somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোস্ট ওয়েলকাম--মুভি রিভিউ এবং আরও কিছু কথা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“মোস্ট ওয়েলকাম” মুভির রিভিউ দেয়া কঠিন - কারণ অনন্ত অভিনীত মুভিগুলো দেখা মানে শুধু মুভি দেখাই নয় – সেটা অন্য মাত্রার একটা অভিজ্ঞতা!

কিছুদিন আগে দেখেছিলাম বলাকায়-এইটুকু বলতে পারি বিনোদনপূর্ণ কিছু সময় কেটেছিল – দর্শক যে পরিমাণ হাততালি দিয়েছিল তা কোনও ভাবেই “The Avengers” এর চাইতে কম নয়! অনন্ত ভাই কে ধন্যবাদ ডাবিং না করে তার নিজের কণ্ঠে আমাদের কিছু মহান সংলাপ শোনার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে, যেমন-

এবিসিঃ‘কিরে?ফোন পেয়ে প্যান্ট ভিজে গেছে?কে করেছে?কোন মন্ত্রী?’
অনন্তঃ ‘মন্ত্রী না,করেছে তোর মেয়ে।আর প্যান্ট ভেজেনি।ভিজেছে আমার হৃদয়’

কিংবা-
বর্ষাঃ তোমাকে নিয়ে আমি আজ খেলব।
অনন্তঃ আপনি কি বল যে আপনাকে নিয়ে খেলব??

কিংবা – “ ওকে সেরে দে” (ছেড়ে দে না কিন্তু!)

মূলত একটা তামিল মুভি “Kanthaswamy”(http://en.wikipedia.org/wiki/Kanthaswamy) থেকে পুরো কাহিনীটা মেরে দেয়া,তাই গল্পের গরু গাছে উঠলেও “খোঁজ – The Search” এর মতো একেবারেই ধারাবাহিকতাহীন লাগেনি। গানগুলো ভালো লাগেনি – তবে মুম্বাই থেকে নেয়া ২ নায়িকাকে আরও কিছুক্ষণ দেখালে দর্শক আরও বেশি বিনোদন পেত বলে মনে হল!

গ্রাফিক্স এর কাজগুলো দেখে চোখে পানি চলে এসেছিল – দেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে যে কম্পিউটার ইনজিনিয়ারদের কোনও চাকরি নাই তা ভালভাবেই বুঝলাম :’(
অনন্ত সাহেবের এত টাকা তবু এত লেম অ্যানিমেশন আর গ্রাফিক্স কেন ব্যবহার করা হল তা বুঝলাম না- এদিকটায় একটু নজর দিলেই ভালো করা যেত।

তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে- বলাকায় বেশকিছু মুভি দেখেছি কিন্তু এত ভিড় কোনদিন দেখিনি- হলে এত লোকজন ও দেখিনি সেদিন যেমন দেখেছিলাম। ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়ে + মধ্যবিত্ত দর্শকদের সপরিবারে দল বেঁধে বলাকার মতো হলে আনতে পেরেছে কিন্তু অনন্তর এই মুভিগুলোই- যেটা ইম্প্রেস টেলিফিল্মের তথাকথিত সিনেমাগুলো কিংবা ডিজিটাল ফরম্যাটে নাটককে লম্বা করে বানানো মুভিগুলো পারেনি।তাই একটা ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।


প্রথম হলে দেখেছিলাম "আগুনের পরশমণি"। কোন হলে তাও মনে নাই। কলেজে পড়ার সময় প্রথম সিনেপ্লেক্সে "Transformers" দেখা। তারপর সিনেপ্লেক্সে আরও বেশ কিছু মুভি দেখা হয়েছে -তার মাঝে থার্ড পারসন, মনপুরা ইত্যাদিও আছে।

ভারসিটি তে উঠার পর বলাকায় প্রথম মুভি দেখা , মুভিটা ছিল “খোঁজ – The Search”। এটা দিয়ে বলাকায় এন্ট্রি - এরপর বলাকায় দেখেছি
ফিরে এস বেহুলা- চারুলতা - উত্তরের খেপ - কমন জেন্ডার - লাল টিপ সহ বেশ কিছু মুভি-- এগুলা কোনটাই মহা ভালো কিছু মুভি হয়তো নয়,কিন্তু এখন আমার কাছে বাংলা মুভি দেখা মানেই বলাকা এবং ক্যাম্পাসের একদম কাছে হওয়াও এমনিতে যে মুভির নাম ও হয়তো জানতাম না তেমন কিছু বাংলা মুভিও দেখা হয়ে গেছে!

ঠিক আমার মতই অনেকে হয়তো প্রথমবার বলাকায় ঢুকলেন পরিবার সহ বা কেউ বন্ধুদের নিয়ে - অনন্তর মুভি দেখে হেসে বাড়ি ফিরলেন - কিন্তু হয়তো তাদের মাথায় এই ধারণাটা গেঁথে গেল- বাংলা মুভিও হলে গিয়ে দেখা যায় - এবং তা শুধু সিনেপ্লেক্সেই না, বলাকার মতো হলেও দেখা যায়!
আমার নিজের ক্ষেত্রেও অনেকটা এমনটাই ঘটেছে তাই আমি একটু হলেও অনন্তর কাছে কৃতজ্ঞ!

পরবর্তীতে এই বছরই হয়তো রেদয়ান রনির "চোরাবালি" কিংবা অনিমেষ আইচের "না মানুষ" বের হবে (যেগুলা ভালো মুভি হবে আশা করছি) তখন আজকে মুভিটা দেখা অনেকেই বলাকায় যাবে মুভিগুলো দেখতে-কারণ হলে গিয়ে বাংলা মুভি দেখা একটা হাস্যকর ব্যাপার - এই ট্যাবু থেকে তারা মুক্তি পেয়েছেন হয়তো অনন্তর কোনও একটা মুভি দেখে - যে মুভিটা ছিল একদমই বস্তাপচা! রুচির পার্থক্য থাকবেই কিন্তু তারপরেও বাংলা মুভি দেখতে হলে যাওয়া যায় এই উপলব্ধি হাতেগোনা কয়েকজনের এলেও সেটা এক ধরনের অর্জনই বলব – কারণ অনিমেষ বা রনিরা মনে হয়না রাতারাতি সেটা ১-২ টা মুভি দিয়ে করে দিতে পারবে কারণ ঐ-প্রচারণার অভাব থাকবেই।



এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলা যাক - বাংলা সিনেমার উত্তরণের উপায় বা আশা হিসেবে আমি মেধাবী নতুন পরিচালকদের আগমনকেই দেখি, কিন্তু সমস্যা হল অনেকেই কয়েকটা নাটক বানায়েই মনে করছে আমি এখন মুভি বানায়ে ফেলতে পারব- স্পন্সর ও পাচ্ছে,মুভিও তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেগুলার বেশিরভাগ নামেই মুভি, আসলে একটু দীর্ঘায়িত নাটকই বলা চলে এগুলোকে।

সিনেমা যে একটা বিশাল ক্যানভাস এর কাজ সেটা সবার আগে এই সৃষ্টিশীল নির্মাতাদের বুঝা দরকার। আমি মুভি বানালাম- আমার কাজ শেষ – প্রযোজনা সংস্থাগুলো বাকি কাজ করে নিবে আর আমি কয়েকটা টিভি আর রেডিও কিংবা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলেই হল- এই ধারণা থেকে বের হওয়া দরকার।

মিরপুর থেকে বলাকা যাওয়ার পথে আমি খেয়াল করলাম গোটা রাস্তা জুড়ে শাকিবের মুভিগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে অনন্তর মুভির পোষ্টারিং করা আছে। যে কেউ পছন্দ করি বা না করি/ দেখি বা না দেখি অনন্তর মুভিগুলোর নাম কিন্তু সবাই জানে – কবে ওর নতুন কি মুভি আসছে তাও অনেকেরই জানা – কারণ সিম্পলি প্রচারণা। রা – ওয়ান কিংবা দাবাং হল প্রচারণার উৎকৃষ্ট উদাহরণ – অতি বাজে ২ টা মুভি কিন্তু এত ব্যবসা করল তার কারণ ২ মেগাস্টার নিয়েই শুধু বসে থাকা হয় নাই, তাদেরকে দিয়ে যতটা সম্ভব, যেভাবে সম্ভব প্রচারণা চালান হইসে – মুভি বের হওয়ার আগেই “মুন্নি বদনাম হুই” কিংবা “ছাম্মাক ছাল্লো” টিভিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, যেগুলা আরও দর্শক টেনে আনতে পেরেছে। বাজে মুভি চলুক না চলুক মাথা ব্যথা নেই, কিন্তু ভালো মুভিগুলোর প্রচারণা জিনিসটা অন্তত শেখা দরকার এই বাজে মুভিগুলো থেকে।দর্শক- বিশেষ করে আমজনতার কাছে পৌঁছাতে হবে মুভিগুলোকে তবেই না মানুষ সত্যিকার অর্থে মুভিগুলো দেখতে আগ্রহী হবে।


অনেকে বলেন অনন্তর মুভি দিয়ে দেশের কোনও উন্নতি হচ্ছে না-তাদের জন্যে বলব অনন্ত যেমন বাইরে কাজ করিয়ে এনে দেশের উন্নতি করছে না তেমনি আমাদের সৃষ্টিশীল নির্মাতারাও মালটিপ্লেক্স এর উচ্চমধ্যবিত্ত দর্শককেন্দ্রিক মুভি বানিয়ে সত্যিকারের মুভি ইন্ডাস্ট্রির খুব বেশি উন্নতি ঘটাচ্ছেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সর্বস্তরের দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারছেন।



আরেকটা কথা, আমি কিন্তু একবারও বলি নাই মুভিটা ভালো লেগেছে – ৫-৬ জন মিলে মুভি দেখে বিনোদন পেয়েছি সেটা বলেছি!মুভি হিসেবে অতি নিম্নমানের - একা এই মুভি আমি হয়তো দেখতামই না, হলে গিয়ে দেখা তো দূরের কথা। এই বিশাল শহরে আমাদের মতো “Not in a relationship” মানুষজনের বিনোদনের বড্ড অভাব-তাই দল বেঁধে হলে গিয়ে জলিল ভাই এর মুভি দেখা – সমস্ত সিনেমা বিষয়ক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে ২ ঘণ্টা টাইম পাস – কোথাও বসে আড্ডা দেয়ার জায়গা পর্যন্ত পাওয়া কঠিন – ১০০ টাকা গচ্ছা দিয়ে না হয় হাসলাম সবাই মিলে কিছুক্ষণ – এই আরকি!

হলে গিয়ে মুভিটা দেখুন – তবে একা বা ২ জন না গিয়ে বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে দেখুন – মজা পাবেন :)


(পূর্বে ফেসবুকে সিনেমাখোর গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল-সেখানকার কিছু মন্তব্য সহ সংকলিত)
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×