> আমার হাতে এটা কী দ্যাখ!!
>> কী এটা?
> কী মানে? দেখেও বুঝতে পারছিস না কী এটা? আরে গাধা, মশকারি না, এটা মোহর! সত্যি সত্যি মোহর!!
>> ওহ।
> ওহ? শুধুই ওহ? তোর আগ্রহ হচ্ছে না? সত্যি সত্যি মোহর এটা! নে, ধরে দ্যাখ!
>> নাহ, থাক।
> থাকবে মানে? নে, ধর!
>> নাহ।
> এটার দাম কত জানিস?
>> না, কত?
> দাম যে কত হওয়া উচিত, আমিও জানি না! আচ্ছা কোহিনুরের দাম কত জানিস?
>> না তো।
> পাঁচ কোটি হবে না?
>> কিজানি, হতেও পারে!
> তাহলে আমারটা?
>> ?
> এক কোটি হবে না? এক কোটি না হোক সত্তুর লাখ?
>>কিজানি!
> আচ্ছা, তুই কিনলে এটা কত দিবি?
>> আমি কেন কিনব? আমি কিনব না।
> কেন কিনবি না? এটা একটা মোহর, আর তুই সস্তায় পেয়েও কিনবি না??
>> কিনব না। এবং মানুষ কেন কেনে সেটাও আমার বুঝে আসে না!
> বলে কী!
>> হুম। ধর, ওই যে তুই কোহিনুরের কথা বললি, ওটার কাজ কী? কী হবে ওটা দিয়ে? ওর কোন উপযোগিতা আছে?
> কী হবে মানে? ওটার কত দাম!! আর তুই বলিস কী হবে ওটা দিয়ে?
>> হুম, অনেক দাম, কিন্তু কে কিনবে? কী হবে কিনে? এই যে তোর হাতের মোহরটা, দাম যাই হোক, আমি যদি কিনি, কেন কিনব?
> কিনবি, এটা দুষ্প্রাপ্য, এটার অনেক দাম, তাই!
>> আচ্ছা, কেনার পর কী করব?
> রেখে দিবি নিজের কাছে।
>> মানে, কোটি বা লাখ টাকার জিনিস আমি কিনে ফেলে রাখব নিজের কাছে, এই?
> ন্যাকামি কেন করিস? রেখে দিবি, আবার সুযোগ মত আরও বেশি দামে বেচে দিবি, এই তো লাভ!
>> যে কিনবে সে আবার কী করবে?
> সেও আরও বেশি দামে বেচবে পরে।
>> তো, জিনিসটার উপযোগিতা কী? কেবলই বেচা? আমি কিনব বেচার জন্য, আবার যে কিনবে, সেও কিনবে আবার বেচার জন্য, শুধু বেচাই যদি জিনিসটার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এই জিনিসটার নিজস্ব স্বার্থকতা কী? এটা যদি কোন খাবার হত, তবে বুঝতাম, খেলে পেট ভরে, এটা এমন কিছুই না, যা মানুষের জীবনে কোন কাজে লাগছে!
> উহ, তর্ক করিস না। পণ্য বিপণন বুঝিস না? মার্কেটিং বুঝিস না? কিনে আবার আমরা বিক্রি করি লাভের উদ্দেশ্যে, এই তো!
>> বুঝলাম তো, বেচলে লাভ হবে। কিন্তু এই জিনিসটার নিজের কাজ কী তবে?
সবাই কিনবে শুধু বেচার উদ্দেশ্যে, অথচ জিনিসটা এমনিতে কারও কোন কাজে লাগছে না! আর যে জিনিস বস্তুত কোন কাজে লাগছে না, তাই নিয়ে সবাই এত কাড়াকাড়ি করছে!! বোকামি না? ধর, হীরা, হীরা দিয়ে কাঁচ কাটা যায়। আমি কেবল এইটুকু বুঝি, গহনা বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখায় আমি কোন উপযোগিতা দেখি না!
> কী বলছিস এসব?
>> হুম, এই যে দেখ স্বর্ণের ভরির দাম ওঠানামা করছে, আর মানুষ তার পেছনে ছুটছে, জানি দাম আছে, কিন্তু জিনিসটার কাজ কী? গহনা বানিয়ে গায়ে ঝুলিয়ে রাখা? পরে আবার বেচে দেওয়া? লোহা আমাদের জীবনে যতটা কাজে লাগে, স্বর্ণ নামক ওই ধাতুটা কি তার সিকিভাগও কাজে লাগে? অথচ আমরা ওই অকাজের ধাতুটাকেই মাথায় তুলে রাখছি!! কেন দাম দিচ্ছি ওটাকে এত??
> তুই কি আমার ব্রেইন ওয়াশ করতে চাচ্ছিস নাকি?? মানে তোর এইসব শুনতে শুনতে আমি মোহরটা কখন ছুড়ে ফেলে দেই, তাই তো?
>> না, তুই ভেবে বল শুধু, জিনিসটার আসলে কি কোন যোগ্যতা আছে?
> চুপ! তুই চুপ কর! আর কোন উল্টাপাল্টা লজিক দিবি না!!
>> উল্টাপাল্টা লজিক?
>> না, লজিক ঠিক আছে, কিন্তু তোর মত ভাবতে গেলে আমাকে না খেয়ে মরতে হবে নির্ঘাৎ! পৃথিবীর নিয়মই এটা, এর বীপরীত ভাবতে যাওয়াটা স্রেফ পাগলামি!
>> হুম, পাগলামিই বৈকি। আমার ভেবে হাসি পায় বুঝলি, জিনিসটা অনেকটা মসল্লার মত, সেই মসল্লাটার দাম বেশি যেটা খাবারে খুব কম পরিমাণে লাগে, যেমন ধর জিরা, এলাচি, লবঙ্গ প্রচুর দাম, অথচ রান্নায় লাগে খুবই অল্প!
> ভাই, তুই বিদেয় হ। আমারে ভালোয় ভালোয় মোহরটা বেচতে দে, প্লিজ!
>> হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই বেচ। মোহর বেচ। তবে এই ফুটপাতে নয়, এখানে খদ্দের পাবি না, এখানে মানুষ ভাত কেনে, মোহর না!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৩