আজ আকাশে তারা নেই। চাঁদটাও মাঝে মাঝে হারিয়ে যায় কালো মেঘের আড়ালে। মৃদু হালকা হাওয়া বইছে। এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ নেই তাই চাঁদের আলোটা পরিষ্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎই চাঁদের লুকিয়ে যাওয়াটা অন্ধকারের মাঝে অন্য এক ধরণের অন্ধকারের সৃষ্টি করছে। বিষণ্ণতা যেন চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে। চাঁদটা লুকানোর সাথে সাথে এক ধরণের কাকুতি ভরা অপেক্ষা শুরু হয়ে যায় কখন তা আবার দেখা দিবে। এই অপেক্ষার প্রহরটাও যেন অসাধারণ এক অনুভূতি। কখন যে ঐ কালোর মাঝে বৃক্তাকার সাদাটার দেখা মিলবে। সময়টা যেন খুব ভারি ভারি মনে হচ্ছে। ইচ্ছারাও যেন খুব প্রবল হয়ে এই মৃদু বাতাসের মত এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। মনে হয় অপেক্ষার প্রহর যেন খুব দীর্ঘতম। এক ধরণের শূণ্যতায় নীরব চারিদিক। এখনো অধীর আগ্রহে আকাশের ঐ দিকটার দিকে তাকিয়ে, যে দিকটায় কালোর আড়ালে লুকিয়ে আছে সাদা আলো! কবে আসবে সেই ক্ষণ। কবে দেখা মিলবে তার! কবে শেষ হবে এই কঠোর প্রতীক্ষার প্রহর! এইতো এখুনি আসবে, এই বুঝি এসে গেলো, এই বাক্য গুলো যেন কিছুটা হলেও নিরাশার উপর প্রবলভাবে কাজ করছে। গাড় কালো অন্ধকার। অন্ধকার যেন অন্ধকারকে গ্রাস করে আরও অন্ধকার নামিয়ে আনছে ধরণীতে। প্রবল বাতাসে মোম বাতির অগ্নি শিখার ন্যায় আশার আলো গুলো যেন নিভু নিভু। হঠাৎ কালোর বুক চিরে আঁধারে ফুটে উঠলো আলোর রেখা।গোলাপের কলি থেকে ফুল যেভাবে ফুটে উঠে সেভাবেই ধীরে ধীরে সেই সাদা আলো রূপ নিলো বৃক্তাকার আলোয় পরিপূর্ণ চাঁদে । এক নয়নে দেখছি দীর্ঘতম সময়ের পথ পেরিয়ে পাওয়া সেই আলোকে। কতই না মধুর সেই চাঁদ। কত সময় চলে গেছে তোমার অপেক্ষায়। তুমিত সেই চাঁদ, যাকে দেখার জন্য কঠিনতম পথ পারি দিতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু এই কি! কেন নেই প্রশান্তি এই মনে। কেন মনে হয় বারবার আশার পূর্ণতার মাঝে যেন সেই আশাই খণ্ডিত। কিছু একটা যেন অনুপস্থিত। অস্থিরতা বিরাজমান। যাকে এতক্ষণ ধরে চেয়েছি, যার অপেক্ষায় দিয়েছি কঠিন পথ পার, তাকে পেয়েও যেন অশান্ত মন। এখন যেন অনুভূতির মাঝে প্রকৃত বিস্বাদটা খুঁজে পাচ্ছি। মন বলছে তাকে না পাওয়াটাই ভালো ছিল। সে অপেক্ষার সময়টাই বরং ভালো ছিলো। কবে আসবে আসবে ভেবে একটা আশার আলো জাগ্রত ছিল কিন্তু সেটা পাওয়ার পর এখন সব কিছুই উদ্দেশ্যহীন মনে হয়। কোন অনুভূতি নেই, নেই কোন অপেক্ষার যন্ত্রণা। নেই কোন কিছুকে পাওয়ার এক প্রবল আকাঙ্খা। মনে হয় যেন জীবনটা যেন সেই পথিকের মত, যে গন্তব্য খুঁজতে খুঁজতে এক সময় পথের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে এবং যখন সে গন্তব্যে চলে আসে তখন তার মন সেই ফেলে আসা পথের দিকেই ফিরে যেতে চায়। কি অদ্ভুত! যেন শিরোনামহীন এক অনুভুতি যাকে কোন শিরোনাম দেয়া যায় না।
আসলে এটা মানুষের স্বভাবের একটি দিক মাত্র। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে চন্ঞ্চল প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার মন স্থায়ী ভাবে কোন কিছুতে থাকতে চায় না। এটাইতো মানুষের জন্য এক ধরণের পরীক্ষা, সৃষ্টিকর্তার প্রত্যেকটি আদেশ ও নিষেধকে নিজের মধ্যে অটল ভাবে ধরে রাখার। তারাইতো সফল ও সৌভাগ্যবান যারা নিজেদের মনকে স্থায়ীভাবে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের পথে নিয়োজিত করে রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৫৫