ঝিনাইদহ, ৯ মার্চ : জিন্দাদেহে মুরদা বসন থাকতে কেন পর না / মন তুমি মরার ভাব জান না / ওরে মরার আগে না মরিলে পরে কিছুই হবে না -এমনি শতশত গানের রচয়িতা মরমি কবি পাগলা কানাই। এই সাধকের ২০৪ তম জন্মদিন আজ।
বাংলা ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন ঝিনাইদহের বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই’র জন্ম । মৃত্যু বাংলা ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ়।
জন্মদিন উপলক্ষে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ ৩ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রথম দিনে রয়েছে লাঠিখেলা, ধুয়া-জারী গান, আলোচনা অনুষ্ঠান ও পাগলা কানাই সঙ্গীত পরিবেশন।
আলোচনা সভায় অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য আবদুল হাই, জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল ওয়াহেদ জোয়ারদার, পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নাইন।
দ্বিতীয় দিনে রয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সঙ্গীত পরিবেশন। সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে পাগলা কানাইয়ের জীবন ভিত্তিক নাটক ’পাওয়া যায় নাই পথ ভুলিয়া’। তৃতীয় দিনে রয়েছে কৌতুক, আলোচনা সভা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও কবি গানের প্রতিযোগিতা। এসব অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন পাগলা কানাই ভক্তরা।
ছোটবেলা থেকেই তিনি দূরন্ত স্বভাবের ছিলেন পাগলা কানাই। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাই-এর ঘরে মন না টেকায় অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। তিনি মানুষের বাড়ি রাখালের কাজ করেছেন। গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন।
নিরক্ষর হলেও তাঁর স্মৃতি ও মেধা ছিল প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে নিজ কন্ঠে পরিবেশন করতেন। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দু’য়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে। পাগলাকানাই-এর গান আজো গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের কোষাধ্যক্ষ আক্কাচ আলী জানান, পাগলা কানাই এর অবদান আমাদের সংস্কৃতিকে ঐতিহ্যমন্ডিত করেছে। তার রচিত ৩ সহস্রাধিক গান থাকলেও আজও তা সংগৃহিত হয়নি।
পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ জানান, দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কবির সমাধিস্থল তৈরি ছাড়াও একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি পাগলাকানাইয়ের একটি কল্পিত প্রতিকৃতিও অঙ্কন করা হয়েছে।
কবির সৃষ্ট গানগুলো সংরক্ষণ, গবেষণা ও মাজার প্রাঙ্গণে একটি কমপ্লেক্স তৈরির দাবি জানান তিনি।
লালন পরবর্তীকালের অন্যতম মরমী সাধক ও লোককবি পাগলা কানাই রচিত গান সংরক্ষণ করে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার আহবান ঝিনাইদহবাসীর।