১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
পবিত্র কোরআনের সুরা শুআ’রা (২৬:১২৮-১২৯) মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আ’দ জাতি দম্ভ বশত উঁচু স্থানগুলোতে স্মৃতি স্তম্ভ ও প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল।
ইতিহাস থেকে আমরা আরও জানতে পারি আ’দ জাতিতে ১০০০ এর মত গোত্র ছিল। প্রতিটি গোত্রে হাজারের উপর লোকসংখ্যা ছিল। এই গোত্রগুলো আরবের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাদ্দাদের সময় এই গোত্রগুলির কেউ কেউ ইরাক, সিরিয়া ও মিশরে বসতি স্থাপন করে।
তাহলে তাদের নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভগুলো কি পিরামিড ছিল? অনেকে তাই মনে করেন, যদিও বিতর্ক আছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ আর ইতিহাসবিদদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিষয় হতে পারে।
এমনি একপর্যায়ে যখন আ’দ জাতি আল্লাহ’র মহিমা কে ভুলে গেল, হযরত হূদ (আঃ) আ'দ জাতির মাঝে আল্লাহর বানী প্রচার করতে থাকেন।
আর আ’দ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদকে (আঃ) প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন-হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ভিন্ন তোমাদের কোন সত্য মাবুদ নেই, তোমরা শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী। (সূরা হূদঃ ৫০)
তারা হুদ (আঃ) কে পাগল ভাবল। যেহেতু তারা দীর্ঘকায় ছিল, তারা ভাবত তাদের চেয়ে বড় আর শক্তিশালী কেউ হতে পারে না। তারা তাদের দেবতাদেরকে বর্জন করতে অস্বীকার করল। হযরত নুহ (আঃ)ও হযরত হুদ (আঃ) ছিলেন এমন দু’জন নবী যারা আল্লাহ প্রদত্ত কোন ধরনের মোজেযা তাদের জাতির সামনে উপস্থাপন করেননি। তাই তারা হুদ (আঃ) কে মিথ্যাবাদী বলল।
তারা বলল-হে হুদ, তুমি আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নিয়ে আস নাই, এবং আমরা তোমার কথায় আমাদের উপাস্য দেবতাদেরকে বর্জন করতে পারি না, আর আমরা কিছুতেই তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী নই।(সূরা হূদঃ ৫৩)
আমাদের কথা তো এই যে,আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেউ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে; হূদ (আঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহকে স্বাক্ষী করছি এবং তোমরাও স্বাক্ষী থেকো। আমি ঐ সব কিছু থেকে মুক্ত যাদেরকে তোমরা শরীক সাব্যস্ত করেছ। (সূরা হূদঃ ৫৪)
আ’দ জাতি দাম্ভিকতার সাথে হূদ (আঃ) কে প্রত্যাখান করল। তারা বলল, পারলে আমাদেরকে তোমার আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তির ব্যবস্থা কর। হূদ (আঃ) মিথ্যাবাদীদের উপর বিজয়ী হবার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। পরবর্তী ৩ বছর কোন প্রকার বৃষ্টি হল না। খরায় গাছপালা ও গবাদিপশু ধবংস হয়ে গেল। তারপর বিশাল কালোমেঘপুঞ্জ দেখা গেল। আ’দরা খুশী হয়ে গেল। তারা ভাবল শীঘ্রই বৃষ্টি হবে। কিন্তু তারা জানতনা তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছিল। এই মেঘ প্রচন্ড বাতাস বয়ে নিয়ে এল। এই বাতাস ঝড় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কেউ পালাতে পারল না। সবাইকে উড়িয়ে নিয়ে আছড়ে মারল। শুধুমাত্র হূদ (আঃ) ও তার অনুসারিরা বেঁচে রইলেন।
আর আ’দ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড়ের দ্বারা। যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন সাত রাত ও আট দিন বিরামহীনভাবে, তুমি (সেখানে থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে খেজুর কান্ডের ন্যায় সেখানে পড়ে আছে। (সুরা হাককাহঃ ৬-৭)
আর যখন আমার (শাস্তির) হুকুম এসে পৌছল তখন আমি হূদকে (আঃ) এবং যারা তার সাথে ঈমানদার ছিল তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর তদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম অতি কঠিন শাস্তি হতে। (সূরা হূদঃ ৫৮)
আ’দ জাতি তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে দম্ভ করত। আল্লাহ তাদেরকে মিথ্যা প্রমাণিত করলেন। তাদেরকে ও তাদের শহরকে ধ্বংস করে দিলেন। সাত রাত ও আট দিন বিরামহীনভাবে বয়ে চলা ঘুর্ণিঝড় পুরো শহরকে বালির নীচে চাপা দেয়। সাদ্দাদের বেহেশত তৈরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। জাকজমকভাবে তার তৈরি বাগানে প্রবেশের পূর্ব মূহুর্তেই সে সহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়।
আর আ’দ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলতঃ আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী কে আছে? তারা কি তবে লক্ষ্য করেনি যে, আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা শক্তিশালী? অথচ তারা আমার নির্দেশাবলীকে অস্বীকার করত। (সুরাঃ হা-মীম-আসসাজদাহ ১৫)
যুগে যুগে কেন বিভিন্ন জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে? এর উত্তর পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনে। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদসমূহ এখন আমাদের জন্য নিদর্শনসরুপ। আমরা যাতে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ’র পথে সুদৃঢ় থাকতে পারি।
আর তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, জনপদসমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দিবেন, অথচ ওর অধিবাসী সৎকাজে লিপ্ত রয়েছে। (সুরা হূদ-১১৭)
রাসূলদের ঐ সব বৃত্তান্ত আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করছি, এর দ্বারা আমি তোমার চিত্তকে দৃঢ় করি, এর মাধ্যমে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও শিক্ষনীয় বানী। (সুরা হূদ-১২০)
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। (সুরা হিজর-৭৫)