অনেক দূরের মানুষগুলোকে মনে পড়ে যারা একদিন খুব বেশী নিকটে ছিলো, মনের সব সংশয়, জীবনের সব সংকট যাদের সাথে ভাগাভাগি না করলে চলতই না। যেনো প্রচন্ড শৈত্যে নারকেল তেলের মতো জমে যেতো জীবন।
কখনো তো মনেই আসেনি, আজকের মতো দিন ও আসবে, যখন তারাই হয়ে যাবে অনেক দূরের, অপরিচিত জন। স্মৃতির বাড়ি গিয়ে খুব মনে করতে চাই বিথী ঠিক কতটা লম্বা ছিলো, তারেকের দাড়ি ছিলো কি না, সাবা কি চশমা পড়তো, অলকা গান গাইতো নাকি!
এমন এলোমেলো একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি যেখান থেকে সব ট্রেন গুলো ছেড়ে যাচ্ছে, একটা ও ধরতে পারছি না। দৃষ্টি অস্বচ্ছ। আমি যেনো কারো জন্য অপেক্ষা করে আছি, অনেক দূরের, প্রিয়, অনেকদিন আগের চেনা এখন অচেনা , এমন একজনের জন্য। রাতের শেষ ট্রেনটা ও ছেড়ে গেছে। তবু মনে হয়, রাতের ঘুম ভাঙ্গিয়ে আরো একটা ট্রেন আসবে।
এমন প্রিয় কিছু বন্ধু ছিলো, যদি কখনে মনে হতো তারা আমার চেয়ে অন্য কাউকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, রাগে জ্বলে যেতাম। আজকে তারা আমার ষ্টেশন ফেলে অনেক দূরের ষ্টেশনে নেমেছে, হারিয়ে গেছে ভীড়ে। তবু ও আমি অপেক্ষায় আছি। অনেক অজানা অচেনা মানুষ নেমেছে আজ ষ্টেশনে। তবু ও একজন কে মনে হলো, কতবার যেনো দেখেছি, শুধু নাম টাই জানি না। একসময় নামটা ও মনে এলো, ছোটবেলা থেকে এক বেঞ্চিতে না বসলে সব এলোমেলো লাগতো। কতো রং, কতো ছবি, কবিতার এলোমেলো পংক্তি নিয়ে খেলেছি আমরা। বুকের মধ্যে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে, সেই জল আসছে চোখে। আমি ডাকলাম, 'বিথী' । বিথী ফিরে তাকালো, চিনতে পেরে হাসলো,'আরে শিমুল, ভালো আছিস তো?' উত্তরের অপেক্ষা করেনি। কোনো বিস্ময় নেই,কোনো জমানো কথা নেই। জানি, বাড়িতে আরো গুরত্বপূর্ণ কেউ অপেক্ষা করছে। বন্ধুত্বের সময় আর নেই। ঠিক কতো মাইল দূরে গেলে, প্রিয় বন্ধু ও অচেনা হয়ে যারা কাছাকাছি কোথাও এলে একসময় শরীরের ঘ্রাণ ও টের পেতাম!