somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃম্ময়ীরা ভাল নেই

২৬ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরি, আপনি বোধ হয় ঘুম চোখেই উঠে এসেছেন। আসলে বাচ্চাটার যন্ত্রণায় আর পারছিলাম না।
- ইটস ওকে। বলুন।
- কষ্ট করে একটু চোখ মেলবেন।
- ওহহো, সরি সরি। আপনি! প্লিজ আসুন।
- থ্যাংকস, অভি আসো-একদম দুষ্টমি করবে না কিন্তু।
- আসলে ঘুমিয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই এমন হয়। কেউ দরজা নক করলে ঘুম নিয়ে এসে দরজা খুলে আবার বিছানায়। বেডরুম আর ফ্লাটডোরের প্রতিদিনের পথ ঘুমের মধ্যেও ভুল হয় না।
- বাহ্‌বা আপনিতো দেখি ঘুমদেবতা, তো ভুল কেউ ঢুকে পড়লেতো বিপদ। কতরকম মানুষ আছে এই শহরে।
- এখনও কেউ ভুল করেনি। তবে ভুল করলে ভুলই হবে, কিছু নেই আমার। আমি ছাড়া! বসুন প্লিজ, জাস্ট ফ্রেশ হয়ে আসছি।
- দেখুনতো দুপুর হয়ে আসছে আর আমার হলো মরনিং। অভি, ডিয়ার ফ্রেন্ড, হাউ আর ইউ?
- আই অ্যাম নট ফাইন, ডিয়ার। মাই ক্যাট ইন ইউর বেডরুম।
একি বলে বাচ্চাটি? ওর বিড়াল আমার বেডরুমে আসবে কি করে? কৌতূহলে ভ্রু গুছিয়ে আমি আভি’র মায়ের দিকে তাকাই।

হাসির রাশ টেনে ধরেও ভদ্রমহিলা চোখেমুখে হেসে ওঠেন। সিগ্ধতার সৌরভ ছড়ানো সে হাসি। যাদের ঠোঁটের সাথে চোখও হাসে তারা খুব উপভোগ্য মনের মানুষ হন। আমি মনে মনে বলি, নট অনলি মরনিং, গুড মরনিং।

ভদ্রমহিলার চোখের হাসির রেশ তখনও রযে গেছে। হঠাৎ মুখাবয়বে কিছুটা লজ্জার জড়তা নিয়ে বলেন, কাল রাতে দু ফ্লাটের দরজা খোলা থাকার কোন এক সময় বেড়ালটা আপনার ফ্লাটে ঢুকে পড়েছে।

- হুমম। তাহলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেড়ালই পালাল। হা হা আহ হা অহ। ডিয়ার অভি, ডোর ইজ ওপেন। গো টু মাই বেডরুম, ফাইন্ড অ্যান্ড কিস ইউর ক্যাটস।

অভি দৌড়ে আমার বেডরুমের দিকে চলে যায়। ভদ্রমহিলা তার ছেলের পথে তাকিয়ে থাকেন।
- এত চঞ্চল হয়েছে ছেলেটি। অভি, কোথাও হাত দেবে না কিন্তু। দুষ্টু করলে আমিও বকব, তোমার ফ্রেন্ডও বকবে।
- ওকে মাম, ডোন্ট ওরি। আই জাস্ট ফাইন্ড মাই ক্যাট।
ভদ্রমহিলা এবার আমার দিকে চোখ ফেরান। কাল রাতের ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত আর আপনাকে ধন্যবাদও দেয়ার আছে। কাল কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, এতটা কখনও হয়নি। আপনি না আসলে হয়ত...

আমি একটু বিব্রত হই। কাউকে সত্যিকার অর্থেই লজ্জায় জড়সড় হতে দেখলে আমি ঠিক কী করব বুঝতে পারি না। তবে ইনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলে আর বন্ধুত্ব থাকলে এই মুহূর্তে আমি তার গাল টিপে দিতাম। বলতাম, আর লজ্জাবতী হতে হবে না, গালতো লাল হয়ে গেলোরে।
ভদ্রমহিলা সত্যিই লজ্জিত। তিনি কোন ফরম্যালিটি করছেন না। তার গাল গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের পাপড়ি কাঁপছে। অমি শুধু বললাম,ধন্যবাদ কেন? এটা যে কেউ করত।

- নাহ, এই শহরে কেউ কারো প্রতিবেশী হয় না। করত না। আর করলেও পারত না। এর আগে একবার সামনের ফ্লাটের ভাবী এসেছিলেন। উনি অপমানিত হয়েছিলেন। আমার হ্যাজব্যান্ড ওনাকে বলেছিলেন, ইটস আওয়ার পারসোনাল ম্যাটার। হু দ্যা হেল আর ইউ। ওই ভাবী সোসাইটিতে কমপ্লেইন করতে চেয়েছিলেন। আমি পরে ভীষণ সরি বলেছিলাম।

বাচ্চাটি ফিরেছে। কোলে সাদাকালো তুলতুলে একটি বেড়ালছানা।
- মাম, আই ওয়ান্ট টু গো মাই রুম। পিউ নিডস ফুড।
- ওকে, টেক কেয়ার ইউরসেলফ।
- থ্যাক ইউ ফ্রেন্ড। শি ওয়াজ প্লে উইথ ইওর পিলো।
আমি ওয়েলকাম বলি। কিন্তু এই বেড়ালের বাচ্চাটি সারারাত ছিল কই। কোন সাড়াশব্দ ছাড়া আমার বেডরুমে। তাও আবার আমার বালিশ নিয়ে খেলা করছিল। খেলা মানে নখের আচড়ে নিশ্চয়ই আমার কোন একটা বালিশ ফুটিয়ে তুলো তুলো করে ছেড়েছে। আমার গালে হাত চলে আসে।

- ভয় নেই। বেড়ালটি অনেক শান্ত। আপনাকে আচড় দেবে না। ভয় পেয়েছিল, তাই উদ্ধারকর্তার পাশেই রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে।

এইবার আমি হেসে উঠি। তবে তা দুষ্টমির হাসি। মনে মনে বলি, ভাগ্যিস শুধু বেড়ালই এসেছিল।

ভদ্রমহিলা অনেক শার্প। তিনি আমার হাসি পড়ে ফেলেছেন। আমি কিছু বলার আগেই তিনি বলে উঠলেন, - বেড়াল শান্ত ছিল। অন্যকেউ এত শান্ত নাও হতে পারত। তবে একটা অপশন ছিল, আচড় চিহ্ন বেড়ালের বলে দিব্যি চালিয়ে দিতে পারতেন। কি বলেন? এই বলে তিনি ঠোঁটে চোখে শরীরে এক নৃত্যময় হাসিতে মেতে উঠলেন।

আমি বুঝতে পারছিলাম, এ হাসি স্বচ্ছ জলের মতোই বইছে। যার কোন গন্ত্যব্য ঠিক করা নেই। ভদ্রমহিলা শুধু সুন্দরীই নন, সম্ভ্রান্ত। পরিমিতি বোধের মধ্যেই সবটুকু উপভোগ্যতা দিতে জানেন তিনি। আমি প্রসঙ্গ এড়াই। আপনার কপালে বেশ খানিকটাই কেটে গেছে। তিনি তখনও হেসেই চলেছেন।
- শুধু কপালেই দেখলেন, ঠোঁটের কোনে ফেটেছে খানিকটা, গ্রীবায়ও ফুলে আছে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে হাসি মিলিয়ে যায় তার। তীক্ষ্ণ চোখ, ফ্যাকাশে মুখে ঘৃণার অবয়ব। এই অমানুষটার হিংস্রতা আমার পুরো শরীর জুড়েই। এগার বছর, শরীরও সয়ে গেছে এখন। আই অ্যাম সরি।
- না না সরি’র কিছু নেই। মাঝে মাঝে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না। ছি ছি কিসব বলে ফেললাম অপানাকে। তবে আপনার চোখে বিস্ময় আছে। রাত সাড়ে তিনটাই তো হবে। অসম্ভব জোরে দরজায় একটি বারই নক করলেন আপনি। আমার বাচ্চাটি দৌড়ে গিয়ে দরজাটি খুলে দেয়। আমি আরও বিব্রত হচ্ছিলাম, আজ হয়ত আবার কেউ অপমানিত হবেন।

- হুম, এক্যুরিয়াম ভেঙে ড্রয়িংয়ের ফ্লোর পানিতে ভাসছে। কয়েকটি মাছ কাতরাচ্ছিল। টিভিটা উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, শরীর ছেড়ে আপনার শাড়ির অর্ধেকটা ফ্লোরে লেপ্টে। একহাতে আপনার গলা টিপে ধরে অন্যহাতে পর্দা স্টান্ড নিয়ে আপনার হাজব্যান্ড। অন অ্যাকশন শট।
- দরজা খুলেই অভি আপনাকে জড়িয়ে ধরে। ও ঘুম থেকে জেগে আর্তনাদ করে উঠেছিল।
- হ্যা, এই আর্তনাদে বীভৎসতার ভয় ছিল। আমি বাচ্চাটির জন্যই আপনাদের ইনট্রাপ্ট করেছি। নইলে করতাম না।
- আপনি কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে অভির বাবার দিকে তাকালেন। বিশ্বাস করুন, আপনার বাড়াবাড়ি শোনাবে কিন্তু আমি বাড়িয়ে বলছি না। প্রশ্ন, ভয়, ঘৃণা, শাসন, বিস্ময়, প্রেম, দায়িত্ববোধ, শক্তি নিয়ে অদ্ভুত সে দৃষ্টি। ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারব না অচেনা অজানা মানুষ আপনি, এমন চোখ আমি কখনও দেখিনি। ও গলা ছেড়ে দেয় তখনি, হাত থেকে রডটি পড়ে যায়। ও আপনার দিকে তাকাতে পারছিল না। আপনি শুধু বললেন,কটন হবে? আমরা নির্বাক। আপনি আবার বললেন, কানে দেওয়ার জন্য, একটু বেশি লাগবে, সিনেপ্লেক্স সাউন্ডতো। আপনি দেখালেনও বটে এই ক্ষোভ, কষ্টেও আমার হাসি চলে আসছিল তখন। আমার হ্যাজব্যান্ডের মাথা নিচু হয়ে আসে, উঠে বেডরুমে চলে যায়। আপনি আলতো করে অভির নাক টিপে দিয়ে বললেন, ফিল্ম ইজ এন্ড ডিয়ার, গো টু সুইট স্লিপ। আপনি চলে যাওয়ার পর আমরা মা-ছেলে গেস্টরুমে রাত কাটিয়ে দিয়েছি। সকালে ও বের হবার পর পরিচারিকা নিয়ে রাতের সকল জঞ্জাল পরিষ্কার করলাম, মাছগুলোর জন্য কষ্ট লাগছিল। কীভাবে মরে গেলো।

আমি চাইছিলাম ভদ্রমহিলা আরো বলুক। সহজাত হয়ে উঠুক। নিজের কথা শোনানোর মানুষ পাওয়া এখন খুব মুশকিল।
- চা খাবেন।
- খুবই ধন্যবাদ। আমি চা খাই না। এর থেকে ভালো হয় আমি আমার কিচেন থেকে কফি তৈরি করে আনি, আপনার কফিতে আপত্তি নেইতো। ওহ্‌ আপনিতো ব্রেকফাস্টও করেননি। টোস্ট চলবে নিয়শ্চই সাথে ভেজিটেবল কারি, সাউথ ইন্ডিয়ার রেসিপিতে করা। এই সকালে করেছি, শুধু ওভেনে গরম করে আনব। গিভ মি টেন মিনিটস প্লিজ।

ভদ্রমহিলার এই আহ্বান কেমন যেন। যেন পণিরের মতো মমতা মাখানো। আমি ফাঁকফোঁকর খুঁজছিলাম, কীভাবে ধন্যবাদ বলে না করা যায়। কিন্তু পরে ইচ্ছে করল না। মমতার আহ্বান ফিরিয়ে দিতে নেই, ফিরিয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া আমি একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতির উপলক্ষ খুঁজছিলাম। আমি কৃতজ্ঞতার ছোট্ট একটি হাসিতে সম্মতি দিলাম। তিনি দ্রুতই উঠে গেলেন। আমি সোফার টেবিলে পা তুলে দিয়ে একটি কুশন কোলে নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবছিলাম।

- ব্যাচেলরদের এই স্বাধীনতাটায় আমার লোভ হয়। আয়েশ ইচ্ছাগুলো অদ্ভুত। জনাব, যদি কষ্ট করে ঐ চরণযুগল নামান তাহলে ট্রে-টা টেবিলে রাখতে পারি।
- আমি চমকে উঠি। কুশনটা কোল থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়। ঝাপসা দেখছিলাম। তবুও ভদ্রমহিলার চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। বোকার মতো ভাবছি, কী করতে হবে আমায়? তিনি চোখের ইশারায় আমায় টেবিলের উপর নিয়ে গেলেন। আমি যেন সম্বিত ফিরে পেলাম, দ্রুতই পা নামিয়ে ফেলি। সরি বলতে বলতে দাঁড়িয়ে যাই।

তিনি টেবিলে ট্রে রাখতে রাখতে বললেন, এবার কি চোখ মেলেই ঘুমোচ্ছিলেন।
আমি কোন উত্তর দেই না। ট্রে’র দিকে তাকিয়ে আছি। দুধসেমাই, দুটি রুটি ভাজ করা, ডিম সেদ্ধ, ভেজিটেবল কারি, গ্রিন সালাদ এবং ওরেঞ্জ জুস। টোস্ট নেই। আমি অদ্ভুত রকম অবাক হই। সবকটি খাবার আমার ভীষণ পছন্দের। আমি টোস্ট পছন্দ করি না। তিনিতো টোস্ট করবেন বলেছিলেন। আমি আমার অপছন্দের কথাও জানাইনি। নওমি মাঝে মাঝে বাসায় আসলে আমার ব্রেকফাস্টটি এমনই হয়। আর দশ মিনিটে কী করে হলো এত্তোসব।

- কী হলো বসুন। শুরু করুন, মন্দ লাগবে না আশাকরি। শুধু সকালের আবহটা পাবেন না। নিন নিন। আর কিছুক্ষণ হলে লাঞ্চ আওয়ারে ঢুকে পড়বেন।

আমি বসি। দুধসেমাই দিয়ে শুরু করলাম।
- অধিকার পেলে বলতাম, দিয়ে শুরু করুন। ভাবছেন দশ মিনিটে এসব করলাম কী করে। আমার ধারণা আপনার সজাগ থেকেও ঘুমিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে। এটা ঠিক চোখ মেলে ঘুম নয়, স্নায়ুকে শাসন করে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার ক্ষমতা। দশ মিনিট নয় প্রায় বিশ মিনিট সময় নিয়েছি আমি। আপনার স্নায়ু সময়ের উপলব্ধি নেয়নি।
- আপনার পড়াশুনা? আমার অপ্রাসঙ্গিক এমন প্রশ্নে তিনি অবাক হবেন, আমি তার চোখের দিকে তাকালাম। না, তিনি স্বাভাবিক। যেন আমি এমন প্রশ্ন করব তিনি জানতেন।
- অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স।
- আমার ঠোঁটের কোনে এইবারের হাসি ইঁটস অল রাইট ধরনের । কী নাম আপনার?
- মৃন্ময়ী চক্রবর্তী।
- মৃন্ময়ী, আপনার রান্নাপাত্রে কি দুধসেমাই অবশিষ্ট আছে? আমি আরও খেতে চাই।

তিনি উঠে গেলেন। টি টেবিলের গ্লাস প্রতিবিম্বে আমি দেখি, আমার পেছনে গিয়ে তিনি একটু দাঁড়িয়েছেন। আমার চুল স্পর্শ করে করেও করলেন না। আমি বুঝতে পারছিলাম এই হাতে আমার চুল এলোমেলো করে দেয়ার আহ্লাদ ছিল। হয়ত অধিকার পায়নি। বুক টেনে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মা, এখন আমি চুলই গুছিয়ে রাখি না। কে এলো করবে বলো, ওমন আহ্লাদ হাত আমি কোথায় পাই।

ছোট্ট তিনটি লাল রঙ্গা বাটি সাজিয়ে দুধসেমাই নিয়ে এসেছেন তিনি। ট্রেটি এগিয়ে দিলেন। বড় বাটিতে বেশি পরিমাণের জন্য আমি খেতে নাও পারি আর দ্বিতীয়বার খেতে চাওয়াতে এভাবে পরিবেশন হলে অতিথি নিজেকে অসম্মানিত ভাবতে পারেন। নাহ, আবারও দেখলাম, জীবন সমীকরণে ভুল আছে। দীর্ঘ নয় বছর এমন অসংকোচে আমার খেতে চাওয়া হয়নি। মায়ার কাছে নিঃশেষ হওয়ার স্বভাবটা আমার সেই ছোট্ট থেকেই। আগপিছ ভাববার ক্ষমতাটা তখন আমি হারিয়ে ফেলি। ইচ্ছে করছিল মাথাটা নুইয়ে দেই। আমি একে একে তিনটি বাটির সেমাই শেষ করি।

- বুঝেছি আর কিছু নেবেন না। আপনি মিষ্টি প্রিয়। মিষ্টি প্রেমিকেরা মিষ্টি পেলে অন্যস্বাদে আর যায় না।
- হুমম, পিঁপড়া। সামলে রাখবেন। ফাঁকফোকর পেলে ঢুকে পড়তে পারি।
- আপনার আবার ফাঁকফোকর লাগে নাকি। সদর দিয়েইতো ঢের পারেন।
- তা পারি। তবে প্রেমিকদের সদর দিয়ে প্রবেশ না করাই ভালো।
- হ্যা, চোরা প্রেমে মিষ্টি একটু বেশিই থাকে। তা মশাই সামলে, ঠাঁই না পেলে কিন্তু ডুবে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
- মরব কিনা জানি না তবে ডুববো না। সাঁতারটা ভালোই জানি।
- বাহ বাহ। আর্টস্টিক।

বেশ খানিকক্ষণ ধরেই আমি মৃম্ময়ীর চোখ আটকানোর চেষ্টা করছিলাম। সম্ভবত মৃন্ময়ী তা বুঝে ফেলেছে আগেই। হুট করেই আমার চোখে চোখজোড়া তুলে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে, আপনার কাছে শেখার আছে মি.। হাউ টু ফ্লাট এ হাউজ ওয়াইফ।

আমিও হেসে উঠি। বুঝেছি আপনার কাছে লুকাবার চেষ্টা করে খুব একটা সুবিধা হবে না। শেষে চোরই ভেবে বসবেন। তবে আশ্বস্ত করছি, উদ্দেশ্যহীন আমি।

অবাধ্য প্রেমিকার মতো হেসে উঠে মৃম্ময়ী। শরীর দুলতে থাকে। বাম হাতে খোঁপাকাঠি খুলতেই কপোল, কাঁধ, বুক, পিঠ বেয়ে নামতে থাকে মৃন্ময়ীর চুল। যেন দম আটকে আসছিল চুলগুলোর। ছাড়া পেতেই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে পুরো মৃন্ময়ীজুড়ে। হুট করেই মৃন্ময়ী বলে উঠে, কী ভয় পেয়েছেন!
- তাতো একটু পেয়েছিই। এটুকু না পেলে পুরুষ কীসে বলুন। বাঁজিয়ে দেখলেন বুঝি?
- জীবনকে এভাবে মর্ডান পোয়েট্রি সাজিয়ে রেখেছেন। প্রবল তৃষ্ণা হয়। যেকারোই হওয়ার কথা। আপনার কথাই বলি-লুকানোর চেয়ে স্বীকারোক্তিই আমার কাছে সহজ। আপনার ভালোবাসার মানুষটি ভাগ্যবান। রোমান্সের ঘোরে ঘোরেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
- হাহ, ভালোবাসা। আমার পোয়েট্রিতে ওই একটা জায়গাতেই ছন্দহীন রচনা তৈরি হয়ে আছে। জীবন এক বিস্ময় জিনিস ম্যাডাম, ভালোবাসাটা আরও।
- মানে? আপনারও!
- মৃন্ময়ী, বোকা পথিকের একটা গল্প আছে। শুনেছেন কখনও গল্পটা। যদিও গল্পটা একটু ডার্টি। পথ চলতে চলতে অন্ধকারে এক পথিকের পায়ে কিছু একটা লেগে যায়। পথিক হাত দিয়ে টের পায় উষ্ণ নরম ধরণের কিছু। একটু পরে শুকে দেখতেই চমকে উঠে, এতো মল। কিন্তু ততক্ষণে তা পায়ে হাতে নাকে শরীরেও গেছে। গন্ধে বমি করে দেয় বোকাটা, কিন্তু শরীর থেকে গন্ধতো আর সহসাই যায় না। জীবনে কখনও কখনও আমরা এমন বোকা পথিক হয়ে যাই, কিছুটা গর্দভ টাইপ। মৃন্ময়ী আপনি ভালো নেই তা আমি বললে আপনার নতুন কিছু মনে হবে না। একটু বসুন, আপনাকে একটা চিঠি শোনাই। ভালোই লাগবে, আপনার কৌতূহল মিটবে কিন্তু আনন্দের নিয়শ্চতা দিতে পারছি না। চিঠি কিন্তু উপভোগ্য, অন্যরকম আবেদন আছে। চোরা চিঠি হলেতো আরও, হা হা হা হা হা।

আমি উঠে যাই। বেডরুমের শিয়রের পাশ থেকে ল্যাপটপ তুলে আনি। কোলের উপর রেখে অন করতে করতে বলি, ডিজিটাল চিঠি। ডিজিটাল রানার, জিমেইল। পড়তে শুরু করি।

তোমাকে বলছি,
আমি দিতে এসেছিলাম। গ্রহণ করতে পারনি সেটা তোমার দৈন্যতা। তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো আর আমি ফিরে এসেছি। জানইতো, একসাথে অনেকটা পথ এসে একা ফিরে যাওয়া কঠিন। কিন্তু অবিশ্বাস্য, শুধু এই একটা কারণেই আমাকে অতিমানব মনে হয়। বলেছিলে, অসংখ্য থেকে আলাদা করা মানুষ বলেই বুকে টেনে নিয়েছো-হয়ত তাই তোমার সাথে যেখান থেকে চলতে শুরু করেছিলাম আমি সেই প্রথমে পৌঁছেছি। জীবন সেলুলয়েডে তোমার যতখানি ধারণ করতে করতে এগিয়েছিলাম ঠিক ততখানি মুছে ফেলতে ফেলতে আমি আজ শুরুর লাইন মার্কে আবার। বাঁশি বাজতেই এবার ছুটছি না। ভুল কাউকে সাথে নিয়ে আমি প্রথম হতে চাই না, আসল কারো হাত ধরে ডিসকোয়ালিফাইড হলেও অন্তত সেখানে কারও স্বার্থপরতা আর মনোদৈনতায় আমার সাফোকেশন হবে না। ভুল কাউকে নিয়ে সঠিক পথে যাওয়ার চেয়ে নির্ভেজাল কাউকে নিয়ে পথ ভুলে যাওয়া অতুলনীয় সঠিক। শোন-আমার কাছে তোমার আমার সম্পর্কের আর কোন ভবিষ্যত নেই, কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে এর ভবিষ্যত রয়ে গেলো। এখনইতো উল্লাস সময়টা উদযাপন করে ফেললে, ভবিষ্যতটা রইল শুধু অনুশোচনার জন্য। তোমাকে দিয়ে এসেছি আমার জীবনের দুটি বছর। কি করবে তুমি এখন?

পঁচা শামুকে পা কেটে ফেলেছিলাম আমি। ক্ষত শুধু ছড়িয়েই যাচ্ছে। আর এই ক্ষতের কারণেই বুঝি তোমাকে আমি মনে রাখছি। তবে ভুলে যাচ্ছি। জানোতো, মনে না রাখা আর ভুলে যাওয়াটা এক নয়। কত অত্যাচার করেছো, কত অমানবিক জুলুম করেছো, আত্মসম্মান বলতে কিছু অবশিষ্ট রাখতে দাওনি, অপমান অপদস্তের কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে ভুল করে একটা সঠিক কাজ করেছিলাম আমি। আমার সার্কেলের পরিচিতিতে তোমাকে কখনও পরিচয় করাইনি। আজ তাহলে তারাই অস্মানিত হত, যদিও আমার ভালোবাসার অনুভূতিতে তাতে কিছু যায় আসত না। আমাদের প্রথম পরিচয়ে উপস্থিত আমার বন্ধুটি কেন যেন বলে ফেলেছিল, ময়লার ভাগাড়ে পা রাখলি নীল। আমি বলেছিল, ডোন্ট অ্যানালাইসিস। ভালোবাসা এমনই। কীসের মোহে যে তখন আমি একটু পিছু ফিরে দেখিনি। হয়ত তোমার ঐ মায়া মুখ অথবা তোমার শরীর, তোমার অসাধারণ যৌন কলার বিভ্রমে। তেত্রিশের পরিণত যৌন মনস্তত্ত্বে বাইশ-তেইশের শরীর। অথচ ক্ষতটা যে তখন থেকেই তৈরি হচ্ছিল মায়া আর শরীরের বিভ্রমে। তুমি অপেক্ষা করছিলে কখন ভালোবেসে ফেলবো তোমায়। আমিও শেষ পর্যন্ত ভালোবেসেই ফেললাম। পৃথিবী লণ্ডভণ্ড করে দেয়ার শক্তি নিয়েই ভালোবাসলাম। আর জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতায় আটকে ফেললে আমায়। তুমিও সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে আর দেরী করনি। ব্যথা দিতে শুরু করলে, শেষ পর্যন্ত আত্মার আর্তনাদ পর্যন্ত বিদীর্ণ করে ছেড়েছো। বলিনি কখনও, একটু আহতও করিনি।

আসলে আমি ভালোবেসেছি বলেই তুমি যা পেরেছো আমি তা পারিনি। ফিরিয়ে দিতে পারতাম তোমার বীভৎসতার প্রতিটি সেকেন্ড সময়, প্রতিটি আঘাতের প্রতিঘাত। অথচ ঐ যে একটু আহত করিনি। কেন করিনি জানো? আমার একটু আহ শব্দে তুমি ধুলিসাৎ হয়ে যেতে। আমি চাইনা কখনও তুমি অপমানিত হও, অপদস্ত হও। ভালোবাসা ভুল হয় না কখনও মানুষ ভুল হয়। যা জানি আমি জানি, যা দেখেছি আমি দেখেছি। প্রয়োজন বোধ করিনি, তোমার যা ছিল গোপন তা একান্তই ব্যক্তিগত আছে। আমি বিশ্বাস ভাঙিনি পারবও না কখনও। অথচ তুমি! কেন প্রমাণ করে গেলে যে তোমায় বিশ্বাস করে আমি ভুল করেছিলাম, ভুল হয়। তাই বলে এমন, যেখানে ভুলও লজ্জিত হয়ে ঘৃণায়। তোমাকে অবিশ্বাসী জেনে আমার প্রেম অপমানিত হয়। সম্পর্কে এভাবে কি কেউ খাদ মেশায়? কতটুকু প্রশান্তি পেয়েছো? কতটুকু বড় হয়েছো? আমার একান্ত ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এখানে সেখানে বলতে কি তোমার ঠোঁট একটু ইতস্ততও করেনি, ভাবনি একবারও কতটা বিশ্বাস মাখামাখি হয়ে সেই ঠোঁটে আমার মায়া চুমু লেগে আছে।

ভুলে যাওয়াটা তোমার জন্য সহজ ঠিক তেমন সহজ, যেমন করে প্রতিটি স্নানে তুমি ধুয়ে ফেলো অসংখ্য পৃথক চুমুর দাগ। আসলে হৃদয়বৃত্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পেশাদাররা কতটা মানুষ? শুধু জানা হয়, এখানে তোমরা কর্পোরেট প্রফেশনাল, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সম্পর্কই তোমাদের জীবন। তোমরা কখনও বদলাও না, বদলাতে পারো না। এক সময় শুধু সময় তোমাদের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। তোমরাই অনেক হেরে গিয়েও কখনও হারটা স্বীকার করতে পারো না। পথশিশুর ঐ ঐশ্বরিক হাসি ম্লান করে দিয়ে ভাবো জিতে গেছো? প্রখর উত্তাপে পুড়ে পুড়ে হাহাকার করা পথিকের তৃষ্ণার জল ফেলে দিয়ে ভাবো জিতে গেছ? নিরপরাধ ভালোবাসায় নষ্ট মেখে দিয়ে ভাবো জিতে গেছ? প্রাণবন্ত জীবনের সব নৈসর্গ উপড়ে ফেলে ভাবো জিতে গেছ? কারও সম্মানের প্রতিদানে অসম্মান করে ভাবো জিতে গেছো? তুমি কখনই অন্যের অবলম্বন ও পরগাছা জীবন ছেড়ে শুধু নিজের অবস্থান নিয়ে ভাবতে পারো না, নিজের কৃতকর্মের উপর জীবন বোধ নিয়ে ভাবতে পারো না। কারণ ভাবলে নিজেকে মেরে ফেলেও এতটুকু আড়াল হওয়ার জায়গাও পাবে না। তোমাকে সহসা কেউ ধিক্কার দেয় না,কখনও নষ্ট বলে না কারণ সময়ই তোমাকে সর্বত্তোম প্রাপ্যতা দেবে, যতটুকু প্রাপ্যতার ধিক্কার আমি দিতে পারবো না, যতটুকু নষ্ট আমি বলতে পারবো না।

পথবুধূরাতো সারভাইভার আর বহুগামীরা সিনার। তাইতো গোপনীয়তা ও শর্ত দিয়ে তোমার বসবাস করতে হয়। সত্যটা এই না যে, তুমি মিথ্যা ভাস্কর্য। সত্যটা এই না যে, তোমরা বদলাও না, আর বদলাও না বলেই সময় ও বয়স তোমাদের বীভৎস পরিণতি নিয়ে অপেক্ষা করে। তুমি এক বীভৎস ভাগাড় যেখানে অগণিত পাপী বীর্যের স্তূপ আর স্তূপ থেকে ক্রমাগত জন্ম নিচ্ছে তোমার একেকটি নিকৃষ্টতম নষ্ট অবয়ব, কীট।

তুমি আমার পরিণত বয়সের প্রথম প্রেম। পথ যে আর এক থাকল না তার একমাত্র কারণ ‘তোমার বহুগামীতা’। তোমার অবাধ যৌনাচারে আমি বরাবরই সমস্যা তৈরি করেছি। আর ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম সুন্দর জীবনে। শিল্পের মানদণ্ডে উৎকর্ষতা পেয়ে যাওয়া উপন্যাসটি শুধু তোমার কথা ভেবেই আমি প্রকাশ করিনি। উপন্যাসটি প্রকাশ হলে অন্তত ভবিষ্যতে কিছু সুন্দর জীবন নষ্ট হতো না। একের পর এক কত জীবন তুমি গ্রাস করে চলেছো তোমার ঘৃণ্য চরিত্রে, তোমার বিষ গহবরে।

আমি জানি, আমার কোন পথ খোলা নেই। কারণ পেছনে যে ভালোবাসার দেয়াল আমি গড়েছি স্রষ্টা হয়েও আমি তা ভাঙার ক্ষমতা রাখিনি। তারপরও এটাও সত্য যে ধ্বংসের পরিণতি নিয়েই সৃষ্টির গড়ে ওঠা। ভালোবাসার দেয়াল ভাঙার ক্ষমতা যেহেতু রাখিনি তাই তার ধ্বংসের পরিণতিতেই আমার অপেক্ষা। জানো, কত সহস্রকাল ওপার দেয়ালে অপেক্ষায় আছে- অফুরন্ত নরম সবুজ, অসীম আকাশ, চোখের পাপড়ি চুমুর বৃষ্টি, কত কোমল আলো আর আমার কুসুম ঘুম।

ইতি
আমি

হাহ, এই শেষ হলো আমার চিঠি পঠন। আমি ল্যাপটপ টেবিলে রেখে মৃন্ময়ীর দিকে তাকাই। একটু ঠাট্টা করতে গিয়ে থেমে যাই। মৃন্ময়ী মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।

মৃন্ময়ী...
চমকে উঠে মৃম্ময়ী। পাপড়ি ভেজানো চোখে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আপনার নামটি সুন্দর। নীল।
ধন্যবাদ। তো অশ্রু কি এই সুন্দরের জন্য। অশ্রুর দাম দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই ম্যাডাম। পৃথিবীতে আমার কাছে এই একটি জিনিসই দুর্লভ মূ্ল্যবান। বক্স থেকে টিস্যু বাড়িয়ে দেই আমি।

মৃদু হেসে ফেলে মৃন্ময়ী। চোখ মুছতে গিয়ে কাজল লেপ্টে ফেলেছে সে। আপনার ঘৃণা ধারণ ক্ষমতা ভয়ংকর।
- মৃন্ময়ী, ঘৃণাও সত্য ভালোবাসাও সত্য। হুমায়ূন মিথ্যে বলেননি, ভালোবাসার মানুষকে কখনও ক্ষমা করা যায় না। আসলে ভালোবাসা যেখানে সীমাহীন সেখানে ঘৃণাও সীমাহীন অথচ পথ কিন্তু একটাই।
- দূরত্ব কি এখন একবারেই...
- সম্পর্কের দূরত্ব এখন অসীম কিন্তু অবস্থানের দূরত্ব বেশি নয়। আছে, এই শহরেই আছে। আজকাল সোস্যাল ডমিস্টিক প্রস্টিটিউটরা ফুটপাথ আর যাত্রীছাউনিও দখলে নিয়ে নিচ্ছে। কম্পিটিশনের যুগ, তবে আমার ভাবনা রমনা স্টান্ডার্ডের দেহজীবীদের নিয়ে। ওদের প্রয়োজনটা মৌলিক। একমুঠো ভাতের হাহাকারের কাছে চরিত্রের প্রশ্নটাই সেখানে অনৈতিক। ওদের ছিটেফোটা ভালোবাসা দিন, একটু খাবারের নিয়শ্চয়তা দিন, ওরা বদলে যাবে। ভালোবাসা নিয়ে ব্যবসা করবে না। সোস্যাল ডমিস্টিক প্রস্টিটিউটদের নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। সেটা ন্যায়বোধ ও যুক্তিবোধ দুই জায়গাতেই ঘৃণার।
- আপনি অসম্ভব নীল। কী অবলীলায় বলে যাচ্ছেন।
- কেন? কোন বোধে অসম্ভব মৃন্ময়ী? আমার কাছে সতীত্বের সাথে প্রেমের সম্পর্ক নেই। সম্পর্কের স্বাতন্ত্রতা আমার কাছে পরিষ্কার। আসলে হিংস্র মানুষের শুধু অকারণ ক্রোধ আর ঘৃণা থাকে। নিজের অসততা আর ঘৃণ্যতাকে বৈধ করে নিতে এই অকারণ ক্রোধ আর ঘৃণাই তাদের একমাত্র যুক্তি। এদের সম্পর্ক হয় স্বার্থের, একেকটা দোকানের মতো, নিজের প্রয়োজন ও সুবিধামতো এরা একেকটা দোকানের গ্রাহক হয়ে চলে। এদের চরিত্রকে ‘সোস্যাল ডমস্টিক প্রস্টিটিউট’ বলাটা অসম্ভব লাগছে আপনার কাছে। আমারতো মনে হয়, অন্তত এই শালীন উচ্চারণের জন্য এরা কৃতজ্ঞ থাকতে পারে আমার কাছে। অসম্ভব ভালোবাসা থেকে আলাদা হয়ে আসতে গেলে অসম্ভব ঘৃণার শক্তি থাকতে হয় মৃন্ময়ী। কতটা ঘৃণ্য বীভৎসতা আমার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছে তা যদি অনুমেয় হতো তাহলে আপনার হ্যাজব্যান্ডকে দেবতা না বলেন, জানোয়ার বলতেন না।
- হয়ত তাই নীল, ঐ যে বললেন না- জীবন এক বিস্ময়, ভালোবাসা আরও। প্রচণ্ড সাফোকেশন হয়। কিন্তু ফিরেও আসতে পারি না আবার ফিরিয়েও দিতে পারি না। কিছু কিছু মানুষ অবয়বের কাছে সম্পর্ক একটি পেশা। সেখানে কখনও কখনও স্পর্শকাতর মানবিক মন বন্দিত্বের দুর্ভাগ্য নিয়ে বসে। না মুক্তি না মৃত্যু।
- হাহা হাহ হাহ। অপেক্ষার সময় ফুরাবে না শুধু দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসবে-বিভ্রম সবই বিভ্রম। এক হৃদয়ের মানুষ এখন বিরল। প্রতারণা আর বহুগামীতা এখন অধিকার, বিশুদ্ধতা আপেক্ষিক। এখন হিসেবি ভালোবাসার সময়। সেখানে প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা কর্পোরেট বিশেষণ ম্যাডাম।

মম, মম। অভির চিৎকার। মৃন্ময়ী চঞ্চল হয়ে ওঠে। পিছু পিছু আমিও যাই। ড্রইংয়ের জানালায় উঁকি দিয়ে আছে ছেলেটি। মৃন্ময়ী প্রাণ আদরে বুকে নেন তার সন্তানকে, হোয়াট হ্যাপেন মাই হার্টস।
- কাঁদো কাঁদো হয়ে অভি বলে, পিউ ওয়েন্ট আউট প্লেয়িং থ্রো দ্যা উইন্ডো এন্ড হ্যাজ নট কাম ব্যাক ইয়েট।
- ওহ ইশ্বর। মৃম্ময়ী অভিকে বুকে নিয়ে উঠে দাঁড়ান।

পাঁচতলা থেকে আমরা নিচে নামি। সীমানা প্রাচীরের বাইরের রাস্তায় খুঁজে পাই বেড়ালটিকে। অভি কোল থেকে নেমে দৌড়ে যায়, সাথে মৃন্ময়ীও। এগোই আমিও। রাস্তার উপরে রক্তে মাথা লেপ্টে আছে কোমল শিশু বেড়ালটির। রক্ত দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে অভি। দুহাতে ছানাটির মাথা আগলে ধরে ডাকতে থাকে, পিউ পিউ। মা, মা মনি। আমি ডাকছি পিউ শুনছে না, তুমি একটু ডাকো না। মৃন্ময়ী বেড়ালটির মাথায় হাত বুলান, আমার দিকে তাকান।

বেড়ালটির মৃত্যু আমার মধ্যে কোন ইমোশন তৈরি করে না। আমি ভাবছিলাম, এই প্রথম অভির মুখে বাংলা শুনলাম। ধারণা ছিল ও বাংলায় অভ্যস্ত নয়। অথচ শিশুটি অসাধারণ সুন্দর বাংলা বলে। আমার আরও কিছু শুনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু শিশুটিকে এখন না ফেরার দেশের গল্প শোনাতে হবে। পিউ মারা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৫
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নীলপরী আর বাঁশিওয়ালা

লিখেছেন নিথর শ্রাবণ শিহাব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

আষাঢ়ের গল্পের আসর

সন্ধার পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দিনের মত আলো করে। কান ফাটিয়ে দেয়া আওয়াজ। কারেন্ট নেই প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর। চার্জারের আলো থাকতে থাকতে রাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে ক্ষমার অফারের সাথে শর্তগুলো প্রচার হয়না কেন?

লিখেছেন আফনান আব্দুল্লাহ্, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১

ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×