গত ৬ বছর আগেও যারা একেবারেই শূন্য ছিল , এমন প্রকাশকরা ঢাকার বাজারে এখন নাম হাঁকাচ্ছে। আর বলছে বড় বড় কথা।
নিয়ম ছিল , লেখকরা লেখক সম্মানি পাবেন। না তারা তা পচ্ছেন তো
না -ই , বরং প্রকাশকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
এর মধ্যে উঠতি কবি, গল্পকার তো আছেনই , আছেন প্রাক্তন বয়স্ক আমলা, অবঃ সামরিক অফিসার, শিক্ষক, চিকিৎসক সহ নানা পেশার
মানুষজন।
আর এদের টাকায় ফুলে ফেঁপে ঢাকার উঠতি কিছু প্রকাশক
বাণী শোনাচ্ছে আমাদের মতো প্রান্তজনকে।
শুনুন এমন দুজন উঠতি প্রকাশকের বক্তব্য ......
আদিত্য অন্তর, ইত্যাদি
প্রকাশনার প্রযুক্তির উন্নতির হলেই যে প্রকাশনার উন্নতি হবে, এমনটি ঘটা করে বলার কোনো সুযোগ নেই। প্রযুক্তির উন্নয়ন একটা বিষয় আর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রকাশনার মান উন্নয়ন আলাদা একটা বিষয়। আমি যদি প্রযুক্তিকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে না জানি তাহলে ৪০ বছর কেন ৪০০ বছরেও উন্নয়নের আশা করতে পারি না! সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। দেশে প্রকাশনা সংস্থার অভাব নেই কিন্তু খোঁজ করলে দেখা যাবে গুটি কয়েক প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া কারও কোনো সম্পাদনা পরিষদ নেই। অথচ প্রকাশনার ক্ষেত্রে সম্পাদনা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে পরিষদ-ই বইয়ের বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সার্বিক দিকগুলো দেখবে।
কিন্তু এটাও সত্য যে দেশে বইয়ের যে বাজার রয়েছে এবং এখানে যে পরিমাণ বই বিক্রি হয়, তার উপর নির্ভর করে একজন প্রকাশক চাইলেই রাতারাতি একটা সম্পাদনা পরিষদ গঠন করতে পারেন না। কারণ, যে বইটি প্রকাশ হচ্ছে সে বইয়ের পেছনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পরিমাণ খরচ এবং তার ওপর সম্পাদনা পরিষদের পেছনের খরচ সব যোগ করে যদি বইটির বিক্রীত মূল্যের যোগফল দাঁড় করানো যায়, তাহলে প্রকাশকের প্রাপ্তির কোঠায় শূন্য ছাড়া কিছুই থাকে না।
রয়্যালটির বিষয়ে বলব যে যেখানে শিকড়ই গজায়নি, সেখানে বিশাল বৃক্ষের আশা আমরা কীভাবে করতে পারি। তবে এটা ঠিক, শিকড় গজাচ্ছে, আমরা অচিরেই হয়তো বৃক্ষও দেখব, ফলও দেখব। আর এ জন্য লেখক-প্রকাশক উভয়কেই ভূমিকা রাখতে হবে।
আহমেদুর রশীদ চৌধুরী, শুদ্ধস্বর
আমাদের স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু সে অনুপাতে আমাদের মানসিকতার যথার্থ আধুনিকায়ন ঘটেনি। আন্তর্জাতিক প্রকাশনা বিশ্বের জরুরি তথ্যাবলির আমাদের পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। যে কারণে প্রকাশনার গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। এসব বিষয়ে আমাদের প্রকাশকদের নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো নতুন কিছু গ্রহণে অধিকাংশ প্রকাশই যথেষ্ট উদার নয়। তা ছাড়া প্রকাশনা দক্ষতা অর্জনে আমাদের আগ্রহও কম। বই সংশ্লিষ্ট কিছু জরুরি বিষয় যেমন-সম্পাদনা, ছাপা, বাঁধাই ইত্যাদি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের অভাব আছে আমাদের। রয়্যালিটি সংক্রান্ত ব্যাপারটি প্রকাশের সামর্থ্যের সমস্যার চেয়ে দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যাই বলেই মনে করি।
লেখক চুক্তির বিষয়টি এবং বছরান্তে লেখককে নিয়মিত হিসাব প্রদানের বিষয়টি প্রকাশনা সংস্কৃতিতে এখনো খুব প্রচলিত নয়। অথচ এটি লেখক-প্রকাশক উভয়ের জন্যই জরুরি। সরকারের যেমন সুস্পষ্ট গ্রন্থ প্রকাশনা নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত, তেমনি প্রকাশক হওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটি মানদণ্ড নির্ধারিত থাকা প্রয়োজন।
{ সূত্র - প্রথম আলো সাময়িকী - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ }
Click This Link
আদিত্য অন্তর বলেছেন - রয়্যালটির বিষয়ে বলব যে যেখানে শিকড়ই গজায়নি, সেখানে বিশাল বৃক্ষের আশা আমরা কীভাবে করতে পারি
তাকে প্রশ্ন হচ্ছে - বাংলাদেশে প্রকাশনার শিকড় এখনও গজায় নি ??
আপনি তো প্রচুর টাকা নেন লেখকদের কাছ থেকে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশন
ফোলে উঠেছে লেখকের টাকায়।
এখন উল্টো বাণী শোনাচ্ছেন ?
উল্লেখ্য যে আদিত্য অন্তর নিজে টুকটাক লেখালেখি করতেন তা দিয়ে নাম কামিয়েই লেগে গেছেন প্রকাশনায়। এখন জাফর ইকবালের মতো দুএকজন লেখকের বই নিজের গাঁটের টাকায় বের করলেও বাকি প্রায় সব বইয়েরই খরচ নিচ্ছেন লেখকদের কাছ থেকে।
আহমেদুর রশীদ চৌধুরি বলেছেন - রয়্যালিটি সংক্রান্ত ব্যাপারটি প্রকাশের সামর্থ্যের সমস্যার চেয়ে দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যাই বলেই মনে করি।
এই সেই আহমেদুর রশীদ ( যিনি নিজে আহমাদ রাশীদ নামে শুদ্ধস্বর নামে একটি লিটলম্যাগ বের করতেন , শুরুতে লেখালেখিও করেছেন)
যিনি আজও লেখকদেরকে বলেন - বই বের করতে হলে লেখককেই
সব টাকা দিতে হবে। এবারের বইমেলায় সৈয়দ হকের কবিতার বই, কিংবা মান্নান সৈয়দের কবিতার বই ছাড়া বাকি সব বই ই লেখকদের
কাছ থেকে টাকা নিয়ে করেছেন। তিনি কি না বলছেন দৃষ্টিভঙ্গির কথা?
টাকা তো তিনি কম কামান নাই । তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
হচ্ছে না কেন ?
চলবে .....
আগামী পর্বে দেখুন - সময়ের ফরিদ আহমদ, অনন্যার মনিরুল হক,
অন্যপ্রকাশের মজহারুল ইসলামের হরিলুটের কাহিনি .।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:৫৯