অবশেষে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে অনলাইনে অর্থ লেনদেন করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক বাণিজ্য বা ই-কমার্সের সূচনা হলো।
নতুন ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার বা মুঠোফোন থেকে অনলাইনেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা এবং বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করা যাবে। পাশাপাশি অনলাইনে বসেই এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা যাবে।
ই-কমার্স কার্যক্রমের অনুমতিসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সই করা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে ব্যাংকগুলো চার রকমের ই-কমার্স সেবা দিতে পারবে। এসব সেবা হলো: অনলাইনে গ্রাহকের নিজ হিসাব থেকে প্রাপক পক্ষের হিসাবে সেবাসমূহ বা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, গ্রাহকের এক ব্যাংক হিসাব থেকে একই ব্যাংকের অন্য গ্রাহকের হিসাবে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর, ক্রেতার ব্যাংক হিসাব থেকে বিক্রেতার ব্যাংকে মূল্য পরিশোধ এবং স্থানীয় মুদ্রায় ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করা।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, অনলাইন লেনদেনগুলো নগদ লেনদেনের সমতুল্য হবে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং সে জন্য জারি করা বিভিন্ন নির্দেশ অনুসৃরণ করা হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে প্রচলিত লেনদেনের মতো একই নিয়ম অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
* এই ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে তথ্যপ্রযুক্তির এক নতুন সংযোজন হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, এর মাধ্যমে অনলাইনে যেকোনো গ্রাহক তাঁর যেকোনো বিল (সেবাসংক্রান্ত) প্রাপককে পরিশোধ করতে পারবেন।
* এই বিষয়কে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট এক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় একটি ব্যবস্থা (সেন্ট্রাল গেটওয়ে) চালু করা দরকার। যেহেতু অনলাইনে টাকা-পয়সার লেনদেন হবে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ বাংলাদেশেও সাইবার অপরাধ শুরু হয়ে গেছে। আর আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীরা তো আছেই। এ সংক্রান্ত আইনেরও দ্রুত বাস্তবায়ন চান তিনি।
* অনলাইন লেনদেনের অনুমোদন নতুন যুগের সূচনা করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, যত দ্রুত ব্যাংকগুলো ই-কমার্স চালু করবে, ততই মঙ্গল। এখন দেশের নিজস্ব একটি ই-কমার্স-ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনের মাধ্যমেই লেনদেন করতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতির পর ই-কমার্স-ব্যবস্থা চালু হলেও এখন শুধু একটি ব্যাংকের হিসাবের মধ্যেই লেনদেন করা যাবে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তব্যাংক স্বয়ংক্রিয় লেনদেনব্যবস্থা (ই-পেমেন্ট গেটওয়ে) চালু করা হলে তবেই কেবল এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের হিসাবে টাকা লেনদেন করা যাবে। জানা গেছে, ই-পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে তা সম্পন্ন হতে আরও মাস ছয়েক বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো ০৩/১১/২০০৯