somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক পাগলের প্রলাপ ও একটি প্রেমের ইতিগল্প

১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পাশের বাসার মেয়েটির বিয়ে, বাসার সামনের ছোট্ট লনটাতে খুব সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। কত্তো আলোর ছড়াছড়ি ! আমি আমার অন্ধকার রুমটাতে বসে দেখছি। তোমার মনে আছে? তোমাকে বলতাম আমাদের বিয়েতে আমার গায়ে হলুদ এখানে হবে, আমার সব বন্ধুরা আসবে, অনেক মজা করবে। মনে নেই তোমার ?
আচ্ছা তুমি এখন কি করছ ? আমার কথা কি মনে পড়ছে নাকি নতুন জায়গায় নতুন মানুষদের নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত তুমি ? তুমি নিশ্চয়ই এখন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু , তাই না ? তুমি নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর করে বৌ সেজে আছো, ঠিক যেমনটা আমাকে বলতে, লাল টুকটুকে শাড়িতে বৌ সাজতে না ভীষণ ইচ্ছে করত তোমার, আর আমি বলতাম খুব তাড়াতাড়িই তুমি লাল টুকটুকে শাড়িতে বৌ সেজে আমার ঘরে আসবে, তোমাকে লাল শাড়িতে দেখতে কেমন সুন্দর লাগবে এটা ভেবেই আমি কেমন আনমনা হয়ে যেতাম তোমার মনে পড়ে ?

আচ্ছা তোমার মনে আছে, আমি যখন তোমাকে বলতাম, আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো ? তুমি বলতে “কি সব আবোল তাবোল বকো তুমি, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো ? তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে ?” খুব জানতে ইচ্ছে করে এখন তুমি কোথায় আছো !
তোমার মনে আছে? , তোমার সাথে রাতে একটু কথা না হলে আমি সারা রাত জেগে থাকতাম, আর তুমি ঘুম পাড়িয়ে দিলে আমি ছোট্ট শিশুর মত ঘুমিয়ে পড়তাম !! এটা ভেবে তুমি কখনো রাতে দেরি করতে না, যাই হোক না কেন তুমি ঠিক ই আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। আজ আমি কিভাবে ঘুমাব বলতে পারো ?

তোমার মনে আছে? তুমি বলেছিলে পৃথিবীতে তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারো না, তা হলে আজ কেন আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারলে না। তোমার জন্য আমি সব করতে পারি তুমি তা ভাল করেই জানতে, তবে কেন ...?

তোমার মনে আছে, একটা ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে তোমার ব্যপারে কত্তো আজেবাজে কথা বলল, আমি কিন্তু একটুও বিশ্বাস করি নি, কারন তুমি এমন হতেই পারো না, তোমার সাথে নাকি তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, আশ্চর্য !! তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর তুমি নিজেই জানো না !!! দেখেছো , ছেলেটা কি বোকা, মিথ্যে বলার আর জায়গা পায় নি, আমি তোমাকে ৭ বছর ধরে চিনি আর ভালবাসি, আর ও কোথা থেকে উরে এসে এসব বাজে বকছে, কই তোমার বাসায় তো আমাদের ব্যপারে সবাই জানে, তারাও তো কেউ কিছু বলল না !

তোমার মনে পড়ে? সেই ক্লাস সেভেনে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল আমার খালার বাড়িতে আর তখন থেকেই আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমি থেকে যাই সিলেটে আর তুমি চলে যাও ঢাকা, এর মাঝে খুব একটা দেখা হয় নি আমাদের। তাই মুঠোফোনই ভরসা। কিন্তু তারপরও মনে হত দুজন কতটা কাছে!

তোমার মনে পড়ে ? আমাদের শেষবার যখন দেখা হয়েছিল তুমি আমাকে ছুঁয়ে কথা দিয়েছিলে তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। ভুলে গেছ? বিশ্বাস করতে পারছি না, এই কি সেই তুমি ?! তোমাকে , তোমাদের বাসার সবাইকে আমি কতটা বিশ্বাস করতাম !! একটা মানুষ কি করে একদিনে এত বদলে গেল, একবারো ভাবলে না আমার কথা, তোমার কি মনে হয় নি আমি যখন জানতে পারবো তখন আমি যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসি !
পাশের বাসার মেয়েটার মতই তুমি নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছো বিয়ের আসরে, একবার কি আমার থেকে বিদায় নেবার ও প্রয়োজন বোধ কর নি ? নাকি সাহস পাও নি ? কিন্তু যখন আমি জানতে পারবো ভেবে দেখেছিলে আমার কি অবস্থা হবে তখন ? তুমি কি বুঝতে পারছ বিয়ে বাড়ির প্রতিটি মানুষ আমার হৃদয় মাড়িয়ে হাটা চলা করছে। তাদের পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে আমার তিলতিল করে গড়া স্বপ্নের পাহাড় !
কত মানুষ তোমার আশেপাশে, তোমাকে দেখছে, একবারো কি মনে পড়ছে না সে মানুষ টির কথা যে তোমাকে একটি বার দেখার জন্য মফস্বলের ট্রেন স্টেশনে সারারাত কাটিয়েছে !

আর পারছিনা ! আর একটুও বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না ! জীবনটাকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে! পুরো পৃথিবীটাকে বিশ্বাসঘাতক আর ধোঁকাবাজ মনে হচ্ছে! কিন্তু ভাবি কার জন্য জীবন দিব, যাকে এই জীবনের সবটুকুই দিয়ে দিলাম সে তো এর কোন পরোয়াই করলো না ! ডুকরে কেঁদে উঠি, শরীরের শেষ শক্তিটুকু থাকা পর্যন্ত চিৎকার করে কাঁদলাম।
হঠাৎ মা অশ্রুভেজা চোখে রুমে এসে বাতিটা জ্বালিয়ে দিল। মায়ের হাতে একটা জন্মদিনের কেক! আমি অবাক হই, বলি মা আজ তো ২০ ডিসেম্বর, আজ তো আমার জন্মদিন না ! মা কান্না আটকাতে পারে না, বলে উঠে “ নারে বাবা, আজই তোর জন্মদিন, আজ ২৫ মে” ।

পুনশ্চ ঃ ছেলেটির নাম অর্ণব , ২০০৯ এর ২০ ডিসেম্বর তারিখের ধাক্কাটি সে সামলে উঠতে পারে নি, তার মানসিক ডাক্তার বলেন সে এক অদ্ভুত মানসিক রোগে অসুস্থ , তার জীবন ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ এ এসে আটকে গেছে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে ভাবে আজ ২০ ডিসেম্বর। এভাবে পেরিয়ে গেছে ৩ বছর, প্রতি রাতেই সে সেইরাতের মত ডুকরে কাঁদে। তার সেই রাতেই হয়ত মরে যাওয়া ভাল ছিল, তাহলে এভাবে প্রতি রাতে তাকে মরতে হত না।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×