এ ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে বিএনপির জন্য অংশ নেয়া কঠিন। খালেদা জিয়া যখন অন্তরীন তখন সংস্কারবাদী হিসেবে যারা নিজেদের প্রকাশিত করে ফেলেছিলো তাদের একটা বড় অংশই ছিলো প্রাক্তন সাংসদ। আর এটাও ভালো করে জানা যে প্রায় সব এলাকাতেই নির্বাচিত সাংসদদের বেকায়দায় ফেলার জন্য মননোয়ন বণ্চিত স্বদলীয় এক বা একাধিক শক্তিশালী গ্র“প সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এটা শুধু বিএনপি না, আলীগের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। মাইনাস টু ফর্মুলা ব্যার্থ হবার পর সংস্কারবাদীরা স্বদলে ফিরে গেলেও নিজ নিজ এলাকায় প্রবল বাধার মুখে পড়ে যায়। দলের ভিতরের বিরুদ্ধ গ্রুপ গুলো এ সূযোগ কে কাজে লাগিয়ে সংস্কারবাদীদের কোনঠাসা করে ফেলে। তার উপর জরুরী অবস্থার খড়গাঘাতে সদ্য ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া বিএনপির কর্মি নেতারা ছিলো দিশেহারা। খালেদা জিয়া খুব ভালো ভাবেই সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন। তিনি এটাও বোঝেন সংষ্কারবাদীতার অপরাধে এলাকাগুলোর নেতৃত্ব থেকে প্রাক্তন সাংসদদের চট করে বাদ দিয়ে ”কম যোগ্য” লয়ালিস্টদের দিয়ে নির্বাচন করালে তা ভরাডুবির কারণ হতে পারে।
এই ক্ষত সমস্যার উপায় কি? এর সর্বোত্তম সমাধান হোল "সময়"।
যদি ৩/৪ মাস সময় হাতে পাওয়া যায় তবে দল গুছানো ছাড়াও সাজাপ্রাপ্ত ৫০’র অধিক প্রায় নিশ্চিত জেতা হেভিওয়েট নেতাদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারার একটা সূযোগ সৃস্টি করিয়ে নিতে পারেন।
তাই বিএনপির প্রথম চাওয়াই হোল সময়।
এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে বিএনপির এক্ষুনি নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ হোল নিশ্চিত পরাজয়, মানে আলীগের ক্ষমতায় যাওয়া, মানে "বিএনপির ধংসের জন্য সৃষ্ট ১/১১" এর মতন আরেকটা কিছুকে ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় তুলে দেয়া। বিএনপি দৃঢ় ভাবেই মনে করে এবার যদি আলীগ ক্ষমতায় আসে তবে এই আলীগ ৯৬’র সেই ম্যানেজেবল আলীগ হবে না। তাই কোন অবস্থাতেই এ নির্বাচনে না যাওয়াটাই দলের জন্য মংগল। যদি এর পরও নির্বাচন হয়েই যায় তবে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ”সর্ববৃহৎ” দল বিএনপি বিহীন নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য দাবী করে পরবর্তী সরকারকে বাধ্য করানো মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাবস্থা করতে। এর জন্য কয়েক বছর নষ্ট হয়ে যাবে বিএনপির জন্য। এতেও যে তার কিছু ক্ষতি হবে না তা নয়। তবে সেই ক্ষতি এই আত্মহত্যার নির্বাচনে যাবার চাইতে ঢেড় কম।
আর এদিকে আলীগ যখন একই সময়ে দুটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে, তখন বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে উপজিলা নির্বাচনে অংশ নিবে । বিএনপি সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে উপজিলা নির্বাচনে, যেন তার দলের নেতারা ক্ষমতার আরেক কেন্দ্র - উপজিলা পরিষদ গুলোতে জিতে আসে। ক্ষমতার এই নতুন কেন্দ্র মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচন আদায় করতে ও তাতে জয়লাভের ভিত্তি তৈরী করবে।
জামাত এই অবস্থায় কি কৌশল নিবে? একদিকে তারা এক্ষুনির এ নির্বাচনে যাবার জন্য মুখিয়ে আছে। অন্যদিকে বিএনপিকে অসন্তুষ্ট করে বন্ধুহীন হবার রিস্কে যাবে কিনা দ্বিধায় আছে। যদি তারপরও জামাত নির্বাচনে যায় সেখানে তাদের বিশ্বাস বিএনপি ছাড়া সংসদে জামাতই বসতে যাচ্ছে সন্মানীয় বিরোধী দলের আসনে। এধরনের সুবর্ণ সূযোগ বারবার আসে না। তারা এই সূযোগ বোধ হয় হাত ছাড়া করবে না।
বিরোধী দলের আসনে জামাত - আলীগ সহ অনেকের জন্যই এটা বিব্রতকর। এই বিব্রতকর বাস্তবতা আলীগ কিভাবে নিবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩২