দেখিনু সেদিন, সভায় আসীন- শরাবমত্ত রাজা,
শতেক সান্ত্রী, ডানেতে মন্ত্রী- বামে সেনাপতি ভজা;
দুলিতেছে মন- ডরায় ভীষণ, কেমনে যাইব তাহায়
বড় অপকার- নচেৎ আমার, নাহি দেখি চোখে উপায়;
হাতেতে শরাব- বাংলা নবাব, গদিতে দিয়াছে ঠেস-
রূপসী দু’দাসী, দুপাশেতে আসি- পাখা দুলাইছে বেশ;
রাজ নর্তকী- চামেলী কেতকী, কোমর দোলায় তালে
রাজা যত হাসে- সভাসদ ভাসে, রঙিন শরাব জলে!
মন্ত্রী গজা- লইতেছে মজা, কামনা মত্ত চোখ
ভজা সেনাপতি- দুলাইয়া ছাতি, কুঁদিয়া হাসায় লোক;
সান্ত্রী সকলি- কানে বলাবলি, কি করেছি মোরা দোষ!
গিলিতেছে রাজা- সাথে গজা ভজা, কারোই কি নাই হুঁশ?
গলাখানি হাট- শুকাইয়া কাঠ, তবুও যায়না বলা-
জিভেতে যে জল- করে টলমল, শরাবের তরে জ্বালা;
রাজার খুশি- বড় বেশি বেশি, মত্ত রাজা নেশায়
হাহাকারী সভা- তরল লাভা গলায় ঢালার আশায়;
আমি অভাজন- সাধুবাদী মন, কোণেতে দাঁড়াইয়া ভাবে
রাজার যে হাল- হুঁশের আকাল, দেশের দশা কি তবে!
বুকে আশা বাঁধি- আসিয়াছি যদি, হয় রাজমনে দয়া-
মুশকিল খান- হইবে আসান, সরিবে অশনি ছায়া ।।
হায়রে এথায়- রাজাতে ঝিমায়, ডানে বামে গজা ভজা-
চুলকাই মাথা- নাই যে ক্ষেমতা, ডাকিয়া তুলিব রাজা;
গরীব কিষাণ- আমি পেরেশান, কার আসে যায় তাতে-
রাজা রাজভোগ, অমৃত যোগ- গরীবের ছাই পাতে!
সকলি আপন- চিন্তা মগন, কেউ নয় কারো তরে
আমার বেদন- আকুল রোদন, বোঝাই এখানে কাহারে;
কাঁপিতেছে কায়া-- সাথে মোর ছায়া, কোণেতে দাঁড়াইয়া ঠায়
নড়িতেছে উরু- বুক দুরুদুরু, কবে না ফাটিয়া যায়!
হঠাৎ কাশিয়া- ঈষৎ হাসিয়া, মেলিলেন রাজা চোখ
খুলিতেই দেখি- চমকান সে কি! কোণেতে এ কোন লোক?
আছে সবে পড়ি- সোনা ভরি ভরি, রঙেতে জড়ানো ভূষণ-
এ কে গো হায়- আছে খালিগায়! কোত্থেকে এলো কুজন;
রাজ দরবার- সম্মান তার, সকলি ভাসিয়া যায়
এ কি আপদ! সমূহ বিপদ- মন কাঁপে শঙ্কায়;
রাজা গর্জায়- সভা বর্ষায়, এ কোন লক্ষীছাড়া-
আমার সভাতে- কেন রে হাভাতে- যেত না কাপড় পড়া?
আমি কেঁপে কই- ওহে মহাশয়, নাই যে ক্ষুধার অন্ন
তবু কন যদি- আনিব জলদি, রাজ তুষ্টির জন্য;
রাজা ক্ষেপে খুন- এ কেমন ধুন, আমার প্রজার মুখে!
গজা তুমি কও, ইহারে শুধাও- দেশ কি নাই সুখে?
গজা কয় কাশি- সুখী বারমাসি, আমরা সভার লোক
কি জানি কেমন- আর প্রজাজন, করিছে পালন শোক;
শরাবেতে ডুবি- রহিয়াছি সবি, না জানি দেশের খবর,
সুখেতেই সবে- রহিয়াছে ভেবে, করিতেছি মৌজ জবর;
শুনি রাজা ক্ষেপে- কহে আক্ষেপে, হায়রে দেশের প্রজা!
অতিশয় বদ- মোর সভাসদ, দিব তারে আজি সাজা;
রাজা কন ভেবে- গজা জেলে রবে, না চাই মন্ত্রী এমন
শুনিয়া সকলে- উৎসাহে বলে, জয় হোক তব রাজন;
আজ হতে তবে- মন্ত্রী সে হবে, ভাবিয়া সকলে খুশি,
উঠিয়া রাজন- আমারে সে ক্ষণ, অভিষেক করে হাসি!
হলেম মন্ত্রী- হাজার সান্ত্রী, আমার হুকুম পিছে
ফরিয়াদ আনি- কি সুখে জানি, পড়িয়াছি মালা মিছে;
করিব মোচন- দিলেম বচন, লাখো গরীবের শাপ,
হাহাকার ভুলি, মাতিবে সকলি, এমনই মোর প্রতাপ!
কিন্তু যে হায়- কি রোগ আমায়, ধরিল জাপটে শেষে!
নিজ যত কাজ- ভুলিয়া সমাজ, তোষামোদ করি হেসে;
চাহিয়া অবাক- নিজে মারি হাঁক, আয়নায় দেখে মুখ
ছেঁড়া জামা নাই- আজ সারা গায়, সোনায় মোড়ানো বুক;
প্রজার কান্না- খরা কি বন্যা- কি মোর তাতে আসে!
রঙিন গরল- জ্বলুনি অনল, পোড়ায় না আর হাসে;
কাক যেন আজ- পরিয়াছি সাজ, পালকেতে ঢেকে ময়ূর,
রাজাও মাতাল- আমিও বেতাল, দেশ গিলে তুলি ঢেকুর;
মত্ত নেশায়- ডোবায় আমায়, বসুমতী চোখে প্লাবন!
বুঝিলাম হায়- সোনার লঙ্কায়, যে যায় সে হয় রাবণ !!!
অংকনের সাতকাহন