বেপারি সাহেবের একটাই মেয়ে। সাত রাজার ধন, অনেক সাধনার অর্জন, নয়নের মনি। নাম রেখেছেন মামনি পিংকি। লোকে সাধারণত কোরান হাদিসের সাথে মিল রেখে ছেলে মেয়ের নাম রাখে। কিন্তু বেপারি সাহেব একটু আধুনিক মনের মানুষ। বয়স উনার এখন পঞ্চাশ ছুয় ছুয় কিন্তু সুন্দর করে চুল আচড়িয়ে মধ্যখানে ফিতা টানা সেই বালকবেলার অভ্যাস। ইস্ত্রি করা ছাড়া কবে শেষ জামা পড়েছিলেন বেগম সাহেবার মনে পড়ে না। পাকনা চুলে কলপ করা ত সাপ্তাহিক ব্যপার সেপার। শরীরের গঠন মাশাল্লাহ ভাল। মনটা উনার চলন বিলের মত বিশাল বিস্তর। মেয়ের ভরন পোষনের কোন কমতি রাখেননি। মেয়ের মুখ দিয়ে কোন জিনিসের নাম বের হয়েছে আর উনি সামনে এনে হাজির করেন নি এমন নজির নেই বললেই চলে। মেয়েকে ঠিক একটা ছেলের মত বড় করেছেন।
ছেলের মত বলতে আসলে প্রাধান্যের কথা বুঝিয়েছি। মেয়ে উনার খুবই মেয়েলি স্বভাবের হয়েছে। বরঞ্চ অতিরিক্ত মেয়েলি বললেও কম হবে না। বাড়ির বাইরে একদম যায় না। বান্ধবিও হাতে গোনা দু একজন। স্কুলে কোন ছেলের সঙ্গে কথা বলেনি। কত ছেলে যে পিঙ্কির পিছু পিছু ঘুরত তার কোন হিসেব নেই। ও কাউকেই তেমন পাত্তা দিত না। ধর্মের প্রতি ছিল ওর অগাধ বিশ্বাস আর নিবেদিত প্রাণ। প্রেম ভালবাসার কথা ভুলেও মনে আনেনি। বান্ধবীরা ঠাট্টা করে বলত, পিঙ্কি তুই বড় সেকেলে মেয়ে। না জানি তোর ভাগ্যে কেমন জামাই জুটে! সেটা ক্লাস নাইনের কথা। দিন গড়ায় বয়স বাড়ে, মানুষের মন আর আকাশের রঙ কখন কোনটা যে বদলায় বিধাতা ছাড়া কার সাধ্য আছে জানার।
স্কুলের গন্ডী পেরিয়ে পিঙ্কি এখন কলেজের ছাত্রী। রূপে যৌবনে হাতে গোনা কয়েকজনের একজন। কমবেশ সবার নজর ওর উপর। কি ছাত্র কি শিক্ষক। কি ছাত্রী কি শিক্ষিকা। কি জোয়ান কি বুড়া। এ যেন বাগানে ফুটেছে ফুল, সুগন্ধের বাতাসে সবাই খেয়েছে হৃদয়ের শাখাতে দোল। আকাশে চাঁদ উঠলে নাকি কারো চোখ এড়ায় না। প্রেমিক পুরুষদের চোখ এড়ানো ত আরো মুশকিল। পিঙ্কির পাশের বাড়ির রোগা হ্যাংলা পাতলা শ্যামলা বর্নের ছেলেটির কি যেন নাম। অনেকদিন ধরেই পিঙ্কির কাছে প্রেম নিবেদন করে আসছে। পিঙ্কির বান্ধবীরা ছেলেটির নাম দিয়েছে “প্রেমিক পুরুষ রহিম মিয়া”। রহিম মিয়ার প্রেমের কাহিনি অত্র এলাকায় অতি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ক্লাস ফাইভ থেকেই রহিম মিয়ার বুকের সাগরে প্রেমের ঢেউ উতাল পাতাল করে। সেই সাগরে নৌকা ভাসিয়ে মাঝির বেশে কত সখিরে পার করেছে, নিয়েছে আনা আনা। পিঙ্কির বেলায় পার করিতে চেয়েছিল পিঙ্কির হাত খানা।
চলবে..