৮০'র শেষ দিকে গর্বাচেভ তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতায় আসে। ক্রুশভ এর পর ব্রেজনেভ ক্ষমতায় এসে সোভিয়েত সমাজকে অনেকটাই সহজ করে দেয়। কিন্তু গর্বাচেভ এসে ভেতরের সবকিছু টেনে হিচড়ে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। সেই সময় থেকে সোভিয়েতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাবসা করার অনুমতি পায় তবে সেটা ব্যাক্তি হিসাবে না। কয়েকজনকে নিয়ে কোঅপারেটিভ গড়লেই তবে ট্রেড লাইসেন্স পেতো, ব্যাংক একাউন্ট করতে পারতো। এ ব্যাবসা গুলো বেশীর ভাগই ছিলো নিজ দেশের ভিতর, কিছু প্রভাবশালী কোঅপারেটিভ ছাড়া কেউ বাইরের দেশের সাথে ব্যাবসা করতে পারতো না। বড় কোঅপারেটিভ গুলো মুলত: বার্টার পদ্ধতিতে কাজ করতো। একটা ট্রানজেকশানের কথা বলি। নিতান্তই পানির দামে ইউক্রেনের এক ইস্পাত কারখানার বর্জ্য বা স্ক্র্যপ কিনেছিলো এক নব্য ব্যাবসায়ী যে আগে কাজ করতো এক সরকারি কারখানার ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের কারখানা গুলো স্ক্র্যপ রিপ্রসেসিং করার মতন আধুনিক ছিলো না। নিতান্তই বর্জ্য হিসেবে টাল করে রাখা ছাড়া করার কিছু ছিল না। সে স্ক্র্যপ গুলো বিক্রী করেছিলো ইংল্যান্ডে। বার্টার হিসাবে এনেছিলো কম্পিউটার। আর ইতিমধ্যে পম্চিমা দেশ গুলো সোভিয়েত দেশে কম্পিউটার আমদানীর নিষেধ্ধাগ্গা তুলে নিয়েছিলো। এক কনসাইনমেন্টে সে আনলো ১০,০০০ কম্পিউটার। এ এক যাত্রাতেই তার লাভ হয়েছিলো কয়েক মিলিয়ন ডলার। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না। এমন ঘটনা হরদম হয়েছে ।
সে সময় পুরোদেশ যেন কম্পিউটারের ক্ষুধায় কাতর হয়ে থাকতো। সেই সময় গুলোতে এ দেশে কম্পিউটার ঢুকেছে বন্যার পানির মতন। বড় ব্যাবসায়ীরা বার্টারে জিনিস আনলেও শত শত ছোট ব্যাবসায়ীদের জন্য পণ্য এনে দিত সেদেশে যে সব বিদেশী থাকতো তারা। সোভিয়েতদের বিদেশ ভ্রমণাধীকার ছিল সীমিত আর এই বিদেশীদের বেশীর ভাগই ছিল ছাত্র। পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নে এমন কোন বড় শহর ছিলোনা যেখানে বিদেশী ছাত্র পড়াশুনা করত না। ১৩০ 'র বেশী দেশের ছেলে মেয়েরা পড়তো ওখানে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা খুব বেশী ছিলো না। লেখাপড়ায় বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রী দের সুনাম ছিলো পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নে।
তখনকার নিয়ম অনুযায়ী একজন ছাত্র শুধু একটা কম্পিউটারই সে দেশে নিয়ে আসতে পারতো। ছাত্ররা মস্কো থেকে সিংগাপুর যেতো শুধু একটা কম্পিউটার আনতে। এ্যরোফ্লটের টিকিট কিনতো রুবলে, মাত্র ১৫০ ডলার ভাংগিয়ে যে রুবল পাওয়া যেতো তা দিয়ে এই ফ্লাইটের প্রথম শ্রেণীর টিকিট কেনা যেতো। কম্পিউটার আনার সাথে সাথেই সেই ব্যাবসায়ীরা নগদ ডলারে কিংবা রুবলে তা কিনে নিতো। এই আমদানী কর্ম করে সব খরচ বাদ দিয়ে সেই ছাত্র যে লাভ করতো তা এমনই বেশী ছিলো যে তা দিয়ে সে দিব্যি তার এক বছরের ভরন পোষন চালিয়ে নিতে পারতো।
পুরো এই বাণিজ্য প্রক্রিয়াটা ছিল নিতান্তই Straight forward. যে কোন দেশের ছেলে মেয়েদেরই এটা করতে পারার কথা। কিন্তু এর প্রায় সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন ছিলো বাংলাদেশের ছেলেদের। এ্যরোফ্লটের মস্কো থেকে সিংগাপুরের ফ্লাইট ছিলো প্রতি সপ্তাহে দুটো। এই ফ্লাইট গুলোর টিকিট মূলত: নিয়ন্ত্রন করতো বাংলাদেশের ছেলেরা। অন্য দেশের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের ছেলেদের এই নেটওয়র্কের ভেতরে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি।
এই প্রক্রিয়ার রেশ ধরেই পরবর্তিকালের "মুক্ত" রাশায় অনেক বাংলাদেশী মিলিনিয়ারের জন্ম হয়েছিলো।
ছাত্র অবস্থায় তাদেরকে যা করতে দেখেছি তা কতটা ভালো কিংবা কতটা মন্দ জানিনা।
তবে ১৩০ টিরও বেশী দেশের ছেলেমেয়েদের মাঝে বাংলাদেশীদের এই ম্যানেজমেন্ট স্কিল আমাকে মুগ্ধ করেছে।