“ওস্তাদ অালাউদ্দিন খাঁ ও তাঁর পত্রাবলী।” (বই)
---- মোবারক হোসেন খান।
একটা বইয়ে পড়েছিলাম, বৃটিশ মিউজিয়ামে
দুইজন বিখ্যাত মানুষের মগজ সংরক্ষিত আছে।
একজন পদার্থবিদ- আইনস্টাইন, অন্যজন লেখক- ম্যাক্সিম গোর্কি।
আইনস্টাইন মারা যান ১৯৫৫ এ।
মারা যাবার আগেই তিনি বুঝেছিলেন, তাকে নিয়ে এই জাতীয় তামাশা হতে পারে।
সেজন্য বলে গেছিলেন- তার মৃতদেহ যেন ভস্ম করে ছাই উড়িয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু মরে গিয়ে তিনি রেহাই পাননি।
কাজটা হয়েছিল তিনি যে হাসপাতালে মারা যান সেখানেই।
হার্বে নামে একজন তার মগজ চুরি করে রেখে দেন ।
পড়ে অবশ্য ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়।
এখন তার মগজ নিয়ে গবেষনা করা হচ্ছে।
খোজা হচ্ছে, তার মাথায় যে এত বুদ্ধি ছিল, তার রহস্যাটা কি ?
ওস্তাদ অালাউদ্দিন খাঁ বিজ্ঞানী না, লেখকও না।
তবুও তার মাথা নিয়ে একটা মজার কাহীনি আছে।
ঘটনার নায়ক স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অালাউদ্দিন খাঁ কিছুকাল শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক ছিলেন।
চাকরী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বিদায় বেলা কবিগুরু আসলেন বিদায় জানাতে।
এসে শান্তিনিকেতনের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক নন্দলাল বসুকে ডাকলেন।
বললেন- ‘ নন্দলাল,
“ খাঁ সাহেবের মাথাটা রেখে দাও।’
---পৃ:৮৭
ভিমড়ী খাবার মতো কথা না ?
(ভাস্কর নন্দলাল যে- আলাউদ্দিন খাঁর মাথাটার ভাস্কর্য করে রেখে দিলেন,
আশাকরি সে ব্যাপারটা আপনাদের ব্যাখ্যা করে বুঝানোর দরকার হবেনা।)
কবিগুরু জহুরী, তাই রত্ন চিনেছিলেন ।
রত্নকে যখন রাখাই যাবেনা, অগত্যা রত্নের ছায়া রেখে দিলেন।
Imitation Gold এর মতো আরকি ।
আলাউদ্দিনকে রত্ন ক্যানো বললাম ব্যাখ্যা করছি ।
“ ওস্তাদ অালাউদ্দিন খাঁ একদিন বাজাচ্ছিলেন- রাগ সংগীত,
তিনি বাজান একাগ্রচিত্তে, চোখ বুজে.............
পৃথিবী তাঁর কাছে বিলুপ্ত।
সুরের সমুদ্রে তিনি ডুবে অাছেন।
কোনোদিকে খেয়াল নেই।
সময় কেটে চলছে.......
তারপর একসময় চোখ খুললেন।
চমকে উঠলেন !!
একটা গোখরা সাপ ফনা নামিয়ে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে...
সাপটা এতক্ষণ তাঁর বাজনা শুনছিল। ” পৃ: ২৮
এমন লোককেই রত্ন বলা মানায়।
তার বড় ভাইয়ের নাম ফকির আফতাবউদ্দিন। তার হাতেই আলাউদ্দিনের রাগ সঙ্গীতের প্রাথমিক হাতেখড়ি। আফতাবউদ্দিনকে নিয়েও একটা মজার কাহিনী আছে।
“ আফতাবউদ্দিন একদিন বাঁশী বাজাচ্ছিলেন এক রাজার দরবারে।
রাজার নাম জগদিন্দ্রনাথ।
বৃটিশ আমলের কলকাতার রাজা।
রাজার অনুরোধে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।
সেকি মোহনীয় সূর...
বাঁশীর অপূর্ব সুরের মায়াজালে একটির পর একটি পাখি
ঘরের মধ্যে আসতে লাগল উড়ে উড়ে।” পৃ:২৮।
এমন লোকের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে উপায় আছে ?
ওস্তাদ আলাউদ্দিনের জন্ম ব্রাম্মনবাড়ীয়ায় ১৮৬২ সালে, মৃত্যু ১৯৭২ সালে।
ভারতীয় উপমহাদেশের রাগ সংগীতকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করেণ তিনি।
উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ যন্ত্র-সংগীত শিল্পী।
প্রায় সকল প্রকার যন্ত্র তিনি বাজাতে পারেণ।
ইউরোপের জনগন তার বাজনা শুনে বলেছিলেন-
“ অাপনি আমাদের চোখে প্রাচ্যের বিস্ময়”। পৃ:৩১
এই মন্তব্য মোটেই অতিশয়োক্তি ছিলনা।
তিনি বৃটিশ সরকারের আমন্ত্রনে বিশ্ব ভ্রমনে বের হলেন।
ইউরোপে অবস্থানকালীন একদিনের ঘটনা।
কয়েকজন মেয়ে এসে হাজির আলাউদ্দিনের কাছে।
এরা আমেরিকান ও ফরাসী।
পেশায় শিল্পী। তাদের আবদার বাজনা শুনবে।
আলাউদ্দিন কিন্চিৎ বিরক্ত হলেন ।
অনিচ্ছা সত্বেও আলাউদ্দিন বাজাতে শুরু করলেন।
অালাউদ্দিনের ধারণা ছিল- এসব ইয়াং, ফিরিঙ্গী মেয়েরা রাগ সংগীতের কি বুঝবে...!
“ আমি অবহেলার ভাব লইয়া মুলতানি বাজাইতে আরম্ব করি।
‘বিলম্বিতের’ পাঁচ সাতখানা তান বাজাইবার পর তাঁহাদের দিকে চাহিয়া দেখি
সকলের চোখ হইতে জল পড়িতেছে।
তখনই আমার চৈতন্য হইল অামি কি অন্যায় করিতেছি,
তারপর মন দৃড় করিয়া একঘন্টা ‘মুলতানি’ শুনাইলাম।
যতক্ষণ বাজাইয়াছিলাম ততক্ষণ তাঁহাদের চোখের জল পড়া বন্ধ হয় নাই।
তারপর ‘ভিমপলাশ্রী’ ও ‘পিলু’ (এইগুলি রাগের নাম) বাজাইয়া প্রায় তিন ঘন্টা পর
বাজনা শেষ করি। তাহাদের কান্না তখনও বন্ধ হয় নাই।
বুঝিলাম তাহারাই সত্যিকার সমঝদার-সংগীতের পরম ভক্ত।
যাইবার সময় গুরুজনকে যেইভাবে ভক্তি করে সেইরুপ করিয়া বলিয়া গেল:
“আমাদের মৃতদেহে প্রাণ দান করিলেন। জীবনে কখনো ভুলিবো না।
দয়া করিয়া আর একদিন শুনাইবেন।” পৃ:২৬
আমি মিউজিক বোদ্ধা নই।
শাস্ত্রীয় সংগীতের ব্যাকরণতো অনেক পরের বিষয়।
না বুঝলেও উপভোগ করি, আপ্লুত হই।
এ বিষয়ে আর একটা বই পড়েছিলাম শচীন দেব বর্মনের জীবনীভিত্তিক লেখা :
“ সরগমের নিখাদে” নামে।
তবে এই বইটা পড়ে মিউজিক বিষয়ে আমার ধারণা বিস্তৃত হয়েছে।
মিউজিক, বাজনা যে- ধ্যানের বিষয় হতে পারে, এটা আমার কল্পনায় ছিলনা।
কোন এক মিউজিশিয়ানের লেখায় একবার এরকম একটা কথা পড়েছিলাম যে,
“ মিউজিকের কাজ হচ্ছে আত্বাকে নিয়ে। যার আত্বা স্রষ্টা ভিন্ন অন্য কোনো কিছুর সাথে লেগে আছে বাজনা সেই আত্বাকে স্রষ্টার সান্নিদ্ধে নিয়ে যায়। আর যে আত্বা ইতোমধ্যে স্রষ্টার দিকে ঝুকে আছে তাকে আরও বেশী স্রষ্টার দিকে সন্নিবেশীত করে। ”
গিটারের তারে টোকা দিলে যেরকম টং করে বেজে ওঠে
এই কথাটা আমার মাথায় সে রকম কম্পন তুলেছিল।
আলাউদ্দিনের এই বায়োগ্রাফীকাল বইটা পড়ে সেই কথারই প্রতিধ্বনি শুনলাম।
তাকে জিজ্ঞেষ করা হয়েছিল- সংগীতে আপনার বিশ্বজোড়া খ্যাতি,
সর্ব প্রকার বাদ্যযন্ত্রে সমান দখল,
আপনার বাজনা শুনলে মানুষ আপনভোলা হয়ে যায়।
এই বিস্ময়কর সাফল্যের গুড় তত্ব কি?
তিনি সবিনয়ে উত্তর দিলেন-
“ তিনি আল্লাহর ধ্যান করেণ। তাঁর সংগীত আল্লাহর ধ্যান ছাড়া আর কিছু নয়।” পৃ:৯৪
আলাউদ্দিন খাঁ জীবদ্দশায় ১৫ টির বেশী নতুন রাগ সৃষ্টি করে গেছেন।
মিউজিক কলেজ, ব্যান্ড দল ইত্যাদি তৈরী করেছেন। আর অসংখ্য ছাত্র ।
রাগ বলতে আমি যা বুঝছি তা হল- আমাদের মনের মধ্যে এক এক সময়
যে বিশেষ ধরণের ভাব ক্ষনে ক্ষনে জন্ম নেয় সেটাই রাগ।
উদাহরণ দেই। ভোরে ঘুম থেকে জাগার পরে মনের মধ্যে একটা পবিত্র পবিত্র ভাব থাকে।
গোধুলী বেলায় ছাদের উপর দাড়ালে অন্য একটা অনুভুতি হয় মনের মধ্যে।
একটা হাহাকার, হারানোর বেদনা হয়।
একান্ত কারো কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে দুইপা হেটে আসতেই যেরকম লাগে সেইরকম ।
এইযে মানব মনের বৈচিত্র, যন্ত্রবিশারদরা এগুলি প্রধানত যন্ত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন।
সেই কাজটা করতে নিদৃষ্ট কিছু নিয়ম বা ব্যাকরণ তারা অনুসরণ করেণ।
এবং সেই নিয়মগুলিকে সামষ্টিকভাবে রাগ বলেন।
হতে পারে সেটা সকালের অনুভুতি প্রকাশের নিয়ম বা প্রভাতী রাগ
হতে পারে সন্ধ্যার অনুভুতি বা সান্ধ্য রাগ ইত্যাদি ।
এবার তাহলে সিদ্ধান্তে আসা যাক।
যন্ত্রপ্রধান এই সংগীতকে উচ্চাংগ সংগীত বলে ।
যদি মনে করি, উচ্চাংগ সংগীত, সংগীতের একটা বংশের নাম।
তাহলে সেই বংশের কোন্ লোকের চরিত্র কি রকম, সেটা নিরূপন করবে রাগ।
এই এনালিসিস আমার নিজস্ব।
সংগীতজ্ঞ কেউ আমার লেখা পড়লে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে উপমহাদেশের
আরেকজন গুনির কথা মনে পড়ছে।
তার নাম এস এম সুলতান।
বাংলা তথা উপমহাদেশের চিত্রশিল্পকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন সুলতান।
অার আমাদের যন্ত্রশিল্পকে পরিচিত করেছেন অালাউদ্দিন খাঁ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দুই কিংবদন্তিকে আমাদের মাঝে
পরিচিত করেছেণ আর দুইজন মহান শিল্পী:
ঋত্তিক কুমার ঘটক এবং তারেক মাসুদ।
১৯৮২ সাল।
তারেক মাসুদ টাকা জমিয়েছেন ‘নিউ ইয়র্ক
ফিল্ম ইনস্টিটিউটে’ পড়তে যাবেন।
সেই মূহুর্তে আহমদ ছফা তাকে অনুরোধ করলেন
সুলতানকে নিয়ে কিছু করে যেতে। ছফা ইতোমধ্যে সুলতানকে নিয়ে বই লিখে ফেলেছেন ।
ব্যাস, সুলতানের পিছু নিলেন তারেক। ডকুমেন্টারী বানাবেন তাকে নিয়ে।
তখনো তারেক মাসুদ কোনো ছবিই বানননি।
সুলতানের পিছনে তারেক ঘুরলেন পাক্কা ২ বছর।
সুলতান বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ান তারেকও পিছু পিছু ছোটেন।
সুলতান কিছুটা অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেন।
যেমন মহিলাদের মত শাড়ি পড়তেন কখনো কখনো। চুল ছিল লম্বা।
বিয়ে করেণনি।
তারেকের ধান্ধা লাগল সুলতানকে নিয়ে ।
সুলতানের জীবন দর্শন বোঝার জন্যই সে
তার পিছে ২ বছর ঘুরলেন। অতপর বানালেন “ আদম সুরত”
প্রামান্যচিত্র ‘আদম সুরত’ না থাকলে সুলতানকে
চারুকলার ছাত্ররা ছাড়া কেউ চিনত কিনা সন্দেহ।
জানতেও পারতামনা যে এই সেই সুলতান,
যার ছবি পিকাসো, সালভাদর ডালির সাথে একসাথে আন্তর্জাতিক মেলায় প্রদর্শিত হয়েছে।
এই অসামান্য কাজটা করেছেন তারেক মাসুদ।
সেজন্য তাকে পাগলামি করতে হয়েছে। উচ্চশিক্ষা আর নিজের গাটের টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ঋত্তিক আর একজন, যিনি ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবন।
তাকে নিয়ে তিনি ডকুমেন্টারী বানিয়েছেন।
ডকুমেন্টারী
আর আদম সুরত পাবেন শাহবাগ ‘পাঠক সমাবেশের’ ২য় তলায়। DVD + স্মারক ১০০০ টাকা।
ঋত্বিক আর আলাউদ্দিন খাঁর মাঝে একটা মিল আছে।
এরা দুইজনই বালক বয়সে বাড়ী থেকে পালিয়েছেন।
আলাউদ্দিন খাঁ ১০ বছর বয়সে পালিয়ে চলে যান যাত্রাপালা দলে।
ঋত্বিকতো তার বালক বয়সের পালানো নিয়ে একটা সিনেমাই বানালেন -
“বাড়ী থেকে পালিয়ে” নামে।
আলাউদ্দিন খাঁ পালিয়েছিলেন কারন- পড়ালেখা তার ভাল লাগতোনা।
ভাল লাগতো বাজনা, সুর। সেই সুরের নেশায় তিনি আর একবার পালান বাসর রাতে।
নববধুকে রেখে চুপিসারে কেটে পড়েন।
বছরের পর বছর নিখোঁজ।
এই সময়ে আলাউদ্দিন সারা কলকাতা চষে বেড়ান গুরুর খোঁজে,
যার কাছে সুর,বাজনা শেখা যায়।
সংগীতের জন্য জীবন নিয়ে খেলেছেন তিনি।
সংগীত শিখতে পারবেননা্ ভেবে অভিমান করে
আত্বহত্যা করার উদ্দেশ্যে গাড়ির নিচে ঝাপ দিয়েছেন।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।
সংগীত যার কাছে আত্বার সাধনা, তার পক্ষেই এহেন পাগলামী সাজে।
জেনেটিক্যালী তিনি সংগীত সাধক।
তাদের পরিবার, বংশের সবাই সংগীতজ্ঞ ।
তার বাবা, ভাইয়েরা, চাচারা, তার ছেলে-পুত্র সবাই শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী।
বিখ্যাত সেতারবাদক পন্ডিত রবীশংকর তার ছাত্র এবং মেয়ে-জামাই।
মেয়েও তার ছাত্র এবং সে রবীশংকরের চেয়েও ভাল ছাত্র।
আলাউদ্দিন তাকে বললেন- “মা আমি জানি তুই রবীর থেকে ভাল বাজাস।
কিন্তু তোকে আমি অনুমতি দিলাম না।
কারণ তাহলে রবী মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবে।”
বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ বংশী বাদক, সংগীতজ্ঞ।
ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ আরেক ভাই।
বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ অালী আকবর খাঁ তার পুত্র।
বিখ্যাত সরোদিয়া ওস্তাদ বাহাদুর খাঁ ভ্রাতুস্পুত্র।
সংগীতপাগল এই লোক ধর্মপাগলও ছিলেন।
হজ্জ করেছেন। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস জিয়ারত করেছেন আবেগ নিয়ে।
অবশ্য মিউজিক তার মাথায় ছিল তখনো ।
দেখেছেন বায়তুল মোকাদ্দাসে কিভাবে লোকজন গান বাজনা করে।
তাদের সংগীত আধ্যাত্বিকতার সোপান ।
এক চিঠিতে লিখেছেন- দেশে থাকতে মৌলভীদের মুখে শুনতাম
আরবের লোকেরা গান বাজনা করেনা। সব মিথ্যা কথা।
এরা সংগীতপ্রিয়। এদের রাগ রাগিনির সাথে ভারতীয় রাগ রাগিনীর মিল আছে।
মিউজিকের এই সাতকাহন শেষ করি।
কেউ কেউ অনুযোগ করেছিলেন অামি সবসময় ছোট ছোট লিখি,
সেকারণে একটু বিতং করে লিখলাম।
“ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও তার পত্রাবলী ” শিরোনামের বইটা
প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ক্লাসে পাঠ্য এটা।
এই ব্যাপারটা আমার কাছে চরম আয়রনিক লেগেছে।
যে লোক পাঠশালার পরে আর পড়ালেখা করেণনি।
তার জীবনকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য..!
অসংখ্য উপাধি আর পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
ইংরেজ সরকার উপাধি দিয়েছে- “খাঁ সাহেব”।
দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট দিয়েছে।
এই ডক্টর উপাধী নিয়ে একটা মজাদার বিভ্রাট আছে।
সেটা বলেই লেখাটার ইতি টানি।
আলাউদ্দিন খাঁ জাহাজে করে মক্কা যাচ্ছেন হজ্জ করতে।
সাথে কিন্ত তার সেতারটা আছে।
বেশ আকর্ষনীয় বাকসে করে সেটা সাথে নিয়েছেন।
বাকসের উপরে নিজের নাম ঠিকানা লেখা।
নামের জায়গায় লেখা- Dr. Alauddin Khan.
কয়েকদিন যেতে না যেতেই জাহাজের যাত্রীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ল
সমানে বমি করছে অসুস্থরা।
এমন সময় তাদের মনে পড়ল Dr. Alauddin Khan এর কথা।
সবাই গিয়ে ধরল খাঁ সাহেব ওষুধ দেন, মরে গেলাম।
খাঁ সাহেবের তো আক্কেল গুড়ুম। অামি ওষূধ পাবো কোথা...?
কিছুতেই তাদের বোঝানো যাচ্ছেনা যে তিনি ডাক্তার না।
তাদের এক কথা ওসব বলে পার পাবেননা।
আমরা আপনার বাকসের উপর নাম লেখা দেখেছি।
নিরুপায় খাঁ সাহেব নিজের জন্য আনা
বমির ঔষধ দিয়ে নিস্তার পান।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১২