তোমাদের সৃষ্ট জোয়ারে উদ্বেলিত আজ সারাদেশের মানুষ। যুবা-বৃদ্ধ-শিশু-নারী ও পুরুষ। কয়েকজন তরুণ-যুবকের উদ্যোগে এই বিশাল গণজমায়েতকে রাষ্ট্রের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন অভূতপূর্ব গনজোয়ার। তারা একে তুলনা করছেন ৭১এর গনজোয়ারের সাথে। নিঃসন্দেহে এটি একটি গণজোয়ার। কিন্তু এটি সুপরিকল্পিত নয় এবং এটি কোনও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে করা নয়। যদিও নানান জনে এনিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেছেন যে এটি ভারতের র’এর তৈরি একটি সুপরিকল্পিত ঘটনা। কেউ বলছেন সরকারের সাজানো নাটক। আর কেউ বলছেন বামসংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। এর কোনওটিই আমার কাছে বিশেষভাবে সত্য বলে মনে হয় না। কারণ মানুষ এই গণজমায়েতে আসছে স্বতস্ফূর্তভাবে। বামদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় এতো বড় জমায়েত করা। কারণ ওরা যে আদর্শ লালন করে তা ধর্মবিবর্জিত মানুষের মনগড়া আদর্শ। অনেকটা ধর্মবিরোধী আদর্শ তাদের। সুতরাং প্রায় শতভাগ মুসলমানের এই দেশে ধর্মহীন কোনও আদর্শ বা ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। যে কারণে ক্ষমতায় আসতে ইচ্ছুক বড় রাজনৈতিক দলগুলো অন্তত নির্বাচনের আগে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ বলে নিজেদের প্রমান করতে সচেষ্ট হোন। কিন্তু প্রবল খাঁটি দেশপ্রেম এবং জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক চেতনা থাকা সত্বেও বাংলাদেশে বামদলগুলোর কোনও শক্ত অবস্থান আজও তৈরি হয়নি। কিন্তু তবু ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শেষপর্যন্ত কিছুটা সমমনা রাজনৈতিক দলের সাথে আপস করলেও মূল আদর্শ বা চেতনা থেকে পুরোপুরি দূরে সরে যাননি, কিংবা লোকদেখানো ধর্মপ্রীতিও তারা দেখাননি। তাদের এ অটল অনড় এবং সংগ্রামী বেঁচে থাকার আদর্শে অনেক তরুণ অনেক যুবকই আকৃষ্ট। যার ফলে তাদের সামান্য চেষ্টায় কোনও পূর্বপরিকল্পনা বা চেষ্টা ছাড়াই এই অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই গণজাগরণ নিয়ে বিশেষমহলে এবং জনগণের মাঝেও যে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারা ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছেন, কেন করেছেন তা নিয়ে ব্যাপক যুক্তি-তর্ক হতে পারে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ধূম্রজাল সৃষ্টি কারও উদ্দেশ্যমূলক সেটি ঠিক সেভাবে সত্য নয়। অর্থাৎ মানুষের মনে যে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল সৃষ্টির কারণ মূলত সেখানেই। মানুষের মনে প্রশ্ন যে এতো মানুষ কোত্থেকে এলো? এরা এতদিন কোথায় ছিল? পেছনে কি কোনও শক্তি আছে যারা এর পেছনে কাজ করেছে? আর এসব প্রশ্নের উত্তর যে যার মতো খুঁজে নিয়েছে। কারণ এই প্রশ্নের গ্রহনযোগ্য উত্তর দেয়ার মতো কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা দল বাংলাদেশে নেই। প্রত্যেকেই নিজস্ব পয়েন্ট অব ভিউ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে বিবেচনা করছেন এবং মূল্যায়নও করছেন। কিন্তু সরকার এবং সরকারি দল এ থেকে বেশ সুচতুরভাবেই কিছু ফায়দা তুলে নিলেন। এতে তাদের প্রশংসা যেমন করা যায় তেমনি কিছুটা নিন্দাও করতে হয় কারণ জনগণের এ ঐকতানকে তারা ভিন্নদিকে ঠেলে দিচ্ছেন। সরকার কেন হঠাৎ এই সুযোগটাকে লুফে নিল? আসলে সরকার যেভাবে আগ-পর সরকারের মতোই জনবিচ্ছিন্ন ও সমালোচিত হয়ে পড়ছিলেন তাতে তাদের এ ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে কৌশল করেই টিকে থাকতে হয়। কারণ একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই আদর্শ বা মেনিফেস্টো বা ইশতেহার থাকে এক। সেখানে মানুষ বা জনগণ কেন একটি দলকে বেছে নেবে সেই দিকটি তাদেরই হাইলাইট করে তুলতে হয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ হাইলাইট করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিএনপি করছে জাতীয়তাবাদী চেতনা আর জামায়াত করছে ধর্মীয় চেতনা। বাকীরা পিছিয়ে পড়েছে কোনও নির্দিষ্ট হাইলাইট পয়েন্ট জাতির সামনে দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে সর্বজনীনভাবে তুলে ধরতে না পেরে। যেমন জাতীয়পার্টি ইসলামী চেতনা, জাতীয়তাবাদী চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবটাতেই নিজেকে সমানভাবে একনিষ্ঠ বলে প্রচার এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। এই সবগুলো চেতনাই প্রধান দলগুলো পোষণ করে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে একেকজন এককটাকে হাইলাইট করে সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং মানুষও দুই-তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তাদেরকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। ঠিক এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ আজ হয় বিএনপি না হয় আওয়ামী লীগ অথবা জামায়াত। আর কোনও দল সেভাবে বের হয়ে আসছে না। ঠিক একই শূন্যতা বা দুর্বলতার কারণে আজ এতো বড় গণজাগরণের কোনও লক্ষ্যবস্তু নেই। বরং তাদেরকে পুঁজিকরে জনপ্রিয়তা বাড়াবার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বামরা সফল হয়েছে তাদের আদর্শগত যুদ্ধে আর আওয়ামী লীগ সফল হয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে। আর চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। সবচেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। কিন্তু জামায়াতের কোনও নেতা বা নীতিনির্ধারক বা কোনও কর্মী কি এই আদর্শগত পরাজয়কে মেনে নিচ্ছেন? নিচ্ছেন না, কারণ তারা মনে করেন এই ঘটনায় তাদের একজন কর্মীও কমে যায়নি এবং সমর্থনও কমে যায়নি। তাদের চিন্তা হয়ত পুরোপুরি ঠিক কিন্তু প্রতিযোগিতা যখন সমুদ্র থেকে কে কতো মুক্তা আহরণ করতে পারে তখন নিজের যা আছে তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা একধরণের ‘মানসিক বৈকল্য’ বলেই মনে করেন অনেকে। এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ খুশি ও উল্লসিত জামায়াতের বিরোধীপক্ষ। তারা মনে করেন যতোটা চেয়েছেন তার চেয়ে বেশি পরাজিত করতে পেরেছেন তারা জামায়াতে ইসলামীকে। কিন্তু যারা আজ শাহবাগের এ উত্তাল জোয়ার দেখে যারপরনাই আনন্দিত আহ্লাদিত তারা কি ভেবে দেখেছেন সমুদ্রের জোয়ার কতোটা ক্ষণস্থায়ী? জামায়াত যেহেতু যে কোনও উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকরার চেতনাধারী কোনও দল নয় সেহেতু রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা আহামরি কোনও বিজয় নয়। তারা আদর্শভিত্তিক দল। এই দল সমুদ্র থেকে মূলবান নুড়ি বা মুক্তা হয়ত নিতে পারে না কিন্তু শক্তভাবে বৈঠা ধরে রাখতে জানে। যে কারণে সমুদ্রের জোয়ার তাদের কিছুটা ভিজিয়ে নিলেও তাদের আদর্শের কোনও পরাজয় হয় না বরং পরিশীলিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবারের গণজোয়ার দিন দিন বেড়েই চলেছে এর অর্থ কিন্তু জামায়াত দিন দিন ক্ষুদ্র হচ্ছে তা নয়। হয়ত জোয়ার থেকে কিছু নিতে পারছেন না কিন্তু জোয়ারের তাণ্ডবে তারা নিজেদের মধ্যে যেভাবে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন তাতে একেকজন কর্মী হয়ে উঠছে দশজনের সমান। নিষ্ক্রিয় প্রগতিশীল ভাণ করা, সমালোচক কর্মীটি হয়ে উঠছেন একনিষ্ঠ। আরও দৃঢ় হয়ে উঠছেন ঈমানী চেতনায়। কারণ তারা বুঝতে পারছেন আর সময় নেই ঘুমিয়ে বা হেলা-ফেলা করে, দলের সমালোচনা করে বিদ্বেষ-বিভক্তি ছড়ানোর বরং নিজেদের সব দুর্বলতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সত্যকে রক্ষায়। আর তাদের চেতনায় যে আফিম জাতের ইসলাম গেঁড়ে আছে এক ঝলকায় তা বেড়ে গেছে কয়েকশ’ গুন। এ যেন পবিত্র কোরআনের সেই ঘোষণা হে কম্বল আচ্ছাদনকারী, ওঠো! আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, বলো আল্লাহু আকবার। এই একটি স্লোগানই যথেষ্ট তাদের ময়দানে এনে দাঁড় করাতে, জংধরা ঈমানী চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে এবং কর্তব্য ঠিক করে নিতে। কিন্তু সবাই কি পারবে এই জোয়ারের তাল সামলাতে? তারা পারবে না, যাদের অন্তরে বাসা বেঁধেছে মুনাফেকী, ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা। তারা ঝ’রে পড়বে। তাতে জামায়াতের কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। আগাছা নিজ থেকে ঝ’রে না গেলে কেটে ফেলতে হয়। অতএব এই বিশাল গণজোয়ার নিয়ে জামায়াতে ইসলামীতে উদ্বেগ থাকতে পারে তবে হতাশা বা পিছুহটার মনোবৈকল্য নেই সেটি নিশ্চিত। এবং বিশাল গণজোয়ারকে তারা তা অচিরেই হয়ত জানিয়ে দেবে মাওলানা সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে।
আশাকরি অনেকেই একমত হবেন যে শাহবাগের গণজোয়ার জামায়াতের কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। কিন্তু এটি মেনে নিতেই হবে এই গণজোয়ারকে কেন্দ্র করে একটি মহল জামায়াতের রাজনৈতিক শক্তি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশলে ফাঁটল ধরাতে চাইছেন। এবং তারা ভাবছেন তারা শতভাগ না হলেও অনেকটাই সফল হবেন। এবং এরইমধ্যে রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি’র কাছে জামায়াতকে তারা গলারকাঁটা বলে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলেও মনে করছে মহলটি। সেটি যতোটানা প্রকট তার চেয়ে কয়েকগুন প্রকট করে দেখানো হচ্ছে মিডিয়াতে। এই সরকারের আমলে জন্ম নেয়া একেবারেই নবীন টেলিভিশনগুলো এই ফাঁটলের কাজটি করছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। কিন্তু পত্রিকাগুলো কিছুটা প্রবীন হওয়ায় যেন-তেনভাবে প্রমাণ করছেন না তাদের পক্ষপাতিত্বকে। আবার অনলাইন মিডিয়াগুলো যেন আরও একধাপ এগিয়ে টেলিভিশনগুলোর চেয়ে। তারা টুইস্ট সংবাদ প্রচারের মাধ্যমেও মাঠের এক্স্ট্রা প্লেয়ার হয়ে দু-চারটা গোল করতে চাইছেন। এদিক থেকে জামায়াত এক প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি। কিন্তু তারা মনে করেন যখন বিজয় আসবে তখন পবিত্র কুরআনের ওই সূরা নছর’র মতো...যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে তখন দলে দলে মানুষ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে শামিল হবে...। সেদিন এই মিডিয়াগুলো সত্যের পক্ষে কথা বলতে শুরু করবে। (হয়ত যারা সত্যের পক্ষে লড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের চেয়ে বেশি প্রিভিলেজও পাবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে বিজয়ের আগে যারা ঈমান এনেছে আর বিজয়ের পরে যারা ঈমান এনেছে তারা কখনও সমান নয়।)
কিন্তু এই যে গণজোয়ার এই জোয়ার শেষপর্যন্ত কোনদিকে যাচ্ছে? এই গণজোয়ারের ‘স্রষ্টা’ বলে যাদেরকে খ্যাতি দেয়া হয়েছে তারা অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট। তারা ফেসবুকের তরুণ-যুবক মেম্বার। আমি টেলিভিশনে এদের কথা শুনতে পাচ্ছি এবং অনলাইনে এদের অভিব্যক্তি জানতে পারছি। এদের কথা খুব স্পষ্ট। এদের চাওয়া খুব স্পষ্ট। এদের দাবিও খুব স্পষ্ট কিন্তু এরা যে গর্ব নিয়ে আত্মতৃপ্ত সেটি কতোটা সুস্পষ্ট? এই প্রশ্নই আজ আমাকে এতকিছু লিখতে আগ্রহী করেছে। তারা যে কাজটি করেছে তা নিঃসন্দেহে দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। যদি আমি এটিকে স্রেফ একটি গণজাগরণ হিসেবে দেখি। কিন্তু যদি আমি একে যুদ্ধ হিসেবে (তাদের মতে মুক্তিযুদ্ধ) কল্পনা করি তাহলে তারা কতটুকু সফল কতটুকু যথার্থ কতটুকু দৃঢ় এবং কতটা সার্বজনীন? এই প্রশ্ন আরও বড় করে দেখা দেয়। তাদের লড়াইয়ের মূল প্রতিপাদ্য যদি হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার বা কোনও ব্যক্তির বিচার বা কোনও দলের মূলোৎপাটন তাহলে ধরেই নিতে হবে তাদের এ যুদ্ধ অর্থহীন। বাংলাদেশের মাটি থেকে যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক কোনওদিন মুছে ফেলা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করা। সম্ভব নয় জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী দল নিশ্চিহ্ন করা। মানুষকে ধর্ম থেকে আলাদা করা যায় না। কারণ মানুষ জন্মের আগে থেকেই কোনওনা কোনও ধর্মের সহিস হয়ে জন্মায় অতএব ধর্ম থাকলে ধর্মীয় রাজনীতি থাকবেই। আইন করে ধর্মীয় দল বাদ দেয়া যেতে পারে কিন্তু দল থেকে ধর্মতো বাদ দেয়া সম্ভব নয়! তাহলে এই যুদ্ধ কেন? কারা যুদ্ধাপরাধী? কে চিহ্নিত করেছে এই গোষ্ঠীকে? কেন একটি গোষ্ঠী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত আজ? এই প্রশ্নের কি উত্তর জানা গেছে আজও? হয়নি। কারণ এর উত্তর দিতে পারে একমাত্র ইতিহাস। সেই ইতিহাস নিরপেক্ষ নয়। সেই ইতিহাস দলীয় রাজনীতির বাইরে লিখিত নয়। এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না খুঁজে চল্লিশ বছর পর আজ শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বড় ক্যান্সার (প্রাণগোপাল দত্ত) হয়ে দেখা দিয়েছে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু। যদি আজও এ প্রশ্নের সমাধান না হয় তাহলে আগামী চল্লিশ বছর পর ঠিক একইরকম যুদ্ধ করতে হবে এমনই কোনও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী এবং স্বাধীনতা উত্তর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় কথিত যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর আর কোনও দোষ-ত্রুটি নেই এক যুদ্ধাপরাধ ছাড়া। যখন অন্য দলগুলো সীমাহীন দুর্নীতি, খুন-খারাবি, গণতন্ত্র হত্যা, স্বৈরাচারী, বাকশালীসহ নানা দোষে দুষ্ট। যদি ধরেও নেয়া হয় অভিযুক্ত দল বা ব্যক্তি দোষী তাহলেও তাদের ক্ষমা করে দেয়া উচিৎ, তাদের স্বাধীনতা পরবর্তী নিষ্কলুষ রাজনৈতিক তৎপরতার জন্য। তাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কর্মসূচি, তাদের গঠনতন্ত্র, তাদের কর্মপদ্ধতি ও চেতনা সবকিছুই এই দেশের সেবায় নিয়োজিত। এবং স্বীকার করতে বাধ্য এমন দৃঢ় সাংগঠনিক শক্তি আর কোনও দলের নেই। প্রশ্নটি এখানেই। তবে কি জামায়াতের এই সাংগঠনিক শক্তিই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু? কিছু প্রেক্ষাপট বা চালচিত্র ভেবে দেখা দরকার। যা থেকে অনেকটা স্বচ্ছ হয়ে দেখা দেবে যে মজবুত সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন এবং শতভাগ দেশের স্বার্থ বোঝে এমন দলকে কখনই সরকার হিসেবে দেখতে চায় না প্রতিবেশী ভারত। যদি বাংলাদেশে ইসলামী দল ক্ষমতায় আসে বা জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসে, অনেকরেই ধারণা ভারত আজ যেভাবে নির্বিবাদে বাংলাদেশকে তাদের করদরাজ্য বা কলোনী হিসেবে ব্যবহার করছে তা আর সম্ভব হবে না। বন্ধ হয়ে যাবে ভারতীয় অবাধ পণ্য আসা যাওয়া, বন্ধ হবে এদেশে তাদের বিশাল মার্কেট। বন্ধ হবে কূটনৈতিক-ভৌগোলিক-মনস্তাত্বিক আধিপত্য। কিন্তু আওয়ামী লীগকি তবে দেশপ্রেমহীন একটি দল? সে কথা কিন্তু মোটেও সত্য নয়। তবে ভারতের কাছে আওয়ামী লীগের এমন কিছু উইকপয়েন্ট সংরক্ষিত আছে যে আওয়ামী লীগ কখনও ভারতের বিরুদ্ধে যায় বা যেতে পারে এমন কাজ বা উদ্যোগ নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা যাকে বলেন নতজানু পররাষ্ট্র নীতি। এ ছাড়া কতিপয় নেতা বা এজেন্ট আছে যারা চিরকালই আওয়ামী লীগকে ভারতের মুখাপেক্ষী থাকতে উৎসাহ যোগায় ও বাধ্য করে; অনেকটা ব্লাকমেইল পদ্ধতিও অবলম্বন করে তারা। তবে কি ভারতের সাথে গোপন কোনও আঁতাত ছিল শেখ মুজিবের? কেন তিনি ৬দফা শুরু করলেন হোসেন সোহরাওয়ার্দীকে ডিঙিয়ে? কেন তিনি ঢাকা কে রাজধানী দাবি করে বিশাল কলকাতার দাবি ছেড়ে দিলেন? আবার সস্তা জনপ্রিয়তাও পেয়ে গেলেন। এই ইতিহাস বা এর সত্যতা কি কোনওদিন জানবে এ প্রজন্ম?
যারা স্বাধীনতাযুদ্ধের নিরপক্ষে সাক্ষী তারা ভুল ধরিয়ে দেবেন আশা করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম বা স্বাধীনতা চেতনার জন্ম কবে? খুব দূর থেকে দেখতে গেলে ফিরে যেতে হবে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ রদ, ফরায়েজী আন্দোলন, ১৯৪৭ সালের আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যত্থানের ইতিহাসের দিকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১। কিন্তু যারা শুধুই ১৯৭১কে বিচ্ছিন্নভাবে দেখেন তাদের কাছে ইতিহাসপ্রীতি আশা করা ভুল বরং তারা ইতিহাসবিকৃতির জালে বন্দী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান যে চেতনার বলে আলাদা হয়েছিল আজকের তরুণ সমাজ কি সেই চেতনার কথা জানেন? কারা কী কারণে, কীসের ভিত্তিতে সেদিন যুদ্ধে নেমেছিল তা কি জানে শাহবাগের তরুণেরা? আমার ধারণা ইতিহাস তারা ভালোই জানে। কিন্তু তারা ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। তারা ৭১ পূর্ববর্তী এবং ৭১কে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেখতে চায়। এমনকি তারা ৭১এর পরবর্তী সময়কেও বিবেচনায় আনতে চায় না। কারণ তাতে তারা খেই হারিয়ে ফেলে। যুদ্ধ করার মতো কোনও প্রতিপক্ষ আর তাদের থাকে না। আর প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা-লড়াই ছাড়া কি চলে তরুণ হৃদয়ের? ৭১এর প্রেক্ষাপট তাদেরকে শত্রু চিনিয়ে দিয়েছে। কে শত্রু? পাকিস্তান। কে এই শত্রুকে চিনিয়ে দিয়েছে সেটি কি একবারও ভেবে দেখেছে তরুণ প্রজন্ম?। ঘোরতর শত্রুইকি এই শত্রু চেনানোর কাজটি করেনি? কেন বাঙালি পাকিস্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে সমান অংশ নিয়ে আলাদা হয়েছিল? অখণ্ড ভারত মহারাষ্ট্রে কি তারা সুখে ছিল? কী ধরণের নির্যাতন, নিষ্পেষণ, বঞ্চনা সইতে হয়েছে তা-কি জানে এই প্রজন্ম? তারা কি জানে মুসলমানরা কীভাবে নির্যাতনের নিগড়ে আবদ্ধ ছিল? হিন্দু রাজারা কোরবানী দিতে দিত না, পুকুরে গোসল করতে দিত না, খাজনা আদায়ে ছিল কতোটা নিষ্ঠুর! তা কি জানে এরা? আর হিন্দুদের সেই নির্যাতনে সহযোগী হতো নামধারী ক্ষমতাসীন মুসলমানরা। বারো ভূঁইয়ার ইতহাসে তা এখনও অমিত। নিকট অতীতে পাকিস্তানের জিন্নাহ বাংলাদেশের শেরেবাংলাসহ অনেকেরই নাম পাওয়া যাবে। আসবে দুদুমিয়া, হাজী মহসিন, হাজী শরীয়তুল্লাহ, মুন্সী মেহেরুল্লাহ, তিতুমীরসহ অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বের নাম। যাদের প্রাণপন লড়াইয়ের ফল ছিল ১৯৪৭। বাঙালি মুসলমানদেরকে রক্ষা করতে, স্বাধীন করতে তাদের অবদান মনের অজান্তে স্বীকার করলেও সেই ইতিহাস আজ চর্চিত নয়। কারণ তাতে ১৯৭১এর ইতিহাসের মাধূর্য নষ্ট হয়। কারণ ১৯৭১কে একটি মহল চায় ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার ফসল হিসেবে প্রমাণ করতে। চায় একটি দলের একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবে জিইয়ে রাখাতে। এর কারণ কি? ১৯৭১’র আগ পর্যন্ত সমস্ত যুদ্ধে ধর্ম মানুষকে এক করলেও ১৯৭১এ ধর্ম মানুষকে আলাদা করে ফেলেছে। কারণ এই যুদ্ধ ছিল ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, এই যুদ্ধ ছিল এক পরিবারের মধ্যে যুদ্ধ। কিন্তু তা কি অনিবার্য ছিল? তবু অনিবার্য কেন হয়ে উঠলো? কারণ মুসলমানরা কখনও একসাথে দুটো জিনিসকে ধারণ করতে পারে না। ক্ষমতা ও ঈমান। তাদের ঈমান থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ তারা ক্ষমতার বাইরে থাকে, লড়াইয়ের ময়দানে থাকে। কিন্তু যখনই তারা ক্ষমতায় আসে তখন ভুল-ভ্রান্তি, আয়েশী চিন্তা, ভোগ-লিপ্সা অন্য যে কোনও ধর্মের চেয়ে এদের বেশি আবিষ্ট করে ফেলে। এমনটি ইসলামী যুগেও দেখা গেছে। ওহুদের যুদ্ধে গনীমতের লোভ (আল্লাহ ক্ষমা করুন) কীভাবে পরাজিত করেছিল রাসুলের সৈনিকদের । এটি ছিল আল্লাহপাকের শিক্ষা। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। যাতে মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারে। তখন রাসুল (সঃ) ছিলেন তাই সাহাবীরা অল্পতেই ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ও চেতনায় গড়া পাকিস্তান বাঙালি মুসলমান বা পূর্বপাকিস্তানের মুসলমানদের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন ক্ষমতা ও আরাম আয়েশ পেয়ে। সঙ্গত কারণেই বাংলার মানুষ হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। মুসলমান ভাইদের বৈষম্যমূলক এই আচরণ সংক্ষুব্ধ করে তোলে এদেশের মানুষকে। তারা ধরে নেন ধর্ম এক হলেও জীবনধারণের পদ্ধতি ও সুযোগ সুবিধা তাদের এক নয়। ঠিক এই সময় মানুষ ধর্মের ভাইকে ভাবতে শুরু করেন শত্রু আর সেই ফাঁকে জায়গা করে নেয় নতুন এক জাতীয়তাবোধ। ভাষা, আকৃতি, সংস্কৃতিগত ঐক্যের ভিত্তিতে জেগে ওঠা ওই জাতীয়তাবোধই পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার মূল প্রেরণা। আর সেই সুযোগাটাই গ্রহণ করলো প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তারা তাদের (ভৌগোলিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে) চিরশত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পথ পেয়ে গেলেন। তারা সুকৌশলে ব্যবহার করলেন এদেশের বাঙালিদের। তারা ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া না মিটিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দিলেন। কারণ তারা জানতেন ওইদিক থেকে আলাদা হতে পারলে তাদের ফিরে যেতে হবে বাংলাদেশকে। তখন তারা এই ছোট্ট ভূখণ্ডকে নিয়ে খেলতে পারবেন যেমন ইচ্ছে। কিন্তু কতিপয় মুসলমান, যারা ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হবার যুদ্ধে শরীক ছিলেন তারা একে দেখলেন গৃহযুদ্ধ হিসেবে। এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ হতে পারে না। কিন্তু তাদের সেই ঐক্যপ্রয়াস সফল হয়নি। একদিকে ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম ভাই আর অন্যদিকে হিন্দু শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রবল উস্কানী। বাংলাদেশের একদল ভাবলেন ক্ষমতা দখল আসল কথা কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কার সহযোগিতায় যুদ্ধ, সহযোগিতাকারীদের স্বার্থকি সেটি চিন্তা করার সময় ও প্রজ্ঞা তাদের ছিল না। আর সেই প্রজ্ঞা যাদের ছিল, তারা চেয়েছিলেন শুধু স্বাধীকার। আমার ঘরের কর্তৃত্ব আমারই থাকবে। কিন্তু তাতে যে সহযোগিতাকারীদের স্বার্থ রক্ষা হয় না, তাই তারা চাইছিলেন এমন কিছু হোক যাতে ছোট্ট ভূখণ্ডটি তাদের করায়ত্তে থাকে। তাই যতো ধরনের রাজনৈতিক কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করা যায় তাই তারা করলেন। যুদ্ধ বেধে গেলে ‘সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না’ এমন রণ কৌশল নিয়ে সহযোগিতা করলো ভারত। যুদ্ধ চললো ৯মাস। প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়ের বিনিময়ে নগদে যা নিয়েছে ভারত তার হিসেব কি কখনও করেছে এদেশের সরকার? শত শত সরকারি গাড়ি, ব্যাংকলুটের টাকা কোথায় গেছে? দেশপ্রেমে অন্ধ মানুষগুলো যতোটা পেরেছে দখল নিয়েছে ভারতের সরাইখানাগুলো। বিপুল অর্থের বিনিময়ে ভোগ করেছে নারী-মদ-বিলাসিতা। তবে কিছু বামপন্থী এবং ইসলামিস্ট শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন দেশের সম্পদ রক্ষার। আর সেই তথ্য যখন প্রতিবেশী বন্ধু দেশের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো তখন থেকেই শুরু নতুন আরেক যুদ্ধ। চির বৈরি হয়ে গেলো ইসলামিস্ট ও বামপন্থীরা। অথচ একটি দেশে যে জাতীয়তাবোধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই বোধ এদের একত্রে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। ইসলামিস্টরা ভারতের শত্রু তাই তাদেরকে পাকিস্তানের বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। তাদের উপর আরোপ করা হলো জঘন্য অপবাদ। হত্যা লুণ্ঠন ধর্ষণসহ যাবতীয় অপকর্মে পাকিস্তানীদের সঙ্গী হিসেবে কুখ্যাতি পেল সেই ইসলামিস্টরা। যাদের অনেকেই শান্তিকমিটির আড়ালে অসহায় মাবোনদের পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু কতিপয় লেবাসধারী মুসলমান পাকিস্তানীদের চেয়ে বড় পাকিস্তানী সেজে বাংলার ঘরে ঘরে লুণ্ঠন ও ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ও নির্মম কাজ করেছে। এবং এরাই সময় বুঝে নিজেদের আড়াল করতে ঢুকে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে। হয়ে উঠেছে বড় দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা। তাই স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও কে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী বা রাজাকার তা সুষ্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়নি। কারণ চোর নিজেই যদি চোর চোর বলে চোর খুঁজতে থাকে মানুষেো কনফিউসড হবেই। মুক্তিযুদ্ধে যাদের পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, ধর্ষিত হয়ে বীরাঙ্গনা হয়েছে তাদের কারও বক্তব্যে, কারও লেখায় আজকের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কোনও অভিযোগ নেই। বাংলাদেশের স্বনামধন্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার পিতাকে হারিয়েছেন। তার মা আয়েশা ফয়েজ সেই স্মৃতি লিখে জানিয়েছেন। তাতেও এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের, যাদের বিচার এখন ট্রাইব্যুনালে চলছে তাদের নাম নেই। বরং সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে কারা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। সেই সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন সরকারি আমলা-মন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এমন অভিযোগও বিদ্যমান। স্বয়ং একজন বীর উত্তম কাদের সিদ্দিকী সাক্ষ্য দিচ্ছেন কে রাজাকার ছিল। অতএব নতুন প্রজন্ম যখন এই সম্মুখ যোদ্ধাকে রাজাকার বলতেদি্বিধা করে না তখন ভাবতেই হয় এরা ইতিহাস জানে না। যতটুকু জানে ততটুকু যথার্থ নয়। তাই নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধ নিয়ে মোটেও আশাবাদী নই আমি। বরং আমার প্রত্যাশার সবটা জুড়ে আছে এখন সাইবার আর্মি। যাদের মূল টার্গেট ভারতের আধিপত্য খর্ব করা। তাই বাংলাদেশের সম্পদশালী সামর্থ্যবান দেশপ্রেমিকদের প্রতি দাবি আপনারা ওই তরুণদের সহযোগিতা করুন, যারা ভারতকে জানিয়ে দিতে পেরেছে যুদ্ধ আসন্ন এবং সেই যুদ্ধে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে না। ভারতকে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে অবলা ফেলানীরা চিরকাল সীমান্তে নীরবে জীবন দেবে না। কিংবা ৫৮জন রিনাউন্ড সেনা অফিসার হারালেও নতুন যুদ্ধে বাঙালি সহসা হারবে না। আসুন নীরব সেই সাইবার আর্মিদের জন্য প্রার্থনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০২