Politics বা রাজনীতি শব্দটি গ্রীক শব্দ πολιτικός, হতে এসেছে।যার অর্থ "of, for, or relating to citizens"। আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রাজনীতির প্রভাব রয়েছে।ডিকশানারীতে রাজনীতি শব্দটির সংজ্ঞা খুঁজলে আপনি পাবেনThe art or science of government or governing, একটা জাতির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রনের কাজকর্ম এ রাজনীতিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।আমরা বিশ্বাস করি মহানবী (সঃ) এমন দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন যা মানুষের সব বিষয়ে পরিপূর্ন সমাধান ও দিক নির্দেশনা দিয়েছে।মহানবী (সঃ) এর জীবনী এবং কোরআনের দিকে যদি আপনি একটু খোলা মন নিয়ে দৃষ্টি নিবন্ধ করি তাহলে দেখব মহানবী (সঃ) শুধু মানুষের আকীদা পরিবর্তন করার জন্য পৃথিবীতে আবির্ভুত হননি বরং তিনি নিয়ে এসেছিলেন সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।পৃথিবীর অন্য যে কোন বিপ্লবের সাথে তাই এ বিপ্লবের তুলনা চলে না। ইহা ছিল একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব যা বিশ্ব ইতিহাসে অতীব তাৎপর্যপূর্ন।
অনেকে মহানবী (সঃ) এর আরবের কর্তৃত্ব পাওয়াকে নিছক উপহার বললেও আপনি যদি কোরআন ও সীরাতের গ্রনৎগুলো পড়েন তাহলে আপনি দেখতে পাবেন মহানবী (সঃ) যখন থেকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন থেকেই তিনি জানতেন তিনি পুরো আরব সম্রাজ্য জয় করবেন,আরবের ক্ষমতা তাঁর ধর্মের হস্তগত হবে।
কুরাইশদের সমস্যা শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে একবার রাসুল সঃ এর সাথে আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন-
“একটি মাত্র কথা যদি তোমরা আমাকে দাও তাহলে তা দ্বারা তোমরা সমগ্র আরব জাতির ওপর আধিপত্য লাভ করবে এবং যত অনারব জাতি পৃথিবীতে আছে তারা তোমাদের বশ্যতা স্বীকার করবে (সীরাতে ইবনে হিশাম,১ম জিলদ,পৃঃ ৩১৬)
তিনি আরবের কর্তৃত্ব পেয়েছিলেন।খলিফা ওমরের আমলে মুসলিমরা শাসন করেছে অর্ধপৃথিবী।কোরআনের আইন বাস্তবায়িত হয়েছে সবখানে।কিন্তু আস্তে আস্তে উম্মাহর মধ্যে রোগ দেখা দিল।তারা পৃথিবীর প্রতি এতবেশি ঝুঁকে গেল যে ভুলে গেল তাদের ঐতিহ্য।আস্তে আস্তে আলেম শ্রেনী রাজনীতি থেকে নিজেদের আলাদা করে শুধুমাত্র মসজিদের চারকোনে নিজেদের আলাদা করে রাখা শুরু করল।মুসলিমরা জিনিসটি অন্তর থেকে মেনে নিতৎনা পারলেও একটা পর্যায়ে তারা অভিযোজন ক্ষমতা প্রাপ্ত হল।সবকিছু সয়ে নিল।এক পর্যায়ে তাদের মনমানসিকতায় ধর্ম আর রাজনীতি পুরোপুরি পৃথক হিসেবে স্থান করে নিল।আজও বেশিরভাগ তথাকথিত আলেম,মাওলানার চিন্তায় ধর্ম মানে হচ্ছে মসজিদে তসবিহ জপা,জানাযা,কোরান খতম পড়ানো ইত্যাদি কাজ।ইসলামপূর্ব আরব সমাজে ধর্মকে যেমন দৈনন্দিন জীবনের,পার্থিব জীবনের সাথে একটু লেজুড় বিশেষ বিবেচনা করা হত আজও আমরা তেমন চিন্তাই পোষন করছি।ধর্ম চলবে ধর্মের তালে রাষ্ট্র চলবে রাষ্ট্রের তালে।এ যে এক জঘন্য রোগে উম্মাহ আক্রান্ত হয়ে গেছে যার চিকিৎসা সত্যিই অনেক দুরুহ হবে।যদি রাষ্ট্র আর ধর্ম আলাদাই হয় তাহলে আল্লাহর এ আয়াত গুলোর মানে কি?
আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই।সুরা ইউসুফ-৪০
বিধান তাঁরই।সূরা কাসাস-৮৮
নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা
আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান।সূরা নিসা-১০৫
সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে।সূরা নিসা-৬৫
যদি আল্লাহ বলতেন ইসলাম শুধু বিশ্বাস ও মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে এ আয়াতগুলো কি অসামঞ্জস্যপূর্ন নয়?আল্লাহ কি এরকম বিপরীতমুখী কথা বলতে পারেন?নাউযুবিল্লাহ।আল্লাহ কোরআনে বলছেন-
এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত।সুরা নিসা-৮২
যদি রাষ্ট্রীয় বা রাজনীতিতে ইসলাম না থাকত তাহলে কোরআনে যতরকম দেওয়ানী, ফৌজদারী আইন আছে সে আইনগুলোর মানে কি?সে গুলো কি শুধুমাত্র পড়ে চোখের পানি ফেলার জন্য দিয়েছে?কোরানে সাক্ষ্য দানের ব্যাপারে যে আইন এসেছে সেগুলোর উপস্থিতি কি শুধু শুধু কোরানের কলেবর বৃদ্ধির খাতিরে?চোরের হাতকাটার শাস্তি কি শুধু অলৌকিক দৈত্যের কাহিনী শুনিয়ে শিশুদের ভয় দেখানোর মত বিষয়?কোরান হাদীসে রাষ্ট্রীয়,সামাজিক,আন্তর্জাতিক আইনগুলোর উদ্দেশ্যটা আসলে কি?নিম্নোক্ত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যাই বা কি?
আল্লাহ ছাড়া কারো নির্দেশ চলে না।সূরা আনআম-৫৭
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।সুরা মায়িদা-৪৪
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।সুরা মায়িদা-৪৫
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।সুরা মায়িদা-৪৭
আমাদের তথাকথিত আলেম সমাজ এসবের কি ব্যাখ্যা দিবেন?
বাংলা নিউজ২৪ ডট কম মাওলানা হোসেন আলী নামক জনৈক লোক রাজনীতি ও ইসলামের যে পার্থক্য ও দু্রত্ব দেখালেন তাতে আমি পকেটের তার অবস্থা চিন্তা করে কিছুটা বিচলিত।নামধারী মুসলমানের অজ্ঞতা আর ভন্ডামী কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা একবার চিন্তা করে দেখা উচিত।ইসলাম নিয়ে আমাদের জ্ঞানের মান নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান।এই অজ্ঞ কিংবা ভন্ড কোন রেফারেন্স দেয় নি।পুরো আর্টিকেলে দুইটা দলিল আমার চোখে পড়েছে।আমি সেটা ব্যাখ্যা করব ইনশাল্লাহ-
তিনি বলেন
-“বাগদাদের খলিফা হারুন-অর-রশিদ (যিনি ইসলামের স্বর্ণযুগের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে পরিচিত) ইমাম আবু হানিফাকে (রহ.) আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার প্রশাসনের প্রধান বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করতে। ইমাম আবু হানিফা তার সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। খলিফা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কয়েদখানায় প্রেরণ করেন। সেখানে অমানবিক নির্যাতন ও বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়। খলিফার সঙ্গে তার বিরোধ এই প্রশ্নে ছিল না যে, তিনি ইসলামি রাজনীতির কথা বলছিলেন, বরং বিরোধ ছিল এই প্রশ্নে যে, খলিফা চাইছিলেন ইমাম রাজনীতিতে যুক্ত হোন কিন্তু ইমাম এর বিরোধিতা করে জীবন উৎসর্গ করেন।“
প্রথমেই বলে নিই আমি ইতিহাসে যতটুকু পেয়েছি তা্তে খলিফা হারুন-অর-রশিদ নয় বরং ইমাম আবু হানিফাকে মৃত্যুদন্ড দেন খলিফা মানসুর।সে যাই হোক তার মতে ইমাম আবু হানিফা বিচারপতির পদটি নেননি কারন রাজনীতিতে তাঁর অনীহা ছিল।আর রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার কারনে নাকি তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।অথচ তিনি এ পদ গ্রহন করেননি কারন এ পদে অধিষ্ঠিত হলে তাকে আল্লাহর আইন মোতাবেক ফয়সালা না দিয়ে খলিফার মর্জিমত ফয়সালা দিতে হবে।ইমাম আবু হানিফা তাই বলেন-
“আপনি আমাদেরকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ডেকে আনেননি,বরং আপনি চান যে, আপনার ভয়ে যেন আমরা আপনার মর্জি মাফিক কথা বলি”
দেখলেন তো মাওলানার ভন্ডামী!! কিভাবে সেক্যুলারিস্টদের থেকে টাকা খেয়ে তারা ইসলামের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত।
তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন-
“মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট আলেম, যে রাজদরবারে যায়”
হাদীস টার কোন রেফারেন্স তিনি উল্লেখ করেননি।আমি যতটুকু খোঁজ নিয়ে জেনেছি এ হাদীসটা জাল হাদীস।হাদীসটার আরবী ও তিনি উল্লেখ করেন নি।তাহলে খুঁজে দেখতে সুবিধা হত।এর কন্টেক্স কি সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
যা হোক তার পুরো লেখার অন্য আর কোন দলিল নেই।মনের মাধুরী মিশিয়ে মনে যাই এসেছে তাই লিখে গেছেন।আমার পুরো লেখাটা পড়লে আশা করি কেউ ইসলামকে কেউ রাজনীতি থেকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করবেন না।
বিঃদ্রঃঅনেক কিছু লেখার ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে লিখতে পারলাম না।
from facebook-http://www.facebook.com/notes/muzahid-rasel/ইসলাম-ও-রাজনীতিঃবাংলানিউজ-২৪-ডট-কমে-à¦à¦•-মাওলানার-à¦à¦¨à§à¦¡à¦¾à¦®à§€/281540938530874