জীবনের চেয়ে নীতি বড়...
মক্কা হতে ৯ মাইল দূরে অবস্থিত সে গ্রাম।
সেখানে বসেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। একপক্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)সহ তাঁর বিশিষ্ট সাহাবীরা, আর অপরপক্ষে রয়েছে মক্কার প্রভাবশালী মুশরিক কুরাইশরা।
মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বৈঠক। ইতোমধ্যে সন্ধির যাবতীয় শর্ত চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। তবে সন্ধিটি তখনও লেখা হয়নি।
এমন সময় আবু জান্দাল নামক এক মুসলমান এসে হাজির হল বৈঠক। ক্ষত বিক্ষত তার দেহ। সারা গায়ে পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন। হাতে-পায়ে শিকল পরা। লোকটি খুবই কাতর ও শ্রান্ত।
আবু জান্দাল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
এ জন্য মক্কার মুশরিকরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার আত্মীয়-স্বজনরাও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্য তাকে খুব চাপ দিয়েছে এবং নির্যাতনে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। আবু জান্দাল এ নির্যাতন আর সইতে পারছিলেন না। সে শুনল যে হুদায়বিয়া গ্রামে মহানবী (সা) তাঁর ১৪০০ সাহাবীসহ অবস্থান করছেন। আবু জান্দাল ভাবল কোনক্রমে নবীজির নিকট গিয়ে পৌঁছতে পারলেই তো সে মুক্তি পেয়ে যাবে। তাই আবু জান্দাল হুদায়বিয়া গিয়ে হাজির হল। নবীজির কাছে সে তার উপর নির্যাতন ও অত্যাচারের সব কাহিনী বর্ণনা করল। আবু জান্দালের মর্মান্তিক কাহিনী শুনে সাহাবীদের হৃদয়ে প্রচণ্ড আঘাত লাগল।
আবু জান্দালের পিতা আবু সুহাইল উপস্থিত ছিল সেখানে। সেও ছিল ইসলাম বিরোধী। তাই পুত্রকে এ অবস্থায় দেখে সে যারপর নাই ক্ষুদ্ধ হল।
প্রচণ্ড রাগে সুহাইল পুত্রের গালে বেশ জোরে কয়েকটা চপেটাঘাত বসিয়ে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। সুহাইল আবু জান্দালকে তার হাতে তুলে দেবার জন্য মহানবীর (সা) নিকট দাবি জানাল। আবু সুহাইলের দাবিতে নবী (সা) পড়লেন সংকটে।
সুহাইল জানাল, হুদায়বিয়ার সন্ধি মতে আবু জান্দালকে আপনারা কোনক্রমেই আটকাতে পারেন না। আবু জান্দালকে অবশ্যই ফেরত
দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির একটি শর্ত ছিল মক্কায় কোন লোক মুসলমান হয়ে মুসলমানদের আশ্রয়ে গেলে তাকে মক্কাবাসীর হাতে ফিরিয়ে
দিতে হবে।
তবে সন্ধিটি তখনও লেখা হয়নি। যদিও সন্ধির যাবতীয় শর্তাদি নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আবু সুহাইল মওকা পেয়ে গেল।
তাই আবু সুহাইল বলল, চুক্তির শর্ত পাকাপাকি হয়ে গেছে, সুতরাং আবু জান্দালকে আপনারা রাখতে পারেন না কোনভাবেই।
এনিয়ে মহানবী (সা) ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন।
একদিকে সন্ধির শর্ত, অন্যদিকে একজন মুসলমানকে কাফিরদের হাতে নিশ্চিত বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া। সন্ধির শর্তাবলী যেহেতু আগেই ঠিকঠাক হয়ে গেছে, সে মোতাবেক শর্ত পালন করাই এখন বড় কথা। আবু জান্দাল সব কথা শুনছিল। সে বুঝতে পারল যে, মহানবী (সা) তাকে কাফেরদের হাতেই তুলে দেবেন। তাই সে প্রচণ্ডভাবে কান্না শুরু করে দিল।
কাঁদতে কাঁদতে আবু জান্দাল বলল,
আমি মুসলমান হয়ে আপনাদের নিকট আশ্রয় চেয়েছি আর আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আমাকে যে কত ভয়ংকর অত্যাচার সহ্য করতে হবে তাতো আপনারা বুঝতে পারেন।
আবু জান্দালের মর্মস্পর্শী কথা সবার মনে দারুণ আঘাত হানল। এতে সাহাবীদের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইল। তারা চায় আবু জান্দালকে তারা কাফিরদের হাতে তুলে দেবে না। প্রয়োজন হলে লড়বে, তবুও কাফিরদের অন্যায় আচরণ মেনে নেবে না।
কিন্তু রাসূল (সা) মুখের দিকে চেয়ে মুসলমানরা আর কিছুই বলতে পারল না।
অবশেষে আবু জান্দালকে তার পিতা সুহাইলের হাতে তুলে দেয়া হল। আবু জান্দালের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তবুও তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
বিদায়ের এই সময়ে নবী (সা) বললেন, আবু জান্দাল, আল্লাহর নামে ধৈর্য ধর, মহান আল্লাহই তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।
আবু জান্দাল অশ্রু মুছে ফেলল। আল্লাহর উপর ভরসা করে রওনা হলো মক্কার দিকে।
এ সময় মুসলমানদের দু’চোখে অশ্রু নেমে এল। মহানবীর হৃদয়ের গভীরেও ঝরছিল অশ্রু।
শুধুমাত্র সন্ধির শর্ত রক্ষা করতে গিয়ে মহানবী (সা) একজন বিপন্ন মানুষকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন। তিনি শর্ত লংঘন করতে পারেন না। জীবনের চেয়েও মূল্যবান এই সন্ধি।


নীলপরী আর বাঁশিওয়ালা
আষাঢ়ের গল্পের আসর
সন্ধার পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দিনের মত আলো করে। কান ফাটিয়ে দেয়া আওয়াজ। কারেন্ট নেই প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর। চার্জারের আলো থাকতে থাকতে রাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামে ক্ষমার অফারের সাথে শর্তগুলো প্রচার হয়না কেন?
ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !
২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল
ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম
৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন