ভারতবর্ষের দ্বিতীয় মোঘল সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন আফিম, জাদুবিদ্যা ও বহুনারীতে আসক্ত, ছিলেন খেয়ালী, কারনে অকারনে অধিনস্তদের দিতেন মৃত্যুদণ্ড, ছিলেন দুর্বল সেনা নায়ক, ছিলেন ভাইদের ষড়যন্ত্রে জর্জরিত, সিংহাসন হারিয়ে বছরের পর বছর বনে-বাদাড়ে ও মরুভূমিতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, রেফুজি নিয়েছেন অন্য সম্রাটের দরবারে, টিকে থাকার জন্য সুন্নি ধর্ম ছেড়ে নিয়েছেন শিয়া ধর্ম, পারস্য সম্রাট ও নিজ সেনাপতি বৈরাম খাঁর সুচারু যুদ্ধকৌশল না থাকলে থেকে যেতেন অথর্ব, পরাজিত সম্রাট হিসেবে।
কিন্তু তিনি মোঘল সম্রাজের সর্বশ্রেষ্ঠ বাদশা আকবর দি গ্রেটের বাবা। তাই মোঘল সম্রাটদের যত সমাধি রয়েছে, হুমায়ুনেরটি সবচেয়ে বেশী চাকচিক্যময়, সবচেয়ে বেশী সীমানা নিয়ে গড়া। বাদশা আকবর কোন কার্পন্য করেননি বাবার সমাধি গড়তে।
ইতিহাস বলে যে তারা ছিলেন চার ভাই - হুমায়ূন, কামরান, হিন্দাল ও আসকরি। কারও মধ্যে সদ্ভাব ছিল না। একজন আরেকজনের সাথে বেইমানি করেছেন একাধিকবার। হত্যা করেছেন একে অন্যকে, চোখ উপড়ে ফেলে লেবুর রস ঢেলে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের বাবা সম্রাট বাবর জানতেন হুমায়ুন আফিমে আসক্ত, দুর্বল চিত্তের, খেয়ালী। তবুও কামরান, হিন্দাল ও আসকরিকে ভারতবর্ষের ভার না দিয়ে সবচেয়ে প্রিয় সন্তানকে দিয়েছিলেন ভার। বলেছিলেন ভাইদের প্রতি কোনদিন নির্দয় হয়ো না। হুমায়ুন বহুদিন রেখেছেন বাবরের কথা। কিন্তু শেষে তিনি ভাই কামরানের দুই চোখ তুলে ফেলে তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দেন।
আকবর দি গ্রেটের বাবা হুমায়ুন, মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের ছেলে হুমায়ুন। হুমায়ুন পত্নী হামিদা বানুর তত্ত্বাবধানে তার সমাধি সৌধটি নকশা করে্ন মিরাক মির্জা গিয়াস। হামিদা বানু যেমন চেয়েছেন, যত খরচ করতে চেয়েছেন, পুত্র আকবর তেমন করেই গড়তে দিয়েছেন। নির্মাণ করতে সময় লেগেছে আট বছর। পরবর্তীতে তার বংশধর শাহ জাহান যখন তাজমহল গড়েছেন, সেই ইমারৎ এই সমাধির আদলেই গড়া হয়েছিল।
এখানে হুমায়ুনের সমাধি ছাড়াও রয়েছে তাঁর অনেক পত্নীর কারো কারো, প্রধান পত্নী হামিদা বেগম এবং পরবর্তীকালের মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের পুত্র দারাশিকোর সমাধি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৭