কেউ বলেন রাজার বাড়ি ছিল মধ্যখানে, পুকুর খননের পরে পানির জুয়ারে রাজার বাড়ি সহ পানির মধ্যে ডুবে গেছে। আরো কত গল্প শােনা যায় এই রামসাগর নিয়ে তার শেষ নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি এই গল্পগুজব আপনার ভাল লাগুক আর নাই লাগুক রামসাগর আপনার ভাল লাগার কথা।
চলুন ঝটপট দেখে নেই রামসাগরের কিছু দৃশ্য:
প্রবেশ পথ
রামসাগরের ভিতরের রাস্তা
রামসাগরের একাংশ
সুর্যাস্তের প্রহরের একটি দৃশ্য
রাস্তার দৃশ্য
রামসাগরের একাংশ
কৃত্রিম হরিণ
আরিজিনাল হরিণ
দুরদৃষ্টি
যাতায়াত: ১) ঢাকা থেকে আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যমলী, কল্যাণপুর, টেকনিকাল মোড় অথবা গাবতলী হতে নাবিল, হানিফ, শ্যমলী, বা বাবলু এন্টার প্রাইজের চেয়ার কোচে করে সরাসরি দিনাজপুর। প্রায় সারাদিন ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টা পরে পরে গাড়ি গুলো ছেড়ে যায়।
২) কমলাপুর থেকে ট্রেনে সরাসরি দিনাজপুর যাওয়া যায়। যা সন্ধা ৭:৫০ মিনিটে (মনে হয়) কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়।
দিনাজপুর শহর থেকে চার্জার রিক্সা, টেম্পু, বাস বা নরমাল রিক্সা দিয়ে রামসাগরে যেতে পারবেন।
আমি বলব রিক্সা বা চার্জার রিক্সা দিয়ে ভ্রমণ করুন বেশী ভাল লাগবে।
যাতায়াত সময় ( ঢাকা থেকে দিনাজপুর) : বাসে ৬-৮ ঘন্টা, ট্রেনে ১০-১২ ঘন্টা।
খরচা পাতিঃ নন এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা ঢাকা থেকে দিনাজপুর আর ট্রেনের ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা [ বাসের যাত্রা বিরতী সিরাজগঞ্জ মোড় হতে বগুড়া পর্যন্ত দিয়ে থাকে। ফুড ভিলেজ, ফুড গার্ডেন, ফুড পেলেস, হানিফ হাইওয়ে, হোটেল পেন্টগন, হোটেল চিলিস এই সব রেস্টুরেন্টে সচারাচর যাত্রা বিরতী দিয়ে থাকে]
দিনাজপুরে মালদাপট্টি, বাহাদুরবাজার, মডার্ণমোড়ে কিছু আবাসিক হোটেল আসে। একদিনের জন্য ২০০-৫০০ টাকা ভাড়ায় থাকতে পারবেন।
দিনাজপুরের দেখার মত অন্যান্য স্থান গুলোঃ কান্তজির মন্দির, সুখ সাগর, মাতা সাগর, স্বপ্নপরী, রাজবাড়ী , সিংগাইর ফরেস্ট ইত্যাদি।
কৃতজ্ঞতা: গুগোল মামা। ক্যামেরা না থাকায় অনেক ছবি তুলতে পারি নি। তবে এই দৃশ্য গুলোই আমার চোখে ধরা পরেছে।
তাহলে আর দেরী কেন সময় সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন উত্তর বঙ্গের জেলা দিনাজপুরের রামসাগর থেকে । আর মনে নিয়ে আসুন শান্তির পরশ।
ধন্যবাদ।