বয়স তখন ১১ থেকে ১২ এর
মাঝামাঝি ।কোনো এক সকালে আব্বু
পড়িয়ে দিলেন বোরকা ।
একটু লজ্জা ,একটু ভয় ,একটু বিব্রত
ভাব আর অনেক ভালোলাগা ।বড়
হয়ে গেছি এমন
একটা অনুভব ।সেই থেকে আজ পর্যন্ত
প্রায় একযুগ ধরে বোরকা আমার
সংগী ।পর্দা
আমার গৌরব ও অহংকার ।আর এ
গৌরব
আমাকে আমার স্রষ্টা দান করেছেন
।
প্রগতিশীলদের ভাষায়
অতিরক্ষণশীল
কিংবা গোড়া ধার্মিক
আগাগোড়া আলেম পরিবারে
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ।
আমাদের ছেলেরা এমনিতেই
বুঝে যায় ১২বছর
হয়ে গেছে ,চাচী -
মামী কিংবা "তো"
বোনদের সামনে যাওয়া যাবেনা ।
তেমনি করে মেয়েরাও কিতাব
ছাড়াই "১৪ জনকে"
চিনে ফেলে ।
এ আল্লাহর এক
বড়ো নেয়ামত ,বড়ো অনুগ্রহ ।
আমাদের জাঁদরেল
মুহাদ্দিস ,মুহতামিম
কিংবা পীরসাহেবগণ তাঁদের পদ
পদবী
ঘরের বাইরে রেখে ঘরে আসেন -
একজন দায়িত্বশীল
স্বামী .স্নেহপরায়ণ পিতা
,কর্তব্যপালনকারী ভাই
কিংবা অনুগত সন্তান হয়ে ।ঘরের
কাজকে তারা নিজের কাজ
মনে করেন ।
এ ছবি শুধু আমার পরিবারের
নয় ,সারা দেশে লাখো আলেম
পরিবারের এই একই ছবি ।
হয়ত প্রাচুর্য নেই তবে প্রাণ
আছে ।
দেশের শীর্ষ ইসলামী প্রকাশনীর
মধ্যে একটির
কোটিপতি মালিককে নিয়মিত ঘর
ঝাড়ু দিতে দেখে ,একজন বিখ্যাত
পীরকে ঘরের
মশারী খাটাতে দেখে অবাক হইনি
,কারণ এটাই তো আলেমের শান ।
মেয়েদেরকে তারা যত কম
ঝামেলা আর যত বেশি
স্বস্তি দিতে পারে তার কোশেশ
করে ।আমার
বাবা মোছা থেকে মাছকাটা,কাপড়
ধোয়া
সহ ছোট বড় সব
কাজে হাসিমুখে মাকে সাহায্য
করেন ।আমার বাচ্চাদের বাবাও ।
এমনই সব সুখের
প্রতিচ্ছবি এদেশের
আলেমদের ঘরে ঘরে ।
তারপরো এদেশের আলেম সমাজ
নারি নির্যানকারী ,নারীর
ক্ষমতা বিরোধী ,আলেমগণ
নারীকে ঘরের বাইরে বের
হতে দেন না
বোরকায় আবদ্ধ
করে রাখেন ,গোড়া .ধর্মান্ধ ,মৌলব
আমি বুঝিনা "তারা"
আসলে কি বলতে চান ?
আলেম সমাজ যৌতুক নেন না ,দেন
না এটা তাদের অপরাধ ?
তারা নযর হেফাজত
করেন ,বেগানা নারীদের
সাথে ঢলাঢলি করেন না ,স্ত্রী ই
তার
একমাত্র প্রেয়সী ।
সেটা কি নারী নির্যাতন ?
স্ত্রীকে মাকে বোনকে এই অসুস্হ
সমাজে বাইরে না নামতে দিয়ে ,হা
পুরুষের সাথে রোজগারের যুদ্ধে
করে রোজগার
করতে না পাঠিয়ে ,নিজের মাথার
ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত পানি করে
হালাল রিযিক তুলে দেন
পরিবারের
মুখে
এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় অপরাধ !
যে সকল নারী বাধ্য হয়ে রোজগার
করতে বাইরে বের হন তাদের জন্য
আলাদা
কর্মক্ষেত্র চাওয়াটা নারীর
ক্ষমতায়নের বিরূদ্ধে যুদ্ধ !
এই যে প্রতিবছর
সারা বিশ্বে খেলার আসর
গুলো অনুষ্ঠিত হয় -অলিম্পিক
,ক্রিকেট ,ফুটবল টেনিস
এতে মেয়েদের
ইভেন্টগুলি আলাদা হয় কেন ?কেন
সমান
যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী পুরুষ
একটিমে নেয়া হয়না ?
কারণ নারীর মানসিক ও শারিরীক
গঠনে পুরুষের সাথে অনেক ফারাক ।
সেই কমজোর ও নাযুক বদনের
নারীকে পুরুষের সাথে খেলার
টিমে নেয়া হয়না অথচ
সমান পরিশ্রম করে রোজগার
করতে বাধ্য
করা জুলুম ,এটা আলেমরা বললেই
নারী
বিদ্বেষী হয়ে যায ।
পুরুষের কুনযর থেকে বাঁচার জন্য
মুসলিম নারী হিযাব ও
নিকাবে শরীর ও মুখ
ঢাকলে উদ্ভট ও কিম্ভুত কিমাকার
বলে উপহাস করা হয় ,তুষার পাত
থেকে রক্ষা
পাওয়ার জন্য ওভার কোট ও
মাঙ্কি ক্যাপ
পরলে তো তা নিয়ে কোনো আলোচনা হ
!অথচ হিযাব নেকাব
থেকে ওভারকোট ক্যাপে উদ্ভট
দেখা যায় !
তেমনি করে বাইক চালকের
হেলমেটে সমস্যা নেই ,ধুলাবালি থ
জন্য
মাস্কে সমস্যা নেই ,নেকাবে মুখ
ঢাকলে এলার্জি আছে ।নেকাবে চোখ
ঢাকলে
অস্বস্তি আর রোদচশমায়
ঢাকলে ফ্যাশান !
ডাক্তারের গ্লাভসকে কেউ
ঠাট্টা করেনা তবে হাত মোজায়
ভুত !
বুঝতে পারিনা ,জাগতিক এই
দেহটাকে রোদ ,শীত ,ধুলো ,জীবাণু
থেকে বাঁচাবার
জন্য এইসব প্রশংনীয়
হলে পরজগতে এই দেহটাকে আগুনের
হাত থেকে বাঁচাতে
পর্দার প্রতি তাদের এত
আপত্তি কেন ?তাছাড়া এ জগতেও
তো এতে নারী মান
সম্মান ইজ্জত আব্রু ও ঈমান
হেফাজতে থাকে !
হিযাব তথা পর্দা যখন এই অসুস্হ
সমাজকে অনেকাংশে রক্ষা করতে পা
ধর্ষণ ওব্যাভিচারের মত কুত্সিত ও
জঘন্য সব অপরাধ
থেকে মুক্তি দিতে পারে
,তবু যখন প্রগতিশীলগণ
হিযাবে আঁতকে ওঠেন তখন ভাবতেই
পারি সমাজে এই
অসুস্হ্তা ও অস্হিরতার জন্য তারাই
দায়ী ।
আসলে নারীবাদ ও নারীর
ক্ষমতায়নের নামে কিছু মুখস্ত
বুলি -ধর্মান্ধতা
,মৌলবাদ ,ধর্মীয় গোড়ামী -
ঝেড়ে তাদের উদ্দেশ্য
নারীকে পণ্য
তথা ভোগ্যপণ্য
করে তোলা ।
বর্তমান প্রচার মাধ্যমগুলোতে চোখ
রাখলেই এর প্রমাণ মিলে অহরহ ।
সমস্ত পণ্যের বিজ্ঞাপণের মূল
উপজীব্য বিষয় অর্ধোলঙ্গ
নারীদেহ !
রাস্তাঘাটে স্কুল কলেজে মেয়েদের
রুচিহীন উদ্ভট পোশাক
দেখলে তাদের মানসিক
সুস্হতা নিয়ে সন্দেহ জাগে ।
এমন করে দিনরাত
নারী স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের
নামে নারীকে নানাভাবে ভোগ ও
উপভোগ করে চলেছেন ,
নারীর প্রকৃত মুক্তিদাতা ইসলাম
ধর্ম তাদের কাছে বিষের মত
মনে হবেই
।নারীকে যারা সম্মান
করেন ,তাদের প্রকৃত অধিকার ও
পাওনা বুঝিয়ে দেন সেই
আলেম সমাজ তাদের মহাশত্রু হবেন
এটা তো স্বাভাবিক ।