জামাতে ইসলামী পবিত্র ইসলামের মুখোশধারী একটি কালো শক্তি। জামাতীরা একাত্তরে ঘাতক দালালই নয়,তারা একটি বাতিল ফেরকা। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মওদুদীর বাতিল ধ্যান-ধারনার বাস্তব রূপ হচ্ছে জামাতে ইসলামী। মওদুদী উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রত্যেক নেতারই সমালোচনা করেছেন। তাঁর এই সমালোচনা রাজনৈতিক ব্যাপারেই সীমিত ছিলো না,ধর্মীয় বিষয়েও তিনি অনেক বাড়াবাড়ি করেছেন। নবী-রাসুল,সাহাবা কেরাম,ইমাম-মুজতাহিদ ও মনীষীদের সম্পর্কেও তিনি অনেক ধৃষ্টতামূলক উক্তি করেছেন। এমনকি পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার নবী-রাসুল পাঠানোর ব্যাপারেও তার আপত্তিকর মন্তব্য রয়েছে। এখানে তার বিভিন্ন লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করা যাক।
মওদুদী সাহেব তাঁর তফসীরের এক স্থানে লিখেছেন,“আল্লাহ্ সর্বপ্রথম যে মানুষটি সৃষ্টি করেন তাকে তিনি একথাও বলে দিয়েছিলেন,হাকিকত বা সত্য কি এবং তোমার জন্য সঠিক পথ কোনটি। কিছুকাল পর্যন্ত আদমের বংশধররা সঠিক পথে ছিলো এবং একই উম্মত বা জাতি হিসেবে থাকে। মানুষ নতুন নতুন রাস্তা বের করে এবং বিভিন্ন মত ও পথ উদ্ভাবন করে। (এই উদ্ভাবন)এজন্য নয় যে,তাদের সঠিক পথ জানা সত্ত্বেও তাদের কেউ কেউ নিজের বৈধ অধিকার অতিক্রম করে আরো ফায়দা ও মুনাফা হাসিল করতে চাচ্ছিলো। এই মন্দ প্রবণতা দূর করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা নবীদের পাঠানো শুরু করেন”। (তাফহিমুল কোরআন/১৬২ পৃষ্ঠা-মওদুদী।)
মওদুদী সাহেব তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে সর্বজ্ঞ ও সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহ্ তায়ালার অসীম জ্ঞানের ওপর কটাক্ষ করেছেন। তাঁর মন্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, প্রথমে আল্লাহ্ তায়ালার নবী-রাসুল পাঠানোর পরিকল্পনা ছিলো না। মানুষকে তিনি সঠিক পথের জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এই পদ্ধতিতে আল্লাহ্ তায়ালা মানুষ কে সঠিক পথে রাখতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি নবী-রাসুল পাঠানো শুরু করেন। মওদুদীর এই ব্যাখ্যা দ্বারা আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞানকে অসম্পূর্ণ বুঝানো হয়েছে। তাঁর এই উক্তি কোরআন-হাদীসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
নবী রাসুলদের নিষ্পাপ হওয়া সম্পর্কে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ইসলামিক চিন্তাবিদরা অভিন্ন মত পোষণ করেন। কিন্তু শুধু মওদুদী সাহেব ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলছেন,“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মূলত নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়। বরং নবুয়তের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা কৌশলগতভাবে তাঁদেরকে ভুলত্রুটি ও পদস্খলন থেকে নিরাপদ রেখেছেন। নতুবা তাঁদের ওপর আল্লাহ্ তায়ালার হেফাজত ক্ষনিকের জন্য উঠে গেলে সাধারণ মানুষের মত তাঁরাও ভুলভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় এই যে, আল্লাহ্ তায়ালা ইচ্ছে করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তাঁর হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাঁকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। তাতে করে মানুষ যেন নবীদেরকে খোদা বলে ধারণা না করে এবং জেনে রাখে এঁরাও মানুষ” (তাফহিমাত,২য় খণ্ড,৪৩ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
মওদুদী সাহেবের এই উক্তিটি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। অত্যন্ত স্পষ্ট। ইসলামের নামে তিনি সম্পূর্ণ ভুল ও বাতিল ধারণা প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর এই অভিমত প্রমাণের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন নবী ও রাসুলের নিষ্পাপ জীবনকে কলঙ্কিত করার দৃষ্টতা দেখিয়েছেন। হযরত মুসা (আঃ) সম্পর্কে মুওদুদী সাহেব বলেছেন,‘নবী হওয়ার পূর্বে হযরত মুসা (আঃ) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিলো। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” (রাসায়েল ও মাসায়েল,প্রথম খণ্ড,৩১ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
মূলত হযরত মুসা (আঃ) ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কতল বা খুন করেন নি। সেকালে মিসরে কিবতী বংশীয়রা ছিল শাসক। তারা বনি ইসরাইলীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতো। একদিন এক কিবতী একজন বনি ইসরাইলীকে মারধোর করছিলো। নির্যাতিত লোকটি হযরত মুসা সাহায্যে প্রার্থনা করে। হযরত মুসা অত্যাচারী কিবতীকে একটি ঘুষি মারেন। তাতে ঘটনাচক্রে লোকটি মারা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মওদুদী সাহেব হযরত মুসাকে খুনী হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
মওদুদী সাহেব পবিত্র কোরআনের একটি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন,“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে,হযরত ইবরাহীম (আঃ)যখন নত্র দেখে বলেছিলেন,‘এটা আমার প্রতিপালক’ এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকে নিজের প্রতিপালক হিসেবে অভিহিত করেন তখন সাময়িকভাবে হলেও তিনি কি শিরক-এ নিপতিত হন নি ?........” ( তাফহিমুল কোরআন,১ম খণ্ড, ৫৫৮ পৃষ্ঠা।)
হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্ন ওঠানোই একটা চরম দৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। কারণ নবী-রাসুলগন নবুয়াত লাভের আগে ও পরে নির্বিশেষে জন্মগতভাবেই নিষ্পাপ। আর ইসলাম বলে, আল্লাহ চাইলে সকল পাপ মাফ করবেন, কিন্তু তিনি শিরক মাফ করবেন না। তাহলে, কি মওদূদীর ভাষ্য অনু্যায়ী, আমাদের মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) দো্যখে যাবেন? আল্লাহ মাফ করুন আমাদের।
মুওদুদী সাহেব তাঁর তফসীরে হযরত ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন, “হযরত ইউনুস দ্বারা নবুয়তের দায়িত্ব পালনে কিছুটা অবহেলা বা অসতর্কতা হয়েছিলো।” (তাফহিমুল কোরআন,২য় খণ্ড, সুরা ইউনুস।)
মওদুদীর উদ্ভট অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। এর দ্বারা শুধু হযরত ইউনুসই সমালোচিত হন নি,আল্লাহ্ তায়ালার নবী মনোনয়নেও কটাক্ষ করা হয়েছে। কারণ তাঁর মন্তব্য থেকে বোঝা যায়,আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক হযরত ইউনুসকে নবী নির্বাচন সঠিক হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
মওদুদী সাহেব হযরত ইউসুফকে (আঃ) বিংশ শতাব্দীর ঘৃণ্য ডিকটেটর মুসোলিনীর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফের মর্যাদাকে মুসোলিনীর সমমর্যাদার বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন,
“ ইউসুফের (আঃ) দাবি নিছক অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদ প্রার্থনাই ছিলো না,যেমনটি কোন কোন লোক ধারণা করে থাকে। বরং তা ছিলো ডিকটেটরশিপ লাভের দাবি। এর ফল হিসেবে হযরত ইউসুফের (আঃ) যে মর্যাদ অর্জিত হয়েছিল, তা ছিল অনেকটা বর্তমান মুসোলিনীর মর্যাদার অনুরূপ।” (তাফহিমাত,২য় খণ্ড,১২২ পৃষ্ঠা।)
পবিত্র কোরআনে হযরত ইউসুফের (আঃ) এর নামে একটি সুরা রয়েছে। উক্ত সুরাকে আল্লাহ্ তায়ালা ‘সুন্দরতম কাহিনী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর মওদুদী সাহেবের ভাষায় হযরত ইউসুফ ডিকটেটরশিপের দাবি করেছিলেন। তিনি হযরত ইউসুফকে ইতিহাসের অন্যতম ঘৃন্য ব্যাক্তি মুসোলিনীর সমমর্যাদায় নামিয়ে এনেছেন। আল্লাহ্ তায়ালার সম্মানিত নবী সম্পর্কে এর চেয়ে ধৃষ্টতামূলক উক্তি আর কি হতে পারে।
হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন,“উরইয়ার স্ত্রীর ব্যাপারটির মূলতত্ত্ব শুধু এতটুকু ছিলো যে, হযরত দাউদ (আঃ) সমকালীন ইসরাইলী সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উরইয়ার নিকট তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন।.........” (তাফহিমাত,২য় খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে মওদুদীর এই মন্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর। কারণ পূতপবিত্র নবী-রাসুলগণ কোন অবস্থাতেই সামাজিক কুপ্রথা দ্বারা প্রভাবিত হন নি। বিশিষ্ট তফসীরকারদের অভিমত হলো,উরইয়ার স্ত্রীর ঘটনাটাই কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন।এই কাহিনী ইয়াহুদীদের প্রচলিত কাহিনী। মওদূদী সাহেব ইয়াহুদীদের কাহিনি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছিলেন কি কারনে?
হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে জনাব মওদুদী আরো বলেছেন,“এর দ্বারা স্বভাবতই প্রকাশিত হয়,যে কাজ তাঁর (হযরত দাউদ) দ্বারা হয়েছিলো তাতে তাঁর কুপ্রবৃত্তির কিছু না কিছু দখল বা প্রভাব ছিলো। তাঁর শাসকসুলভ অসঙ্গত ব্যবহারেরও কিছুটা সম্পর্ক ছিলো। আর তা এমন কাজ ছিলো,যা ন্যায়পরায়ণ কোন শাসকের জন্য শোভনীয় ছিলো না।” (তাফহিমুল কোরআন,৪র্থ খণ্ড,২২৭ পৃষ্ঠা।)
পবিত্র কোরআনে হযরত দাউদের (আঃ) প্রতি আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা হযরত দাউদের উচ্চ প্রশংসা করেছে। কিন্তু মওদুদী সাহেব এই মহান মর্যাদার অধিকারী রাসুলকে ‘কুপ্রবৃত্তির বশীভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী’ বলে মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। সত্যি মওদুদী সাহেবের এসব বাতিল ধ্যান-ধারণা দেখে যেকোন বিবেকবান লোক বিস্মিত না হয়ে পারেন না।
মওদুদী সাহেব তাঁর বিভিন্ন লেখায় মহানবী (সঃ) সম্পর্কেও সমালোচনা করেছেন,তাঁর সম্পর্কে ধৃষ্টতামূলক উক্তি করেছেন। দজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসগুলো সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,“এ সম্পর্কে যেসব কথা হুজুরের নিকট থেকে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,মূলত এগুলো ছিল তাঁর অনুমান (কিয়াস)। এসব সম্পর্কে তিনি নিজেও সন্দিগ্ন ছিলেন। এসব কথা তিনি ওহী লাভের ভিত্তিতে বলেন নি,বরং অনুমান করে বলেছিলেন।...” (রাসায়েল ও মাসায়েল,৫৫-৫৬ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
ইসলাম বলে, মহানবী (স নিজে থেকে কিছুই বলেন নাই, তিনি তাই বলেছেন যা আল্লাহ তাকে বলতে বলেছেন।
মহানবীর (সাঃ) হাদীস সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন,“হাদীস কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসব বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যায়,কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যায় না। আর একথা স্পষ্ট যে,আল্লাহর ধর্মের যেসব বিষয় এতো গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলোর দ্বারা ঈমান ও কাফেরের পার্থক্য পরিস্কার হয়ে যায়,সেগুলো কয়েকজন লোকের বর্ণনা নির্ভর করে মানুষকে বিপদাপন্ন করা আল্লাহ তায়ালা কখনো পছন্দ করতে পারেন না।” (রাসায়েল ও মাসায়েল,৬৭ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
পবিত্র কোরআনের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মওদুদী সাহেব বলেছেন,“কোরআন করিম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট; কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।” (তাফহিমাত,প্রথম খণ্ড,প্রথম খণ্ড,৩১২ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে ইহকালের কল্যান এবং পরকালের নাজাত বা মুক্তিলাভই হচ্ছে হেদায়েত বা সৎ পথ গ্রহনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মওদুদী সাহেবের মতে পবিত্র কোরআন হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট,মুক্তির জন্য নয়। তাঁর এই উদ্ভট উক্তি থেকে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে,তা’হলে মুক্তির জন্য মানুষ অপর কোন ধর্মগ্রন্থ অনুসরণ করবে ? সেসব কি মওদুদী রচনাবলি ? মনে হয় স্পষ্ট বলতে সাহস না করলেও কৌশলে তিনি তাই বুঝাতে চেয়েছেন।
নবী-রাসুলদের পরই সাহাবাদের মর্যাদা। তাঁদের সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেছেন,“আমার সাহাবারা নক্ষত্রের মত। তাদের মধ্যে যাকে তোমরা অনুসরণ করবে,সঠিক পথ লাভ করবে।” আর মহানবী প্রশংসিত সাহাবা কেরামরাও মওলানা মওদুদীর সমালোচনা থেকে অব্যাহতি পান নি। তাঁদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন,“দীর্ঘদিনের শিক্ষাদীক্ষার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁদেরকে রণাঙ্গনে নিয়ে আসেন। তাঁদের মনমানসিকতায় মহাবিপ্লব চিত্রিত হওয়ার পরও ইসলামের প্রাথমিক যুদ্ধগুলোতে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের মূল তাৎপর্য অনুধাবনে সাহাবা কেরামরা বারবার ভুল করতেন।” (তরজমানুল কোরআন,রবিউসসানী,১৩৫৭ হিজরী।)
মওদুদী সাহেব সাহাবাদের সম্পর্কে আরো বলেছেন,“সাহাবায়ে কেরামের অনেকে মনগড়া হাদীস বর্ণনা করেছেন।” (তরজমানুল কোরআন,৩৫শ’ সংখ্যা ৩২৭ পৃষ্ঠা।)
“সাহাবাদের মধ্যে জাহিলিয়াতের বদস্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।” (তাফহিমাত,২য় খণ্ড ১৫৫ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
“অনেক সময় সাহাবাদের মধ্যে মানবিক দুর্বলতা প্রাধান্য লাভ করতো। তাঁরা একে অপরকে অক্রমন করে বসতেন এবং পরস্পরে গালিগালাজ শুরু করতেন।” (তরজমানুল কোরআন, মওদুদী)
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর(রাঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব লিখেছেন,“ইসলাম মানুষকে এই নির্দেশ দেয় যে,সে যেন কখোন রিপুর প্রভাবে প্রভাবিত না হয়।....এটা অত্যন্ত সূ ব্যাপার। একবার হযরত আবু বকর সিদ্দিকের মত রিপুর তাড়নামুক্ত খোদাভীরু ও আল্লাহতে নিবেদিতপ্রাণ ব্যাক্তিও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন।”(তরজমানুল কোরআন, মওদুদী)
তরজমানুল কোরআনের একই সংখ্যায় হযরত ওমর (রাঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন,“বিশ্ব প্রতিটি উঁচুর সামনে মাথানত করতে অভ্যস্ত ছির। এবং প্রত্যেক বুজর্গ মানুষকে সাধারণ মানুষের স্তর থেকে কিছু না কিছু উর্ধ্বে ধারণা করে আসছিল। এই ধারণার প্রভাব বিলুপ্ত হওয়ার পথও কখনো কখনো স্পষ্ট হয়ে উঠতো...। সম্ভবত এই ব্যাক্তি-শেষ্ঠত্বের ধারণাই রাসুলুল্লাহর
ইন্তেকালের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কিছুণের জন্য হযরত ওমরকে পরাভূত করে ফেলেছিলো।” (তরজমানুল কোরআন, মওদুদী)
মওদুদী সাহেব হযরত ওসমানের(রাঃ) সমালোচনা করে বলেছেন,
“একদিকে ইসলামী রাষ্ট্র দ্রুত সমপ্রসারণের দরুন কাজ দিন দিন কঠিনতর হচ্ছিল, অপরদিকে হযরত ওসমান যার ওপর এই বিরাট কাজের বোঝা ন্যস্ত করা হয়েছিলো, তিনি ততটা যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না যা তাঁর পূর্বসুরিদের ছিলো। এজন্য জাহিলিয়াত ইসলামী সমাজব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের পথ পেয়ে যায়।” (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন,৩৩ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
হযরত ওসমানের (রাঃ) হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধের দাবি উঠানো হলে হযরত মায়াবিয়ার লোকদের উদ্দেশে চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
“এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যথাসময়ে অব্যশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়া হবে।’ কিন্তু মওদুদী সাহেব হযরত আলীর (রাঃ) এই জবাবের সমালোচনা করে বলেন,“ইনসাফ করো,তুমি যদি মায়াবিয়া হতে কিংবা মায়াবিয়া না হও অন্তত সিরিয়ার একজন সাধারণ নাগরিক হতে,তাহলে বর্ণিত পটভূমির প্রেক্ষিতে তুমি কি আলীর জবাবকে একটা বাহানা,গড়িমসি,ছলনা ও অস্বীকৃতি ছাড়া সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করতে ?” (তাজাল্লী,দেওবন্দ,ডিসেম্বর,১৯৫৭।)
এই উদ্ধৃতিতে মওদুদী সাহেব হযরত আলীকে একজন প্রতারক হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক শতাব্দীতে আল্লাহ তায়ালা একজন কামেল ব্যাক্তি সৃষ্টি করেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে সত্য ধর্মকে বাতিলের সংমিশ্রণ বা অনুপ্রবেশ থেকে পূতপবিত্র রাখেন। শরিয়তের পরিভাষায় এধরনের শতাব্দী-শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্বকে ‘মুজাদ্দিদ’ বা সংস্কারক বলা হয়। মুজাদ্দিদের আগমন সম্পর্কে জনাব মওদুদীর বক্তব্য হচ্ছে, “ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায়,এ পযর্ন্ত কোন ‘কামেল মুজাদ্দিদের’ আবির্ভাব হয় নি। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের এই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু তিনি কামিয়াব বা সফল হতে পারেন নি। তারপর যত মুজাদ্দিদের আগমন হয়েছে,তাদের প্রত্যেকে কোন না কোন একটা বিশেষ বিভাগ কিংবা কয়েকটি বিভাগে কাজ করেছেন। কামেল মুজাদ্দিদ বা পরিপূর্ণ সংস্কারকের স্থান এখনো শূণ্য রয়েছে।” (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন,৩১ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
মওদুদী সাহেবের এই উদ্ধৃতিটি অতান্ত স্পষ্ট। তাঁর মতে এ পযর্ন্ত যতো মুজাদ্দিদ এসেছেন,তাঁরা সবাই ছিলেন নাকেস বা অসম্পূর্ণ। কামেল মুজাদ্দিদের স্থান এখনো শূন্য। এর দ্বারা তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন,পাঠকরা নিশ্চয়ই তা বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু তাঁর সে আশা পূরণ হলো না। উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কেউই তাঁকে মুজাদ্দিদ দূরের কথা,আলেমের কাতারে স্থান দিতেই রাজি হলেন না।
হযরত ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) সমালোচনা প্রসঙ্গে মওদুদী সাহেব লিখেছেন,“ইমাম গাজ্জালীর সংস্কারমূলক কাজে জ্ঞানগত ও চিন্তাগত দিক থেকে কয়েকটি ত্রুটিও ছিলো। এগুলো তিনটি শিরনামে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত,ইলমে হাদীসে দুর্বলতার দরুন তাঁর গবেষণায় কতকগুলো ত্রুটি দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত,তাঁর মধ্যে দর্শনের প্রাধান্য থাকায় কতকগুলো গবেষণায় ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা দেয়। তৃতীয়ত,তাসাউফ বা আধ্যাত্মবাদের প্রতি তাঁর প্রয়োজনাতিরিক্ত আকর্ষন থাকার দরুন সৃষ্ট ত্রুটিবিচ্যুতি।” (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন,৪৫ পৃষ্ঠা- মওদুদী।)
ইসলামের বিধান অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের মনগড়া তফসীর করা হারাম। মহানবী (সঃ) বলেছেন,“যে ব্যাক্তি পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করে সে যেন তার স্থান দোযখে তালাশ করে”-(তিরমিযী)। বস্তুত পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা করার কতকগুলো নিয়মনীতি রয়েছে। আর এসব নিয়মনীতি জানতে হলে সাহাবা কেরাম ও তাঁদের পরবর্তীকালের মনীষীদের তফসীর এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষদীক্ষর প্রয়োজন হয়। কিন্তু মওদুদী সাহেব বলেছেন,“কোরআন ও রাসুলের সুন্নতের শিক্ষাই সবার আগে। তবে তফসীর ও হাদীসের পুরনো ভাণ্ডার থেকে নয়।” (তানকিহাত,১১৪ পৃষ্ঠা -মওদুদী।)
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষাহীন মওদুদী সাহেব সুরা বাকারায় রোযা সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্য করতে গিয়েও অমার্জনীয় অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। সকল তফসীরকার একমত যে,রোজাদাররা সোবহে সাদেক বা পূর্বাকাশে সাদা আভা প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পানাহার করতে পারবে। এরপর করতে পারবে না। কিন্তু মওদুদী সাহেব উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,“যদি ঠিক সোবহে সাদেকের সময় কারো ঘুম ভাঙ্গে,তাহলে তার জন্য পানাহার করে নেয়া জায়েজ হবে।"
এভাবে আল্লাহ তায়ালার নবী পাঠানো থেকে শুরু করে নবী-রাসুল, সাহাবা,ইমাম-মুজতাহিদ,বিভিন্ন যুগের মুসলিম মনীষী,হাদীস,ফেকাহ্ শাস্ত্র প্রভৃতি কোন কিছুই মওদুদী সাহেবের অভিনব গবেষণা ও সমালোচনা থেকে অব্যাহতি পায় নি। তাঁর লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধরাজির সর্বত্র আপত্তিকর ও ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য ছড়িয়ে আছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে এখানে কিছু কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল। এই উদ্ভট ধ্যান-ধারণার বাস্তব রূপ দেয়ার আকাঙ্খা নিয়ে মওদুদী সাহেব ইসলামের মুখোসধারী জামাত গঠন করেন। বর্তমানে জামাতে ইসলামীও বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের নামে মওদুদী সাহেবের এসব ইসলামবিরোধী উদ্ভট ধ্যান-ধারণার প্রচার করে চলেছে। দেশের সরলমনা ও ধর্মপরায়ণ লোকেরা,বিশেষ করে স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেনীর ছাত্র ধর্মের নামে এই বাতিল ধ্যান-ধারণার শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। জামাত দাবি করছে তাদের সব কর্মকাণ্ডই নাকি ইসলাম কায়েম করার জন্য। ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠাই তাদের চরম ও পরম লক্ষ্য। তারা সবকিছুই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকে। কিন্তু উপমহাদেশের সকল আলেমগন মনে করেন, জামাত ইসলামের মুখোশধারী একটি ফ্যাসিষ্ট চক্র। চল্লিশের দশকের শুরুতে মওদুদী সাহেবের উদ্ভট ধ্যান-ধারনার ফল হিসেবে জামাতের অভ্যুদয় ঘটে। একটি বিশেষ কৌশল হিসেবে মওদুদী সাহেব তাঁর দলের নামে পবিত্র ইসলাম শব্দটি সংযোজন করেন। উপমহাদেশের ধর্মপরায়ণ মুসলমানদের জামাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য এই কৌশলটি অবলম্বন করা হয়েছে। তা’ছাড়া যারা জামাতের বিরোধিতা করবে তাদেরকে সহজে ‘ইসলামবিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করা যাবে। সর্বোপরি তাতে পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সহজ হবে। বিগত পঞ্চাশ বছরব্যাপী জনাব মওদুদী ও তাঁর অনুসারীরা তাই করেছেন। এখনো করছেন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলে পবিত্র ইসলাম এর নামে বৃটিশের প্রচ্ছন্ন দালালি করা হয়েছে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনকে ইসলামবিরোধী আন্দোলন বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে পাকিস্থান আমলে পবিত্র ইসলামকে সামন্তশ্রেণী ও পুজিঁপতিদের স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পবিত্র ধর্মের নামে জামাতের এই উন্মাদনা আরো উলঙ্গ রূপ ধারণ করে। জামাত পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করে। রাজাকার আলবদর বাহিনী গঠন করে লুটতরাজ,নারী ধর্ষণ ও বাঙালি নিধনে নামিয়ে দেয়। স্বাধীনতাউত্তরকালে জামাতের সহিংসতা আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করেছে। এরূপ পরিস্থিতিতে যেকোন সচেতন লোকের মনে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক,জামাতের এসব কর্মকাণ্ড এবং জামাতের স্থপতি ও তাত্ত্বিক গুরু জনাব মওদুদী তথাকথিত ইসলামিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে উপমহাদেশের আলেম সমাজ কিরূপ দৃষ্টিতে দেখেন। তাঁরা কি এসব সমর্থন করেন ? আমরা যতটুকু জানি,দলমত নিবিশেষে উপমহাদেশের কোন খাঁটি আলেমই জামাতের এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না। শুধু সমর্থন করেন না বললে ঠিক হবে না,তাঁরা এসবের চরম বিরোধিতা করে থাকেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র,সাময়িকী ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে তাঁরা জামাত ও মওদুদী সম্পর্কে তাদের অভিমত প্রকাশ করে থাকেন। এখানে জামাত ও মওদুদী সম্পর্কে উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় এবং সর্বজনবরেণ্য কয়েকজন আলেমের অভিমত সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
মওদুদী ও মওদুদী জামাত সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে। সেখানকার শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ ব্যাক্তিগতভাবেও তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে,
“ মওদুদী ফেতনা নির্মূল করে দাও। মওদুদী আন্দোলন ধ্বংস সাধনকারী ও জীবন সংহারক বিষ। মওদুদীর অনুসারীরা পথভ্রষ্ট। তাদের পেছনে নামাজ পড়বে না।” (মাকতুবাতে শায়খুল ইসলাম,প্রথম খণ্ড,৫৬ পৃষ্ঠা।)
অপর একটি ফতোয়ায় মওদুদীর বই-পুস্তক ও তাঁর সংগঠন জামাত সম্পর্কে বলা হয়েছে,“ মওদুদী জামাত ও এই দলের বই-পুস্তকের দ্বারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ইমামদের অনুসরণের প্রতি অনিহা ও সম্পর্কহীনতার সৃষ্টি হয়। আর এটা সাধারণ মানুষের ধ্বংস ও পথভ্রষ্টতা ডেকে আনে।’-স্বাক্ষর মওলানা মুফতি কেফায়েত উল্লাহ,মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী,মোহাম্মদ তৈয়ব,মুহতামিম,দারুল উলুম দেওবন্দ,মওলানা আব্দুল লতিফ,মাজাহেরুল উলুম,সাহারাণপুর প্রমুখ।” (দু’মাসআলে,১৬ পৃষ্ঠা, দার"ল উলুম দেওবন্দ।)
এই ফতোয়াটিতে ভারতের সমকালীন অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ স্বাক্ষর প্রদান করেন। হযরত মওলানা আশরাফ থানবী (রঃ) বলেছেন,“আমার অন্তর এই আন্দোলনকে গ্রহন করে না।” (দৈনিক আলজমিয়ত,৩০শে আগষ্ট,১৯৫১।)
আহলে হাদীস জামাতের নেতা ও বিশিষ্ট আলেম হযরত মওলানা আব্দুল মজিদ বলেছেন,“আমি যতদুর পর্যন্ত মওলানা মওদুদীর বই-পুস্তক পড়েছি এবং তাঁর ধ্যান-ধারণা অনুসন্ধান করেছি,তাতে তাকে পথভ্রষ্ট পেয়েছি। আমি দোয়া করি,আল্লাহ তায়ালা তাকে তার ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ ও তওবা করার সামর্থ্য দান করুন।” (মওদুদীয়াত কা পোষ্ট মরটাম,৪১-৪২ পৃষ্ঠা।)
তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা ইলিয়াস সাহেবের উত্তরসুরি তাঁর পুত্র হযরত মওলানা মোঃ ইউসুফ মওদুদী জামাতের কয়েকজন সদস্যের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন,“ মওদুদী জামাত একটি রাজনৈতিক ও মতালোভী দল। তারা এমন জিনিসের প্রত্যাশী যা শরিয়তের দৃষ্টিতে পরিত্যাজ্য। (জামায়াতে ইসলামী কা র"খে কেরদার,১৭৪ পৃষ্ঠা।)
বেরেলবী চিন্তাধারার বিশিষ্ট আলেম হযরত মওলানা মোস্তাফা খান সাহেব বেরেলবী ও মওলানা সাইয়েদ আফজাল হোসাইন মওদুদী জামাত ও তাঁর ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে একটি ফতোয়া প্রদান করেন। তাতে তাঁরা বলেন,“কিছুদিন আগে এক ব্যাক্তি মওদুদীর ভাষনের প্রথম খণ্ডটি আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আমরা তা গভীরভাবে দেখি। তাতে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌছি যে,তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসার ও উন্নতি বিধানের দাবি করে থাকেন। কিন্তু মূলত তার আন্দোলন ইসলামের ছিদ্র অন্বেষণ,মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং কুফরি ও কাফেরি ছাড়া কিছু নয়। তিনি ইসলামের ভিন্ন অর্থ করে থাকেন। সাধারণ মুসলমানদের তিনি মুসলমান মনে করেন না। তিনি জন্মগত মুসলিম সন্তান সন্ততিকে বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পযর্ন্ত মুসলমান স্বীকার করেন না। তিনি বলেন,
ইসলাম প্রকৃতিগত ধর্ম নয়। অজ্ঞ মুসলমানরা তাঁর মতে মুসলমান নয়। শুধু তাই নয়,তিনি বলেন, অজ্ঞদের মুসলমান হওয়া অসম্ভব ব্যাপার।......মোট কথা মওদুদী সাহেবের আন্দোলন কোন নতুন আন্দোলন নয়। পুরনো খারেজী ধ্যান-ধারণাই নতুন রূপ ধারণ করেছে।.......” (ফেতনায়ে মওদুদীয়াত,৫৮ পৃষ্ঠা।)
অল ইণ্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্সের সভাপতি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস মওলানা আব্দুল ওহাব বলেছেন,“আমি আহলে হাদীস ভাইদের অনুরোধ করছি, তারা যেন নিজেদেরকে এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে রা করে। নতুবা এই ব্যাধি শুধু তাদেরকে নয়,পুরো আহলে হাদীস জামাতকে ধ্বংস করে ফেলবে।” (মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ,৩৬৫ পৃষ্ঠা-মওলানা আজিজুর রহমান।)
সরসীনা দারুস সুন্নাহ থেকে প্রকাশিত একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “জনাব মুওদুদী তাঁর বাতিল আকিদা প্রচারের উদ্দেশ্যেই জামায়াতে ইসলামী নামে মওদুদী জামায়াত কায়েম করেছেন। তদুপরি এটাও অনস্বীকার্য যে,নেতার আক্বায়েদ ও ধ্যান-ধারণা অজ্ঞাতসাই কর্মিদের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে থাকে।... এজন্য কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও মওদুদী জামায়াতে শামিল হওয়া জায়েজ নয়।” (মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ,৩৪৫ পৃষ্ঠা-মওলানা আজিজুর রহমান।)
এই ফতোয়ায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পঁচাত্তরজন আলেম স্বাক্ষর করেছেন।
চট্টগ্রাম হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার মুফতি হযরত মওলানা ফয়জুল্লাহ মওদুদী জামাত সম্পর্কে একটি ফতোয়া প্রদান করেন। তাতে তিনি বলেছেন,“মওলানা মওদুদী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নীতি ও মতবাদ-বিরোধী বিভ্রান্তিকর ও ত্রুটিপূর্ণ ধ্যান-ধারণা পোষণকারী। তাঁর অধিকাংশ লেখায় বিগত মনীষী,সাহাবা কেরাম,তাবেয়ীন,ইমাম মুজতাহিদ ও আওলিয়া কেরামের প্রতি বেআদবি প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর ধৃষ্টতামূলক আক্রমন থেকে মহান নবীরাও রেহাই পান নি। সুতরাং এই দলের সাথে ওঠাবসা করা,সংস্রব রাখা মুসলমানদের জন্য কোন অবস্থাতেই জায়েজ নয়।”(মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ, ৪১৬ পৃষ্ঠা-মওলানা আজিজুর রহমান।)
তাঁর এই ফতোয়ার প্রতি অভিন্ন মত প্রকাশ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৭ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম স্বার করেন। এই ফতোয়ায় স্বারদান প্রসঙ্গে ব্রহ্মণবাড়িয়ার হযরত মওলানা তাজুল ইসলাম লিখেছেন,“আমি মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেবের অভিমত সমর্থন করি। বস্তুত মওদুদী ফেতনা কাদিয়ানী ফেতনার চেয়ে কম নয়।”
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হযরত মওলানা জাকারিয়া (রঃ) মওদুদী জামাত সম্পর্কে ‘ফিতনায়ে মওদুদীয়াত’ শীর্ষক একটি তথ্যসমৃদ্ধ পুস্তক লিখেছেন। তিনি তাঁর এই পুস্তকে মওদুদী জামাতের ইসলামবিরোধী বিষয়গুলো পবিত্র কোরআন-হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি তাঁর বইয়ের এক জায়গায় মওদুদী জামাত সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন,“আমি এই ভ্রান্ত দলে যোগদান করা হারাম মনে করি। তাদের বই-পুস্তক পাঠ করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর মওদুদী জামাত সম্পর্কে ‘সতর্কবাণী’ শিরোনামে একটি পুস্তক লেখেন। তাতে তিনি মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদ ও জামাতে ইসলামীকে মুসলমানদের ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস ধ্বংসকারী ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
হাফেজ্জী হুজুরের এই পুস্তকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার শতাধিক আলেম অভিন্ন মত প্রকাশ করে স্বার করেন। উপমহাদেশের সকল মত ও পথের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উল্লেখিত ভাষ্যগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট। এগুলো ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নেই। তাঁরা অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় জনাব মওদুদী ও তাঁর ধ্যান-ধারণার বাস্তব রূপ জামাত সম্পর্কে তাঁদের সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইসলামের মুখোশধারী জামাতের আসল রূপটি এসব দেশবরেণ্য আলেমদের নিকট অস্পষ্ট নয়। তাই তাঁরা জামাতকে মুসলমানদের বাতিল ফেরকা খারেজি ও কাদিয়ানী সমপ্রদায় থেকেও নিকৃষ্টতর এবং মুসলমানদের ঈমান-আকিদার জন্য মারাত্মক তিকর বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। শুধু উল্লেখিত আলেমগণই নন,উপমহাদেশের খাঁটি আলেমরা সবাই জামাতের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা অনেকে বিভিন্ন ভাষায় জামাতের বিরুদ্ধে পুস্তক লিখেছেন। এই সংপ্তি পরিসরে সেসব উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি,জামাত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে যেকোন সত্যসন্ধ মুসলমানের জন্য আমাদের উল্লিখিত ওলামা কেরামের অভিমতই যথেষ্ট।
--তথ্যসূত্র মাওলানা আবদুল আওয়াল, মুক্তি্যুদ্ধ তথ্য ব্যাংক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল্য়।