.
.
.গাড়ি টা আসতেই দৌড়ে গিয়ে সিট ধরলাম, ক্যম্পাস থেকে বাসায় ফিরতে এই সময়টাতে গাড়ি পেতে বেশ ঝামেলা , তার ওপর যে গরম পড়েছে, ট্রেনে যাওয়া মানে জলন্ত অগ্নি বগিতে করে বাসায় ফেরা। তাও পেছনের দিকে ডান পাশে সিট পেলাম, জানালার পাশে বলে রক্ষে। অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই মিনিবাসটি ঘরমুখো স্টুডেন্টে পূর্ণ হয়ে গেল, মেয়েদের একটি সিট ও খালি নেই, তাই আমার পাশে বাধ্য হয়েই একজন মেয়ে এসে বসল। দেখতে ভীষণ মিষ্টি। গরমটা একটু বেশি অনুভুত হচ্ছিল মনে হয়।
গাড়ি কিছুক্ষন পর চলতে শুরু করল, একটু ভিড় বেশি হওয়ায় আর বাসটি একটু ছোট বলে দাড়িয়ে থাকা ছেলেদের সাথে ওর একটু ধাক্কা লাগছিল, মেয়েটা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল আর আরো ভেতরে চেপে বসতে লাগল। কিছুক্ষন পর সহ্যের মাত্রা ছেড়ে যাওয়ায় মেয়েটাই আমাকে বলল, এক্সকিউজ মি, আমার এখানে বসতে খুব কষ্ট হচ্ছে, আপনার সাথে সিটটি কি সুইচ করতে পারি ?
আহারে আমার সাধের উইন্ডো সিট, আচ্ছা ঠিক আছে বলে উঠে সিট চেঞ্জ করে ওর সিটে বসলাম আর ও আমার সিটে।
একটু রাগ হচ্ছিল নিজের কষ্ট করে ধরা সিটটা ছেড়ে দিয়ে। বাস ক্যাম্পাস এরিয়া ফেলে মেইন রোডে উঠতেই টের পেলাম সিট ছেড়ে ভালই হয়েছে, কারন জানালার পাশে মধ্যদুপুরের খারা সূর্য সযত্নে রোদ বিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেচারি মনে হয় এক ঝামেলা থেকে বেঁচে পড়ল আরেক ঝামেলায়, মনে মনে হয়তো আফসোস ও করছিল সিট চেঞ্জ করার কারনে।
একটু পড়েই আরো ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায় জ্যাম, বসে বসে রোদে গরমে সেদ্ধ হচ্ছে সবাই আর মেয়েটার অবস্থা আরো খারাপ, একেবারে রোঁদে পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই, গাড়ি যেন আর চলেই না।
মেয়েটার চোখেমুখে বেশ বিরক্তি আর অসহায়ত্ব দেখে বেশ মায়া লাগল। আমার হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকস এর বোতলটার দিকে তাকিয়ে আবার মুখে ফিরিয়ে নিলো, বুঝলাম ওর বেশ তেষ্টা পেয়েছে। আমিই বললাম, নিন, এখনো ঠাণ্ডা আছে। আমি আর খাবো না। মেয়েটা হাসিমুখে নিয়ে কয়েক চুমুক খেল। বুঝলাম সে এখন একটু স্বস্তি বোধ করছে কিন্তু রোদের কাছে একদম অসহায়। গাড়ি থেমে থেমে এগুচ্ছে। একটু পর মেয়েটা আবার হাঁসফাঁস শুরু করল, রোঁদে লাল হয়ে গিয়েছিল। আর মাথায় হাত দিতে লাগল, মনে হয় মাথা ধরেছে রোঁদে, বাসে তখন ভিড় খানিকটা কম। আমি বললাম, আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে ?
হুম, একটু খারাপ লাগছে।
আপনি এপাশে চলে আসুন, আমি ওই সাইডে বসি, আমার সানগ্লাস আছে, কোন সমস্যা হবে না।
থ্যাঙ্কস বলে মেয়েটা আবার সিট চেঞ্জ করল আর এবার আমি রোঁদে।
একটু পর মেয়েটাই কথা বলা শুরু করল,
>আপনাকে শুরু থেকেই অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম, আপনি বিরক্ত হন নি তো ?
না , ঠিক আছে। কোন ব্যপার না।
আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন
মাস্টার্স , ম্যানেজমেন্ট , আপনি ?
==ইকনমিকস, সেকেন্ড ইয়ার, আপনার নামই তো জানা হল না।
আমি সাফকাত, আপনি ?
==বৃষ্টি
-- বৃষ্টি ??!! বলেই আমি একটু হেসে ফেললাম ।
==হাসলেন কেন ? আমার নামটা কি হাস্যকর ??
না, তা না, আপনার অভাবেই তো মানুষের এত দুর্দশা , এ তল্লাটে চলছে খরা ।
=হি হি , আপনি তো অনেক মজা করে কথা বলেন, কবি নাকি আপনি ?? থ্যাংকস, না আমি কবি না, আচ্ছা আপনার বাসা কোথায় ??
==সুগন্ধায় , আপনার ??
--লাভলেইন ।
এবার ওর হাসির পালা ...
হাসেন কেন ?? আগে শুনেন নি আমার পাড়ার নাম ?
== হ্যা শুনেছি, আপনার পাড়ার নামটা বেশ মজার ।
নামটাই শুধু এমন, নামের সাথে তেমন কোন মিল নেই ।
কনডাক্টর ভাড়া নিতে আসল, ও ১০০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিতেই কনডাক্টর বলল , আপা ভাংতি নাই, মাত্র গ্যারেজ থেইকা গাড়ি ঠিক কইরা বাইর হইছি।
উপায় নেই দেখে মেয়েটা আমার দিকে তাকাতেই বুঝলাম এবারো আমার হেল্প লাগবে,
আপনার কাছে কি ১০০ টাকা ভাংতি হবে ? :!>
আমি ওয়ালেট বের করে দেখলাম আমার কাছেও ভাংতি নেই, ওদিকে ওর স্টপেজও চলে এসেছে, আমি ওকে বললাম, আপনি কিছু মনে না করলে আপনার ভাড়া টা আমি দিয়ে দিচ্ছি ।
সে কি, আপনি কেন দিবেন ? আর আমি আপনাকে টাকাটা ফেরত দিব কি করে ??
ব্যপার না, কাল থেকে আপনার জন্য ওয়ালেটে ভাংতি করে রাখবো । :!> :!>
আমার কথার মানে হয়তো সে বুঝে নিয়েছে, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে থ্যাংকস বলে নেমে গেল...
তারপর কি হল বুঝতেই পারছেন ... :#> :#> :#>
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:০২