
জলের কিনারা ধরে পিলপিল পায়ে হাঁটতে পারে অসম্ভব দ্রুতবেগে, হাঁটার ধরন অনেকটা নাগরবাটোই পাখির মতো। প্রয়োজনে দুপায়ে ব্রেক কষতে পারে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এবং মুহূর্তেই স্ট্যাচু হতে এদের জুড়ি মেলা ভার। জল-মাটি-পরিবেশের সঙ্গে ক্যামোফেজ হতে জানে। ধ্যানী-জ্ঞানী-অধ্যবসায়ী ও ক্ষিপ্রগতির পাখি এই ছোট বকটি। দিনের আলো তেমন পছন্দ নয়, তাই ভোরে ও সন্ধ্যার আগক্ষণেও ফকফকে জোছনা রাতে চরে। দক্ষ শিকারি এরা। ঠায় দাঁড়িয়ে ঠোঁট-বল্লম চালিয়ে শিকার গাঁথতে পারদর্শী এরা, তবে শিকার যদি ফসকে-ছিটকে যা তো ঝাঁপ দিয়ে জলে পড়ে, প্রয়োজনে ডাইভ মেরে জলে নেমেই ঠোঁট-বল্লমে শিকার গেঁথে বা ধরে লাফ দিয়ে উঠে আসে ডাঙ্গায়।

মেয়ে ও পুরুষ পাখি দেখতে মোটামুটি একই রকম। নিরীহ-লাজুক এই পাখিটির শরীর চকচকে-ঝকঝকে। মাথার তালু ধূসর-নীলাভ-শ্লেটি। চিবুক সাদা, চোখের উপরিভাগেও সাদা টান। কপাল গাঢ় সবুজ। ঘাড় সবুজ, ডানার প্রান্ত সাদা। বুক সাদা, তার নিচ থেকে পেট ও পেটের দুপাশসহ পায়ের পালক সাদাটে ও ছাইরঙা, তাতে আবার সাদার হালকা প্রলেপ। চোখ কালো, ঠোঁট কালচে। ঘাড় থেকে নিচের দিকে নেমেছে কালচে রং। মনে হয় চুল আঁচড়েছে পরিপাটি করে।

প্রধান খাদ্য এদের মাছ, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, জলপোকা, জল মাকড়সা, কাঁকড়া, কেঁচো, অ্যাঞ্জন ইত্যাদি। তবে ছোট সাপ ও কাঁকড়া ধরার সময় এরা যথেষ্ট সতর্ক থাকে। সাপ ঠোঁটে প্যাঁচ দিতে পারে! কাঁকড়া তার সাঁড়াশিতে চেপে ধরতে পারে! এ রকম শিকারের ক্ষেত্রে এরা উত্তেজিত হয়, লেজ দোলায় ফোলায় ও ঘাড়ের পেছন দিকের হিন্দু পন্ডিতের টিকির মতো পালকগুচ্ছটিকে নাড়ায়। তারপর চালায় ঠোঁট-বল্লম। এ রকম ক্ষেত্রে ওরা পাও ব্যবহার করে শিকারকে কব্জা করতে। মাছরাঙার মতো শিকারকে মাটিতে আছড়ায়ও।

বাসা করে মূলত বর্ষাকালে। পছন্দ ছোট ও মাঝারি গাছ। কাঠিকুঠির বাসা। ডিম ৩-৫টি। দুজনই তা দেয়। ডিম ফোটে ২২/২৩ দিনে। না পারতে ডাকে না এরা। ডাকলে তা চাপা ঘণ্টা ধ্বনির মতো বা ঘুঙুরের শব্দের মতো লাগে।
এই পাখিটিকে খুবই কম দেখা যায়। দেশের সব অঞ্চলে নেই। বাগেরহাট, সুন্দরবন, সাতক্ষীরাসহ দেশের নির্জন চরদ্বীপ হাওরে দেখা মেলে। ঢাকা শহরে ক্বচিৎ দেখা যায়। অন্যান্য বকের মতো বঁড়শি টোপ এরা গেলে না সহজে। সহজে পাও ফেলে না ফাঁদে।


এদের ইংরেজি নাম Little heron. মাপ ৪০-৪৫ সেমি।
কৃতজ্ঞতায় : শরীফ খান
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:২৯