ভু কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ তথা বঙ্গোপোসাগর বহু আগে থেকেই বিশ্বে বড় শক্তিদের কাছে গুরুত্বপুর্ন । জব চার্নক কলকাতার পত্তন ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কুঠি তৈরির আগে প্রথমে চট্টগ্রাম আক্রমন করে দখলে নিতে চাইছিলেন সেখানে ঘাটি করার জন্য । আজকের বিশ্ব ভু রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ আরো অনেক বেশি প্রাসাঙ্গিক । ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান চীনা আধিপত্য ও মার্কিন পাল্টা আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দক্ষিন এশিয়া মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জরুরী। দাবার বোর্ডে ঘুটি সাজানোর খেলায় কেন বাংলাদেশ গুরুত্বপুর্ন আসুন তা দেখার চেস্টা করি।
চট্টগ্রামে মার্কিন সপ্তম নৌ বহরের ঘাঁটি তৈরির সম্ভবনাকে কেন্দ্র করে বাঙ্গালী চায়ের কাপে আবারো ঝড় উঠতে যাচ্ছে। ৭ম নৌ বহরের এই অঞ্চলে মোতায়েনের কারন “স্ট্রিং অব পার্লস “ বা মুক্তার হার ।
স্ট্রিং অব পার্লস কি?
স্ট্রিং অব পার্লস হলো চীনা নৌবাহিনী ভু কৌশলগত অবস্থানের পরিকল্পনাকে মার্কিনিদের দেয়া ডাক নাম।
এই পরিকল্পনায় চীনা নৌ বাহিনী তাদের সী কমিউনিকেশন চ্যানেলকে নিরাপদ, নিরবিচ্ছিন্ন রেখে তেল আমদনি করার জন্য পোর্ট সুদান হতে শুরু করে হংকং পর্যন্ত একগুচ্ছ ঘাঁটি তৈরি করছে বা করতে যাচ্ছে। যা ম্যাপের আকারে অনেকটা মুক্তার মালার ন্যায়। এই মুক্তার মালায় মুক্তা তথা শক্ত চীনা স্ট্রং হোল্ড গুলি হতে যাচ্ছে কয়েকটি চোক পয়েন্ট বাব এল মান্দেব (লোহিত সাগর),হরমুজ প্রনালী (ইরান),মালাক্কা প্রনালী (মালয়শিয়া), লম্বোক প্রনালী(ইন্দোনেশিয়া), পক প্রনালী শ্রীলংকা এবং কৌশলগত গুরুত্বপুর্ন বন্দর গোয়েদার(পাকিস্তান) ,মালদ্বীপ, হাম্বানটোটা (শ্রীলংকা),চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ),সিটাওয়ে ও রেঙ্গুন (মায়ান্মার)।
“স্ট্রিং অব পার্লস" ম্যাপঃ চীন এর নৌ ঘাঁটি সমুহের অবস্থান
কেন এই স্ট্রিং পার্ল?
এই প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় মুখপাত্র বলেছেন
“The “String of Pearls” describes the manifestation of China’s rising geopolitical influence through efforts to increase access to ports and airfields, develop special diplomatic relationships, and modernize military forces that extend from the South China Sea through the Strait of Malacca, across the Indian Ocean, and on to the Persian Gulf.
—Christopher Pehrson
একই সাথে চীনা প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি অন্যতম উদিয়মান শক্তি ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলাও এই কৌশলের লক্ষ ।
ম্যাপে চীনা ঘাটিগুলির অবস্থান একটু খেয়াল করলে বুঝা যাবে যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভারত নৌ পথে ঘেরাও হয়ে যাচ্ছে।
কাস্পিয়ান সাগরের প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে বর্তমানে মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে যে যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য,ন্যাটো, রাশিয়া চীনের যে গ্রেট গেম চলছে তাতে মার্কিনিরা এগিয়ে আছে আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতির কারনে এবং রাশিয়া জর্জিয়া যুদ্ধের কারনে বাকু চেইহান পাইপ লাইন যেকোন সময় ঝামেলায় পরতে পারে বিধায় এই প্রবল প্রতিদ্বন্দিতায় নিজের অবস্থান শক্ত করতে ভারত মহাসাগর আরব সাগরে নিজেদের নৌ শক্তির অবস্থান বাড়ানর বিকল্প হিসাবে চীনের এই পরিকল্পনা।
স্ট্রিং পার্লকে কাউন্টার করতে বাংলাদেশ ক্যানো গুরুত্বপুর্ন?
চীনের প্রধান বিমান ঘাঁটি সমুহের অবস্থান
বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক যায়গায় যেখান থেকে এই মুক্তার মালা ছেড়া মার্কিনিদের পক্ষে সম্ভব।
স্ট্রিং পার্লের বেশির ভাগ চীনা পজিশন বাংলাদেশ তথা চিটাগাং থেকে সবচেয়ে কাছে।
বিরোধপুর্ন ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা দক্ষিন চীন সাগর চট্টগ্রামের থেকে মোটামুটি কাছে অথচ চীনা বিমান বাহিনীর বড় কোন ঘাঁটি থেকে যথেস্ট দূরে।
ভবিষ্যতে ভুটানের উপর দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ সবার কাছে লোভনীয় উত্তর পুর্ব ভারতে চিনারা প্রবেশ করতে চাইলে মার্কিনিদের জন্য আকাশপথে তাকে সামলানোর জন্য ভালো স্থান বাংলাদেশ।
সম্ভাব্য যুদ্ধে চীনা পারমানবিক সাবমেরিনের হামলার প্রথম ধাক্কাটা যাতে মার্কিনিদের উপর দিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।
ভারত মহাসাগর এ সুপার ও গ্রেট পাওয়ারদের বর্তমান অবস্থান
ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশ সমুহের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন
বাংলাদেশের লাভক্ষতি ও ভারতের অবস্থানঃ
ভারতের অবস্থান শ্যাম রাখি না কুল রাখি। একদিকে চিনের হুমকি ও মার্কিন মিত্রতা।অন্যদিকে নিজের কৌশলগত গোপনিয়তা রক্ষা।
নিজের কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে বাংলাদেশ অনেক বড় বড় শক্তির কাছ থেকে অনেক সুবিধা আদায় করে নিতে পারে।এজন্য দরকার রাজনৈতিক ঐক্য।