স্বপ্ন--দুস্বপ্ন এবং মুক্তির আনন্দ---
----------------বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনতে পাচ্ছি বাবা ডাকছে। মামনি, মা-আ-আ মনি--ই--ই। ইচ্ছে করেই জবাব দিছি না। এই তো বাবা করিডোর ধরে হেঁটে আসছে । এক্ষুনি আমার ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবে। আমি তারই প্রতিক্ষায়।
কিন্তু কোন শব্দই তো শুনতে পাচ্ছি না। হঠাৎ কপালে বাবার হাতের স্পর্শ। বাবার ভারি গরম হাত। আমি হাসি মুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে আমার হাতটা কপালে নিয়ে গেলাম, বাবার হাত ধরবো বলে। কপালে আমার নিজের হাতের স্পর্শেই চমকে তাকালাম। গভীর রাত। এক বুক কষ্ট নিয়ে ঘড়ি দেখলাম, রাত দুটো। কোথাও কেউ জেগে নেই। এত বাস্তব স্বপ্ন হয়??? নিজের উপরেই রাগ হল। কেন যে বাবাকে ধরতে গেলাম? তা না হলে বাবাকে আরও কিছুক্ষন কাছে পেতাম। বাবাকে মনে করে দু‘চোখ ভরে গেল পানিতে। বাবা তো কখনই আসবে না। এখনও আমার কপালটায় গরম এক স্পর্শের অনুভুতি বিরাজ করছে। সারাটা রাত চলে গেল আর ঘুম এলো না।
------------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------------------------------
-----------মোবাইল ফোন মাথার কাছে বাজছে, আমি ফোন ধরলাম, ‘হ্যালো’ বলবার সাথে সাথে অপরপ্রান্ত থেকে আমাকে কে যেন বললেন --কখন থেকে ল্যান্ড ফোন বেজে যাচ্ছে ফোন ধরছ না কেন?-- সত্যিই সত্যিই তো ল্যান্ড ফোন বাজছে। খুব বিরক্ত হলাম, বাসায় এত মানুষ, কেউ ফোন ধরছে না কেন? মোবাইলটা বিছানায় রেখে ল্যান্ড ফোনের কাছে গেলাম। কি তীব্র স্বরে ওটা বেজে চলছে?! --আমার সমস্ত অনুভূতি বলছে ‘বাবার ঘরে ল্যান্ড ফোন বাজছে’। ফোনএর রিসিভার তুললাম । কানে এসে লাগলো সুস্পষ্ট ডায়াল টোন। ফোন রেখে বিছানার দিকে যাচ্ছি, আমার কানে কানে কে যেন বলল--যেয়ো না আবার ও ফোন আসবে। আমি ফোনের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। ফোন বাজে না। কতক্ষন জানি না । বিছানা থেকে ও ডাকলো --- এই ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? শোবে না? বললাম ---ফোন আসবে?
--কে বললো?
-- এতক্ষন ফোন বাজলো কেউতো ধরলে না লাইন কেটে গেছে । আবার রিং হবে।
--কে বললো ফোন বেজেছে?
--আমি শুনেছি। --মোবাইলে কল করে বললো ল্যান্ড ফোনে রিং হচ্ছে ।
--মোবাইল ??? তোমার মোবাইল না নিচে রেখে এসেছ । চার্জে দেয়া আছে।
তাই তো, সম্বিত ফিরে পেলাম। এখন বাজে রাত তিনটা। কিছুই বুঝলাম না। আমি আমার ঘরে আমার ল্যান্ড ফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি হতভম্বের মত। এটা কি হল??---------
এই হল শুরু। এরপর প্রায় প্রতিটি রাত কেটে যেতে লাগলো বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন জনিত হ্যালুসিনেসনে। এক পর্যায়ে এসে মনে হল, আমি কি পাগল হয়ে যাব নাকি ধীরে ধীরে?
স্বপ্নগুলি পরিবর্তিত হতে থাকল। কখনও আনন্দ নিয়ে কখনও বেদনা নিয়ে আসতো। তবে যাই আসতো তা আমার সাথে দীর্ঘক্ষন থাকতো এবং সারা রাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়ে যেতো।
এরপর স্বপ্নের তৃতীয় পর্ব। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে দুর্ঘটনার স্বপ্নগুলি দেখতে শুরু করি। আমি যেন দুর্ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকি। সেখানে আমি অনেক কেই নিষেধ করি কিন্তু তারা আমার কথা শুনে না। তারা যেয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয় অথচ আমার কিছুই হয় না। তাদের আর্তচিৎকার আমি নির্বিকার চিত্তে শুনি। তাদের ক্ষত বিক্ষত দেহ আমাকে মোটেই বিচলিত করে না।
এবারে আমার স্বপ্নে আসতে শুরু করলো ভয়ংকর দর্শন সব প্রেতাত্মারা। তারা আমার সাথে প্রথম প্রথম লুকোচুরি খেলতো। আমি খুব ভয় পেতাম। পরে কি কারনে যেন তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। হয়ত আমি ভয় পেতাম তা তাদের পছন্দ নয়। আমি দৌড়াতাম। ওদের হাত থেকে পালাতে চাইতাম। কিন্তু পারতাম না । তারা আমাকে ধরে ফেলতো।
স্বপ্নের এই পর্যায় এতই ভয়াবহ ছিল যে আমি যেদিন একা বাসায় থাকি সেদিন সারারাত জেগে জেগে ইন্টানেটে ঘুরাঘুরি করতাম। এক মুহুর্তের জন্যও বিছানায় যেতাম না।
সিদ্ধান্ত নিলাম কোন এক মনোচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবো। কিন্তু যেতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি কি সত্যিই বিনা কারনে পাগল হয়ে যাব।
একজন কলিগ এক ফকিরের কথা বলেছিল। এখানেই থাকে, খুব কামেল লোক। ডাক্তারের কাছে যাবার আগে তার কাছে একবার যাই। গেলাম ও ।( সেই অভিজ্ঞতা আর একদিন বলবো। )
আমার ছোট বোন বললো মেডিটেশন করতে। এক ছুটির দুপুরে বিছানায় শুয়ে আছি। মনে মনে ভাবলাম আমি এই স্বপ্নের হাত থেকে মুক্তি চাই। আমি পাগল হতে চাই না।
সারা দিন মনে মনে জপলাম, "আমি যা দেখি তা আমার অবচেতন মনের কল্পনা। আমি আর এই সব স্বপ্ন দেখবো না। কিছুতেই না।" রাতে প্রচন্ড মানসিক শক্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। মনে মনে বললাম-- আজ কিছুতেই ভয় পার না । যাই দেখি তা স্বপ্ন, বাস্তব নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
ঘুমের মাঝেই আমার হঠাৎ মনে হল আমার পাশে কে যেন শুয়ে আছে। আমি চট করে মাথা ঘুরালাম। দেখি এক পোড়া লাশ। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে। এরই মাঝে আমার মনে হল --এ স্বপ্ন এ বাস্তব নয়। আমি ভয় পাব না। কিছুতেই না। আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি দেখবো এখানে কিছুই নেই। এই ভেবে আমি লাশের ঘাড়ে হাত রাখলাম। স্বপ্ন নয় এ বাস্তব। এটা একটা সত্যি কারের লাশ। প্রতি রাতে আমি পালাই আজ আর তা করলাম না । আমি প্রানপন শক্তি দিয়ে লাশের ঘাড় চেপে ধরে চিৎকার করে চললাম। লাশ আমাকে জোড়ে জোড়ে ঝাঁকি দিচ্ছে আর বলছে কি কি সব কিন্তু আমি প্রানপন চিৎকার করেই চলছি আর লাশ কে জোড়ে ধরে রেখেছি। আমার চিৎকারে পাশের ঘর থেকে বাচ্চারা ছুটে চলে এল। কাজের লোকজন সব আমার বিছানার চারপাশে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠতেই দেখি আমি আমার বরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে প্রানপনে চিৎকার করে চলেছি। আমার সম্বিত ফিরে আসতে আজ একটু দেরিই হল।
ব্লগার বন্ধুরা আমি এখন দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত। এই মুক্তির আনন্দ আমার কাছে রাজ্য জয়ের চেয়ে অনেক বড়।
এবারে সমাধান বলি। এই সমাধান আমি নিজেই বের করেছি। আমার এই দুঃস্বপ্নের কারন দুইটি ঔষধ। এ্যলার্জি জনিত কারনে আমার চোখ প্রচন্ড চুলকাতো । তাই আমাকে ডাক্তার প্রথমে দিয়েছিলেন ফ্যাক্স ১২০ প্রতি রাতে একটি করে এক মাস খেতে। এই ঔষধ চার/পাঁচ দিন খাবার পর থেকেই এই স্বপ্নের শুরু। এক মাস পরে অবস্থার উন্নতি না হবার কারনে ডাক্তার দিলেন লরেটিন ফাস্ট। সেটা দিন ১৫ খাবার পরে ডাক্তার আমাকে আবারও বদলিয়ে দিলেন টেল ফার্স্ট। শেষের ভয়াবহ স্বপ্নের কারন এই টেলফার্স্ট। আমি নিজেই হঠাৎ দিলাম ঔষধ বন্ধ করে । স্বপ্নেরাও উধাও। ডাক্তারকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম --আমার স্বপ্নের সাথে ঔষধের কোন যোগাযোগ আছে কি না? উনি বললেন --হ্যাঁ অনেকের সমস্যা হয়। আপনার তো হয় নি। কাকে যে বকা দিব বুঝলাম না। নিজেকে নাকি ডাক্তারকে?
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন