আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে অনেক শিক্ষকের কাছেই পড়া হয়েছে – এখনও পড়ছি - সবাই কম-বেশি প্রভাব রেখে গেছেন নানাভাবে।
স্কুল জীবনে মার খাওয়া -কানে ধরে উঠবস – এগুলো সবই করতে হয়েছে অনেকবার – কিন্তু ভয়াবহ রকম মার খাওয়ার একটা ঘটনা সারাজীবন মনে থাকবে-
মনিপুর স্কুলে ক্লাস ফাইভের বৃত্তি কোচিং- সোহরাব আলি স্যার এর বিজ্ঞান ক্লাস।স্যার এর ক্লাস মানেই আমি-দীপ–অপু আর অভিষেক এই কয়জনকে পড়া ধরা হবেই!কেন জানি স্যার আমাদের এই ৪ জনকে বাকিদের থেকে একটু আলাদা করে ধরতেন।
সেদিন ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা চলছে।একটা প্রশ্নের উত্তর মনে ছিল না-কোন একটা রোগের লক্ষণ লিখতে বলা হয়েছিল।মনের মাধুরী দীক্ষিতকে(!) মিশিয়ে বেশ কিছু কাল্পনিক লক্ষণ তৈরি করে লিখে দিলাম।ভাবলাম স্যার যদি পড়ে না দেখেন তাহলে তো বেঁচেই গেলাম,আর নয়তো শুন্য দিয়ে রাখবেন-এর বেশি আর কি বা হবে!
কয়েকদিন পর স্যার ঐ পরীক্ষার খাতা দিলেন।সবার খাতা দেয়া হল-আমার খাতাও পেয়ে গেছি-ঐ প্রশ্নে সম্ভবত ১/১.৫ পেয়েছিলাম ৪ এ।
খাতা দেয়া শেষ হওয়ার পর স্যার আমাকে ডাকলেন।ক্যাপ্টেনকে ডেকে বললেন আমার ড্রয়ার থেকে বেত নিয়ে আয়।বেত আনা হল।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাৎ করে স্যার আমাকে কান ধরে টেনে এনে পিঠের উপর সমানে বেত্রাঘাত চালাতে লাগলেন।হতবম্ভ হয়ে মার খাচ্ছি – বেতের শাঁই শাঁই শব্দ ছাড়া শুধু একটা কথাই কানে এলো – “ভালো ছাত্র তুই-পড়লেই পারিস-তাও আজে বাজে ভাবে বানিয়ে লিখলি কেন?কেন লিখলি?”
আর কিছু শুনতে পাই নি….খুব অভিমান হয়েছিল – মার খেয়ে সোজা হেঁটে চলে এসেছিলাম – কারও দিকে তাকাই নি পর্যন্ত ।
পরেরদিন স্যার ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন – কিছু বলেন নি – স্যার এর চোখের কোণে একটু পানি জমে ছিল কি?
মনে নেই... কিন্তু সেই স্নেহ আর আন্তরিকতা আজীবন মনে থাকবে...
সেদিন অনেক রাগ করেছিলাম স্যার – কিন্তু এরপর অনেক শিক্ষকের ক্লাস করেছি – আর কেউ কোনোদিন ঐভাবে বলেনি – নিজের যোগ্যতা আর সামর্থ্য আর কেউ এভাবে চিনিয়ে দিতে পারেনি বলেই হয়তো এখন মাঝে মাঝেই দিশেহারা আর অসহায় লাগে – কিন্তু আপনি ঐভাবে বলেছিলেন বলেই হয়তো আজ এতোটুক পথ পাড়ি দিতে পেরেছি...
ভালো থাকবেন স্যার – দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন – আপনার সেই পরিচিত হাসি নিয়ে আরও অনেক ছেলে-মেয়েকে মানুষ করে দিয়ে যাবেন