somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিটেনের নির্বাচন : ঐক্য ও বাঙালিদের আগামী

২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতোই সময় গড়াচ্ছে ব্রিটেনের নির্বাচনী প্রচারণায় আসছে বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক ইস্যু, বিশ্বমন্দা, অভিবাসী সমস্যা প্রভৃতি নিয়ে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের টানা শাসনামলের বর্তমান এক ক্রান্তি সময়ে স্বাভাবিকভাবেই হয়তো লেবার পার্টির জনপ্রিয়তায় নেমেছে ধস। কিন্তু তবুও কনজারভেটিভ পার্টিই যে আগামীর নিশ্চিত কর্ণধার হবে, সে নিয়েও আছে সন্দেহ। আর সেজন্যই এবারের নির্বাচনে একটা ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও টোরি নিজেদের নিয়ে আসতে পারছে না জনগণের প্রধান পার্টি হিসেবে। এদিকে যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই যেন লাইমলাইটে জনপ্রিয়তায় চলে আসছে নিক ক্লেইগের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেট। তাইতো দেখা গেছে পার্টি প্রধানদের উপস্থিতিতে আইটিভির প্রথম ডিবেটের শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ক্লেইগ ৫১% জনপ্রিয়তা নিয়ে শীর্ষে ছিলেন। ২২ এপ্রিল স্কাই নিউজ ডিবেটে প্রধান বিরোধী দলের তিন দলপতি অংশ নিলে সেখানেও উঠে এসেছেন নিক ক্লেইগ। যেখানে গর্ডন ব্রাউন এবং ডেভিট ক্যামেরুনের অবস্থান হচ্ছে তার নিচে। অথচ গত অর্থাৎ প্রথম ডিবেটের পর ইউ গভের (ুড়ঁ মড়া) জরিপে যেখানে নিক ক্লেইগের জনপ্রিয়তার অবস্থান ছিল সব ইস্যু মিলিয়ে ৩২%, ক্যামেরুনের ৩৬% এবং ব্রাউনের ২৯% সেখানে অহমঁং জবরফ নামের জরিপকারী সংস্থা দাবি করেছে স্কাই নিউজের ডিবেটের পর ক্লেইগের জনপ্রিয়তায় এসেছে এক অন্য পরিবর্তন। তার জনপ্রিয়তার সূচক হয়েছে ৩৩%, ক্যামেরুনের ৩২% এবং ব্রাউনের ২৩%। জরিপের এ ফলাফল লেবার পার্টির জন্য খুবই হতাশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটের জন্য এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন। যদিও জরিপের ফলাফল প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে। কনজারভেটিভ উঠে আসছে ক্রমেই। তবে লেবার যেন ক্রমশই নিুগামী হচ্ছে।

আর সে হিসেবে নির্বাচনের শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যে ব্যাপারটা আলোচিত হচ্ছিল তা আবারো উচ্চারিত হচ্ছে সারা ব্রিটেনজুড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এরকম নির্বাচনী লড়াই প্রত্যক্ষ করেনি ব্রিটেন।

দুই. এই লড়াইয়ে এবার শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ বাঙালি এমপি প্রার্থীরা। ব্রিটেনের একমাত্র আসন টাওয়ার হ্যামলেটস-বো আসন থেকে এবারে নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন বাঙালি। বাংলা আর বাঙালির ইতিহাসে ওই আসনেই সংযোজিত হবে এক নতুন ইতিহাস। দীর্ঘদিনের বর্ণবাদবিরোধী লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মাহুতির পর এ প্রজন্ম গড়বে নতুন ইতিহাস। শুরু হবে পথচলাঃ যাত্রা শুরু হবে হাউস অব কমন্সে । কিন্তু কার হবে এ প্রথম পদক্ষেপ ?

ঐতিহাসিকভাবে টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন-বো লেবার পার্টির এক ধরনের সংরক্ষিত আসন (সেইফ সিট)। ১৯৪৫ সাল থেকে এখানে লেবার টানা রাজত্ব করে আসছিল। ১৯৯৭ সালে পাস করে এখানে এসেছিলেন উনা কিং। কিন্তু ইরাক ইস্যু তাকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। দু-দুবার জয়ী হওয়ার পরও ২০০৫ সালে তাকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। এখানে আসেন জর্জ গ্যালওয়ে, এমপি হয়ে। তা-ও বাঙালিদের ভোটেই। একটা পরিবর্তনের হাওয়া লাগে এই এলাকায়। জর্জ গ্যালওয়ের রেসপেক্ট পার্টিতে অনেকেই আশার আলো দেখেন। কিন্তু সময় যতোই গড়ায় ইস্ট এন্ড ভিত্তিক এই পার্টিটি ততোই যেন একটা গ্র“পের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকে। বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে থাকে এই পার্টিটি, অভিযোগ আছে বিশেষত মৌলবাদীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা। এমনকি এই পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া বেথনাল গ্রিন-বো এলাকার প্রার্থীকে কেন্দ্র করে আইএফইর (ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ) ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ করেছে চ্যানেল ফোর। যদিও পার্টি অস্বীকার করেছে এসব। সত্যি কথা বলতে কি তার অবস্থান এখানে মোটেও হেলাফেলার নয়। বরং একটা শক্ত অবস্থান আছে ওই প্রার্থী আবজল মিয়ার। এখান থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লড়ছেন জাকির খান, লড়ছেন লিবারেল ডেমোক্রেটের আজমল মাশরুর। লেবার পার্টি থেকে লড়ছেন রোশনারা আলী। মূলত প্রধান দলগুলোর প্রার্থী সবাই বাঙালি।

নেলসন ম্যান্ডেলার ছায়া প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফিরছে যে নারীটিকে, তিনি হলেন এবারের নির্বাচনে বেথনালগ্রিন-বো আসনের লেবার পার্টির প্রার্থী। অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট এই তরুণী টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বঞ্চনা-বৈষম্যকে ধারণ করেই এর আমূল পাল্টে দিতে এবার ভোট চাইছেন। অনেকেই ভাবনায় আছেন আসলেও কি পাল্টে যাবে? যুগ যুগের সংরক্ষিত এই আসন আসলেই কি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন রোশনারা আলী? এ প্রশ্ন বড় বেশি উচ্চারিত হচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। বিশেষত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাবধারা নিয়েও যাদের চলাফেরা এই ব্রিটেনে, তারাও যেন মনে করছেন নতুন টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রয়োজনে এমনকি বাঙালির ইতিহাস সৃষ্টিতে রোশনারা আলীরই প্রয়োজন। তাই তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিসহ অসংখ্য বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল আর ওয়েলফেয়ার সংগঠনগুলো দাঁড়িয়েছে এক কাতারে। এ এক নজিরবিহীন ঐক্য। বিবৃতি দিয়েছে সবাই তার পক্ষে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এসেছিলেন, রোশনারা আলীর পক্ষে ভোট চেয়ে গেছেন সভায়-সমাবেশে। লেবার পার্টির সেইফ সিট পুনরুদ্ধার নয়, নতুন ধারা সৃষ্টির অঙ্গীকার নিয়ে আসা রোশনারা আলীই হয়তো বদলে দিতে পারেন ইস্ট এন্ডের মানুষগুলোর বঞ্চনার ইতিহাস। ভোটারই নির্ধারণ করবে ওয়েস্ট মিনিস্টারের আগামী কিন্তু মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে রোশনারা আলীই কি বাঙালিদের ইতিহাসের প্রথম মানুষটিই হতে যাচ্ছেন এই ব্রিটেনেঃ এ প্রশ্নটিরও উত্তর তা-ও ওই ভোটারদের হাতেই।

তিন. লেবার পার্টি সারা দেশব্যাপী তার ধস সামলাতে পারবে কি না, ডেভিট ক্যামেরুন প্রধানমন্ত্রী হয়েই যাবেন কি না কিংবা লিবারেল ডেমোক্রেট কি দেখাতে পারবে কোনো নতুন চমক অথবা বহু উচ্চারিত ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকিতেই কি আবর্তিত হবে ব্রিটেনের রাজনীতি? সেটা দেখার জন্য এখনো হয়তো আমাদের অপেক্ষার পালা আসছে ৬ মে পর্যন্ত। কিন্তু ইস্ট এন্ড? ভাবতে হবে আমাদের। এমনিতেই উগ্র মৌলবাদ নিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে কখনো মিডিয়ায়, কখনো বা অন্য কোথাও। আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা উগ্র মৌলবাদের বিপক্ষে। এই নির্বাচনের রায়ের মধ্য দিয়েই। আর সে জন্যই হয়তো ভিন্ন মেরুর মানুষগুলোও দাঁড়িয়েছে একই সমতলে।

ফারুক যোশী
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×