বিএনপি মঞ্জুর আলমকে সমর্থন দেয়ায় ডিগবাজির রাজনীতি নতুনভাবে উৎসাহিত হয়েছে। একদলের মনোনয়ন না পেয়ে রাতারাতি ডিগবাজি খেয়ে একেবারেই বিপরীতমুখী অন্য দলের আদর্শিক সৈনিক হয়ে যাওয়ার যে দেউলিয়া প্রবণতা আমাদের রাজনীতিতে বিষবৃক্ষ হয়ে আছে তাতে আবার নতুন করে সার প্রয়োগ করা হলো। অন্য কোনো নির্বাচনে হয়তো আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করবে। আর তা হবে ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করাকে পুরস্কৃত করা। দ্বিতীয়ত: মঞ্জুর আলমকে মনোনয়ন দিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপির কোন্দল আপাতত সামলানো গেলেও তার সমাধান হয়নি, ধামাচাপা দেয়া গেছে মাত্র। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে ধামাচাপা না দিয়ে তা যথাশিগগির চিহ্নিত করে সমাধান করাই দলের বিকাশের জন্য মঙ্গলজনক হতো। বেগম জিয়া ধামাচাপার পেইনকিলার দিয়ে কেন কোন্দলের ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে চাইছেন তা বোঝা দুষ্কর। তৃতীয়ত: এই মনোনয়নের মধ্যদিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা নেতৃত্বকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য যদি দলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন না থাকে বরং ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে প্রার্থী নিয়ে আসা হয় অন্য দল থেকে তবে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থেকে কারো নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্থানীয় নেতৃত্বে আসার প্রয়োজন আছে কি?
এই ধারা প্রশ্রয় পায় বলেই ছাত্রদল, ছাত্রলীগের ছেলেরা সুষ্ঠু রাজনীতি বদলে পেশিশক্তির বিস্তার আর সম্পদ আহরণে ব্যস্ত থাকে। চতুর্থত: ওয়ান ইলেভেনের সুবিধাভোগী একজনকে মনোনয়ন দিয়ে বেগম জিয়া তার কট্টর ওয়ান ইলেভেনবিরোধী চরিত্রের প্রতিও সুবিচার করতে পারেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনারদের বৈধতাকে তিনি কথায় কথায় চ্যালেঞ্জ করেন। অথচ তিনিই কিনা বেছে নিয়েছেন এমন একজনকে যিনি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। পঞ্চমত: নোমান-মীর নাছির-দস্তগীররা প্রকাশ্যে মঞ্জুর আলমকে যতই সমর্থন দিন না কেন, মঞ্জুরের পক্ষে তাদের তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থকদের সক্রিয় করতে কতটুকু সচেষ্ট হবেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। মঞ্জুর আলমকে মূলত নির্ভর করতে হবে কেন্দ্রীয় বিএনপির আশীর্বাদ, কট্টর আওয়ামীবিরোধী ভোট আর স্থানীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত কর্মী বাহিনীর ওপর। এ কারণেই মঞ্জুর আলমের পেছনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপিÑ নোমান বা নাছিরের পেছনে খণ্ডিত বিএনপির চেয়ে অনেক বেশি দুর্বল।
সিসিসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাকাচৌ আর আমির খসরু গং নোমান-নাছিরের ওপর তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পেরেছেন বটে, কিন্তু চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি পিছিয়ে দিয়েছেন বহু বছর আর দলের গণতন্ত্র চর্চার গালে করেছেন প্রচণ্ড চপেটাঘাত। তাদের সাময়িক জয় হয়েছে, পরাজিত হয়েছে সুস্থ রাজনীতির অভিযাত্রা। তবে প্রতিপক্ষের এই দুর্বলতার সুযোগ যে আওয়ামী লীগ নিতে পেরেছে তা বলা যাবে না। দুর্বল প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় বিজয় যেখানে প্রায় অবধারিত সেখানে তারা ফিরে গেছে পুরনো ঠিকানায়, পুরনো রাজনীতির ধারায়। অথচ অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কিত, গতিশীল এবং নতুন প্রজšে§র কাউকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরশনের নেতৃত্বে নিয়ে আসার সুযোগ তাদের এসেছিল। আমরা সবাই মিলে আরেকটি ট্রেন মিস করলাম। বিএনপি মিস করেছে দল পুনর্গঠনের ট্রেন আর আওয়ামী লীগ মিস করেছে রাজনীতি পরিবর্তনের ট্রেন।
আহমেদ শরীফ শুভ