যশোর সদরের বালিয়া ভকুটিয়া মাধ্যমিক স্কুলের তিন শিক্ষক ও ছেলেকে বাঁচাতে আসা এক শিক্ষকের বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী। আহত তিনজন কোনোক্রমে পালাতে পারলেও পুলিশ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক শিক্ষককে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে। হামলাকারীরা পরে স্কুলের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলের অ্যাসেম্বলি চলাকালে শত শত ছাত্রছাত্রীর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন_স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের, শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও শিক্ষক ইউসুফ আলী এবং জাহাঙ্গীর আলমের বাবা আবু হানিফ। তাঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুল কাদেরকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থা গুরুতর।
একটি সূত্র জানিয়েছে, স্কুলের তিনজন শিক্ষক মশিউর রহমান, মতিউর রহমান, শীতল মজুমদার একজোট হয়ে অপর দুই শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও ইউসুফ আলীকে পদত্যাগ করতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। গতকাল তাঁদের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে।
আহত প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের জানান, 'গত ৮ মার্চ স্কুলের পিকনিক ছিল। তাতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই শিক্ষক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, ইউসুফ আলী যাননি। এতে স্কুলের অন্য তিন শিক্ষক মশিউর রহমান, মতিউর রহমান, শীতল মজুমদার তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে গত বুধবার ওই তিন শিক্ষক জাহাঙ্গীর ও ইউসুফকে ক্লাস নিতে দেননি। তাঁরা দুজনকে গতকাল সকাল ৯টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। গতকাল পদত্যাগপত্র লিখে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু তাতে রাজি হননি জাহাঙ্গীর আলম ও ইউসুফ।'
আবদুল কাদের বলেন, 'পরে সকালে অ্যাসেম্বলি করার সময় থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী শহিদ, মিলন, আহম্মদ আলী, আশ্রামসহ ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী স্কুলে এসে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের জামার কলার ধরে স্কুল মাঠে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। আমি বাধা দিতে গেলে ওরা আমাকেও হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। প্রাণভয়ে ছাত্রছাত্রীদের সামনে আমি দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা শিক্ষক ইউসুফকেও পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনিও পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু জাহাঙ্গীর তাদের হাত থেকে ছুটতে পারেননি। একপর্যায়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে ছুটে আসেন জাহাঙ্গীরের বাবা আবু হানিফ। তিনি ছেলের প্রাণভিক্ষা চান। এ সময় তারা তাঁকেও মারধর করে। এরপর সন্ত্রাসীরা স্কুলের জানালা-দরজা ভাঙচুর করে তালা লাগিয়ে দেয়।' প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, 'শাহারুল ম্যানেজিং কমিটির কেউ না। এমনকি তার কোনো ছেলেমেয়েও এই স্কুলে পড়ে না।'
স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ইমরান, ছাত্রী সুফিয়া খাতুন জানায়, 'জাহাঙ্গীর স্যারকে আমাদের সামনে মারধর করে লাইব্রেরিতে আটকে রাখা হয়।'
হামলার খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে আহত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় আহত প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদেরও হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিস বলেন, এসআই হাফিজ আহত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ ব্যাপারে এখনো কেউ মামলা করেনি।
মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে শাহারুল ইসলাম বলে, 'ঘটনার সময় আমি রেজিস্ট্রি অফিসে ছিলাম। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। এলাকার লোকেরা শিক্ষকদের পিটিয়েছে। আমার কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত না।'
http://www.kalerkantho.com/
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১০ ভোর ৬:০৮