বাঁকা চোখের চাহনি ,চাপা হাসি আসি আর রহস্যে ভরা মুখশ্রী যে নারী সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ছুয়েছে তার নাম অপরূপা মোনালিসা । শুধু আজ নয় কাল নয় পাঁচশ বছর ধরে লাখো কোটি হৃদয় নাড়া দিয়েছে এই নারী ।আসলে নারী বলছি কেন?
এটাতো একটা চিত্র কর্ম মাত্র ।ইতালির বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এই ধরাধাম ছেড়ে যাওয়ার ঠিক এক যুগ আগেই আপন হাতের তুলি সুনিপুন টানে ক্যানভাসে আঁকেন মোনালিসা । দীর্ঘ চার বছরের সাধনা আর অধ্যবসায়ের ফসল হল এই চিত্র কর্মটি ।লিওনার্দো কাজটা শুরু করেছিলেন ১৫০৩ সালে আর ইতি টানেন ১৫০৭ এ এসে ।
ভাবছেন বেশ বুড়ো হয়ে গেছে ! বুড়ো হলে কি হবে ? যতদিন যাচ্ছে মোনালিসা নামক চিত্র কর্মটির প্রতি মানুষের আগ্রহ তথা কৌতূহল বেড়েই চলেছে ! শুধু সাধারণ মানুষ বা শিল্পী কেই শুধু নয় অনেক গবষেকের ও কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে ।তাইতো শুনলে অনেকে হেসে কুটি কুটি হয়ে যান যে, মোনালিসার ভ্রউ নিয়ে ও গবষেণা হয়েছে ব্যাপক । এমনই একজন গবষেক হলেন ফরাসি ইন্জিনিয়ার পাস্কল কট । যিনি সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করেন মোনালিসার ভ্রুরু ।অর্থাৎ তিনি অতিবেগুনি আলো ইনফ্রারেডসের ২১৩ টি বর্ণের ছটার সাহায্যে ২৪ কোটি পিস্কেলের ছবিটি কে স্ক্যান করে পরীখা করেছেন ।
প্রকৌশলীটি এখানেই থেমে থাকেননি তিনি ছবির প্রতি ইঞ্চি এক লাখ পঞ্চাশ হাজার বিন্দু খুজে পান ।আর খুজে পান মোনালিসার বাঁ চোখের ওপর তুলির একটানে আঁকা আছে একটা চুল ।ভ্রু নিয়ে যত গবষেণা করেই শান্ত হয়নি !তারা গবেষণা করেছেন চোখের পাতা হতে মুখের হাসি পর্যন্ত ।অনেকে তো বলেন প্রায় কথায় কথায় যে মোনালিসার হাসি
নিয়ে যে পরিমাণ গবেষণা হয়েছে তা দিয়ে একটা মহাকাব্য লিখা যাবে অতি সহজেই ।এই হাসি আমরা দেখতে পেতাম না যদি শিল্পী মুখরে একটি রেখা অতি সামান্য ঘুরিয়ে দিতেন ।তাহলে মিলিয়ে যেতো তার ভুবন ভুলানো-ভাবুক মার্কা -ধাঁধা লাগানো হাসি ।
শুধু হাসিতে নয় নামের ব্যাপারটাতেও অনেকের ধাঁধা লেগে যায় ।কেউ বলে লাজাকান্দো আবার কেউ বলে মোনালিসা ।তবে আর যাই হোক মোনালিসা নামেই তার পরিচিতি টা একটু বেশী ।
এতোসব রহস্য যখন বিশ্ববাসীর মাথার ভিতর জট পাকাচ্ছে ঠিক সেই সময়তো উৎসুক গবেষকরা আর বসে থাকতে পারে না । তারাও এবার মহাধুম -ধামে নেমে পড়েছেন মোনালিসার রহস্য উন্মোচনে । একদল গবষেক বলছেন ফ্রানসেস্কো নামের ফরাসি কর্মচারীর কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাওয়ার আশায় লিওনার্দো এই পোর্ট্রেট টি আঁকেন ।
কিন্তু সে কর্মচারীর মনের মতো না হওয়ায় তিনি আর সেটা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেননি ।তাই বলে কি শিল্পীর সাধনা ব্যার্থ হবে ? নিশ্চয় না ! না ঠিকই মোনালিসা তার মর্যাদা সে সময় মতোই পেয়েছে ।মোনালিসা এখন আর লিওনার্দোর ঘরের কোণে অযত্নে আর অবহেলায় ফেলানো নেই এখন আর কেউ ফরাসি কর্মচারীর মতো মুখ ফিরিয়ে নেয় না ।বরং অবাক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে ।যেন কিছুতেই মুখ ফেরাতে মন চায় না । আর যত দেখে ততই তার কৌতূহল বাড়তেই থাকে ।
লিওনার্দো আমাদের মনের কথা বুঝতে পেরেই এই চিত্রকর্ম টি আঁকেন ।যা মোনালিসার বাঁকা চোখের চাহনি ,রহস্যময়ী হাসী যেমন চিত্রপ্রেমীদের কৌতূহলী করে তুলেছে তেমনি কৌতূহলী করে তুলেছে যৌনতায় ভরা মোনালিসার সারাটি অংগ ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০০৮ সকাল ১০:৩৬