somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে বধু-মাতা-কন্যা *কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক দালিলীক পোস্ট*

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারীর সঙ্গে পুরুষের যতগুলো সম্পর্ক
হতে পারে প্রতিটি সম্পর্ককে ইসলাম
অনন্য মর্যাদা ও মহিমায় অধিষ্ঠিত
করেছে। এক্ষেত্রে নারীকে শুধু
সমমর্যাদা নয়, বরং অগ্রমর্যাদা দান
করেছে।
প্রথম সম্পর্ক হলো মা হিসাবে।
তো ইসলাম ও তার নবীর কাছে মায়ের
যে মর্যাদা তা পৃথিবীর কোন ধর্ম ও
সভ্যতা এমনকি আধুনিক সভ্যতাও
কল্পনা করতে পারেনি।কোরআনে ইরশাদ হয়েছে
‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার
প্রতি সদাচারের আদেশ করেছি।
(কারণ) তার মা তাকে কষ্টের
সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের
সঙ্গে প্রসব করেছে।’ (সূরা আহকাফ :
১৫)
এখানে পিতা-মাতা উভয়ের
সঙ্গে সদাচার কেন করতে হবে তার
কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে পিতার কোন
অবদানের কথা বলা হয়নি, শুধু মায়ের
ত্যাগ ও কষ্টের কথা বলা হয়েছে।
অথচ পিতারও বিরাট অবদান
রয়েছে সন্তানের জীবনে। এটা এদিকেই
ইঙ্গিত করে যে, মাতার ত্যাগ ও
কষ্টের তুলনায় পিতার ত্যাগ ও কষ্ট
খুবই সামান্য।
হাদীছ শরীফে এসেছে, এক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার
সদাচারের বেশী হকদার কে?
তিনি বললেন, তোমার মা।
ছাহাবী বললেন, এর পর কে?
তিনি বললেন, তোমার মা।
ছাহাবী বললেন, এর পর কে?
তিনি বললেন, তোমার মা।
ছাহাবী বললেন, এর পর কে? তখন
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, এর পর তোমার বাবা। (সহীহ
বুখারী, হাদীস : ৫৯৭১)
আফসোস, যে ধর্মের নবী তাঁর
উম্মতকে মাতৃজাতি সম্পর্কে এমন
উপদেশ দান করেছেন সে ধর্মকে আজ
নারী অধিকারের বিরোধীরূপে আসামীর
কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।
পক্ষান্তরে যেসকল ধর্ম ও সভ্যতার
হাতে এবং যে আধুনিক পাশ্চাত্য
সভ্যতার
হাতে নারীজাতি বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত
ও নিগৃহীত
হয়েছে তারা পেয়ে যাচ্ছে বেকসুর খালাস,
বরং উলটো সেজে বসেছে নারীদরদী!
ফিরে আসি হাদীছের আলোচনায়। শুধু
এই হাদীছই নয়, বরং অন্য এক
হাদীছে বর্ণিত আছে, এক ছাহাবী আরয
করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমি জিহাদে গমন করতে চাই।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার
কি মা আছেন? ছাহাবী বললেন, আছেন।
তখন তিনি বললেন, যাও তার
কাছে বসে থাকো, কেননা জান্নাত তার
পায়েরই কাছে। (মুসনাদে আহমদ
৩/৪২৯; মুসান্নাফ
ইবনে আবী শাইবা ১৩/৮০)
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘জান্নাত
হলো মায়েদের কদমের
নীচে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস :
৭৩৩০)
দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো স্ত্রী হিসাবে।
তো এ সম্পর্কে দেখুন, কোরআন
শরীফে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-আর তোমরা স্ত্রীলোকদের
সঙ্গে বসবাস করো সদাচারের সাথে।
আর যদি (কোন কারণে)
তোমরা তাদেরকে অপছন্দ
করো তাহলে হতে পারে যে, তোমরা এমন
কোন কিছুকে অপছন্দ করলে, আর
আল্লাহ তাতে প্রচুর কল্যাণ
রেখে দিলেন। (সূরা নিসা : ১৯)
এ বিষয়টি হাদীছ
শরীফে নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন,
‘কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন
নারীকে যেন সম্পূর্ণ অপছন্দ না করে।
কারণ তার একটি স্বভাব অপছন্দ হলে,
আরেকটি স্বভাব অবশ্যই পছন্দনীয়
হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৯;
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৯৭৯)
এখানে নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষের
দাম্পত্যজীবনের এমন
একটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন যার
উপর আমল করলে এখনই আমাদের
সংসার ‘জান্নাত-নযীর’
হয়ে যেতে পারে।
দু’জন নারী-পুরুষ যখন একত্রে ঘর-
সংসার করবে তখন একজনের সবকিছু
অপরজনের ভালো লাগবে এটা হতেই
পারে না। কিছু আচরণ ভালো লাগবে,
কিছু মন্দ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে পুরুষের করণীয় হলো,
স্ত্রীর ভালো গুণগুলোর দিকে লক্ষ্য
করে আল্লাহর শোকর আদায় করা যে,
আলহামদু লিল্লাহ আমার স্ত্রীর
মধ্যে এই এই ভালো গুণ তো আছে!
আল্লাহর শোকর আদায় করবে, আবার
আন্তরিকভাবে স্ত্রীর
প্রশংসা করবে। তখন হয়ত আল্লাহ
তার মন্দ স্বভাবগুলো দূর করে দেবেন।
সুতরাং পুরুষের কর্তব্য হলো স্ত্রীর
ত্রুটিগুলোর প্রতি ক্ষমাসুন্দর হওয়া,
আর ভালো গুণগুলোর কদর করা। কারণ
পূর্ণতা তো কোন মানুষেরই নেই।
না নারীর, না পুরুষের।
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
‏ইরশাদ করেছেন-
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই
যে তার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের
মধ্যে সর্বোত্তম, আর আমি তোমাদের
মধ্যে আমার স্ত্রীদের জন্য
সর্বোত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃ.
১৪২; জামে তিরমিযী, হাদীস :
১১৬২)
উম্মাহাতুল মুমিনীনের
প্রতি নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কেমন
ছিলো তার বিশদ বিবরণ সীরাতের
কিতাবে রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর
প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য
তা পড়া এবং নিজেদের
জীবনে তা আমলে আনা,
যাতে প্রতিটি সংসার
হতে পারে শান্তির জান্নাত। হযরত
আয়েশা (রা.) বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবনে কোন
নারীকে প্রহার করেননি, বরং যখনই
ঘরে প্রবেশ করতেন (তাঁর মনের
অবস্থা যেমনই হোক) পবিত্র
মুখমন্ডল হাসিতে উদ্ভাসিত থাকতো।
তিনি নিজের কাজ নিজে করা পছন্দ
করতেন, এমনকি ছেঁড়া জুতা নিজের
হাতে সেলাই করতেন।
(শামাইলে তিরমিযী; আলমাওয়াহিবুল
লাদুন্নিয়্যাহ; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
কন্যা ও ভগ্নি হিসাবে নারীর অধিকার
ও মর্যাদা সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনুন,
যার খোলাছা হলো,
কারো ঘরে যদি তিনজন বা দুজন
কন্যা বা ভগ্নি থাকে, আর সে তাদের
উত্তম শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তারপর
তাদেরকে উত্তম পাত্রে বিবাহ দেয়
তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম) কোন
কোন বর্ণনায় আছে, তার উপর
জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। কোন
বর্ণনায় আছে, তাহলে সে আর
আমি জান্নাতে এরূপ পাশাপাশি থাকবো।
তারপর তিনি দুই আঙ্গুল
পাশাপাশি রেখে ইশারা করলেন।এক হাদীছে আছে তোমরা মেয়েদের অপছন্দ করো না। কারণ তারা অন্তরঙ্গতা পোষণকারী মূল্যবান
সম্পদ। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস :
১৭৩০৬)
যে কোন পরিবারে আপনি পিতা-মাতার
প্রতি কন্যাসন্তানের অনুভব-
অনুভূতি এবং সেই তুলনায়
পুত্রসন্তানের অনুভব-
অনুভূতি পর্যবেক্ষণ করে দেখুন,
অবশ্যই আপনার বুঝে আসবে কেন কন্যাকে এভাবে আলাদা করা হয়েছে ।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা হবে, না প্রতারণা বলা হবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪১

আমাদের দেশে এবং ভারতের আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই ধরণের বিধান আছে বলে আমার মনে হয় না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×