বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় স্থাপনা বা দর্শনীয় স্থান দেখতে কার না ভালো লাগে ? আর তা যদি হয় হাতের কাছে তাহলেতো কথাই নেই । প্রবাসী সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকার কারনে রিয়াদের অনেক গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় বিনা বাধায় যাওয়ার সুযোগও হয়েছে । রিয়াদের সকল মানুষ ফায়সালিয়া টাওয়ার নামটির সাথে পরিচিত এবং এর বৈশিষ্ট সম্পর্কেও অনেকের ধারনা আছে কিন্তু এই টাওয়ারটি চুড়ায় ঊঠার অভিজ্ঞতা খুব কম লোকেরই আছে । বলে রাখা ভালো এই টাওয়ারটিতে সর্বসাধারনের উঠার সুযোগ নাই । এই টাওয়ারটি পরিদর্শন করতে হলে ৩৫রিয়াল পরিদর্শন ফি প্রদান করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছ থেকে পুর্বেই অনুমতি নিতে হয় । এবং সে গ্লোবের পাদদেশ পর্যন্ত দেখার সুযোগ পায় ।

অল্পদিনের পরিচয়ে সবচেয়ে শ্রব্ধাভাজন এবং কাছের মানুষদের মধ্যে লোকমান খান ভাই একজন । আমার বন্ধুরা অনেকেই উনাকে আংকেল হিসাবে সম্ভোধন করলেও আমি উনাকে ভাই বলে ডাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধকরি । এই লোকমান খান ভাই আমার দৃষ্টি একজন অত্যান্ত ভালো মনের মানুষ । মাঝে মধ্যেই উনি আমাকে ভালো ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা একজন মানুষ সমাজে চলার জন্য অত্যান্ত জরুরী । অনেকে উনাকে একজন চাকুরীজীবি হিসাবে চিহ্নিত করে থাকলেও আমার দৃষ্টিতে উনি একজন আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসায়ী । আমার জানামতে উনি সৌদি আরব,ইউকে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ।

লোকমান ভাই একদিন সন্ধায় আমাকে ফোন দিলেন । কুশল বিনিময়ের পর উনি আমাকে বললেন আপনাদেরকে ফায়সালিয়া টাওয়ার পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করলে কেমন হয় ? আমি এক সেকেন্ড ও সময় অপচয় না করে উনার প্রস্তাবটা গ্রহন করে টাওয়ার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরুধ করলাম । উনি আমাকে বললেন আপনার সাথে আরো ৪/৫জন নিতে পারবেন । উনি বৃহঃপ্রতিবার সন্ধ্যায় আমাদের জন্য ঠিককরলেন । উনার সাথে কথা বলে আমি ৪/৫জন সঙ্গী খুজতে গিয়ে রীতিমত বেকাদায় পড়ে গেলাম এই জন্য যে কাকে ছেড়ে কাকে নিবো ? অনেক কাটছাট করে ১০জনের একটি লিষ্ট করে উনাকে মেইল করলাম । তাতে উনি রাজি হলেন এবং লোকজন বেশী হওয়ার কারনে দিন এবং সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে । ঠিক হয়েছে শুক্রবার সকাল ১০টায় । আমরা সেখানে ১ঘন্টা থাকার সুযোগ পাবো বলেও জানিয়েছেন লোকমান ভাই ।

শুক্রবার পুর্বঘোষনা অনুযায়ী সবাই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে হারা পান্ডার সামনে হাজির হলাম । যদিও শাহীন ভাই নাস্তা করতে একটু দেরী হওয়ার কারনে নির্ধারিত সময়ের ১৫মিনিট পর আমরা ফায়সালিয়া টাওয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি এবং ঠিক ১০টায় নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছতে সক্ষম হয়েছি । যারা যারা সাথে ছিলেন তারা হলেন, এসবি ব্লগার শাহীন ভাই,মনির ভাই,আনোয়ার ভাই,নুরুল ইসলাম ভাই,মোবারক ভাই,মামুন ভাই,ফখরুল ভাই,গোলজার মোল্লা ভাই,রাশেদ ভাই,মিজান ভাই এবং হোষ্ট লোকমান খান ভাই । ভালো মানুষের বন্ধু হয় ভালো মানুষ । কথাটা বলার মানে হলো আমাদেরকে যিনি টাওয়ারটা দেখাবেন তিনি লোকমান ভাই এর বন্ধু বি-বাড়ীয়ার কৃতি সন্তান মতিউর ভাই । উনার ডিউটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদেরকে টাওয়ারটি সম্পুর্ণ ঘুরে ঘুরে এবং বিভিন্ন স্থাপনার মর্মার্থ বুঝিয়ে দিয়েছেন । সামান্য সময়ের ব্যবধানে আমরা বুঝে গেছি মতিউর ভাই একজন ভালো মনের মানুষ । মতিউর ভাই এর নেতৃত্বে আমরা টাওয়ারে প্রবেশ করললাম ।
টাওয়ারের উপর থেকে যেমন দেখা যায় রিয়াদ শহরটাকে

মতিউর ভাই এর কার্ড পাঞ্চ করে আমরা ১১জন লিফটে উঠলাম । জানতে পারলাম আমাদের প্রত্যেকের গতিবিধি এবং ভয়েস স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হচ্ছে । এও জানতে পারলাম এই মনিটরিং সুবিধা থাকার কারনে এখানে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সুযোগ কম । আমাদেরকে প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হলো টাওয়ারটির একদম টপে(উপরে) । সেখানে ঘুরে ফিরে দেখে ছবি উঠিয়ে তারপর নিয়ে যাওয়া হলো গ্লোবটির মধ্যে । এই গ্লোবটি ব্যপারে একেকজনের ধাওরনা একেক রকম । কেউ এই গ্লোবটিকে টাওয়ারে পানির সরবরাহের ট্যাংকি হিসাবে চিন্তা করেন আবার কেউ এটা শুধু মাত্র সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বানানো হয়েছে বলেন মনে করে থাকেন । কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন এর মাঝে আছে দুইটি বিলাস বহুল রেষ্টুরেন্ট । যেখানে বিভিন্ন দেশের রাজকীয় মেহমানরা খাওয়া-দাওয়া করেন । এখানে একবেলা খাবারের মুল্য সর্বনিন্ম ৫০০রিয়াল ।
যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘুরে ঘুরে আমাদেরকে টাওয়ারটি দেখিয়েছেন তিনি সেই মতিউর রহমান ভাই

এরপর নিয়ে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো গ্লোব এর পাদদেশে যে ফ্লোরের নাম দেয়া হয়েছে The Experience । সেখান থেকে পুরো রিয়াদ শহরটাকে দেখলে মনে হয় কিছু কুড়ে ঘর বৈ কিছুই না । সেখানে মামুন ভাই এর কবিতা আবৃতি এবং ফখরুল ভাই এর গান যোগ করেছে নতুন মাত্রা । তারপর সবাই যারা যার মত ফটো শেসনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং পুরো ভ্রমনটি ভিডিও করার দায়িত্ব পড়লো আনোয়ার ভাই এর উপর । তারপর চলে গেলাম স্কাইমল ফ্লোরে । সেখানে ভিবিন্ন পন্যের মুল্য দেখে রীতিমতো টাস্কি খেলাম । একটি কলমের দাম লিখা আছে ৩৪০রিয়াল,একটি কলমদানীর মুল্য ৭৫০রিয়াল । কিনতে না পারলে কি হবে দুধের স্বাদ ঘুলে মেটানোর উদ্দেশ্যে আচ্ছামতো ছবি তুলে নিলাম ।

সময় যেনো আমাদের সাথে দুষমনি শুরু করে দিয়েছে । মনে হচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে শুরু করেছে ঘড়ির কাটা । তারপর গ্যালারি ফ্লোরে সামায় সময় কাটিয়ে নিচে নেমে এলাম । সমাপনিতে মতিউর ভাই আমাদেরকে পেয়ে উনার আনন্দের কথা প্রকাশ করলেন । আমরাও উনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলাম । তারপর লোকমান ভাই আমাদেরকে উনার অফিসে নিয়ে গেলেন । অফিসত নয় যেনো এইটাও একটা ছোট-খাটো টাওয়ার । সময় আমাদের পিছন থেকে তাড়া করছে তাই দেরী না করে সবাই যার যার গন্তব্যে রওনা করলেন আর এভাবেই শেষ হলো একটি স্বপ্নের ভ্রমণ ।

একনজরে ফায়সালিয়া টাওয়ার
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের মালিক ফাহাদ হাইওয়ে এবং ওয়ালাইয়া রাস্তার মাঝখানে নির্মিত হয়েছে রিয়াদের সবচেয়ে বিখ্যাত টাওয়ার “ফায়সালিয়া” । টাওয়ারটির নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে এবং এর কাজ সমাপ্ত হয় ২০০০সালে । বিশাল এই টাওয়ারটির উচ্চতা ২৬৯মিটার(৮৮১ফুট) । এর ফ্লোর সংখ্যা ৪৪টি । এই টাওয়ারটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করে লন্ডনের স্যার নরমান ফস্টার এন্ড পাটনার্স নামের একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান । কিং ফায়সাল ফাউন্ডেশনের মালিকাধীন এই টাওয়ারটিতে রয়েছে ৫ তারা সমমানের ২২৪টি বেডরুম হোটেল, ১০০টি এপার্টমেন্ট এবং ৩০ তলা অফিস স্পেস । একটি সোনালী রঙ্গ এর বিশাল আকৃতির গ্লোব এবং এর উপরে বিশাল মিনার ।
যেকোনো পরিস্কার দিনে এই টাওয়ার থেকে চমৎকার রিয়াদ দেখার সুযোগ রয়েছে ।

