সাকসেস বা সফল বা সফলতা, ইহার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। সাধারণ একজন ব্যক্তিকে যদি জিজ্ঞেস করেন আপনি সফল কিনা বা সফলতা বলতে কি বুঝেন? খেয়াল করবেন তিনি বা তারা এর উত্তর করতে কিছুক্ষণ সময় নিবেন। কাউকে যখন জিজ্ঞেস করেন, "কেমন আছো? বা আছেন? বা আছিস?" এর উত্তর উনি চট করেই দিয়ে দিবেন কিন্তু সফলতার সংজ্ঞা তিনি ঠিকভাবে দিতে পারবেন না। তাকে ভাবতে হবে কিছুক্ষণ! তিনি ভাববেন, "কোন কোন শব্দ ব্যবহার করলে বা কোন বাক্য বা কেমন ভাবে উপস্থাপন সামনের ব্যক্তি বুঝবে আপনি আসলেই সফল।" উনি সফল কিনা এটা উনার জানা নাই কিন্তু মানুষকে বুঝাতে হবে আপনি সফল।
ঠিক এই ভাবনাটাই বর্তমানে আমি ভেবে যাচ্ছি। মিরপুর দুই এর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে দারিয়ে৷ হাতে ছোট্ট একটা লেফাফা। এখানে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য দুইটা। এক, আমার কাজিনকে রিসিভ করা। দুই, তাকে নিয়েই বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়া। এরসাথে আরও কিছু দেখতে পাচ্ছি। এক, কাপলদের হাতে হাত রেখে হাটাচলা এবং কিছু কাপলদের লুতুপুতু এবং আহ্লাদীভাব! সাথে দেখছি ব্যস্ত মানুষদের যারা ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করছে। এখানে দাড়িয়ে যা বুঝলাম তা হল আমি বাদে বাকি সবাই ব্যস্ত! এমনকি আমার কিছুটা দূরে বসা সেই ফকিরও! তিনি বিভিন্ন ভঙ্গিতে ভিক্ষা চাচ্ছেন! যাই হোক, আমি না চাইতেও কাপলদের দেখছি, মাঝে মাঝে অনেক রূপসী মেয়ের চোখে চোখ পরছে! এটুকুতে ভাববেন না আমি প্লেবয় টাইপ ছেলে, আমি কেমন সেটা ধীরে ধীরে জানতে পারবেন। আমার ফোনে রিং বেজে উঠলো, স্ক্রিনে নয়ন এর নাম। নয়ন আমার কাজিন এবং তারই অপেক্ষায় আমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়ানো! বেশি না, আমার চেয়ে তিন বা চার বছরের ছোট হবে! যাই হোক, সে জানালো কাছাকাছি চলে এসেছে। এরমধ্যে আমি লেফাফা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। এরপ্রায় দেড় মিনিটের মধ্যে নয়ন হাজির! "সরি ভাইয়া, অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখছি! আসলে সার্জেন্টে ওই মোড়ে আটকে দিয়ে লাইসেন্স চেক করছিল তাই দেরি হল, আমি হেটে আসলাম বাকি রাস্তা।"
আমি বললাম, "আচ্ছা চল, যা হয়েছে বাদ দে। এখানে থেকে ইতিহাস বা রাজধানীতে উঠবো, তবে রাজধানী পেলে বেস্ট!"
বাসে উঠে দুই ভাই বেশ গল্প শুরু করলাম। কিভাবে যেন ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা শেষ হয়ে এল! যাক, বাসায় ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম চা বানাতে। ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ এবং অন্যান্য কিছু বের করলাম না। তবে ছোট একটা কি বোর্ড ছিল, সেটা বের করলাম কিন্তু আড়ালে!
চায়ের আড্ডা শেষে নয়নকে বললাম, "তুই তোর জিনিস রেডি রাখ, আমরা ছাদে যাবো। আমি আসছি একটু।" এই বলে চলে গেলাম আমার ব্যাগের কাছে। সেই লেফাফা বের করলাম এবং খুব যত্ন সহকারে লুকিয়ে আলমারিতে আমার নিজস্ব ফাইলে ঢুকিয়ে রাখলাম।
প্রশ্ন জাগতে পারে, কি আছে সেই লেফাফায়? কেনই বা আমি সেটা এত গোপন ভাবে লুকিয়ে রেখেছি? কোনো প্রেমপত্র? পেয়েছি বা কাউকে দিবো এমন? সে যেটাই হোক, পরের পর্বে জানাচ্ছি৷ তবে এখন ছাঁদে যাই?
আগস্টের রাত, সচারাচর তারা দেখা গেলেও আজ তারা দেখা যাচ্ছে না! তাই পশ্চিম দিকে তাকালাম। আধারের মাঝে আরও আধার মনে হচ্ছে! অর্থাৎ আকাশ মেঘলা। নয়ন সিগারেট ধরালো আর বলল, "বুঝলা ভায়া, আমি সবকিছু ছেড়ে দেয়ার সংকল্পে সফল হইছি শুধু সিগারেটে আমি ব্যর্থ! পারি নি!" আমি ফিকে হেসে বললাম, "চেষ্টা আমিও করেছিলাম রে সিগারেট ঠোটে ধরার কিন্তু পারি নি!!" নয়ন অট্টো হাসি দিয়ে উঠলো! তার হাসি যেন থামছেই না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "তারপর বল, কি ডিসিশন নিলি? পাবলিকে কোথাও তো পরীক্ষা দিলি না?"
সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে সেটা রেলিংয়ে ঠেসে নেভালো নয়ন এবং বলল, "ভাইয়া, আমি খুব প্র্যাক্টিকাল ছেলে! আমি জানি পাবলিকে আমার হবে না, এবং অনেক বছর থাকতে হবে! এত ধৈর্য্য আমার নাই।"
রাতের আকাশে আলোর ঝলকানি আরও বেড়ে গেল! আমি বললাম, "বেশিই বাস্তববাদী চিন্তা ভাবনা মানুষকে শান্তিমত বাঁচতে দেয় না।"
নয়ন বলল, "আমার কাছে আবেগের কোনো স্থান নাই৷ কাজ কর, টাকা কামাও, খাও আর ঘুমাও দ্যাটস ইট!"
আমি শুধু এক কান দিয়ে শুনলাম আর আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম। মনে মনে বললাম, "যেই প্র্যাক্টিকালের রাস্তায় যাচ্ছো সেটা বিষেভরা এবং আত্মকেন্দ্রিক! এতে সহযাত্রী পাওয়া যায় না, এতে পাওয়া যায় সুযোগ-সন্ধানী!"
কিছুক্ষণের মধ্যেই নামলো ঝুম বৃষ্টি এবং সাথে সাথে বাসায় চলে এলাম। খাওয়ার টেবিলে খোশগল্প শেষে চলে গেলাম ঘুমাতে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১টা বেঁজে গেছে! নয়ন জিজ্ঞেস করলো, "ভাইয়া ঘুমাচ্ছো না যে? অফিস নাই সকালে?"
"আরে অফিস, এত অফিস করে লাভ কি? যাবো নে এক সময়!" একটুপর আবারও বললাম, "আচ্ছা এক কাজ করি, ছুটি নিয়ে নিই! তুই তো সবসময় আসিস না। না হয় কোনো এক্সকিউজ করে নিলাম? যা হবে পরেরদিন দেখা যাবে নে!"
অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলাম আমরা। চোখে যখন একটু একটু ঘুম জমা হচ্ছে তখন প্রশ্ন এল মনে, "কি হবে পরশুদিন? কিই বা বলবো?"
[আপাতত চলবে তবে কত পর্ব বা খণ্ড তা বলা মুশকিল..]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৬