একটা দিন যে কতটা খারাপ হতে পারে তা আজকে বুঝতে পারলাম,”If anything can go wrong, it will”-মারফিসূত্র বা Murfy’s Laws।মাত্রই একদিন আগে একজন ব্লগার Murfy’s Laws গুলা খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছিলেন,যদিও খুব আগ্রহ নিয়ে সূত্র গুলা পড়েছিলাম,তারপরও মানতে পরেনি খারাপ এতো খারাপ হতে পারে বা খারাপ ক্লান্তিহীন ভাবে চলতে পারে।
মারফি সাহেব বোধহয় এই অবাধ্য ছাত্রটির অবাধ্যতা পছন্দ করলেন না এবং পরদিন ই আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগলেন।
এইবার মূল ঘটনায় আসি,আমার রাতে ঘুম না হওয়ার সমস্যা আছে,যার সাথে আমি নিজেকে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি।প্রতিদিনের মত কাল ও সূর্য উঠার পর ৬টার দিকে ঘুমাতে গেলাম।আমার ঘুমের সমস্যাটা সবায় জানে বলে কেউ দুপুরের আগে আমাকে বিরক্ত করে না।
কিন্তু মারফি সাহেব সকাল সকাল তার কাজ শুরু করলেন,৭টা বাজতে না বাজতে ই এমন একটা কল আসল যে কল বীরপুরুষরা ও অগ্রায্য করতে পারে না,আর সেই তুলনায় আমি তো কিছু ই না।
:এই মনে আছে তো,১২টার মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
:মনে আছে,এতো সকালে বিরক্ত করতাছো কেন,ঘুমাইতে দাও।
:সব কাগজ পত্র ঠিক আছে তো,ছবি ৪কপি আছে কিনা আবার চেক কর।
:আরে রাতে একবার দেখলাম তো সব ঠিক আছে।
:ঠিক আছে রাখি,সময় মতো আসবা।
আমি পুরাপুরি শিওর ছিলাম ৪কপি ছবি আমার হাতে আছে,তারপরও ওর কলের পর মনটা খুতখুত করতে লাগলো,ঘুমের চোখে ই চেক করতে গেলাম আর বুঝতে পারলাম মারফি সাহেব তার কাজ সূচারু ভাবে শুরু করে ফেলছেন।কারন ছবি ৩কপি পাওয়া গেলো ১কপি উধাও।
এতো সকালে স্টুডিয় খুলবে না,তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম,এই ফাকে রেডি হয়ে গেলাম,৮:৩০ এ বেরিয়ে পরলাম স্টুডিয়ের উদ্দেশ্যে।এখানে ও মারফি সাহেব পিছু ছারলেন না ৯:৩০ বাজলে বুঝতে পারলাম আজকে বোধহয় দোকান আর খুলবে না।মাথায় হাত ন দিয়ে উপায় নাই।
বন্ধুদের ফোন দিলাম কি করা যায়,বন্ধুত্বের কাছে মারফি সাহেব মার খেলেন তাই ২০মিনিটের মধ্যে ৩জন হাজির।অবশেষে ছবি হাতে পেলাম ১১:৩০ এ।ছবি নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে ই বেজে গেলো ১২টা।সেই সাথে শুরু হল কলের পর কল।
কোনো মতে টাকাগুলা পকেটে গুজে দৌড় লাগালাম বাস ধরতে,মারফি সাহেব আবার হাজির একটা ও ৮নাম্বার নাই অগ্যতা রিকশা নিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতে হলো,ডাবল ভারা দিয়ে যাত্রাবাড়িতে এসে উঠলাম তুরাগে,তুরাগ বেচারা আশি বছরের বৃদ্ধের মত সায়বাদে যেতে ৩০ মিনিট খেয়ে ফেললো।
:এই তুমি ফাইজলামি করো,১২টা বাজে আসার কথা এখন বাজে ১টা।
:আরে আমি তো মালিবাগে আর ১০ মিনিট লাগবে।একটু ওয়েট কর।
রাগ করে লাইন টা কেটে দিল।
প্রযুক্তিকে একটা বিশাল ধন্যবাদ(সায়দাবাদে বসে বলা যায় মালিবাগে আছি) দিয়া উঠে পরলাম বলাকায়।মারফি সাহেব অনেকক্ষন ধরে চুপচাপ তাই আবার হাজির হয়ে,চেপে বসলেন ড্রাইভারের ঘাড়ে।এই লোক বাস না ভরলে যাবেন না,এই দুপুর বেলা যাত্রী একে কম তার উপর ৫/৬ টা বলাকা একসাথে।বোঝা গেলো এই লোক দরকার হলে আসেপাশের বাসা থেকে যাত্রী নিয়ে আসবেন তারপরও যাত্রী ছারা রওয়ানা দেবেন না।
অবশেষে বহু কাঠখর পুরিয়ে ২টা বাজে আমি ওর মুখোমুখি।গালাগালি সব বিনা বাক্যে হজম করতে হলো।কাজ শেষ করে ফিরতি পথ ধরলাম ৩:৩০ এর দিকে,মারফি সাহেবের যন্ত্রনায় বাসে না ফিরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
“If anything can go wrong, it will” এইটা আবার মারফি সাহেব দেখালেন,জনপদ মোরে হঠাৎ এক মিনিবাস সগর্বে তার দেহ আমার রিকশার উপর তুলে দিলেন।অল্পের জন্য আমি লাফ দেওয়াতে পায়ে একটু মোচর খেলেও বেচে গেলাম,তবে রিকশাসহ রিকশাওয়ালার অবস্থা কাহিল,বেচারার সাথে কথা বলে ২০০টাকা(ভাড়া ছিলো ৫৫টাকা)সহ তাকে এক ভ্যানওয়ালার জিম্মায় দিয়ে আমি পায়ের মোচর আর মারফি সাহেবকে সাথে নিয়ে প্রস্থান করলাম।
বাসা খুব বেশি দুরে না হওয়ায় মেইনরোডে থাকার আর সাহস পেলাম না,তাই একটু হেটে আইডিয়াল স্কুলের গলি থেকে রিকশা নিয়ে বিরক্তিকর একটা দিন শেষ করে বাসায় ফিরলাম।