মানুষ হিজরা হয়ে জন্মায় না আমরাই তাকে ধীরে ধীরে হিজরা করে তুলি। পথ পথিক সৃষ্টি করে না পথিকই পথ সৃষ্টি করে। এপর্যন্ত পড়ার পর যারা ভাবছেন পোষ্ট থেকে হিজরা সম্পর্কে জানতে পারবেন তাদের সবিনয় নিবেদন হিজরা সম্পর্কে জানতে চাইলে দয়া করে গুগলে হিজরা লিখে সার্চ দিন এবং জেনে নিন। এ পোষ্ট সেজাতীয় নয়। পোষ্টটি হিজরাদের মানবাধিকার নিয়ে। তো শুরু করা যাক।
কয়েকদিন আগে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমার কাছে নিবেদন করেছেন আমি এবং আমরা যেন হিজরাদের মানবাধিকার নিয়ে কিছু লিখি। তার ধারণা তাহলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং হিজরাদের জীবনে সত্যিকারের কোন পরিবর্তন আসতে পারে। তার ইমেইল থেকে কয়েক ছত্র এখানে দিলাম যা মোটেও অপ্রাসঙ্গিক নয়।
"আমি কিছুদিন আগেও ইন্টার সেক্স মানুষদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। অনার্স পড়বার সময় জেনেটিক্সের স্যারের কাছ থেকে এবং বই পড়ে জেনেছি। শুনে অবাকই হয়েছি একটা মানুষ পড়াশোনা করতে পারে না শুধু মাত্র সে মেয়ে না ছেলে এটা নির্ধারিত নয় বলে! লেখা-পড়া বা চাকরি এসব যে কোন মানুষই করতে পারে। দরকার শুধু হাত-পা আর মস্তিষ্ক। ওদেরও সব আছে তাও পারে না। শেষে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা তুলে আর অভাবে পরে খারাপ কাজ (আমাদের দৃষ্টিতে) করে বেড়াতে হয়। আমরা তাদের গালা-গাল করি। খারাপ দৃষ্টিতে দেখি এবং মন্দ বলে থাকি।
একজন ইন্টার সেক্স মানুষ যদি আপনার ছেলের/মেয়ে পাশে বসে পড়া শোনা করে বা কাজ কর্ম করে তবে কি খুব দুনিয়া ওলট পালট গোছের কিছু হবে? তাই যদি না হয় তবে কেন আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করবো না কিংবা যাদের চিন্তা করা উচিৎ তাদের কে কেন স্মরণ করাবো না।
আমার না মাঝে মাঝে এই ভেবে খুব অবাক লাগে যে একটা মানুষের পড়াশোনা, চাকরী এটা তো কখনই তার প্রজনন ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে পারে না,তাও কেন এই মানুষেরা লেখা পড়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত?! আমার অবাক লাগে কিন্তু যারা এই নিয়মটা পাল্টাতে পারে তাদের মনে হয় কোন অনুভূতিই নেই। নইলে দিনের পর দিন এই বিষয়ে কোন কাজ কেন হয় না?"
আমার নিজের বোধ বা মতামত এই ইমেইলে বক্তব্যকেই সমর্থন করে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে হিজরাদের মূল স্রোতের সাথে জীবনযাপন কিভাবে সম্ভব?
আমার নিজের মতামত এখানে দিলাম। আপনাদের মতামতের প্রত্যাশায়।
আমি মনে করি দুভাবে হিজরাদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
এক.
বর্তমানে যারা হিজরা বলে অভিহিত তাদের প্রচলিত সমাজ অনুমোদন করে এমন কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে হবে। হতে পারে তা লেখাপড়া বা কারিগরি বা বৃত্তিমূলক কাজ। সম্ভব হলে তাদের বাবামায়ের কাছে ফিরে যাবার পরিবেশও তৈরি করা যেতে পারে। এব্যাপারে সরকার ও এনজিও কে এগিয়ে আসতে হবে।
দুই.
পরিবারে এমন বৈশিষ্ট্যের শিশুকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের জন্য নির্ধারিত বিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক পরিবারের পক্ষে হয়ত সেসব স্কুলে যাওয়া সম্ভব হবে না সেক্ষেত্রে সরকার বা এনজিও কে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
তারচেয়েও বড় কথা এমন শিশুকে হিজরাদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না, দিলে হত্যার ক্ষেত্রে যেমন কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় এক্ষেত্রেও তেমনই কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে। আজ কোন বাবামা চাইলেই তার শিশুকে হত্যা করা তো দূরের কথা নির্যাতন পর্যন্ত করতে পারে না। আইন তা সমর্থন করে না। ঠিক তেমন একটি আইন করা প্রয়োজন যাতে আর কোন বাবা-মা তার এজাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী (যাদের আমরা হিজরা বলে থাকি) সন্তানকে হিজরাদের হাতে তুলে দিতে না পারে।
এবিষয়ে আইনের পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
কিন্তু আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো আমারও একই প্রশ্ন, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধার দায়িত্ব যাদের হাতে আমরা তুলে দিয়েছি তারা কি শুধু ভোটের হিসেবই করবেন না কি সমাজের এমন গুরুতর বিষয়ের প্রতিও সুদৃষ্টি দেবেন তা এক মস্ত বড় প্রশ্ন হয়েই থাকবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫৩