কংস মামা মানে বুঝেন তো?
নির্মম আত্মীয়।
ফার্মাসীর দোকানদারেরা হল বাংলাদেশের সাধারন মানুষদের “কংস মামা!”
এরা আমাদের দেশের মানুষের বন্ধু সেজে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করছে।
কিভাবে করছে বলছি।
তার আগে এটা একটু জেনে নিন যে, আপনার এলাকার কতজন ফার্মাসী দোকানদার সরকার অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট ডিপ্লোমা বা ন্যূনতম পেশাগত কোর্স করে এরপর ফার্মাসী চালাচ্ছেন! কতজনের সরকার অনুমোদিত ফার্মাসি কাউন্সিলের সনদ রয়েছে!
আমার চাকুরী এলাকায় মাত্র একজনের এই যোগ্যতা রয়েছে, তাও তিনি আগে সরকারী চাকুরী করতেন, এখন রিটায়ার করেছেন বলে।
বাকি কারোরই মানসম্মত ন্যূনতম কোন কোর্স করা নেই। সবাই এর সাথে ওর সাথে থেকে ঔষধ চেনে, এই ডাক্তারের কম্পাউন্ডার ছিল, এভাবে এই যোগ্যতা(!!) দিয়ে ফার্মাসী খুলে বসে আছে। আমজনতার কাছে এরা আবার বড় ডাক্তার!
আমাদেরকে বলে ভাই, উনাদের বলে ডাক্তার সাব।
ব্যাপার না। সঠিক চিকিৎসা দিতে ভাই হবার বিকল্প নাই!
আর আমাদের দেশের মানুষ কিনা একজন এম বি বি এস চিকিৎসকের তুলনায় এদের কথাই বিশ্বাস করে বেশী!
আমার একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা বলি।
এক রোগীকে দেশের প্রথম সারির একটি ফার্মাসিউটিক্যালস এর একটা মেডিসিন লিখে দিলাম, ৩ দিন পর রোগী এসে বলে ব্যথা কমছে না। ঔষধ দেখাতে বললে দেখালো, নাম না জানা এক কোম্পানীর একটা ব্যথার ঔষধ খাচ্ছে সে! ভালটা দিলাম এটা কেন খাচ্ছেন, এর জবাবে সে বলল, তাকে ফার্মাসীওয়ালা বলেছে ডাক্তাররা কমিশন খেয়ে দামি ঔষধ লিখে, তাই কম দামে ভাল ঔষধ দিয়েছে ফার্মাসীওয়ালা!!
এই রোগীগুলোই রোগ হলে দৌড়ে যায় ফার্মাসীতে। ফার্মাসীর লোকেরা না জেনে কিছু ঔষধ দেয়, যার ভেতর জনপ্রতি একটা না একটা এন্টিবায়োটিক থাকেই। এবং যেটা দেয়, সেটা হয় সেই রোগের এন্টিবায়োটিকই না অথবা ভুল ডোজে দিচ্ছে, তাও একদিন-দুইদিনের জন্য। রোগীরা যেহেতু সাময়িকভাবে ভাল বোধ করছেন, তারা সেই ফার্মাসীর লোকের ওপর আস্থা রাখছেন।
কিন্তু কয়েকদিন পর রোগীর পুরোনো উপসর্গ আবার ফিরে আসে এবং এবার আরো বেশী হয়, কারন, উল্টোপাল্টা এন্টিবায়োটিক খাওয়ায় জীবানু শক্তিশালী হয়ে গেছে। তখন সেই ফার্মাসীওয়ালারা তাদেরকে নিজেরা নিজেরা কিছু ইনভেস্টিগেশন করায়, এবং স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে ৩০% থেকে ৪৫% পর্যন্ত কমিশন খায়। পাব্লিক এতেও এদের সন্দেহ করে না!!
এরপর যখন রোগী ভাল হয় না, ফার্মাসী দোকানদারের এখানে আর কোন ব্যবসা থাকে না, সে তখন সরকারী হাসপাতালে পাঠায় এই রোগীদের, বলে দেয় “সরকারী ঔষধ খেলে ভাল হয়ে যাবেন।”
এই রোগীরা কিন্তু ইতিমধ্যে রেজিস্ট্যান্ট জীবানু নিয়ে বসে আছে। তাই প্রয়োজন পড়ে কিছু ইনভেস্টিগেশনের, প্রয়োজন পড়ে কিছু ভাল ঔষধের।
কিন্তু ততক্ষনে ফার্মাসীর দোকানদারের পাল্লায় পড়ে সে নি:স্ব।
তাই ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে দিয়েও আমরা হয়ে যাই কশাই, সাধারন সরকারী সাপ্লাই ঔষধ না দিয়ে প্রয়োজনীয় ভাল ঔষধ প্রেসক্রাইব করেও হয়ে যাই কমিশন লোভী।
আর মহামানব হয়ে বসে আছে আরেকজন!!
এটাই বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নির্মম বাস্তবতা এবং অন্যতম বড় হুমকি!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২২