somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের বিয়ে... তবে, কিন্তু, যদিও, তথাপি..

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরপেক্ষ অধ্যাপক ডক্টর আসিফ নজরুল আবারও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বলে অবগত হয়েছি, তার এবারের কনে হুমায়ূন আহমেদের কন্যা অভিনেত্রী শীলা আহমেদ। শীলাকে তিনি আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন বলে শুনেছি। প্রথম মেয়াদে সফলভাবে সংসার করার পর তিনি আরেক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীকে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক স্ত্রী হিশেবে গ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি শীলা আহমেদকে দ্বিতীয় মেয়াদে গদিতে বসিয়েছেন। বারবার স্ত্রী-ত্যাগের মধ্য দিয়ে আসিফ নজরুল নিজেকে একজন ত্যাগী স্বামী হিশেবে অধিষ্ঠিত করলেন। আমি লিখে দিতে পারি -- এর মাধ্যমে দেশ ছয় মাস এগিয়ে গেল।

কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশের একজন নাগরিক হিশেবে আমার কিছু কথা আছে। ক্যামেরা ট্রায়ালের মতো এটি ছিল একটি ক্যামেরা ম্যারেজ। বিয়েতে কোনো সাংবাদিকের উপস্থিতি ছিল না। দু মাস আগে বিয়ে হলেও দেশ ও জাতি তা জানতে পেরেছে আজ। বিয়ে নিয়ে এই লুকোচুরি এবং গোপনীয়তা দেখে বহির্বিশ্ব স্যারের ভিশন নিয়ে ভীষণ রকমের প্রশ্ন তুলতে পারে। তা ছাড়া, যে কাগজে কাবিননামা স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই কাগজটিও স্বচ্ছ ছিল না বলে আমরা জেনেছি। কাবিননামাটি একটি স্বচ্ছ টিশু পেপারে স্বাক্ষরিত হতে পারত। তা হলে বিয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকত না। এটা বাংলাদেশকে দেড় মাস পিছিয়ে দিল!

একটি মুসলিম বিয়েতে দুজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক। দুয়ের অধিকও থাকতে পারেন। সাক্ষীদের ভেতর মতাদর্শগত সমন্বয় ছিল না। আওয়ামি লিগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও বাম দলগুলো থেকে একজন করে সাক্ষী থাকলে সাক্ষীতালিকাটা নিরপেক্ষ হতো, সর্বদলীয় ও সর্বজনগ্রহণযোগ্যও হতো। রাষ্ট্রপক্ষ নিরপেক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় সাইদির মামলা দুর্বল হয়েছিল, সর্বদলীয় সাক্ষী না থাকায় এই বিয়েটাও নিঃসন্দেহে কিছুটা দুর্বল হয়ে গেল। স্যারের বিয়েতে সর্বদলীয় সাক্ষীদের অনুপস্থিতি দেশকে পৌনে দু মাস পিছিয়ে দিল!

বিয়ের কাজি বাংলাদেশী ছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু স্যারের মতো আন্তর্জাতিক মাপের একজন টকশোবক্তার বিয়ের কাজি আন্তর্জাতিক মানের হতে পারত। কাজি পাকিস্তান থেকে এলে সেটি সবচে বেশি আন্তর্জাতিক মানের হতো এবং বহির্বিশ্বের পর্যবেক্ষকরাও এ নিয়ে বিতর্ক করার অবকাশ পেতেন না। এর ফলে দেশে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যেতে পারে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। ডক্টর ইউনূসকে লাঞ্ছিত করে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, স্যারের বিয়ের কাজি আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ায় দেশের ইমেজ এর চেয়ে কোনো অংশে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এটি দেশকে কয় মাস, কয় সপ্তাহ, কয় দিন, কয় ঘণ্টা পিছিয়ে দিল; তা আমি বলতে পারব না!

বিয়ে যেহেতু দু মাস আগেই হয়েছে, সেহেতু বর-কনের বাসরও নিশ্চয় হয়ে গেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই বাসরশয্যাটির কোথাও উঁচুনিচু ছিল না, শয্যাটি সমতল ছিল। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হবার জন্য, উভয়পক্ষের সমান অংশগ্রহণের জন্য বাসরশয্যাটিকে হতে হয় একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড; আশা করি স্যার লেভেল প্লেয়িং বাসর নিশ্চিত করেছেন। যদি না করে থাকেন, তা হলে দেশ যে দশ মাস দশ দিন পিছিয়ে গেছে -- এতে কোনো সন্দেহ নেই!

এমনও হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইশু থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার এই বিয়ের নাটক সাজিয়েছে। কোনো সম্ভাবনাকেই দেশের এই ক্রান্তিকালে উড়িয়ে দেয়া যায় না কিন্তু!

আমি আসিফ নজরুল স্যারের সরাসরি ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সে তিনি আমাদেরকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন পড়াতেন। প্রতিটি বাক্যের শেষে তিনি বলতেন -- 'ট্রাস্ট মি!' 'বিলিভ মি!' স্যারের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি -- ট্রাস্ট মি, এই বিয়েতে আমি ও আমরা আনন্দে উদ্বেল হলেও বহির্বিশ্ব এই বিয়ে মেনে নাও নিতে পারে। আমি বলছি না যে, এই বিয়েতে কোনো অসঙ্গতি আছে। কিন্তু বহির্বিশ্ব যাতে এই বিয়ের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মান নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে না পারে; এজন্য নিজেরা-নিজেরা আলাপ করার জন্য আগেভাগেই এই ইশুগুলো তুলে ধরলাম।

স্যার নিরপেক্ষ অধ্যাপক, আমি স্যারের নিরপেক্ষ ছাত্র। তার বিয়েতে শুভেচ্ছা জানালে এক পক্ষ আনন্দিত হবেন, আরেক পক্ষ ব্যথিত হবেন। আমিও স্যারের বিয়েতে শুভেচ্ছা জানাব; তবে, কিন্তু, বাট...

সূত্র: কবি আখতারুজ্জামান আজাদ।
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×