সকালে মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয়ের কথা শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠার পাশাপাশি মনে পড়লো সজলের কথা। সজলের সাথে পরিচয় অনেকদিনের। ভালোও লাগে তাকে। তাকে ফোন করে শুনলাম আরেকরকম খবর।
দেশের প্রধান প্রদান সংবাদ মাধ্যম গুলো যেখানে ফলাও করে এখবর ছাপাচ্ছে সেখানে নিচের কথা গুলোর সত্যতা বিস্বাসে কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। আমারও হচ্ছে। সত্যমিথ্যা জানিনা, একদিন সত্য নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে।
আসুন তাহলে সজলের কথাগুলোও শুনি
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
আজ সকালে এক বন্ধুর ফোন থেকে জানতে পারলাম মুসা ইব্রাহিম প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেছেন। দাবানলের মতো খবরটি সব মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেল। রেডিও, টেলিভিশন, অন্তর্জাল...সবখানেই এই খবর। কোন বাংলাদেশীর মাউন্ট এভারেস্ট জয় আমাদের খুশীর তুফানে ভাসিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুসা ইব্রাহিম দাবী করেছেন জেনেই কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণে শঙ্কা এবং সন্দেহ হলো। সন্দেহের কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করছি।
• মুসা ইব্রাহিম তিব্বত দিয়ে এভারেস্ট সামিট দাবী করেছেন। তিব্বত দিয়ে
আমাদের আরেক বাংলাদেশী পর্বোতারোহী, বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং
ক্লাবের (বিএমটিসি) এম এ মুহিত এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করছিলে, যিনি আজ বেস ক্যাম্প থেকে এভারেস্ট জয়ে ব্যার্থ হয়ে নেমে আসছেন
Click This Link
। এম এ মুহিত এর আগে প্রায় ২৮০০০ ফুট উচু চো ইউ জয় করেছেন। এবছর এপ্রিল থেকে প্রায় দেড় মাস তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্প এবং এক নম্বর ক্যাম্পে
ছিলেন, মুহিত আজও ফোনে জানিয়েছেন মুসা ইব্রাহীমের সাথে তার সাক্ষাত হয়নি এবং সবাইকে জিজ্ঞেস করেও তিনি জানতে পারেন নি যে আর কোন বাংলাদেশী তিব্বত দিয়ে এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করছেন।
• মুসা ইব্রাহীম প্রতিবার অভিযানের আগে সংবাদ সম্মেলন করলেও এভারেস্টে যাবার আগে সংবাদ সম্মেলন করেন নি এমন কি যাবার পর কোন সংবাদ মাধ্যম’কে কোন খবর’ও জানান নি। অথচ এম এ মুহিত বার বার তিব্বত থেকে আমাদের সাথে স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করেছেন। যেকোন বড় পর্বত সামিট করলেই সবাই পরিবারে/দেশের সংবাদ মাধ্যমে স্যাটেলাইট ফোনে এই সংবাদ জানান। মুসা ইব্রাহীম এখন পর্যন্ত কাউকে ফোন করেছেন বলে জানা যায়নি।
• গত বছর জুন মাসে মুসা ইব্রাহীম ও তার ক্লাব, নর্থ আলপাইন ক্লাবের তৌহিদ হোসেন অন্নপুর্ণা ৪ জয় করেন বলে বিশাল খবর বের হয়। মুনির হাসান প্রথম আলোর শেষ পাতায় ছবিসহ বড় খবর করেন। মুসা ইব্রাহীম প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের লোগো ছাপা বড় ব্যানারে পেছন দেখা যায়না এমন ছবি তুলে তা চূড়ার ছবি বলে দাবী করেন। পত্রিকাগুলো হুমড়ি খেয়ে তা দফায় দফায় ছাপায়। সেদিন’ই আরেক পর্বতারোহী মুনতাসির মামুন ইমরান অন্নপুর্ণা ৪ জয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটি লেখা পাঠান যা শুধুমাত্র ডেইলি স্টারের অন্তর্জালে ছাপা হয়। এই লেখায় তথ্য সহ ইমরান জানান যে মুসার দাবী সত্যি হলে তা বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যাবে। মুসার লেখাতেও দিনক্ষনের হিসাবে গড়মিল নজরে পড়ে যা সাধারন মানুষ না বুঝলেও যেকোন পর্বতারোহী এই অসংগতি মুহুর্তে বুঝতে পারবেন। মুসা ইব্রাহীম ও মুনতাসির মামুন ইমরানের লেখা পরতে পারেন
Click This Link ক্লিক করে।
নর্থ আলপাইন ক্লাবের সভাপতি আনিসুল হক ইনাম আল হক’কে অনুরোধ করেছিলেন মুসা ইব্রাহীমকে বিএমটিসি’র এভারেস্ট অভিযানে যুক্ত করতে। আনিসুল হকের উপস্থিতিতে প্রথম আলো কার্যালয়ে ইনাম আল হক মুসা ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি এখন পর্যন্ত কতো উপরে উঠেছেন। জবাবে মুসা জানান ছয় হাজার মিটার (প্রায় ২০ হাজার ফুট)। অথচ কয়েক মাস আগেই প্রথম আলো গলা ফাটিয়ে ফেলেছিল মুসা ইব্রাহীমের ২৪ হাজার ফুট উচু অন্নপুর্ণা ৪ জয়ের কথা বলে।
• এর আগে মুসা ইব্রাহীম, মীর শামসুল আলম বাবু ও অপরিচিত তৌহিদ হোসেন, এই তিনজনের দল লাং শীসা রী জয় করেন বলে প্রথম আলোতে ছবিসহ বড় খবর বের হয়। কয়েকদিন পর দলের সদস্য মীর শামসুল আলম বাবু লেখালেখি করে জানান যে তারা আসলে লাং শীসা রী জয় করেননি, অনেক নীচে থেকেই তারা নেমে আসেন।
• এভারেস্টে মুসা ইব্রাহীমের গাইড ছিলেন সোম বাহাদুর তামাং এবং গনেশ
মাগার। এই দুজনের সাথেই আমরা একাধিক ছোট অভিযান করেছি, এখন বড় অভিযান আর করিনা। দুজনের একজনও আগে এভারেস্ট চড়েন নি। একবার এদের একজন আমাদের পুরো সামিটে না নিয়েই বলেছিলেন সামিটে পৌছে গেছি আর আরেকজন আরেক অভিযানে ভয় পেয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলে আমি তাকে পেছনে রেখে সামিট করাই। এই দুজন গাইডের নেতৃত্বে এভারেস্ট জয়ের খবর মনে সংশয় জাগায়।
• মুসা ইব্রাহীম তার নেপালী ব্যাবসায়িক অংশীদার বন্ধুর এজেন্সী মুক্তিনাথ
ট্রাভেল থেকে সব বার অভিযান আয়োজন করেন, যারা পেশাদার অভিযান আয়োজক নয়। আগের দুইবার তাদের সহায়তায়ই মিথ্যা পর্বত জয়ের খবর এসেছে এবং তারা সনপত্র’ও যোগার করে নিয়েছে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও গাইড মিথ্যাচার করলে দুতাবাস তা জানবে, এই আশা করা সুদূর পরাহত। ২০০৭ সালে একবার মুক্তিনাথ ট্রাভেল থেকে অভিযান করার পর বিএমটিসি থেকে আমরা আর তাদের সাথে অভিযান করতে আগ্রহী হইনি। মুসা ইব্রাহীম আগে বিএমটিসির সদস্য ছিলেন। একটি অভিযানে নেপাল থেকে ইমেইল
করে তিনি আমার একটি মৌলিক লেখা অনুমতি ছাড়াই নিজের নামে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ছাপান। সামিটে পুশে তিনি নিজের ইচ্ছায় না গিয়ে ক্যাম্পে রয়ে যাওয়ায় আমি এবং এম এ মুহিত সামিট পুশে চলে যাই। ফিরে এসে আমার আরএকটি লেখা তিনি নিজের নামে ইমেইল করার অনুমতি চান। এবার আমি বিরক্ত হয়ে বলি যে আমার লেখা আমার নামেই ছাপানো ভালো। এইসব তিক্ততার প্রায় দুমাস পর ইনাম আল হক মুসাকে বিএমটিসি থেকে বের হয়ে যতে অনুরোধ করেন। শুধু মুসা ইব্রাহীম নয়, যেকোন বাংলাদেশী এভারেস্টে গেলেই আমাদের অভিনন্দন থাকবে। কিন্ত এভারেস্ট এবং অন্যসব পর্বতকে এভাবে কুলষিত না করার অনুরোধ রইল। সারা পৃথিবীর কাছে এমনিতেই আমাদের নানান বদনাম, এভারেস্টের নামে মিথ্যা সংবাদের বদনাম হলে আমাদের মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না।
সজল খালেদ,
প্রশিক্ষন ও অভিযান পরিকল্পনা সচিব,
বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি)
[email protected]
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
অবশেষে সজলের বক্তব্য (মে ২৭)
অভিনন্দন মুসা ইব্রাহীম
অভিনন্দন মুসা ইব্রাহীম, পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে পা রাখার জন্য। এই অর্জন আমাদের বাংলাদেশী হিসাবে গর্বিত করেছে।
২৩ মে দুপুরে যখন ঢাকায় খবর এলো মুসা ইব্রাহীম মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেছেন তখন সম্পুর্ণ ব্যাপারটাই আমাদের সবার কাছে ধোঁয়াটে ছিল। সংশয়ও ছিল, প্রধানত এ কারণে যে, মুসার সাথে বাংলাদেশী আরেক পর্বতারোহী এম এ মুহিতের এই দীর্ঘ অভিযানের প্রায় পুরোটা সময় কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়নি, মুসা’র ব্যাপারে তার স্ত্রী, মুখপাত্র মুক্তিনাথ ট্রাভেলস এবং বাংলাদেশের প্রায় সব পর্বতারোহী যোগাযোগের অভাবে অন্ধকারে ছিলেন, আর সাফল্য নথিকরনের প্রায় সবকটি ওয়েবসাইট এই তথ্য অনেক দেরিতে প্রকাশ করেছে। প্রথম দিন’ই সংবাদ মাধ্যম থেকে যারা খোজখবর করছিলেন তাদের সবাইকেই আমরা বলেছিলাম মুসা সফল হলে আমরা সবাই আনন্দিত ও গর্বিত হবো, কিন্তু খবরটার ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হতে হবে। গত কয়েকদিনের মধ্যে সাফল্যের ব্যাপারে এই সংশয় প্রায় সবটাই কেটে গেছে সবার। সবার পক্ষ থেকে মুসা ইব্রাহীমকে অভিনন্দন এভারেস্ট জয়ের জন্য আর এম এ মুহিতকে এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করার জন্য।
পর্বতারোহণে শিখরজয়ের সম্ভাবনা সামর্থ ও যোগ্যতার পাশাপাশি সবসময়ই অনেকাংশে আবহাওয়া, শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাপারের উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। মুসা যখন সবার যোগাযোগের বাইরে ছিলেন তখন তার স্ত্রী খবর জানার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। যদিও আমরা সবাই তাঁর মতই অন্ধকারে ছিলাম কিন্তু দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে তাঁকে অভয় দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম কোন খবর পাওয়া মাত্র আমরা তাঁকে জানাবো এবং যেকোন সহযোগীতায় সাধ্যমত সাহায্য করব। হাজারো প্রতিকুলতার মধ্যেও সবকিছু ঠিকভাবে শেষ হয়ে মুসা সুস্থ্যদেহে ফিরে আসছেন এটা আমাদের সব দুশ্চিন্তা দূর করেছে।
এভারেস্ট বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে পর্বতারোহন চর্চ্চা এখন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো। প্রায় সাত বছর আগে আমরা সবাই মিলে একসাথে পর্বতারোহন চর্চ্চা প্রসারের প্রতিকুল চেষ্টা শুরু করছিলাম, পরে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও আন্তরিকতার কোন অভাব আমাদের কারোই ছিলনা এবং এখনো নেই। মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে পর্বতারোহন চর্চ্চা প্রসারে এবার দারুণ গতি সঞ্চার হবে এবং এই ক্ষেত্রটি খুব দ্রুত সবার সহযোগীতায় বিকাশ লাভ করবে এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। এবার খুব দ্রুত আমরা এভারেস্টে প্রথম বাংলাদেশী মেয়েকেও দেখতে চাই।
কেউ কি বলতেপারেন ছবি যোগ করবো কিভাবে?????????????????????????
মুল লেখা
http://www.sachalayatan.com/himu/33405
http://www.sachalayatan.com/mustafiz/32411
আমার লেখা কাটপিস মাত্র