ভানু ব্যানার্জীর সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী:
তাঁর আসল নাম শ্যাম্যময় বন্দোপাধ্যায়। জন্ম ঢাকায় ১৯২০ সালের ২৭ শে আগস্ট। লেখাপড়া করেছেন Pogos এবং St. Gregory's High School এ। জগন্নাথ কলেজ থেকে লেখাপড়া করে কলকাতায় পাড়ি জমান ১৯৪১ সালে। সেখানে চাকুরি করতেন Iron and Steel Co.তে। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৮৩ সালে।
বঙ্গ দেশের প্রথম বাঙ্গালীর মহাকাশ অভিযানের বিবরণী
১
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : জানো প্রফুল্ল, এর আগে যত লোককে আনা হয়েছিল, সবাই বাংলাদেশ থেকে স্পুটনিক চাঁদে যাবে শুনে অজ্ঞান হয়ে পরেছিল|
ভানু(ওরফে প্রফুল্ল) : তাই নাকি ? আমারে নিজেরে তো খুব র্গবি্বত মনে হইতাছে |
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : শাবাশ ! এবার প্রতিজ্ঞা করে বল যে, মহাকাশ থেকে যেসব তথ্য তুমি সংগ্রহ করবে তা অন্যকোন রাষ্ট্রকে সরবরাহ করবে না |
ভানু : এই বুকে হাত দিয়া প্রতিজ্ঞা কইরলাম |
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : বেশ, এবার স্পুটনিক এর ভিতরে রেডি হয়ে বোস | সুইচ টিপলেই তুমি মহাশূণ্যে উঠে যাবে |
ভানু : আরে বাপ রে ! অনেক উপুরে উইঠ্যা গেছি | আনন্দে হৃদয় নাচতে আছে , যারে, যারে উড়ে যারে পাখি ....
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : গান গাইবে না , তথ্য সংগ্রহ করে বলো |
ভানু : কইতাছি | কলকাতা শহর ছোট হইয়া যাইতাছে , মানুষ গুলি গরুর মতন, গরু গুলি মানুষের মতন দেখা যাইতাছে| মনুমেন্ট বাসের মতন, ভিক্টোরিয়া হল সিঙ্গারার মত; যাআহ্ , পৃথিবীটাকেই কুমড়ার মতন দেখাইতাছে | অখন ল্যাংড়া আমের মতন, অখন কাঠাল বিচির মতন; যাআহ্ , গ্যালো গিয়া আর দ্যাখা যায় না |
হেই, কাম সারছে , স্পুটনিক দোলে, টাল খাই, টাল খাই, চোখে র্সষ্যা ফুল দ্যাখতাছি | ব্যাবাক অন্ধকার |
বুভুমমম্ !!!
২
হেল্প, হেল্প, কই আইলাম রে বাবা ! এদেখি মাটি লাল, পাহাড় লাল, গাছের পাতা লাল | কাম সারছে !
আকাশ দেখি আবার হইলদ্যা | এটা কোন জায়গারে বাবা!
কেউ আছেন? সাহায্য করেন! কোই হ্যায়, সাহায্য করিয়ে ! কোনও আওয়াজই নাই |
কোন ভাষায় কথা কইলে বুঝতে পারব, তাওতো বুঝিনা |
স্পুটনিকং বিস্ফোরণং সাহায্যং করঙ সাহায্যং করঙ!
অপরিচিত কণ্ঠ : কে তুমি ?
ভানু : আমি প্রফুল্ল চ্যার্টাজী |
অপরিচিত কণ্ঠ : এখানে কি করে এলে ?
ভানু : পইড়া গেছি |
অপরিচিত কণ্ঠ : কোথা থেকে ?
ভানু : বাংলাদেশের স্পুটনিকএ চইড়্যা চান্দে যাইতাছিলাম.. ফাইট্টা ফুইট্টা ধপাস্ !
অপরিচিত কণ্ঠ : সে কি? বাংলাদেশও স্পুটনিক বানাতে আরম্ভ করেছে নাকি ?
ভানু : না বানাইলে আমার এই র্দুদশা হইবো ক্যান ?
অপরিচিত কণ্ঠ : পড়ে গেলে কি করে ?
ভানু : কইলাম যে! পুরা মালই ফাইট্টা কুড়মুড়বাদ হইয়া গেছে |
অপরিচিত কণ্ঠ : কোথায় এসে পড়েছো, বুঝতে পারছো ?
ভানু : না |
অপরিচিত কণ্ঠ : মঙ্গল গ্রহে!
ভানু : মঙ্গল গ্রহে? নানা নানা ....
অপরিচিত কণ্ঠ : একি গান গাইছো কেন?
ভানু : আনন্দে !
অপরিচিত কণ্ঠ : সত্যি! তোমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরা পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করল|
ভানু : এই কৃতিত্ব আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকদের না |
অপরিচিত কণ্ঠ : তবে ?
ভানু : কন্টাক্টরগো |
অপরিচিত কণ্ঠ : তার মানে ?
ভানু : আমাদের দেশের কন্টাক্টরগো বিশেষত্বই হইল, তাগো যা অর্ডার দাওন যাইবো, তা তারা কিছুতেই সাপ্লাই করবো না |
বৈজ্ঞানিকেরা স্টিলের বডি বানাইতে কইছিল, ওরা বানাইছে কাঠের বডি | ফলাফল তো নিজেই দ্যাখতাছেন |
অপরিচিত কণ্ঠ : এখান থেকে ফিরে যাবে কি করে ?
ভানু : ক্যান? মঙ্গল গ্রহে কোন বৈজ্ঞানিক নাই?
অপরিচিত কণ্ঠ : না | এখানে আমি একা থাকি | সমস্ত মঙ্গল গ্রহের মালিক আমি | আমার নাম মঙ্গল |
ভানু : পায়ের ধুলা দ্যান মঙ্গল দা | মঙ্গল দা, ক্যামন আছেন ?
মঙ্গল দা : ভাল আছি |
ভানু : ভাল বেশিদিন থাকতে পারবেন না |
মঙ্গল দা : কেন ?
ভানু : পৃথিবীর লোক এখানে রাজত্ব করবো |
মঙ্গল দা : করুক |
ভানু : প্রদেশ বানাইবো, সুবাহ্ বানাইবো, ছাড়পোকার মত বংশবৃদ্ধি করবো |
মঙ্গল দা : কী সাংঘাতিক! কিন্তু শুনেছি, পৃথিবী সুন্দর, সেখানকার লোকগুলিও সুন্দর |
ভানু : কিছুদিন থাইক্যা আসেন না, জন্মদাতার নাম ভুইল্যা যাইবেন |
মঙ্গল দা : ওহহহহহ, আচ্ছা | এবার তোমার দেশ সম্বন্ধে বল?
ভানু : কি জানতে চান, কন?
মঙ্গল দা : র্ধম, চিকিৎসা, শিক্ষা, খাদ্য ইত্যাদি ?
ভানু : র্ধমতো এক নম্বর, অহিংসায় পরম র্ধম | যে সমস্ত দেশ আমাগো থেইক্যা বেশি শক্তিশালী, তাগো আমরা সবসময ক্ষমা কইরা থাকি |
মঙ্গল দা : চিকিৎসা ?
ভানু : অ্যার্লাজি |
মঙ্গল দা : মানে ?
ভানু : চিকিৎসকেরা যখনই রোগ র্নিণয় করতে পারে না , তখনই কয় এ্যার্লাজি |
মঙ্গল দা : শিক্ষা ?
ভানু : ত্রিভুবনে পাইবেন না | ছোটবেলা থেইকাই পাটিগণিতে শিক্ষা দেওয়া হয়, এক মণ চাউলে কত সের কাঁকর মিশাইলে ৫০ টাকা লাভ হইবো |
মঙ্গল দা : আর খাদ্য ?
ভানু : হ্যা হ্যা .. চাউলের দাম আর না কইলাম ! আমও কিলো হিসাবে বিক্রি হইতাছে| তাতেও আপসোস নাই | মুশকিল হইলো, থাবা দিয়া যদি দৌড় না মারতে পারেন , তাইলে কোনও জিনিসই পাইবেন না |
মঙ্গল দা : আর্শ্চয! তোমরা বেঁচে আছ কি করে ?
ভানু : মরণের উপায় নাই বইল্যা | হালার বিষ যে বিষ, তাতেও ভ্যাজাল |
৩
রাশিয়ান এ্যাজেন্ট : হ্যালো, রাশিয়া থেকে বলছি, আমাদের খবর পাঠাও| ওখানকার টেম্পেরাচার বল ? ক্যাপিটালিস্ট আছে কিনা বল ?
ভানু : হ্যালো, প্রফুল্ল কইতাছি, আমি কোন খবর দিতে রাজি না |
আমেরিকান এ্যাজেন্ট : হ্যালো, আমেরিকা থেকে বলছি, মাত্র তিনটি প্রশ্নের জবাব দাও? ওখানে সোনা আছে কিনা, ডায়মন্ড আছে কিনা, সুন্দরী মেয়ে আছে কিনা ?
ভানু : ও বাবা! কোনও খবরই দিমু না | তবে এখানে কোনও মাইয়াও নাই, আপনাগোও অসুখ নাই |
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : হ্যালো, সুজলা, সুফলা, শস্য=শ্যামলা বাংলাদেশ থেকে বলছি ...
ভানু : অবহেলিত, নিশ্পেষিত, হতভাগ্য বাঙ্গালী প্রফু্ল্ল উত্তর দিতাছি |
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : রাশিয়া, আমেরিকা যোগাযোগ করছে , ওদেরকে কোনও খবর দেবেনা |
ভানু : ক্ষেপছেন! আমারে বাঙাল পাইছেন নাকি?
আমেরিকান এ্যাজেন্ট : খবর দিলে তোমাকে ২০ হাজার ডলার দিব |
রাশিয়ান এ্যাজেন্ট : এক লক্ষ রুবল দিব |
ভানু : উচ্চ শক্তির বৈঠকে বইস্যা আরও কিছু বাড়ান !
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : অন্যকোনও দেশকে খবর দিলে তোমাকে নিবারক নিরোধ আইনে ধরা হবে |
ভানু : স্যার, একটু মাথা ঘামান, এখন ডলার রোজগার করা খুব উচিৎ
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : তার চেয়ে অনেক মূল্যবান জিনিস বাংলাদেশ তোমাকে দিবে |
ভানু : কি সেই জিনিস ?
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : তোমার স্টাচ্যু তৈরি করা হবে |
ভানু : তাতে তো আমার মাথায় কাকে চিলে .... রাম! ছিঃ ছিঃ
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : কি দিলে তুমি আবার ফিরে আসতে রাজি আছ?
ভানু : কিছুই না | শুধু যদি দলাদলি ছাইড়্যা আপনারা যদি আপসে দেশের উন্নতির দিকে মন দ্যান |
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : চোপ! ওটা রাজনীতির কথা | তোমার নিজের কথা বল ?
ভানু : না, কথাও কমু না , ফেরতও যামু না |
৪
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : হ্যালো প্রফুল্ল! তোমার প্রেমিকা তোমার সাথে কথা বলবে, কানেকশন্ দিচ্ছি |
ভানু : ডিসকানেক্ট করেন, ডিসকানেক্ট করেন!!
ভানু ওরফে প্রফুল্লের প্রেমিকা : হ্যালো, আমি অলকা বলছি |
ভানু : আমি স্বামী প্রফুল্ল আনন্দ বন্ধুশঙ্কর বলছি |
অলকা : সে কী! তুমি সন্ন্যাসী হয়ে গেছ নাকি?
ভানু : হ্যা মা !
অলকা : আহ্ মরণ! মা বলছো কাকে?
ভানু : জগতের সমস্ত নারীরেই |
অলকা : তুমি কী ভুল বকছো নাকি? আমি যে তোমার পথ চেয়ে বসে আছি |
ভানু : নাআ নারী, মনুষ্য জন্ম অতি নিকৃষ্ঠ জন্ম আমি আর ঐ লাইনে নাই |
অলকা : মাগো, কী হয়ে গেছ তুমি? এরই মধ্যে আমাকে ভুলে গেলে |
ভানু : ভুলাটাই তো স্বাভাবিক ! তুমিও তো প্রতি মাসে আমারে তিনবার কইরা ভুলতা|
অলকা : তুমি এমন কথা বলতে পারছ! আচ্ছা, মঙ্গল গ্রহে কি আমার মত আরও মেয়ে আছে ?
ভানু : আছে মানে কি! কিলবিল করতাছে | এখানে সব মাইয়্যা, আমি আর মঙ্গলদা খালি পুরুষ |
আমেরিকান এ্যাজেন্ট : আমাদের কে যে বললে, ওখানে মেয়ে নেই ?
ভানু : এই খবর আপনাগো লাইগ্যা না |
অলকা : ওগো ফিরে এসো! পাইয়ে ধরছি তোমার!
ভানু : নাআ নারী! ভুলিব না ক্রন্দনে তোমার !
অলকা : কী করেছি আমি ?
ভানু : কি করনাই ? আমার চোখের সামনে দিয়া গাড়িওয়ালা দাদার লগে কাঁচ বন্ধ গাড়িতে কইরা গঙ্গার ধারে হাওয়া খাইতে যাও নাই ?
অলকা : আমি আর শুনতে পারছি না |
ভানু : না শুনলে চলবো না | ক্রিকেট খ্যালার টিকিট দিতে পারি নাই বইল্যা কথা বন্ধ কর নাই ? আমার চুল ফিলিম আর্টস্টের মত না বইল্যা ঠাট্টা কর নাই ?
অলকা : আমি আর সইতে পারছি না | আমার বুক ফেটে যাচ্ছে |
ভানু : ফাটুক, তুমি বিশ্বাসঘাতিনী, তুমি কলঙ্কিনী!
অলকা : কাঁদাও, যত খুশি তুমি কাঁদাও |
ভানু : তুমি ডাইনী, তুমি পেত্নী, শক্তিনী, বাঘিনী |
অলকা : আরো আছে ? আরো বলবে ?
ভানু : আছে | মঙ্গল দা! হাতির স্ত্রী-লিঙ্গ কি কনতো?
মঙ্গল দা : হস্তিনী !
ভানু : হহহ... তুমি ঐ !
অলকা : নাগো না , তোমার বিরহে আমি শুকিয়ে গেছি |
ভানু : তাইলে তুমি শকুনী !
অলকা : ওগো অনেক বলেছো, এবার আসতে রাজি হও|
ভানু : কাভি নেহি !
৫
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : দেখ, কী যন্ত্র পাঠাচ্ছি! এখনই তোমাকে ধরে নিয়ে আসবে |
ভানু : মঙ্গল দা, আমি ফিরে যামু না | বাঁচান |
মঙ্গল দা : দেশে ফিরে না গেলে তুমি দেশদ্রোহী হবে যে !
ভানু : হই হমু, তবে এত দলাদলির মধ্যে গেলে বাঁচুম না|
মঙ্গল দা : তুমি কোন দলে যেও না | স্বতন্ত্র থেক |
ভানু : পোঁড়া কপাল আমার ! আপনি জানেন না, এখন স্বতন্ত্রও একটা দল!
মঙ্গল দা : তাহলে দল ভাঙ্গার জন্য একটা দল কর |
ভানু : ঠিক কইছেন! নিজেই দল করুম | সে দলের একমাত্র কথা হইব,
রাজনীতির পাকামো ছাড় , দ্যাশের ভাল কর, নাইলে গুঁতা খাইয়া মর |