অনেকদিন আগের কথা। শাহবাগে যাচ্ছিলাম রিক্সায় করে বাটা মোর থেকে। রিক্সা ভাড়া ঠিক করেছিলাম ৫ টাকা। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি ভাংতি নেই। পরলাম সমস্যায়! খুব বেশি একটা বিপদে পরেছিলাম, ঠিক তাও না। কারন দশ টাকার নোট ছিল। ৫ টাকার লস খেতে হবে, কিন্তু ডাবল দিতে তো আসলে কারুরই ভাল লাগার কথা না। তাই নিজের উপর একটু বিরক্তই লাগছিল, যে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করে উঠিনি কেন যে, ভাংতি আছে কি না? যাইহোক, রিক্সাওয়ালা তো খুশিই, ডাবল পেতে কারও খারাপ লাগেনা। আশেপাশে এমন কোনও দোকানও দেখছিলাম না যেখান থেকে ভাংগাতে পারি। এমন সময় সেই শাহবাগের ভীরের মধ্যে থেকে একজন ভদ্রলোক বের হয়ে আসলেন। আমার সামনে এসে ২ টা ৫ টাকার কয়েন বের করে বললেন, "ভাই, আমিও কদিন আগে আপনার মত সিচুয়েশন এ পরেছিলাম। ওদিন কেউ আমাকে ভাংতি দেয়নাই। তাই আপনার সমস্যাটা আমি বুঝি।"
উনি কথাগুলো বলছিলেন আর আমি হা করে শুনছিলাম। উনার কাছে থেকে ভাংতি করে রিক্সাওয়ালাকে বিদায় করলাম। ধন্যবাদ বলার সময়টুকু পাইনি। ব্যস্ত সেই ভীরে উনি হারিয়ে গেলেন। আমি সম্মোহনীর মত কিছুক্ষন দারিয়ে থেকে আমার কাজে চলে গেলাম।
যান্ত্রিক ও স্বার্থপর ঢাকা শহরে আজকের এই দিনে অচেনা কারও কাছে নূন্যতম সহযোগিতা পাওয়াটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল। হয়তবা আরও অনেকের কাছেও। হ্যা, ছোট সহযোগিতা, কিন্তু এর মধ্যে তো আরেকজনের প্রতি চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ। আমি নিজেও তো অপরিচিত কাররোও জন্য সবসময় এভাবে চিন্তা করতে পারিনা। স্বার্থপরতা সবাইকেই গ্রাস করে, একটু হলেও। যাই হোক, ওই ভদ্রলোকের জন্য আসলে ধন্যবাদ উপযুক্ত মনে করছিনা, দোওয়া করছি মন থেকে, যাতে উনি এরকম চিন্তা জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে করতে পারেন। আমরা সবাই যদি এমনভাবে চলতে পারতাম, তাহলে হয়ত পৃথিবীটা অন্যরকম হত।
অন্যের জন্য চিন্তা করে এমন মানুষ অনেক আছে বলেই পৃথিবীটা আজও টিকে আছে, আর থাকবেও, কারন অমন মানুষেরা থাকবেন বলেই।