অবশেষে ন্যায়বিচার হইছে এবং সেইটা দেখাও যাইতেছে
এক.
ন্যায় বিচারের অনিবার্য খাসলত হইলো- বিচার শুধু হইলেই চলবো না, বিচার যে হইছে সেইটা দেখানও লাগবো। (জাস্টিস অলসো বি সিন দ্যাট জাস্টিস ইজ ডান।)
যতটুকুন বুঝছি- এই মামলার ক্ষেত্রে দুইটাই হইছে। গ্রেট জব।
দুই.
যে অভিযুক্ত তার জন্য ন্যায় বিচার হইলো; সে যে অভিযুক্ত না, এইটা প্রমানের জন্য তারে সব সুযোগ দিতে হইবো- সেইটা দেয়া হইছে।
তিন.
যে অপরাধের শিকার তার জন্য ন্যায় বিচার হইলো; যে প্রকৃত অপরাধী তাদের প্রত্যেকের অপরাধের পরিমান কিংবা তীব্রতা অনুযায়ি যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা- সেইটা পুরোপুরি হইছে বইলা মনে হয় না।
মুশকিল যেইটা ঘটছে তা হইলো- (যাদের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখা হইছে তারা সবাই নিসন্দেহে 'অপরাধী' হিসেবে আদালতের কাছে 'প্রকৃত')। শাস্তিপ্রাপ্তরা ঘটনায় সরাসরি জড়িত। কিন্তু ঘটনার সার্বিক ঘটনে, সব সংগঠনকারীরা নিশ্চয় আইনের মধ্যে আসেন নাই।
তখনকার আর্মির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই দন্ডার্হ্য নরহত্যার, কালাপাবল হোমিসাইডের দায়, এড়াতে পারেন না।
আমরা সব রাষ্ট্রবিরোধী হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চাই
আমরা একাত্তরে নিজেগো রাষ্ট্র কায়েমের জন্য লড়ছি, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। যুদ্ধ জিতছি। রাষ্ট্রে আমরা সবাই নাগরিক হইছি। নিজেগো মইধ্যকার বিবাদ, এবং নিজেদেরই বানানো রাষ্ট্রের সাথে বিবাদ মেটানোর জন্য আদালত বানাইছি। যদি আপনে মনে করেন আমি আপনের ওপর অপরাধ করছি- তাইলে আদালতের কাছে যান, বিবাদ মেটানোর কাজ ওইখানে হয়, সেইটা আপনে নিজে করতে পারেন না। রাষ্ট্ররে দেখভাল করার দায়িত্ব যারে দিছি, সেই সরকার যদি মনে কারে আমি-আপনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ করছি, তাইলে সেও তার শাস্তি দিতে পারে না, আদালতের কাছে যাওয়া হইলো নিয়ম।
কিন্তু বাংলাদেশ, আমার দ্যাশ, শুরু থেইকাই এই নিয়ম মানে নাই। সে নিজেই আদালত হয়া উঠছে। আদালতের বিকল্প রক্ষীবাহীনি বানাইছে। হাজারে হাজারে আপনারে আমারে ধইরা মৃত্যুদন্ড দিয়া ফেলাইছে। রক্ষীবাহীনি যাওয়ার পর সেনারা আদালতের দায়িত্ব নিছে। পুলিশরেও এই দায়িত্ব দিছে। সবশেষে র্যাব বানাইছে। কিন্তু আদালত কিছু কয় নাই।
এক.
এই প্রথম দেখলাম আদালত কইছে, কাজ করছে। রক্ষীবাহীনি কর্তৃক হাজার হাজার হত্যাকান্ড দেইখা যে আদালত কিছু কয় নাই, বাংলাদেশের প্রথম সরকারপ্রধানরে দেশেরই সেনাবাহীনি হত্যা করার পরে যে আদালত অনুমোদন দিছে, বিচার আচারের জন্য আদালতে না আইনা মানুষ হত্যা করার অপরাধে সেনা-পুলিশ-র্যাবরে কখনো যেই আদালত কিছু কয় নাই, সেই আদালত গত ১৭ নভেম্বর কাজ করছে, আদালতের মতো কাজ!
১৫ তারিখ রাইতে মাদারীপুরে দুই ভাইরে গুলি কইরা মাইরা ফালাইছে র্যাব, আদালত র্যাব এর বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু করছে, নিজে নিজেই। সুয়েমোটো রুল জারি কইরা হাইকোর্ট বিভাগ তাগোর কাছে জবাব চাইছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এইটা প্রথম। আদালতরে আমরা বলতে চাই- আগায়া যান। আমার দ্যাশ যেভাবে নিজের ন্যায্যতা হারাইতাছে সেইটা কিছুটা হইলেও ঠেকান।
দুই.
এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে আইজ, ১৯ নভেম্বর, আরেকটা প্রথম ঘটনা ঘটছে। বিচারবহির্ভূত তো বটেই, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড প্রধানত, দেশের প্রধান রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার হইছে। নাগরিক হিসাবে (যে নাগরিক রাষ্ট্র বানায় এবং বানায় পারস্পরিক এবং রাষ্ট্রের সাথে সম্র্পকিত- দুই ধরনের বিবাদ মেটানোর কাজ আদালতের হাতে সোপর্দ কইরা দিয়া) আজ আমার-আপনার মহা আনন্দের দিন, শুকরিয়ার দিন। আদালতরে আমরা শুকরিয়া জানাই। জানাই আইনজীবীদেরও।
তিন.
এখনো বাদ আছে রক্ষীবাহীনি আর র্যাব। মাঝখানে সেনা পুলিশের বিশাল হত্যাকান্ডের তালিকা তো আছেই। তখন আমারে আপনারে যেভাবে হাজারে হাজারে মারা হইছিল, যেসব বিচারবহির্ভূত এবং যেগুলোর অধিকাংশই রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটানো হইছিল সেগুলোরও ন্যায়বিচার চাই, মাননীয় আদালত!
কারন এমন বিচার বহির্ভূত এবং রাজনৈতিক হত্যাকান্ড যদি রাষ্ট্র নিজে ঘটায় তবে যে চুক্তি কইরা এই ভূখন্ড রাষ্ট্র হইছে আর আমি নাগরিক হইছি- সেইটা লংঘিত হয়। রাষ্ট্র অন্যায্য হইয়া যায়। আমরা সেইটা চাইনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১১