somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাত্যহিকী-৪

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






মেয়েকে নিয়ে ফরিদ হাসপাতালে। ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটিলেট কমে গিয়ে ত্রিশ হাজারে নেমেছে। ডাক্তার বলেছে এখনই প্লাটিলেট দিতে। এক ব্যাগ প্লাটিলেট বানাতে চার পাঁচ ব্যাগ রক্ত লাগে। ফরিদ আমাকে ফোন করে জানালো;

-ভাই তিন ব্যাগ জোগাড় হয়েছে, আর এক ব্যাগ লাগে। আপনার তো এবি পজেটিভ। দেন না এক ব্যাগ রক্ত।

আমি রক্ত দিতে ভয় পাই। জীবনেও রক্ত দেইনি কাউকে। নিজের বাপকেও না। কি করি, তবুও ফরিদকে বললাম তুই অপেক্ষা কর, আমি আসতেছি। আমি আমার এক কলিগকে ফোন দিয়ে রাজি করিয়ে সাথে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর হাসপাতলে গেলাম। গিয়ে দেখি রক্ত জোগাড় হয়ে গেছে লাগবেনা। এটা গত দিন দশেক আগের ঘটনা।

ফরিদ আমার গ্রামের ছেলে। আমার দুই বছরের জুনিয়র ছিল। সেই ২০০১ সালে ঢাকায় এনে একজন উকিলের চেম্বারে কেরানীর চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এখনো ফরিদ সেই চাকরি করে। অনেকবার পরামর্শ দিয়েছি এলএলবি পাস করে উকিল হয়ে যা। কিন্তু পারেনি। ফরিদ আর আমি ঢাকায় একই মহল্লায় থাকি। গলির এ মাথায় আর ও মাথায়।প্রতিদিন এশার নামাজের সময় ফরিদের সাথে আমার দেখা হয়। মসজিদ থেকে বের হয়ে রং চা খাই। কোনদিন আমি বিল দেই কোনদিন ফরিদ।

ফরিদের দুইটা মেয়ে। বড়টা আগের ঘরের। আগের স্ত্রী বড় মেয়েটা হবার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছিলো। তারপর ফরিদ তার খালাতো বোন মেহেরুনকে বিয়ে করে। সেই ঘরে ছোট মেয়েটা।

বড় মেয়েটার খুব ইচ্ছে ছিল মেডিকেলে পড়ার। গত দুবছর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোথাও চান্স পায়নি। আর বেসরকারিতে যে মেয়েকে পড়াবে তেমন সামর্থ্য আর পয়শা কোনটাই ফরিদের নেই। মেয়েটা এখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে পড়ছে। আর ছোট মেয়েটা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে।

বাড়তি আয়ের জন্য ফরিদ বাংলা বাজারের প্রকাশকদের কাছ থেকে বইয়ের পান্ডুলিপি এনে রাত জেগে কম্পিউটারে টাইপের কাজ করে। কত রকমের গাইড বই, উপন্যাস, বিদেশি বই। এই টাইপের কাজে আবার চোখের উপর বিরাট চাপ পরে। দুই মাস আগেও চশমার পাওয়ার বদলাতে হয়েছে।

ফরিদের বাবা নেই। গ্রামে শুধু মা আছে। কোন ভাই বোনও নেই। ফরিদের বাবা মরার পর তার মা'কে নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু মেহেরুন এর সাথে বনিবনা হয়না। সংসারে অশান্তি হয়। তাই তার মা নিজে থেকেই গ্রামে চলে গেছে। মাসে একবার একদিন গ্রামে গিয়ে মা'কে বাজার আর ওষুধপত্র কিনে হাতে কিছু নগদ টাকা দিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসে।

রাজশাহী থেকে বড় মেয়ে ফোন করেছিল সেমিস্টার ফি,খাবার খরচ, হাত খরচ সহ পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো লাগবে। শুনেছি মেয়টা নাকি একটা টিউশনিও করে। কিন্তু রাজশাহীতে নাকি টিউশনিতে পয়শা নাই। তিনচার দিন আগে এশার নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে চা খেতে খেতে ফরিদ আমার কাছে তিন হাজার টাকা ধার চেয়েছিলো। এদিকে মাসের শেষ। আমার কাছেও তেমন টাকা নেই। পরে আমি আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করে মেয়েটাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।

ইদানিং দুই মেয়ের পড়ার খরচ, সংসারের খরচ, গ্রামের মায়ের খরচ, মেটাতে আর পারছে না ফরিদ। তার উপরে বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম তাতে এই বাজারে টিকে থাকাই মুশকিল। মেহেরুন কে কোথাও একটা চাকরি দিতে পারলে সংসারে কিছুটা সাপোর্ট তো হতো। কিন্তু মেহেরুন তো মাত্র এসএসসি পাস। তাও কতো আগের। এই পড়ালেখায় আজকাল কোন চাকরীও সে পাবে না।

অনেক ভেবে চিন্তে মেহেরুন একটা বিউটি পার্লারে নিজেই চাকরির ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ফরিদের মা জানার পর বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি। বউকে দিকে চাকরি করাবে তাও আবার বিউটি পার্লারে। মাসের শেষে ফরিদ গ্রামে যাবার পর তার বৌকে নিয়ে গ্রামের লোকের টিটকারী ও শুনতে হয়েছে।

এবার গ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার সময় এক মহা ঝামেলায় পড়ল ফরিদ। বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলছে। দিনে কোন দূরপাল্লার বাস চলে না। শুধুমাত্র রাতে বাস ছাড়ে। রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গোয়ালন্দ ফেরিঘাট এর আগে পুলিশের চেকিং চলে। বাস থামিয়ে যাত্রীদের এবং তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ । সেই চেকিংয়ে ফরিদকে সন্দেহজনক ভাবে গ্রেফতার করে রাজবাড়ী থানায় আটকে রাখা হয়েছে। সাথে সাথে ফরিদ উকিল সাহেবকে জানিয়েছে। জানিয়েছে আমাকেও। কিন্তু অতো রাতে উকিল সাহেব এদিক ওদিক মোবাইল করেও কিছু করতে পারল না। পরের দিন উপর থেকে তদবির করিয়ে প্রায় সন্ধ্যার দিকে ফরিদকে ছাড়িয়েছে উকিল সাহেব।
ঢাকায় ফিরে গা-গোসল দিয়ে ভাত খেয়ে বিছানায় যেতে যেতে রাত সাড়ে এগারোটা।

উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়ায় শীত বেড়েছে। লেপ ছাড়া ঘুমানো যাবে না রাতে। গতবার শীতের শেষে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে কার্নিশের উপরে লেপ দুটো তুলে রেখেছিল আমার বৌ। বস্তা দুটো নামিয়ে লেপ বের করতে গিয়ে দেখি ইঁদুরে একটা পাশ কেটে ফেলেছে। অনেকখানি তুলো বের হয়ে আছে।

কি আর করার, বৌ আমার পুরানো লুঙ্গির ছেরা টুকরো দিয়ে লেপের ছেঁড়া যায়গাটা সেলাই করে সাদা কভরের মধ্যে লাল সালু কাপড়ের লেপটা পুরে দিলো।

আমি লেপের নিচে শুয়ে ভাবছি ফরিদকে কেন পুলিশ সন্দেহ করে ধরলো? ওর মতো নিরীহ গোবেচারার টাইপের চেহারার মানুষও যদি আজকাল পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে। আমার তো মাথায় তেরোটা সেলাইয়ের দাগ আছে.............!!!!

ঢাকা,
০৮ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ছবিঃ অন্তর্জাল।


প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
প্রত্যহিকী-৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শুভ নববর্ষ। শুভ কামনা সব সময়।

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫০

শহুরে মঙ্গলের বলি, পল্লির হালখাতা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫১





ছবি টি সফিকুল আলম কিরন ভাইয়ের তোলা।

আজ পহেলা বৈশাখ মানেই শহরের রাস্তায় মুখোশ, কাগজের ঘোড়া, আর লাল-সাদা শাড়ির বাহার। তার নাম—মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতিসংঘ স্বীকৃত, উৎসবমুখর, মিডিয়ায় আলোচিত। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২০

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

তালাক হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল কাজগুলোর একটি। পারিবারিক জীবনে বিশেষ অবস্থায় কখনও কখনও তালাকের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যায় না বিধায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৪৩২ বয়স!

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪



বাংলা নববর্ষ নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস -
উন্মাদনা বিশেষত যারা একদিনের জন্য নিখাঁদ বাঙালি হয়ে 'মাথায় মাল' তুলে রীতিমতো উত্তেজনায় তড়পাতে থাকেন তাকে খাস বাংলায় বলে ভণ্ডামি!

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×