আমার অনেক ব্লগে বুড়ির নাম থাকে। তার কড়া নির্দেশে আমি এখন ব্লগে আর বুড়ির নাম নেই না । কিন্তু জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ব্লগটাকেই ভালো মনে হল।
আদিকান্ড
অরকুটে আমি বুড়িকে প্রথম পাই। সেখান থেকে ইয়াহুতে চ্যাট শুরু করি। একসময় মোবাইল নাম্বারও দেয়া-নেয়া হয়। বুড়ির সাথে প্রথম দেখা করি ফুলার রোডে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে।
কেন সে বুড়ি
সে বিরাট ভাব নিচ্ছে একদিন আমার সাথে। “আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় হে ছোকরা। দুনিয়া আমি বহুত দেখে ফেলেছি।“ সেইদিন আমি মনে মনে তার নাম ঠিক করে ফেলি-বুড়ি। এরপর যখন তার সাথে সম্পর্ক আরো সহজ হলো, বুড়ি নামটা দিলাম। সে বাধা দেয় নাই। আর আমি বারবার ডেকে এই নামটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেললাম।
কেন তাকে এত ভালো লাগে
ভার্চুয়াল জগতে কাউকে ভালো লেগে যাওয়াটা কঠিন। কেননা কিছু আইডিয়া আর কথা ছাড়া কোনকিছু টের পাওয়া যায় না। বুড়িকে আমার ভালো লাগা শুরু চ্যাট করা থেকে।একদিন চ্যাট করার সময় বুড়ি বলে, তুমি জানো না। আমি ত বিরাট ঘাউড়া।
এই ঘাউড়া শব্দটা দেখে আমি খুব মজা পাইছি। আর মনে হয় ভালো লাগাটার সেখান থেকেই শুরু।
হাজারটা কারন আছে বুড়িকে ভালো লাগার। আমি যখন ফোন করি , ফোনটা ধরেই সে হাসি দেয় । মনটা ভালো হয়ে যায়। তার অনুকরনে ফোন ধরেই একটা হাসি দেয়ার চেষ্টা আমি করি। আমার স্বভাবটা খারাপ ছিল। মেয়েদের খোজে এদিক-সেদিক নজর দিতাম আর মেয়েরা দিত হেভি ঝাড়ি। প্রতিবার ঝাড়ি খেয়ে এসে বুড়ির আশ্রয় নিতাম। বুড়ি আমার বিলাপ মনযোগ দিয়ে শুনত। পরামর্শ দিত। সেগুলো কাজের ছিল খুব।
বুড়ি আমাকে প্রথম জান বলে ডেকেছে। এর আগে আমি আমার বন্ধুদের দেখতাম কাউকে জান বলে ডাকতে। আমার খুব হাস্যকর লাগত। কিন্তু যেদিন বুড়ি আমাকে “জান কি করো” বলল, সেদিন দেখি আর হাস্যকর লাগছে না।
আমি রাইকিশোরীর কাছ থেকে লাত্থি খেয়ে আসি, সে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে রাখে। আমি টুনটুনির সাথে তিনবছরের সম্পর্কটা আর না রাখার সিদ্ধান্ত নেই, সে আমাকে গাধা বলে ডাকে। আমার মেয়ে সংক্রান্ত সবকিছুতেই সে কিভাবে যেন সম্পর্কিত হয়ে যায়।
তাকে নিয়ে ব্লগ কেনো?
আমার অভ্যাস কোন মেয়ের সাথে একটু পরিচয় হলেই তাকেই সনেট লিখে দেই। বুড়িকে কেনো জানি সনেট লিখে দেই নাই। এরপর বহুদিন চলে গিয়েছে। আমি সনেট লেখা বন্ধ করে দিয়েছি। লিখতে গেলেও পারি না। নিজের কাছেই কেমন জানি লাগে। যখন মোটামুটি নিশ্চিত যে আমি আর লিখতে পারব না, তখন একদিন অফিসে কাজ করতে করতে আধা ময়লা একটা কাগজে বুড়িকে নিয়ে কবিতা লিখি। এরপর আর লিখতে তেমন সমস্যা হয় নাই। পরদিনই রাইকিশোরীকেও একটা সনেট লিখে দিয়ে কাত করার চেষ্টা করলাম।
আমার এই স্বত্বাটার পুনর্জন্মেও বুড়ি থাকল।
আমাকে সামুর ঠিকানা প্রথম বুড়িই দেয়। বলল এইখানে অনেকে ভালো লিখে। মিশে যাও তাদের সাথে। আমি রেজি করলাম। কাজেই আমার ব্লগ জীবনটার সূচনাও বুড়ির কারনে।
ব্লগে আমাকে যেদিন প্রথম গালি দিল কেউ, ঘন্টা দুয়েকের ভিতর বুড়িকে ফোন করে জানালাম। তার সে কি হাসি। আমিও হাসি থামাতে পারলাম না। তার হাসিই আমাকে বলে দিল গালির বদলে গালি না দিয়ে হাসাতে হবে। আমার মাথায় আইখ্যা সিরিজের আইডিয়াটা আসল।
আমি যে কয়টা বিষয়ে বেশ শ্লাঘা বোধ করি- বুড়ির সাথে আমার সম্পর্কটা তার ভিতর একটি। আমরা নেটের বন্ধু। নেটে আমাদের বেশিরভাগ কথা আর আমরা যে বন্ধু সেটা না বললেও চলে। এই বন্ধুত্ব কোন কিছুর প্রত্যাশী নয়। হয়ত মাস পার হয়ে যায় বুড়ির সাথে যোগাযোগ নাই। কিন্তু সম্পর্কটা পানসে হয়ে যায় না।
ব্লগে যখন তার কথা বলা শুরু করি তখন অনেকেই বলেছেন বুড়ি কে? সে আপনার কি হয়?
আমি ঠিকমত গুছিয়ে উত্তর দিতে পারি নাই। তাই আজকে কিছুটা বললাম। বুড়ির পরিচয় যেন না বোঝা যায় সেইদিকে মনযোগ ছিল বেশি। তাই খুব বেশি বলা গেলো না। আরেকটা কথা , সোজা-সাপ্টা বলেছি। ফেনিয়ে বললাম না। ( আমার অন্য ব্লগ পড়লে বুঝা যায় ,আমি ফেনিয়েও বলতে পারি, তাই না?)
সবশেষে বুড়ির প্রতি
শুভ জন্মদিন।ভালো থেকো বুড়ি। সবার ভালোবাসা তোমাকে আজীবন জড়িয়ে রাখুক।