খুব মন খারাপ আসিফের আজ, আজ ওর এক ক্লাসমেট শৈবাল হলের রুমে আত্মহত্যা করেছে। কিছুতেই মানতে পারছে না সে। শৈবাল অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল জানত আসিফ কিন্তু ভাবতে পারেনি সে আত্মহত্যা করে বসবে, শৈবালকে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেছিল আসিফ, বলেছিল, “মানুষের জীবনে এমন অনেক হয়, ভুল মানুষকে ভালবেসে কষ্ট পেতে হয় , আমাকে দেখ, আমার জীবনেও ঠিক এমনি হয়েছিল, আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি আর আমার ডিপ্রেশন শেষ পর্যন্ত সাইকিয়াট্রিক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল” । কিন্তু অভিমানী ছেলেটা কথা শুনে নি, কষ্ট সইতে না পেরে আত্মাহুতি দিয়েই দিল।
সন্ধ্যায় আনমনে বসে টিভি দেখছিল আসিফ। টিভি স্ক্রিনের নিচে শিরোনামে ভেসে উঠছিল “ চবিতে ফিন্যান্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্রের আত্মহত্যা ” , মনটা আরেক দফা বিষণ্ণ করে দিল। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। নাম্বারটা না দেখেই রিসিভ করে ফেলল আসিফ। ও পাশ থেকে কণ্ঠস্বর শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল আসিফের।
> উফফ, তুমি দুটো নাম্বারই বন্ধ করে রেখেছ কেন ? আমি তো ভয়ই পেয়েগিয়েছিলাম ।
> মানে ? আমি আমার নাম্বার ইচ্ছেমত খুলব বন্ধ করব, তুমি কে ? (বিকেলে ঘুমানোর সময় অফ করে ছিল, পড়ে অন করতে মনে ছিল না)
> না, তুমি অফ করবা না মোবাইল !
> আর আমার ওপর খবরদারি করার তুমি কে ?? আর কিসের ভয় পেয়েছিলে ? (মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায় আসিফের) ।
> না কিছুর না।
> ( একটু ভেবে ) ওয়েট ওয়েট, তুমি কি ভাবছিলা ? আমি আত্মহত্যা করেছি ?? আর সেজন্যই ফোন দিয়েছ কনফার্ম করার জন্য ওটা আমি কিনা ??
(ওপাশ থেকে চুপ)
আসিফ ঃ ছি ! , তুমি এত নিচ, ছোটলোক, হ্যা, আমারও আত্মহত্যা করা উচিত ছিল আরও দুবছর আগে । যখন তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে ছিল তখনই, আর এত বছর ধরে ভালবাসা নামের যে ভণ্ডামির নাটক মঞ্চস্থ করে ছিলে তার জন্য আমারই উচিত ছিল আত্মহত্যা করা যে আমি তোমার মত একটা মেয়েকে এতটা ভালবেসে ছিলাম।
ও পাশ থেকে ঃ আমাকে মাফ করে দিয়ো প্লিজ ।
আসিফ ঃ কক্ষনো না। আমি মরে গেলেও না, তোমার মত মেয়ের কোন ক্ষমা নেই। এটা বলে আসিফ ফোন কেটে দিল।
আসিফ খুব অবাক হয়, মেয়েটা ক্ষমা চাচ্ছে অথচ ওর কণ্ঠে কোন অনুশোচনার ছিটেফোঁটাও নেই। এত বছর হয়ে গেল এখনো সে আগের মতই কষ্ট বয়ে বেরাচ্ছে, পড়ালেখার বারটা বেজেছে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয় এখনো, তিন মাস পর পর রুটিন চেক আপ করাতে যায় তার সাইকিয়াট্রিকের কাছে। অথচ সে খোঁজ নিয়ে জেনেছে সেই মেয়েটা দিব্যি ভাল আছে, স্বাভাবিকভাবেই সংসার করছে। কেউ বলবে না সে আসিফের সাথে ৪ বছর প্রেম করেছিল। পাগলের মত ভালবাসত আসিফ ওকে, সে জানত আসিফ এমন কিছু একটা করে ফেলতে পারে তবুও সে ঠিকই আরেকজনকে বিয়ে করেছে আসিফের কথা একটুও না ভেবে। সে জানে আসিফ এখনো মেনে নিতে পারে নি, এখনও আসিফ ডিপ্রেশন এ ভুগছে। তাই তার এত ভয় যদি আসিফ এমন কিছু করে বসে তাহলে তো তার জন্য সবাই তাকেই দোষ দিবে যদিও এখনো আসিফের এ অবস্থার জন্য সবাই তাকেই দায়ী মানে।
কিছু দিন আগে একবার ফোন দিয়ে সে বলে “ তুমি কি আমি চলে যাবার পর কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে ফোনে কথা বলেছিলে ? আমি ওইদিন একজনের ফোনে ঠিক তোমার কণ্ঠের মত একটা ক্লিপ শুনতে পেয়েছি”
আসিফ অবাক হয়, এখনো সে স্বাভাবিকই হতে পারে নি অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলা তো দুরের কথা, সে কষ্ট পায় এই ভেবে যে ওকে এমন ভাবল কি করে মেয়েটা ! নিজে যেমন তার মতই মনে করে । আসিফ প্রচণ্ড রাগে ভাবতে থাকতে, কোন দিন ওই মেয়ে পর্ণ দেখে ফোন দিয়ে বসবে, “ আসিফ, আমি একটা ক্লিপ দেখেছি, যেখানে ছেলেটার চেহারা ঠিক তোমার মত, আমি চলে যাবার পর তুমি এসব করে বেড়াচ্ছ তাহলে”
আরে শালী তুই যে বিয়ে করে তোর জামাই এর **** খাচ্ছিস ওটা কিছু না, আর আমি অন্য মেয়ের সাথে ফোনে কথা বললেই আমার ভালবাসা মিথ্যে ছিল।
ঘৃণায় তার মনটা বিষিয়ে ওঠে, মানুষ এত খারাপ হয় কি করে। তাও যাকে ভালবেসেছিল সে মানুষটা ।
সবাই, আত্মহত্যাকারীকে গালমন্দ করে, কাপুরুষ বলে, আত্মহত্যা কোন সমাধান না, অনেক কথাই বলে, কিন্তু যে আত্মহত্যা করেছে, সেই জানে তার মনে কষ্টের পাহাড়টা কত বড় ছিল। তার কাছে তার কষ্ট এতটাই বড় থাকে যে বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয়।
সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ধৈর্য ধারনকরার ক্ষমতা দিন, শত কষ্টেও যেন মানুষ হাল ছেড়ে না দেয়।