আমার ফেসবুক পেজে সেদিন
একটা লিংক পেলাম ।২৭
শে এপ্রিল
নারীমহাসবেশের ডাক
দেয়া হয়েছে ।সেই লিংকের সূত্র
ধরে গিয়ে দেখলাম
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা
দাবীর ৪ নম্বর দফার
প্রতিবাদে তাদের এই সমাবেশ ।
এর আগে ১৩ দফা পড়িনি ,প্রয়োজন
মনে করিনি ।কারণ
ইজমায়ে উম্মতকে সমর্থন
জানানোর জন্য নিরীক্ষণ দরকার
হয় না ।
তবে এখন পড়ে দেখার কৌতুহল
হলো ।
কি এমন আছে হেফাজতের দাবীতে !
যে সমাবেশ ডাকতে হলো ।
আসুন দেখি কি আছে হেফাজতের ৪
নং দাবীতে ।
"৪. দেশের সার্বিক উন্নয়নের
জন্য
নারীজাতির সার্বিক উন্নতির
বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের
নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, কর্মস্থল,
সম্মানজনক
জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের
ন্যায্য পারিশ্রমিকের
ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-
বাইরে,
কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-
আব্রু,
যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার
সহায়ক হিসেবে পোশাক ও
বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ
এবং হিজাব
পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ
সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে হবে; এবং একই
লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব
ধরনের
বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার,
প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন
মেলামেশা, নারী নির্যাতন, যৌন
হয়রানি, নারীর
বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার
সহিংসতা,
যৌতুক প্রথাসহ যাবতীয়
নারী নিবর্তনমূলক
ব্যবস্থা কঠোর
হাতে দমন করতে হবে।"
হেফাজত তাদের দাবীর দীর্ঘ
ব্যাখ্যার শেষাংশে বলেছে -
ইসলাম নারীর মর্যাদা,
নিরাপত্তা ও যৌন
হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার জন্য
হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক
করেছে এবং পুরুষদেরও বৈধ
সম্পর্কের বাইরে নারীদের
সঙ্গে দৃষ্টি অবনত ও নিরাপদ
দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল
করতে বলে চমত্কার ভারসাম্য
রক্ষা করেছে। কাজেই হিজাব
পালন করে অথবা যৌন
উদ্দীপনা তৈরি করে না—এমন
শোভনীয় পোশাক পরে নারীদের
নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে কাজ
করতে বা ঘর থেকে বের
হতে তো কোনো বাধা নেই। ইসলাম
নারীর নিরাপত্তার
দিকটা কঠোরভাবে দেখে। কেবল
সুযোগসন্ধানীরাই
এটাকে নারী অবদমন
বলে অপপ্রচার চালায়। আমাদের
কথা পরিষ্কার যে, হিজাব
বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের
নিরাপদ পথ চলাচল, শিক্ষার্জন
ও
কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা
নেই। উদাহরণস্বরূপ, নারীদের
নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য
আলাদা বালিকা বিদ্যালয়
বা মহিলা কলেজ
থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠার
দাবিতে আপত্তি তোলার
যুক্তি থাকতে পারে না।
হেফাজতের এই দাবীর
সাথে কোনো বিবেকবান মানুষের
বিরোধ থাকতে পারেনা ।অন্তত
বাংলাদেশী কোনো নারীর ।তবুও
কেন তাদের এই দহন ?
খুঁজে পেতে এই সমাবেশের
উদ্যেক্তাদের এক জনার
ব্যাখ্যা পেলাম ।দেখুন তিনি
কি বলেছেন ।হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩
দফা দাবির চার নম্বর পয়েন্টের
ব্যাখ্যায় (নারী-পুরুষের সকল
প্রকার বেহায়াপনা, অনাচার,
ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও
অশালীন মেলামেশা, নারী-
নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর
বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার
সহিংসতা,
যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয়
নারী নিবর্তনমূলক
ব্যবস্থা কঠোর
হাতে দমন করতে হবে)
.....ব্যাখ্যার
শেষাংশে দাবি করেছেন
"নারীদের নিরাপত্তা ও
সুরক্ষার
জন্য আলাদা বালিকা বিদ্যালয়
বা মহিলা কলেজ
থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠার
দাবিতে আপত্তি তোলার
যুক্তি থাকতে পারে না।".........কি
চমৎকার দেখা গেলো!!
নারীদের জন্য
আলাদা কর্মস্থান"......লক্ষ
করুন
আলাদা কর্মস্থান! এর
মানে কি কর্মক্ষেত্রে 'নারী-
পুরুষের অবাধ বিচরন(!!))
রুখতে আলাদা সচিবালয়,
আলাদা হাসপাতাল, আলাদা পুলিশ
স্টেশন ইত্যাদি নির্মান
করতে হবে?
যে সব মহিলা ইট ভেঙ্গে,
মাটি কেটে, গৃহকর্মীর কাজ
করে পরিবারের ভরন পোষন করছে,
গ্রামাঞ্চলের যে নারী পুরুষ
এক
সাথে ক্ষেতে খামারে কাজ
করছে জীবিকার তাড়নায়....এদের
কি হবে?
নারী-পুরষের
আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়.
করতে হবে!
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক
কি শুধু নারীরাই হবে?
তারা আরও দাবী করেছেন
নারীদের "সম্মানজনক জীবিকা"!
'সন্মানজনক পেশা' এর অর্থ কি?
কোন পেশা নারী জন্য সন্মানজনক
এবং কোন পেশা সন্মানজনক নয়
সেটা কে নির্ধারন করবে,
হেফাজতে ইসলাম নাকি বাংলাদেশ
সরকার নাকি নারী নিজেই।
সম্প্রতি ইরান তার দেশের
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বেশ
কিছু
বিষয়ে নারী শিক্ষার অধিকার
বন্ধ করে দিয়েছে, নারীদের
জন্য
নিষিদ্ধঘোষিত বিষয়ের
মধ্যে রয়েছে প্রকৌশলবিদ্যা,
পরমাণু পদার্থবিদ্যা,
কম্পিউটারবিজ্ঞান থেকে শুরু
করে ইংরেজি সাহিত্য,
প্রত্নতত্ত্ব,
ব্যবসায়
শিক্ষা প্রভৃতি.....হেফ
াজতে ইসলাম কি সেই দিকেই
যেতে চাইছে?
হেফাজতে ইসলাম
দাবি করছে সিওডি সনদ বাতিলের।
অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজ
জীবনের
প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর
প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য
দূরীকরণের লক্ষ্যে ডিসেম্বর,
১৯৭৯ সালে জাতিসংঘে নারীর
প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য
বিলোপ
সনদ (সিডও) গৃহীত হয়েছিল।
নারীর জন্য আন্তর্জাতিক 'বিল
অব
রাইটস' বলে চিহ্নিত এ দলিল
নারী অধিকার সংরক্ষণের
একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড
বলে বিবেচিত (যদিও
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই
সনদের
প্রতিটা ধারা কতটা কার্যকর
হচ্ছে সেটাও প্রশ্নের
দাবি রাখে।)
কি উদ্দেশ্যে তারা এই
দাবি করছে,
সেটা কি নারীকে দমিয়ে রাখার
চেষ্টা নয়?
*
এই দাবীর সকল
কল্যাণমুলকধারা গুলো সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি মোটামোটি ৩টি
বিষয় তুলে এনেছেন ।
১.আলাদা কর্মস্হল
২.সম্মাজনক জিবীকা
৩.সিডও সনদ ।
প্রথমে সিডও সনদ দিয়ে শুরু করি ।
জাতিসংঘ প্রণীত এই সিডও সনদ
তার জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্কিত ।
অনেক মুসলিম ও
খৃষ্টানদেশ এমনকি ভ্যাটিকান ও এই
সিডও সনদে সাক্ষর করতে নারাজ ।
অনেক দেশ
শর্তযুক্ত সাক্ষর করেছে ।
কারণ সুস্হ বোধ বিবেক ও
নৈতিকতা সম্পন্ন কোনো দেশের
পক্ষে সিডও সনদে র
সবগুলো ধারা মেনে নেয়া সম্ভব নয়
।এতে ছিন্ন ও শিথিল
হয়ে যাবে পারিবারিক
বন্ধন ,বৈধ হবে গর্ভপাত ও
সমকামিতার মত কুরুচিকর জঘন্য
বিষয়গুলি
।নারীবাদীরা কি তাই চান ?
আলাদা কর্মক্ষেত্র ও সম্মানজনক
পেশা সম্পর্কে হেফাজতের বক্তব্য
সুস্পস্ট ।"
আমাদের
কথা পরিষ্কার যে, হিজাব
বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের
নিরাপদ পথ চলাচল, শিক্ষার্জন
ও
কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা
নেই।"অর্থাত্ নারী তার
পছন্দানুসারে যেকোনো কাজ
করতে পারবেন ।এরপর তারা
উদাহরণ স্বরূপ
আলাদা কর্মক্ষেত্রের প্রসংগ
টেনেছেন ।
মানে হলো তারা শালীনভাবে যে কোনো কাজ
করতেই
পারে তবে আলাদা কর্মক্ষেত্র
হলে ভালো হয় ।
তারা এটাকে অপব্যাখ্যা করে জগাখিচুড়ি করে ফেলেছেন
।আমি
তাদের
কাছে জানতে চাই ,সেনাবাহিনী ,পুলিশ ,কিংবা খেলায়
কেন নারী ডিভিশন
আলাদা করা হয় ?কেন ছাত্রীদের
জন্য আলাদা হলে আবাসিক বন্দোবস্ত
করা হয় ?
তারা কেন যোগ্যতার দৌড়ে একই
ডিভিশনে কিংবা একই টিমে অংশ
নেন না ?কারণ
সৃষ্টিগত ভাবেই পুরুষ কঠোর ও
কঠিন ,নারী কোমল ও নাযুক ।
তাছাড়া আপনারা যে সবসময়
নারীবান্ধব পরিবেশের
দাবী করে আসেন তার
ব্যাখ্যা কি ?
হেফাজত কিন্তু সেই নারী বান্ধব
পরিবেশেরই দাবী করেছে ।
তবে আপনারা যখন প্রগতির
মোড়কে কোনো দাবী করেন তখন
সেটা অধিকার আদায়ের
আন্দোলন আর আমরা সেই একই
দাবী ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
থেকে করলে নির্যাতন হয়ে
যায় !
তিনি বলেছেন নারীর সম্মানজনক
পেশা নারীই নির্ধারণ করবে ।
অবশ্যই ।কিন্তু
যারা বাধ্য হয়ে নারীত্বের জন্য
অবমাননাকর পেশায় জড়িত তাদের
কি হবে ?
যে নারীটি পেটের দায়ে পুরুষের
সাথে যুদ্ধ
করে মাঠে ঘাটে দিনমজুরী করে
বেড়ায় আর দিন শেষে পুরুষের
চেয়ে কম
মজুরী পেয়ে ঘরে ফেরে ,তার জন্য
নায্যমজুরীতে বিশেষ
সুবিধা সম্পন্ন নারীবান্ধব
পরিবেশে আলাদা কর্মক্ষেত্র
(যেমনঃ হস্তশিল্প )
তৈরিতে নারীত্বের
কতখানি অসম্মান হয় !শিক্ষিত
নারীদের
সাধারন চাকরি হিসেবে দেশের
প্রাইমারী স্কুল,গার্লস স্কুল ও
কলেজ গুলোতে
শতভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ
দিয়ে নারীদের জন্য সুবিধাজনক
পরিবেশ তৈরিতে
সমস্যা কোথায় !
আমি বুঝিনা ,সমাজের
পাঁকে চক্রে পড়ে যে মেয়েটি আজ
দেহ বেচে
খায় ,পতিতা হয়ে আঁধারে ডুবে রয় ,তাকে
যৌন কর্মী আখ্যা দেয়াটা বেশী
সম্মানের নাকি তাকে আঁধার
থেকে তুলে এনে আলোর ঝর্ণায় স্নাত
করিয়ে কোনো
বৈধ পেশায় নিয়োজিত
করাটা সম্মানের ।
আসল কথা হলো তারা নারীর প্রকৃত
উন্নয়ণ চায়না ,চায় নারীকে ভোগ্য
পণ্য বানাতে ।
হেফাজতে ইসলাম নতুন
কোনো কথা কথা বলেনি ,পুরনো কথাগুলোকেই
নতুন করে তুলে ধরেছেন ।
সত্য সমাগত ,মিথ্যা বিতাড়িত ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪