বাংলাদেশের মৎস্য অধিদপ্তর অন্যান্য বছরের মত ২০১০ সালেও (২০০৮-২০০৯ অর্থ বছর) মৎস্য সম্পদের বছরওয়ারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেই পরিসংখ্যানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে বিশ্লেষণসহ উপস্থাপন করা হল। মূলত ২০১০ সালের বিভিন্ন মৎস্য সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরি ভিত্তিক তথ্য/উপাত্ত এবং এর বাৎসরিক বৃদ্ধি বা হ্রাসের শতকরা হার এখানে দেখানো হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ মৎস্যের জলায়তন (৪৫,৭৫,৭০৬ হেক্টর) ও সামুদ্রিক মৎস্যের জলায়তন গত এক বছরে অপরিবর্তিত রয়েছে। যেমনটি অপরিবর্তিত রয়েছে সামুদ্রিক মৎস্যে জলায়তন, জেলের সংখ্যা, মৎস্য চাষির সংখ্যা (টেবিল-এক, দুই, তিন ও চার)।
এবছর দেশে মোট মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ২৭,০১,৩৭০ মে. টন যা গত বছরের চেয়ে ৫.৩৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীন জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে ৫.৮৬ শতাংশ এবং সামুদ্রিক উৎস্য হতে উৎপাদন বেড়েছে ৩.৪৩%। অভ্যন্তরীন জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনের মধ্যে বদ্ধ জলাশয়ের (চাষকৃত) মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে ৫.৬৯% এবং উন্মুক্ত জলাশয়ের (আহরিত) মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে ৬.০১%। এর মধ্যে সর্বোচ্চ উৎপাদন বেড়েছে (৭.৩৩%) প্লাবনভূমি থেকে এবং সর্বনিম্ন উৎপাদন বেড়েছে (০.৯৯%) নদী ও মোহনা থেকে(টেবিল-পাঁচ, ছয় ও সাত)। হেক্টর প্রতি মাছের গড় উৎপাদন সর্বোচ্চ বেড়েছে চিংড়ি খামারে (৮.০৯%) আর সর্বনিম্ন বেড়েছে নদী ও মোহনায় (১.২৫%) [টেবিল-আট]। প্রজাতি ভিত্তিক মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে ইলিশের ক্ষেত্রে ৩.০৮% এবং চিংড়ির ক্ষেত্রে ৯.৮১% (টেবিল-নয়)।
সকল ধরণের জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন বাড়লেও মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য রপ্তানির পরিমাণ, মূল্য ও বৈদেশিক মুদ্রায় অবদান যথাক্রমে ৩.২০, ৪.৫০ এবং ২৫.৭৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৭২,৮৮৮ মে. টন, ৩,২৪৩.৪১ কোটি টাকা এবং ৩.০০%। যদিও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টের সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় নি (টেবিল-দশ)।
জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদানের মধ্যে জিএনপি-তে মাছের মূল্য ও অবদানের কোন পরিবর্তন হয় নি অন্যদিকে কৃষিখাতে অবদান ২২.২৩% যা গত বছরের চেয়ে ৬.৫২ শতাংশ বেশি (টেবিল-এগার)।
জনপ্রতি মাছের বাৎসরিক চাহিদা ২০.৪০ কেজি যা গত এক বছরে বেড়েছে ১৩.৫৬%। অন্যদিকে বাৎসরিক মাছের মোট চাহিদা ১৪.৮৩% বেড়ে দাড়িয়েছে ২৯.৭৪ লক্ষ মে. টন। জনপ্রতি বাৎসরিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ মাত্র ১.৬৮% বাড়লেও জনপ্রতি বাৎসরিক মাছের ঘাটতি অবিশ্বাস্যভাবে ২৭৯.২২% বেড়ে হয়েছে ২.৯২ কেজি (টেবিল-বার)।
দেশে মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ২.১৮% কমে দাড়িয়েছে ৮৫৪টি। কিন্তু হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন ১০.২৮% বেড়ে হয়েছে ৪,৫৯,৮০৪ কেজি। অন্যদিকে মৎস্য নার্সারির সংখ্যা মাত্র ১.৯৪% বাড়লেও নার্সারিতে পোনা মাছ উৎপাদন ৫৪.৩২% বেড়ে হয়েছে ৯৬,০০১ লক্ষ। প্রাকৃতিক উৎস্য হতে রেণু সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ০.২১% বেড়ে হয়েছে ১,৮৭৬ কেজি (টেবিল-তের)।
বাগদা হ্যাচারির সংখ্যা সামান্য বাড়ে (১.৭৫%) ৫৮টি হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বাগদার রেণু (পিএল) উৎপাদন, গলদা হ্যাচারি সংখ্যা, গলদার রেণু (পিএল) উৎপাদন ও প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে চিংড়ির রেণু (পিএল) সংগ্রহের পরিমাণ (টেবিল-চৌদ্দ)।
মৎস্য/চিংড়ি প্রশিক্ষণ খামার, মৎস্য প্রশিক্ষণ একাডেমি, মৎস্য হ্যাচারি/মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, বাগদা চিংড়ি হ্যাচারি, গলদা চিংড়ি হ্যাচারি, চিংড়ি প্রদর্শনী খামার, চিংড়ি আহরণ ও সেবা কেন্দ্র, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) ও মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র/উপকেন্দ্রের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও হ্যাচারিতে বেণু উৎপাদন ২১.১৬% কমে হয়েছে ৫,৫৫০ কেজি (টেবিল-পনের)।
সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ইউনিটের মধ্যে কেবলমাত্র ট্রলারের সংখ্যা ৬.০২% বেড়ে হয়েছে ১৪১টি কিন্তু ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ইঞ্জিন বিহীন নৌকা, সনাতনী নৌকা এবং জাল ও বড়শীর পরিমাণ বয়েছে অপরিবর্তিত (টেবিল-ষোল)।
বিদেশী মৎস্য প্রজাতি, স্বাদু পানির চিংড়ি প্রজাতি, সামুদ্রিক সৎস্য প্রজাতি ও সামুদ্রিক চিংড়ি প্রজাতির সংখ্যায় কোন পরিবর্তন না আসলেও স্বাদু পানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা ১.৯২% বেড়ে হযেছে ২৬৫টি যদিও এই বৃদ্ধির সপক্ষে আর কোন তথ্যসূত্র না পাওয়ায় সংশয় থেকেই যায় (টেবিল-সতের)।
মৎস্য সেক্টরের মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের জনবল অপরিবর্তিত থাকলেও মৎস্য অধিদপ্তরের জনবল গত এক বছরে ৫.৮০% বেড়ে হয়েছে ৪,৭৮০ জন যার মধ্যে প্রথম শ্রেণীর জনবল বেড়েছে ২.৫৫ শতাংশ (টেবিল-আঠার)।
প্রাথমিক তথ্যসূত্রঃ
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১০ সংকলন, ২০১০। মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১০২-১০৬।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০০৯ সংকলন, ২০০৯। মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১০৫-১০৯।
পুনশ্চঃ
উল্লেখিত টেবিলগুলো (টেবিল-এক থেকে আঠার) দেখার জন্য অনুগ্রহ করে ঘুরে আসুন বিডিফিশ বাংলার এই পাতা থেকে।
পুনঃ পুনশ্চঃ
আমার গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখের "বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বৃদ্ধিঃ বাস্তবতা এবং আমাদের করণীয় নির্ধারন " শিরোনামের লেখাটি প্রথম পাতায় এলো না কেন তা এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে রইল!