রবীন্দ্রনাথ এবং আইনষ্টাইনঃ সাক্ষাতে দুই ভূবনের দুই ঋষি ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রবি ঠাকুর এবং আইনষ্টাইনের প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৩০ সালে জার্মানীতে। ততদিনে দুজনেই নোবেল পুরস্কারে ভুষিত। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে সাহিত্যে এবং আইনষ্টাইন পুরস্কার পান ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে।
আইনষ্টাইনের আত্মীয় দিমিত্রি ম্যারিয়ানফ এই দুই মনিষীর প্রথম সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন।দিমিত্রির মতে রবীন্দ্রনাথ হলেন “কবি যার মাথা হলো চিন্তাবিদের” আর আইনষ্টাইন হলো “একজন চিন্তাবিদ যার মাথা কবিদের মতো”।“এদের আলাপচারিতা দেখে মনে হলো দুটি ভিনগ্রহ আলাপচারিতায় মত্ত।”
আইনষ্টাইনের সাথে রবি ঠাকুরের প্রথম দেখা হয় তখন আইনষ্টাইনের বয়স মাত্র ৪২ এবং রবি ঠাকুরের বয়স ৭০। রবি ঠাকুরের কাছে আইনষ্টাইনকে মনে হয়েছে একজন ঋষি।রবি ঠাকুরের বর্ননায় পাওয়া যায় “তার সাধা চুল, জ্বলজ্বলে চোখ এবং তার আন্তরিক ব্যাবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। আরো মুগ্ধ করেছে এই মানুষটির অতি সাধারন মানবিক চরিত্র যে একই সাথে গাণিতিক এবং জ্যামিতিক বিমূর্ত চিন্তা করে। তার চরিত্র অনমনীয় ।এই মানুষটির মাঝে কোন মনীষীভাবক দূরত্ব নেই।আমার মনে হয়েছে উনি মানবিক সম্পর্ককে মূল্য দেন।উনি আমার প্রতি স্যতিকারের আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং বুঝার চেষ্টা করেছেন।”
সবদিক দিয়েই এই দুজন মনীষী কিন্তু আলাদা।তাদের জাতীয়তা ভিন্ন,তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন এবং তাদের চিন্তার ক্ষেত্রও ভিন্ন। তারপরও তারা একটি জায়গায় মিলতে পেরেছিলেন, কারন তারা একে অপরের কাজকে জানার আগ্রহ ছিল, ছিল সত্যকে জানার আগ্রহ এবং সঙ্গীত নিয়ে ছিল অপরিসীম আগ্রহ।এই দুজনের আলাপচারিতার ভিত্তি হলো সৃষ্টিশীলতার অন্তর্দৃষ্টি, দার্শনিক বিশ্বাস এবং শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ।
তাদের প্রথম আলাপচারিতা বিষয় ছিল সত্যের প্রকৃতি নিয়ে।এই সময়ে আইনষ্টাইনের চিন্তায় ছিল মানুষের অস্তিত্ব বাদ দিয়ে সত্য ও সৌন্দর্য স্বাধীন ভাবে বিদ্যমান থাকতে পারে কি?
আইনষ্টাইন এবং রবি ঠাকুরের পরবর্তি সাক্ষাৎ হয় বার্লিনে প্রথম সাক্ষাতের একমাস পরে।এই সাক্ষাতের সময়েই ঐতিহাসিক মনীষীযুগলের ছবি তোলা হয়।এই সাক্ষাতের সময় তাদের আলোচনার বিষয় ছিল পরিবার,জার্মানীর তরুনদের আন্দোলন ।দার্শনিক আলোচনার বিষয় ছিল প্রকৃতিতে কোন ঘটনা ঘটার সুযোগ এবং তা ঘটার পূর্বনির্দারকতা।এই আলোচনা শেষের দিকে মোড় নেয় পশ্চিমা এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে।
ম্যরিয়ফ নিউ ইয়র্ক টাইমসে ১৯৩০ সালে আইনষ্টাইন এবং রবি ঠাকুরেরে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা নিয়ে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে।২০০১ সালে নোবেল পুরস্কারের ১০০ বছর পুর্তি উপলক্ষে এই সাক্ষাতের বর্ধিত সংস্করন প্রকাশ করা হয়।
আইনষ্টাইন এবং রবি ঠাকুরের মোট চারবার সাক্ষাৎ হয়।নিচে তাদের কিছু নির্বাচিত সংলাপ তুলে দেয়া হলো।এই সংলাপ অনলাইনে সহজ লভ্য।পরবর্তীতে চেষ্টা করবো তাদের বিখ্যাত সংলাপগুলো উপস্থাপন করতে।
আমি শেষ করছি রবীন্দ্রনাথের পোস্ট কার্ডের লিখা থেকে যা আইনষ্টাইনের কাছে পাঠানো হয়েছিল ২২শে ডিসেম্ভর, ১৯২৯। “আমার অভিবাদন রইল তার প্রতি যে আমাকে জানে অসম্পূর্নভাবে এবং আমাকে ভালোবাসে ”
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন